উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্রোহ বলতে ভারতেরউত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা সংঘটিত বিদ্রোহকে বোঝায়। উত্তর-পূর্ব ভারত অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয় ও সিকিম এই আট রাজ্য নিয়ে গঠিত। এই আট রাজ্যের বিদ্রোহী সংগঠন ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেখানকার আদিবাসী জনগণ, ভারতের অন্যপ্রান্তের অভিবাসী ও বেআইনি অভিবাসীদের মধ্যে সংঘাত বিদ্যমান। সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর উত্তর-পূর্বকে ভারতের বাকি অংশের সাথে যুক্ত করে এবং এর প্রস্থ ২৩.০০ কিমি (১৪.২৯ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে।
বিগত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে বিদ্রোহ দ্রুত কমে এসেছে এবং ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বিদ্রোহ ঘটনা ৭০% এবং অসামরিক মৃত্যু ৮০% কমে গিয়েছিল।[২৭]
২০১৪ সালের ভারতের সাধারণ নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যে ভোটদানের হার ৮০%, যা ভারত সরকার অনুযায়ী ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সর্বোচ্চ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি যে এটি ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি উত্তর-পূর্বের জনগণের আস্থাকে প্রকাশ করছে।[২৮] ভারতের তৎকালীন পূর্ব সেনা কমান্ডার জেনারেল অনিল চৌহানের মতে ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, সমগ্র উত্তর-পূর্বের হিংসার এলাকা মূলত অরুণাচল, আসাম ও উত্তর নাগাল্যান্ডের সীমান্তে সীমিত হয়ে গেছে।[২৯]
বিদ্রোহের কারণ
জাতিগত বৈচিত্র্য
উত্তর-পূর্ব অঞ্চল হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বেশি জাতিগত বৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল। সেখানে প্রায় ৪ কোটি মানুষের বাস এবং ভারতের ৬৩৫টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ২১৩টি সম্প্রদায় উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের। প্রত্যেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে এবং প্রত্যেকেই ভারতের মূলস্রোতে মিলিত হতে নারাজ কারণ মূলস্রোতে মিলিত হলে তাদের জাতিসত্ত্বা লুপ্ত হয়ে যেতে পারে।[৩০]
প্রতিনিধিত্বের অভাব
ভারতের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্বের মধ্যে দীর্ঘ দূরত্ব এবং ভারতীয় সংসদে ঐ অঞ্চলে প্রতিনিধিত্বের অভাবের ফলে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল অবহেলিত, এবং এটি ঐ অঞ্চলে বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।[৩০]
পূর্ব বাংলার উদ্বাস্তু
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে প্রায় ১ কোটি লোক দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে। এর ফলে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জনপরিসংখ্যান বদলে গিয়েছিল এবং সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্বাস্তুর মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল।[৩০]
অনুন্নয়ন
অর্থনৈতিকভাবে ভারতে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে সাধারণত অবহেলা করা হয় এবং ভারত সরকার ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীর তরফ থেকে এই অঞ্চলে বিনিয়োগ কম মাত্রায় হয়।[৩০]
ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা) (অসমীয়া: সংযুক্ত মুক্তি বাহিনী, অসম) হল উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য সংগঠনের মত আসামের একটি বিদ্রোহী সংগঠন[৩১][৩২][৩৩] যারা ভারতীয় প্রজাতন্ত্র থেকে আসামের সার্বভৌমত্ব দাবি করে সশস্ত্র লড়াই করছে। ভারত সরকার ১৯৯০ সালে সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।[৩৪] মার্কিন সরকারের স্টেটস ডিপার্টমেন্ট সংগঠনটিকে "দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন এমন সংগঠনের" তালিকাভুক্ত করেছে।[৩৫]
উলফা রাঙ গড়ে ৭ই এপ্রিল ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[৩১][৩৬] সুনীল নাথের তথ্যানুসারে ১৯৮৩ সালে নাগাল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক কাউন্সিলের সাথে উলফা সম্পর্কিত। এছাড়াও ১৯৮৭ সালে বার্মার কেআই এর সাথেও উলফা সম্পর্কিত।[৩৭] ১৯৯০ সালের দিকে সংগঠনটি সশস্ত্রভাবে সক্রিয় হওয়া শুরু করে যা এখনো চলছে। ভারতের সেনাবাহিনী ১৯৯০ সাল থেকেই উলফার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এখন পর্যন্ত উলফা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে চলা সংঘর্ষে ১৮,০০০ এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।[৩৮] ২০০৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও ডেপুটি-কমান্ডার-ইন-চিফকে ভারতীয় তদন্তের সম্মখীন করা হয়।[৩৯]
উলফা নেতাদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আত্মগোপনে চলে আসে এবং কেউ কেউ বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। এরপর বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকার তাদের হস্তান্তরের জন্য উলফা বিষয়ে বিভিন্ন সময় বৈঠকের আয়োজন করে। ২০১০ সালের জানুয়ারি উলফার একটি অংশ তাদের নমনীয় অবস্থান ভারত সরকারের কাছে তুলে ধরে স্বাধীনতার দাবি থেকে ফিরে এসে সরকারের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেন।[৪০] অপরদিকে পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন একটি অংশ পূর্বের দাবিতেই অটল থাকে। ৩০শে জানুয়ারি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার অস্ত্র চোরাচালানের একটি মামলায় পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন।
২০১১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উলফার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা না করার জন্য ভারত সরকার, আসাম সরকার ও উলফার মধ্যে একটি ত্রিমুখী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[৪১]
↑Suba Chandran, D (২০১৫)। Armed Conflict, Peace Audit and Early Warning 2014। SAGE Publishing। Maoists, in turn, are said to be providing explosives (ammonium nitrate) and funds to the northeast groups.
↑Nitin A. Gokhale (১ অক্টোবর ২০০৫)। "A life roughed–out in the jungle"। Tehelka। Hong Kong। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Lyle Morris (২২ মার্চ ২০১১)। "Is China Backing Indian Insurgents?"। The Diplomat। ৫ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১১।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑ কখ"A nation pays tribute"। Kuensel Online (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ আগস্ট ২০০৪। ১০ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
↑"124 killed in Bhutan operation"। The Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৩। ৩ জানুয়ারি ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
↑"Banned Terrorist Organisations"। nia.gov.in। ২০১৪-০১-১৯। Archived from the original on ২০১৪-০১-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০৭।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑Department Of State. The Office of Electronic Information, Bureau of Public Affairs (৩০ এপ্রিল ২০০৭)। "Chapter 6 -- Terrorist Organizations"। 2001-2009.state.gov। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯।
Rashid, Ahmed (২০১৩)। Pakistan on the Brink. The future of Pakistan, Afghanistan, and the West (Penguin Paperback সংস্করণ)। London: Penguin Books। আইএসবিএন978-0-241-96007-3।অজানা প্যারামিটার |orig-date= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)