অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূসের মনোনয়নকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দ্বারা প্রস্তাব ও সমর্থন করা হয়।[১০] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম (পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা) ৬ আগস্ট ২০২৪-এ বলেন,
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সর্বজন গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে... ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই গুরু দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন
আমরা দ্রুত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই। বর্তমানে এই সরকার সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দ্বারা নির্বাচিত সরকারের কোনো বিধান নেই, কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি, এবং ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ বিক্ষোভকারী একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু। এই সরকারের জন্য কেউ ভোট দেয়নি। সুতরাং, তারা আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবে কিনা, তা এখনও দেখা বাকি।... ক্ষমতা দখল করা এক বিষয়; কিন্তু শাসন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের জনগণের সমর্থন নেই। কে তাদের কথা শুনবে? বর্তমানে বাংলাদেশে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল রয়েছে। আপনি যাই করুন না কেন, যদি আপনি ১৭ কোটি মানুষের সাথে গণতন্ত্র চান... আমাদের ১০ কোটি সমর্থক রয়েছে। তারা এই সরকারের জন্য ভোট দেয়নি বা সমর্থন করেনি। সুতরাং তাদের সমর্থন ছাড়া, আপনি কিভাবে শাসন করবেন? আমি অপেক্ষা করছি যে কে এই সরকারের কথা শুনবে। ক্ষমতায় বসানো এক বিষয়, কিন্তু জনগণের সমর্থন পাওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। মোদি বলেন, "আমরা হিন্দু ও অন্যান্য সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাভাবিক অবস্থায় দ্রুত ফিরে আসার আশা করি"।[১৩]ভারতের বিরোধী দলীয় নেতারাহুল গান্ধী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ায় ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানান।[১৪]
মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতিমোহাম্মদ মুইজ্জু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। তিনি তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।[১৬]
ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানান।[১৯]প্রধানমন্ত্রীডিক শুফও ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, 'আমাদের দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের ও আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি আপনার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন করার এবং আমাদের সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রত্যাশায় রয়েছি।[২০]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, "সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধে ড. ইউনূসের আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার আশা প্রকাশ করেছে।অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. ইউনূস বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চায়। তাই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।"[২২][২৩]
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। ইইউ বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী ও গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের জটিল কাজে সহায়তা করবে।[২৩] ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, 'ইইউ নতুন প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত হতে এবং এই জটিল রূপান্তরকে সমর্থন করার প্রত্যাশায় রয়েছে, যা সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত।[২৬]
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানান ১৯৮ বিশ্বনেতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে এ-সংক্রান্ত একটি বিবৃতি বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিরা বলেন,
“
আমরা বছরের পর বছর ধরে অধ্যাপক ইউনূসকে সমর্থন দিতে পেরে গর্বিত। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি রোমাঞ্চকর নতুন ভোরের সূচনা। আমরা আগামী মাস ও বছরগুলোতে তাঁর এবং বাংলাদেশের জনগণের শান্তি ও সাফল্য কামনা করি।
”
বিবৃতিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন শান্তি, অর্থনীতি, সাহিত্য, চিকিৎসা, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী ৯২ জন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, রামোস-হোর্তা, মার্টিন কার্প্লাস, জোসেফ স্টিগলিৎজ, হার্টা মুলার, চার্লস রাইস, হিরোশি আমানো প্রমুখ।
অন্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে আছেন নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো ব্রুন্ডল্যান্ড, রোমানিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমিল কনস্টান্টিনেস্কু, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাটস কার্লসন, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, মার্কিন রাজনীতিক টেড কেনেডি জুনিয়র প্রমুখ।[২৯]