সিনিয়রে ১৯২১ সালের ২৫শে মার্চ জার্মানিরভিসবাডেনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম সিমোন অঁরিয়েত শার্লত কামিনকের। তার পিতা অঁদ্রে কামিনকের ও মাতা জর্জেত (সিনিয়রে) কামিনকের। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সর্বজ্যেষ্ঠ। তার ছোট দুই ভাই রয়েছে। তার পিতা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে কাজ করতেন এবং দোভাষীদের অগ্রদূত ছিলেন। তিনি পোলীয় ইহুদি পরিবারে ফরাসি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।[১][২] তিনি তার পরিবার নিয়ে প্যারিসের ন্যয়ি-সুর-সেন শহরতলীতে চলে আসেন। তার মাতা জর্জেত ছিলেন একজন ফরাসি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী।[৩] তার পিতা একজন ফরাসি বিপ্লবী ছিলেন, যিনি ১৯৪০ সালে ইংল্যান্ডে জেনারেল দ্য গোলে যোগ দিতে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে যান।
কর্মজীবন
জার্মান কর্তৃক ফ্রান্স দখলের সময়ে সিনিয়রে সাঁ-জেরমাঁ-দে-প্রে কোয়ার্টারের কাফে দ্য ফ্লোরে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের একজটি শৈল্পিক দলের সাথে পরিচিত হন। এই সময়ে তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে এবং তিনি তার প্রেমিক দানিয়েল গেলাঁ-সহ বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় অভিনয় শুরু করেন। ১৯৪২ সালে ল্য বিয়েলফেতু চলচ্চিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। তিনি এই সময়ে ছোট খাট চরিত্রে কাজ করতে থাকেন এবং তার মাতা ও ভাইদের ভরণপোষণ করার মত অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন। তিনি তার ইহুদি পরিচিতি লুকাতে পর্দায় ব্যবহারের জন্য তার মায়ের বিবাহ-পূর্ব নাম গ্রহণ করেন।[৪]
সিনিয়রে লা রোন্দ (১৯৫০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সকলের নজর কাড়েন, যদিও ছবিটি অনৈতিক বিবেচনায় নিউ ইয়র্ক সিটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। সিনিয়রের কামোদ্দীপক ও স্বাভাবিক প্রকৃতি তাকে একই ধরনের কাজ পেতে সাহায্য করে এবং তাকে প্রায়ই যৌনকর্মী চরিত্রে দেখা যায়। তিনি ১৯৫২ সালে জাক বেকারের কাস্ক দর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আরও সমাদৃত হন এবং শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা পুরস্কার লাভ করেন।[৫] ১৯৫০-এর দশকে ফ্রান্সে তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল মার্সেল কার্নে পরিচালিত তেরেস রাকুঁ (১৯৫৩), অঁরি-জর্জ ক্লুজো পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারধর্মী লে দিয়াবোলিক (১৯৫৪) এবং আর্থার মিলারেরদ্য ক্রুসিবল নাটক অবলম্বনে লে সর্সিয়ের দ্য সালেম (১৯৫৬)। ১৯৫৭ সালে লে সর্সিয়ের দ্য সালেম ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি বাফটা পুরস্কার লাভ করেন।[৬]
তিনি কলাম্বিয়া পিকচার্সেরশিপ অব ফুলস্ (১৯৬৫) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি অস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৪] এছাড়া এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। দ্য টাইমস-এর বসলি ক্রাউদার তার ও অস্কার ভের্নারের রসায়নের প্রশংসা করে লিখেন, "দুজন হতাশ ও লুপ্তপ্রায় মানুষের মধ্যে এত স্নিগ্ন, বোঝাপড়া ও দুঃখ, যা মানুষের মর্যাদা ও নিরাশার ঝাপসা উপস্থাপন।"[৪]
ব্যক্তিগত জীবন
সিনিয়রে ১৯৪৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা ইভ আলেগ্রেকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা রয়েছে। তাদের কন্যা কাত্রিন আলেগ্রে একজন অভিনেত্রী। ১৯৪৯ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ১৯৫১ সালে তিনি ইতালিতে জন্মগ্রহণকারী ফরাসি অভিনেতা ইভ মোঁতঁকে বিয়ে করেন।[৭]
সিনিয়রের স্মৃতিকথা নস্টালজিয়া ইজন্ট হোয়াট ইট ইউজড টু বি ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। তার রচিত উপন্যাস আদিও ভলদিয়া ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।
সিনিয়রে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৫ সালে ৩০শে সেপ্টেম্বর ৬৪ বছর বয়সে ফ্রান্সের ওতোই-ওতুইলে শহরে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে প্যারিসের পের লাশেজ সমাধিস্থলে সমাধিস্থ করা হয়।[৪] ইভ মোঁতঁকেও পরে তার পাশে সমাধিস্থ করা হয়।