শার্লক হোমস (ইংরেজি: Sherlock Holmes) ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের একটি কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র। ১৮৮৭ সালে প্রথম আবির্ভূত এই চরিত্রের স্রষ্টা স্কটিশ লেখক ও চিকিৎসক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। হোমস একজন উচ্চমেধাসম্পন্ন লন্ডন-ভিত্তিক "পরামর্শদাতা গোয়েন্দা"। নির্ভুল যুক্তিসঙ্গত কার্যকারণ অনুধাবন, যে কোনো প্রকার ছদ্মবেশ ধারণ এবং ফরেনসিক বিজ্ঞানে দক্ষতাবলে জটিল আইনি মামলার নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য তাঁর খ্যাতি ভুবনজোড়া।
কোনান ডয়েল হোমসকে নিয়ে চারটি উপন্যাস ও ছাপ্পান্নটি ছোটগল্প লিখেছেন। প্রথম কাহিনি আ স্টাডি ইন স্কারলেট ১৮৮৭ সালের বিটন’স ক্রিসমাস অ্যানুয়াল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাহিনি দ্য সাইন অব দি ফোর ১৮৯০ সালে লিপিনকোট’স মান্থলি ম্যাগাজিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সালে দ্য স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন পত্রিকায় প্রথম ছোটগল্পের সিরিজটি প্রকাশিত হওয়ার পরই শার্লক হোমস চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯২৭ সাল পর্যন্ত হোমসকে নিয়ে একগুচ্ছ ছোটগল্পের সিরিজ ও আরও দুটি ধারাবাহিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়। হোমস কাহিনির পটভূমির সময়কাল ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ সাল; শেষ ঘটনাটির সময়কাল অবশ্য ১৯১৪।
কোনান ডয়েল বলেছিলেন যে হোমসের চরিত্রটির অনুপ্রেরণা হলেন ডা. জোসেফ বেল, যাঁর অধীনে এডিনবরা রয়্যাল ইনফার্মারিতে করণিক হিসেবে ডয়েল কাজ করতেন। হোমসের মতো বেলও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পর্যবেক্ষণ থেকে বিরাট বিরাট সিদ্ধান্ত বের করতেন।[১]
সৃষ্টি
আর্থার কোনান ডয়েল ডাক্তারি পাশ করে প্লাইমাউথের সাউথ সি-এর ১ নম্বর বুশ ভিলাতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ডাক্তারি করার পাশাপাশি শার্লক হোমস লেখায় হাত দেন। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে আ ট্যাঙ্গলড স্কিন (ইংরেজি: A Tangled Skin) উপন্যাসের মাধ্যমে শার্লকের জন্ম দেন তিনি; যাতে শার্লকের বয়স লেখা হয় ৩৩ বছর। তখন অবশ্য নামকরণ করেছিলেন শেরিনফোর্ড হোমস। পরে সেটা পছন্দ না হওয়ায় রাখলেন শার্লক হোমস। একই সাথে উপন্যাসের নামও বদলে দিয়ে করলেন আ স্টাডি ইন স্কারলেট (ইংরেজি: A Study in Scarlet)। একসময় ডাক্তারি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করলেন লেখালেখিতে। ডয়েলের শিক্ষক ডাক্তার জোসেফ বেল ছিলেন সত্যিকারের অপরাধবিজ্ঞানী; যাঁর কাজ ডয়েলের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিলো।[২] ডাক্তার ওয়াটসনের জবানীষিতে কাহিনিগুলো বর্ণিত।[২]
প্রকাশনা
শার্লক হোমসকে নিয়ে সব মিলিয়ে ৪টি উপন্যাস, আর ৫৬টি ছোট গল্প লিখেন ডয়েল।[২]
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য সিক্স নেপোলিয়ানস্ (ছয় নেপোলিয়ন)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য থ্রী স্টুডেন্টস (তিন বিদ্যার্থী)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য গোল্ডেন পিন্স-নেজ (সোনার চশমা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য মিসিং থ্রি-কোয়ার্টার (থ্রি-কোয়ার্টার নিরুদ্দেশ)
দ্য এডভেঞ্চার অব দ্য অ্যাবি গ্রেঞ্জ (মঠ কৃষিশালা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য সেকেন্ড স্টেইন (দ্বিতীয় দাগ)
খণ্ড ৪ - হিজ লাস্ট বাউ (তার শেষ অভিবাদন)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব উইস্টেরিয়া লজ (উইস্টেরিয়া লজ-এর বিচিত্র ঘটনা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য রেড সার্কেল (লাল বৃত্তের বিচিত্র ঘটনা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ব্রুস-পার্টিংটন প্ল্যানস্ (ব্রুস-পার্টিংটন নক্সার বিচিত্র ঘটনা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ডাইয়িং ডিটেক্টিভ (মুমূর্ষু গোয়েন্দার বিচিত্র ঘটনা)
