জিন মেরিলিন সিমন্স, ওবিই (ইংরেজি: Jean Merilyn Simmons, ৩১ জানুয়ারি ১৯২৯ - ২২ জানুয়ারি ২০১০) ছিলেন একজন ইংরেজ অভিনেত্রী ও গায়িকা। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গ্রেট ব্রিটেনে নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন এবং ১৯৫০-এর দশক থেকে পরবর্তী কালে তিনি হলিউডের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
সিমন্স ১৯২৯ সালের ৩১শে জানুয়ারি লন্ডনের আইসলিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চার্লস সিমন্স ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মল্লক্রীড়ায় ব্রোঞ্জ পদক জয়ী, এবং মাতা উইনিফ্রেড (লাভল্যান্ড) সিমন্স। জিন তার চার ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তার অন্য ভাইবোনেরা হলেন লর্না, হ্যারল্ড এবং এডনা। জিন ১৪ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন।[১]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সিমন্স পরিবার সমারসেটের উইন্সকম্বে চলে যান।[২] তার পিতা সিডকট স্কুলে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।[৩] এই সময়ে সিমন্স তার বড় বোনের সাথে গ্রামের মঞ্চে অভিনয় করতেন এবং গান করতেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গান ছিল "ড্যাডি উডন্ট বাই মি আ বাউ ওয়াও। এই সময়ে তিনি অ্যাক্রোবেটিক নৃত্যশিল্পী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন।[৪]
গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স ও তারকা খ্যাতি
সিমন্স ডেভিড লিনেরগ্রেট এক্সপেক্টেশন্স (১৯৪৬)-এ কিশোরী এস্টেলা চরিত্রে অভিনয় করে ব্রিটেনে তারকা খ্যাতি অর্জন করেন। ছবিটি ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বক্স অফিসে তৃতীয় জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের খ্যাতি লাভ করে এবং সিমন্সের অভিনয় ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[৫]
সিমন্স লরন্স অলিভিয়েরহ্যামলেট (১৯৪৮) চলচ্চিত্রে ওফেলিয়া চরিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন এবং এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন অর্জন করেন। অলিভিয়ে তাকে ব্রিস্টলের ওল্ড ভিসে কাজের ও পড়াশোনার প্রস্তাব দেন এবং উপদেশ দেন অভিজ্ঞতা অর্জনের তারা যে চরিত্রেই তাকে কাজ করতে বলে তিনি যেন তাই করেন। কিন্তু তিনি সে সময়ে র্যাংক অরগানাইজেশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন, এবং তারা তাকে ওল্ড ভিসে যাওয়ায় বাধা দেন।[৬]
প্রথম বিবাহ ও আরকেও পিকচার্স
সিমন্স স্টুয়ার্ট গ্রেঞ্জারের বিপরীতে হাস্যরসাত্মক অ্যাডাম অ্যান্ড ইভলিন (১৯৪৯) ছবিতে অভিনয় করেন। এটি তার প্রথম প্রাপ্ত বয়স্ক চরিত্রে কাজ এবং এই কাজের পর তিনি গ্রেঞ্জারের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।[৭] তারা ১৯৫০ সালের ২০শে ডিসেম্বর অ্যারিজোনার টাকসনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
গ্রেঞ্জার কিং সলোমন্স মাইন্স (১৯৫০) ছবিত অভিনয় করে তারকা খ্যাতি লাভ করেন এবং মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ফলে সিমন্সও তার সাথে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসেন। ১৯৫১ সালে র্যাংক আরকেও পিকচার্সের মালিক হাওয়ার্ড হিউজের কাছে সিমন্সের সাথে তাদের চুক্তি বিক্রি করে দেন।[৮][৯]
এমজিএম ও টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স
