মার্ক রবিন রামপ্রকাশ, এমবিই (ইংরেজি: Mark Ravin Ramprakash; জন্ম: ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯) হার্টফোর্ডশায়ারের বুশে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইন্দো-ক্যারিবীয় এবং ইংরেজ বংশোদ্ভূত সাবেক ও বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা। ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কাউন্টি ক্রিকেটেমিডলসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ‘ব্লাডএক্স’ ডাকনামে পরিচিত মার্ক রামপ্রকাশ।[১]
২১ বছর বয়সে ইংল্যান্ড দলে খেলার জন্য মনোনীত হন। তিনি তার সময়কালে অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল ইংরেজ ব্যাটসম্যানরূপে আবির্ভূত হন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে খুব কমই নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিলেন। আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবের সমর্থক তিনি এবং আর্সেনাল এক্স-প্রোজ ও সেলিব্রিটি দলের পক্ষে খেলেছেন।[২]
শৈশবকাল
তার বাবা ইন্দো-গায়ানীয় ক্যারাবীয় এবং মা ইংরেজ ছিলেন।[৩][৪] গেটন হাইস্কুলে অধ্যয়ন শেষে হ্যারো উইল্ড সিক্সথ ফর্ম কলেজে পড়াশোনা করেন। হেডস্টোন লেনের স্থানীয় বেসবোরা ক্রিকেট ক্লাবে প্রথম খেলেন। সেখানে তিনি উদীয়মান ফাস্ট বোলাররূপে অংশ নেন। পরবর্তীকালে অবশ্য ব্যাটিংয়ের দিকে মনোনিবেশ ঘটিয়েছিলেন। ছাত্রাবস্থাতেই ১৭ বছর বয়সে মিডলসেক্সের পক্ষে খেলেন। ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৩ রান তোলেন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
২০০১ সালে মিডলসেক্স থেকে সারে দলে স্থানান্তরিত হবার পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে রান পেয়েছিলেন। ঐ দলে অবস্থানকালে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে উপর্যুপরি দুই বছর তার ব্যাটিং গড় ১০০-এর বেশি ছিল।[৫] ক্রিকেটের ইতিহাসে ২৫জন ক্রিকেটারের একজন হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শততম শতক করার বিরল কীর্তিগাথা রচনা করেন রামপ্রকাশ।
টেস্ট ক্রিকেট
১৯৯১ সালে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে গ্রেইম হিকের সাথে তারও একযোগে অভিষেক ঘটে। কিন্তু ২০-এর কোটা অতিক্রম করতে তাকে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে। বেশ কয়েকটি খেলায় দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করায় ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ড দল থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু ঐ সময়ে কাউন্টি ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান সংগ্রহ করায় দল নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক সুনজরে ছিলেন।
১৯৯৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে খেলার জন্য তাকে পুনরায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঐ সময় অস্ট্রেলিয়া দল ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। কিন্তু তিনি ৬৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন ও দলকে শান্তনাসূচক জয়ে প্রভূতঃ সহায়তা করেন। এরফলে তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য দলের সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়। কিন্তু, নিম্নমুখী রান করার প্রবণতার ফলে নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক পুনরায় উপেক্ষিত হন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে বার্বাডোসে অনুষ্ঠিত টেস্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় নিজেকে মেলে ধরেন। ঐ পঞ্চম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৫৪ রান তুলে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেন।[৬] ফলে পরবর্তী কয়েক বছর দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান তিনি।
ইংল্যান্ডের মাঝারি সারিতে ব্যাটিং দূর্বলতা ধরা পড়ায় অ্যালেক স্টুয়ার্টসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেট পণ্ডিত তার অন্তর্ভুক্তির দাবী করেন।[৭] তাস্বত্ত্বেও জোনাথন ট্রটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৮] ঐ টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেন ট্রট।[৯]
অর্জনসমূহ
৪ জুলাই, ২০১২ তারিখে অবসর[১০] নেন।[১১] এ সময় তিনি সকল স্তরের ১১৪ শতক হাঁকান। এরফলে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের শতরান লাভকারী সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ১৬শ অবস্থানে ছিলেন যা স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের তুলনায় মাত্র তিনটি কম ছিল।
ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ২০১৩ সালে নববর্ষের সম্মাননায় তাকে মেম্বার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার পদবীতে ভূষিত করা হয়।[১২]
নভেম্বর, ২০১২ সালে ভারত সফরে ইংল্যান্ড লায়ন্সের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।[১৫] জানুয়ারি, ২০১৩ সালে দুই বছর মেয়াদে মিডলসেক্সের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পান।[১৬] মে, ২০১৪ সালে গ্রাহাম গুচের স্থলে তাকে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচের কথা প্রকাশ করা হয়।[১৭] অতঃপর নভেম্বর, ২০১৪ সাল থেকে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।[১৮]