দ্য ডিসাপিয়ারেন্স অব লেডি ফ্রান্সেস কারফ্যাক্স (লেডি ফ্রান্সেস কারফ্যাক্সের অন্তর্ধান)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ডেভিল'স ফুট (দানব-পদের বিচিত্র ঘটনা)
হিজ লাস্ট বাউ (তাঁর শেষ অভিবাদন)
খণ্ড ৫ - দ্য কেস-বুক অব শার্লক হোমস (শার্লক হোমসের ঘটনা-পঞ্জী)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ম্যাজারিন স্টোন (ম্যাজারিন রত্ন-মণির রহস্য)
দ্য প্রবলেম অব থর ব্রিজ (থর সেতুর সমস্যা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ক্রিপিং ম্যান (অথর্ব অধ্যাপক রহস্য)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য সাসেক্স ভ্যাম্পায়ার (সাসেক্সের রক্তচোষা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য থ্রি গ্যারিডেবস্ (তিন গ্যারিডেব)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ইলাস্ট্রিয়াস ক্লায়েন্ট (প্রখ্যাত মক্কেলের বিচিত্র ঘটনা)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য থ্রী গ্যাবলস্
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ব্ল্যাঞ্চেড সোলজার (সাদা-মুখ সৈনিক)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য লায়ন'স মেন (সিংহের কেশর)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য রিটায়ার্ড কালারম্যান (রঙের গন্ধ)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ভেইলড্ লজার (ঘোমটা রহস্য)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য সসকোম্ব ওল্ড প্লেস
জীবন বৃত্তান্ত
প্রথম জীবন
পুরো নাম উইলিয়াম শার্লক স্কট হোমস। শার্লক হোমসের জন্ম ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল বেলায়। বাবা সাইগার হোমস আর মা ভায়োলেট শেরিন ফোর্ড। বাবার যদিও ইচ্ছে ছিলো শার্লক বড় হয়ে হবেন ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু শার্লক হয়ে গেলেন বিশ্বের একমাত্র কনসাল্টিং গোয়েন্দা। তার সঙ্গী, যোগ্য সহকারী বন্ধুবর লেখক ডাক্তার ওয়াটসন রহস্যোদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন কেন তিনি এই পেশায় এলেন। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। পরে অবশ্য একদিন শার্লক নিজের মুখেই বলেছেন সে কথা।[২]
ছেলেবেলা থেকেই শার্লক শিখে গিয়েছিলেন কী করে দুই চোখের ক্ষমতা দিয়ে চোখে দেখা জিনিসের খুঁটিনাটি বের করে ফেলা যায়। ১৮ বছর বয়সে যখন তিনি অক্সফোর্ড কলেজে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের ছাত্র, তখন তিনি বন্ধুহীন। চেহারা তেমন সুন্দর না হলেও তাঁর দিকে চোখ না ফিরিয়ে থাকা যায় না; একটা অসাধারণ আকর্ষণীয় ক্ষমতা ছিলো তাঁর। তবে দ্বিতীয় বছরে ভিক্টর ট্রেভর নামে এক বন্ধু জুটে গেলো তাঁর। ভিক্টরও শার্লকের মতো নিঃসঙ্গ।[২]
১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই বন্ধু ভিক্টর তার বাবার সাথে শার্লককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শার্লকের বিশ্লেষণী ক্ষমতার কথা বললেন। এতে বৃদ্ধ ভিক্টর শার্লককে পরীক্ষা করতে চেয়ে তার সম্বন্ধে বলতে বললে, শার্লক যা বললেন, তাতে বৃদ্ধের হাসি হাসি চেহারা মলিন হয়ে গেলো। সেই থেকেই শখের কাজটি শার্লক পেশা হিসেবেই নিয়ে নিলেন।[২]
শার্লক হোমস অবিবাহিত। লন্ডনের যে ভাড়া বাড়িটিতে তিনি থাকেন, তার ঠিকানা: ২২১/বি বেকার স্ট্রিট, লন্ডন।[২] বাড়ির গৃহকর্ত্রী মিসেস হাডসন। হোমস কদাচিৎ যোগাযোগ করেন বড়ভাই মাইক্রফট হোমসকে।
Accardo, Pasquale J. (১৯৮৭)। Diagnosis and Detection: Medical Iconography of Sherlock Holmes। Madison, NJ: Fairleigh Dickinson University Press। আইএসবিএন0-517-50291-7।
↑ কখগঘঙচছআনওয়ারুল কবীর বুলু। শার্লক হোমস রচনাসমগ্র(প্রিন্ট)|format= এর |url= প্রয়োজন (সাহায্য)। শার্লক হোমস (ফেব্রুয়ারি ২০০২ সংস্করণ)। ঢাকা: মনন প্রকাশ। পৃষ্ঠা 656। আইএসবিএন984-8332-00-6।অজানা প্যারামিটার |accessyear= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |accessmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); |সংগ্রহের-তারিখ= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য)