এমজিএম তাকে ইয়ং বস (১৯৫৩) ছবিতে রানী প্রথম এলিজাবেথ চরিত্রে কাজের সুযোগ দেয়। সিমন্স টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সেরদ্য রোব চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। দ্য রোব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র এবং এটি ব্যাপক ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। এমজিএমের দি অ্যাক্ট্রেস ছবিতে তিনি স্পেন্সার ট্রেসির বিপরীতে অভিনয় করেন, ছবিটি কম জনপ্রিয়তা পেলেও এটি সিমন্সের অন্যতম প্রিয় একটি চলচ্চিত্র। এই তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কার অর্জন করেন।
সিমন্স দুইবার বিয়ে করেন এবং দুইবারই বিবাহবিচ্ছেদের মধ্যে তার বৈবাহিক সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৫০ সালের ২০শে ডিসেম্বর ২১ বছর বয়সে তিনি অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের টাকসনে স্টুয়ার্ট গ্রেঞ্জারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[১০] ১৯৫৬ সালে গ্রেঞ্জার ও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন,[১১] এবং একই বছর তাদের কন্যা ট্রেসি গ্রেঞ্জার জন্মগ্রহণ করে। ১৯৬০ সালে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।[১২]
১৯৬০ সালের ১লা নভেম্বর সিমন্স পরিচালক রিচার্ড ব্রুকসকে বিয়ে করেন।[১৩] তাদের কন্যা কেট ব্রুকস এক বছর পর ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে সিমন্স ও ব্রুকসের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।[১৪]
তার দুই কন্যার মধ্যে ট্রেসি গ্রেঞ্জার ১৯৯০ সাল থেকে চলচ্চিত্র সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন এবং কেট ব্রুকস টিভি প্রযোজনার সহকারী ও প্রযোজক। তাদের নাম স্পেন্সার ট্রেসি ও ক্যাথরিন হেপবার্নের সাথে সিমন্সের বন্ধুত্বের সাক্ষ্য বহন করে।[১৫]
২০০৩ সালে সিমন্স ব্রিটিশ ড্রাগ ও মানবাধিকার বিষয়ক দাতব্য সংস্থা রিলিজের পৃষ্ঠপোষক হন। ২০০৫ সালে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নিকট গাঁজাকে সি শ্রেণির ড্রাগ থেকে বি শ্রেণির ড্রাগ হিসেবে উত্তীর্ণ না করার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র দাখিল করেন।[১৬]
মৃত্যু
সিমন্স ২০১০ সালের ২২শে জানুয়ারি তার ৮১তম জন্মদিনের নয় দিন পূর্বে স্যান্টা মনিকায় তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। তাকে লন্ডনের হাইগেট সেমাট্রিতে সমাহিত করা হয়।[১৭][১৮][১৯]
তথ্যসূত্র
↑"Jean Simmons' Age Is Exposed"। দ্য স্যালিনা জার্নাল। ১১৬ (৯৬)। ২৬ এপ্রিল ১৯৬৭। পৃষ্ঠা ২০। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ – নিউজপেপার.কম-এর মাধ্যমে।
↑"Are They Being Fair To Jean Simmons?", পিকচারগোয়ার, ২ আগস্ট ১৯৪৭।
↑হানিফোর্ড, গ্লোরিয়া (১৯৮৫)। Sunday, Sunday television interview LWT।
↑"JEAN SIMMONDS TO FACE F/LIGHTS (sic)"। টাউনসভিল ডেইলি বুলেটিন। কুইন্সল্যান্ড। ১৬ নভেম্বর ১৯৪৮। পৃষ্ঠা ৪। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ – ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব অস্ট্রেলিয়া-এর মাধ্যমে।
↑Picture Show and TV Mirror, 2 July 1960, পৃ. ৭। সিমন্স এই সাক্ষাৎকারে বলেন তার কন্যার নামকরণ করা হয়েছে স্পেন্সার ট্রেসির নামানুসারে। কিন্তু জিমি (গ্রেঞ্জার) বলেন তিনি দ্য ফিলাডেলফিয়া স্টোরির ক্যাথরিন হেপবার্নের একই নামের চরিত্র থেকে নামটি নিয়েছিলেন।"