কেনেথ স্কট ম্যাকইউয়ান (ইংরেজি: Ken McEwan; জন্ম: ১৬ জুলাই, ১৯৫২) ইস্টার্ন কেপের বেডফোর্ডে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট তারকা। দক্ষিণ আফ্রিকান ঘরোয়া ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্স এবং ইংরেজ ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের পক্ষাবলম্বন করে খেলে গেছেন। দলে মূলতঃ ডানহাতি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন কেন ম্যাকইউয়ান।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সরকারের বর্ণবিদ্বেষী আচরণের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণার ফলে কেন ম্যাকইউয়ানের স্বাভাবিক খেলোয়াড়ী জীবন ব্যাপকভাবে- বাঁধাগ্রস্ত হয়।
২০ বছর বয়সে ইস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে প্রথম খেলেন। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব পালনকারী টনি গ্রেগের পরামর্শক্রমে সাসেক্সের পক্ষে খেলার সুপারিশ করেন। কিন্তু বিদেশী খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকায় ১৯৭৪ সালে ম্যাকইউয়ানকে এসেক্সের কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকান ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি মাত্র দুই মৌসুম খেলেছিলেন ও নিজ নামের পাশে কোন প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরিও ছিল না তার।[১] এ চুক্তিটি বেশ সুন্দর ছিল।
কাউন্টি ক্রিকেট
প্রথম মৌসুমেই ইনিংস প্রতি ৩০ গড়ে সহস্রাধিক রান তুলেন। পরবর্তী এগারো মৌসুম নিশ্চিন্তমনে এ অঙ্কের রানগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে ধারাবাহিকভাবে চারটি প্রথম-শ্রেণীর ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৭৮ সালের উইজডেন সংস্করণে অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।[১]
১৯৮৩ সালে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন তিনি। ৬৮.৩৬ গড়ে ২,০৫১ রান তুলেছিলেন। ঐ মৌসুমে জাতীয় গড়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন কেন ম্যাকইউয়ান।[২]
এসেক্সের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৭৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে প্রথম শিরোপা এনে দেন এসেক্স দলকে। এছাড়াও, ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে এ শিরোপার পুণরাবৃত্তি ঘটে। ১৯৮১, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে সানডে লীগ, ১৯৭৯ সালে বেনসন এন্ড হেজেস কাপ ও ১৯৮৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির শিরোপা জয় করে তার দল।
টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য ঘটেনি কেন ম্যাকইউয়ানের। তবে, শীত মৌসুমের অধিকাংশ সময়ই দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতেন ও ইস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে খেলতেন তিনি। তবে, ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে দুই মৌসুম খেলার জন্য ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৫ মৌসুম শেষে এসেক্স থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
সাসেক্সে খেলাকালীন ১৯৭২ সালে ওর্থিং ইভনিং ক্রিকেট লীগে গ্রেস্টোকের পক্ষে খেলেছেন তিনি। লাইলসের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৬ রান করেছিলেন। ঐ ইনিংসে সাতটি ছক্কা ও তেরোটি চারের মার ছিল। প্রথম বিভাগে এটি তার প্রথম শতরান ছিল। এছাড়াও, ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত লীগে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।[৩] এছাড়াও, ঐ বছর সাসেক্স ইনভাইটেশন ক্রিকেট লীগে অংশ নিয়েছিলেন।
ঘরোয়া ক্রিকেট
ইস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে আরও পাঁচ মৌসুম খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এসময় তার দল কারি কাপের ইতিহাসে প্রথম শিরোপা জয় করে। এছাড়াও, যৌথভাবে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের সাথে কারি কাপের শিরোপা ভাগাভাগি করে নেয়। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে বর্ডারের সাথে এক মৌসুম খেলেছিলেন।
ইস্টার্ন প্রভিন্সে খেলাকালীন ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে কারি কাপের চূড়ান্ত খেলায় ট্রান্সভালের বিপক্ষে খেলেন। প্রথম ইনিংসে ১৯১ রান তুলেন। এ পর্যায়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ফিলিপ আমকে সাথে নিয়ে ৩৩৭ রানের জুটি গড়েন। আম করেন ২১৪ রান। ফলশ্রুতিতে, ইস্টার্ন প্রভিন্স ইনিংস ও ১০৩ রানের ব্যবধানে জয় পেয়ে ঐতিহাসিক শিরোপা লাভ করে। এটিই ইস্টার্ন প্রভিন্সের প্রথম শিরোপা জয় ছিল। এছাড়াও, ১৮৯০-৯১ মৌসুম থেকে ট্রান্সভাল, নাটাল কিংবা ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের পর চতুর্থ দল হিসেবে এ সম্মাননা পায়।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ইনিংস প্রতি ৪১-এর অধিক গড়ে ২৬,৬২৮ রান তুলেছেন। তন্মধ্যে, ৭৪টি সেঞ্চুরি ছিল তার। সংখ্যার দিক দিয়ে জন ল্যাংগ্রিজের ৭৬ সেঞ্চুরির পরই তার স্থান ছিল যারা টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিতে পারেননি। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে দলের প্রয়োজনে উইকেট-রক্ষণে এগিয়ে আসতেন ও কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।