গুন্টুর জেলা; (তেলুগু: గుంటూరు జిల్లా, প্রতিবর্ণী. গুণ্টূরু জিল্লা) হল ভারতেরঅন্ধ্রপ্রদেশরাজ্যেরউপকূলীয় অন্ধ্র অঞ্চলের একটি প্রশাসনিক জেলা। এই জেলার সদর শহর গুন্টুর। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে গুন্টুর জেলার বৃহত্তম শহর।[১] গুন্টুর জেলায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। এই জেলা কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। কৃষ্ণা নদী তেলেঙ্গানা রাজ্যের সীমা থেকে বঙ্গোপসাগরে এর মোহনা পর্যন্ত এই জেলাকে কৃষ্ণা জেলার থেকে পৃথক করে রেখেছে। জেলার দক্ষিণ সীমান্তে রয়েছে প্রকাশম জেলা এবং পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে তেলেঙ্গানা রাজ্য।[৩] গুন্টুর জেলার আয়তন ১১,৩৯১ কিমি২ (৪,৩৯৮ মা২) এবং এটি অন্ধ্রপ্রদেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল জেলা। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই জেলার জনসংখ্যা ৪,৮৮৯,২৩০।[৪]
গুন্টুর জেলা কৃষি ও শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই জেলা থেকে প্রচুর পরিমাণে লঙ্কা ও তামাক রফতানি করা হয়।[৫] অন্ধ্রপ্রদেশের প্রস্তাবিত রাজধানী অমরাবতী গুন্টুর জেলায় কৃষ্ণা নদীর তীরে অবস্থিত।
নামকরণ
গুন্টুর নামটির উৎস ও অর্থ নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় গুন্টুরকে বলা হত গর্থপুরী।[৬]
ইতিহাস
গুন্টুরের প্রকৃত সংস্কৃত (প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃতি) নাম ছিল গর্থপুরী। প্রাচীন শহর গুন্টুরের অগস্ত্যেশ্বরি শিবালয়ম্ হিন্দু দেবতা শিবের একটি প্রাচীন মন্দির। এই মন্দিরে নাগা লিপিতে লেখা দুটি প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে। কথিত আছে, ত্রেতা যুগের শেষ ভাগে ঋষি অগস্ত্য একটি স্বয়ম্ভুশিবলিঙ্গের উপর এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। সেই কারণেই এই মন্দিরের নাম অগস্ত্যেশ্বর শিবালয়ম্। আরও কথিত আছে যে, নাগারা এই অঞ্চল শাসন করত। হিন্দু মতে, সীতানগরম ও গুতিকোন্ডা গুহাসমূহ বৈদিক যুগের সমসাময়িক।
গুন্টুর জেলা ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম মানব বসতির নিদর্শন। এখানে প্রাচীন প্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে সাল রাজবংশ এই অঞ্চল শাসন করত/ বেঙ্গিচালুক্য রাজা প্রথম আম্মারাজের (৯২২-৯২৯ খ্রিস্টাব্দ) একটি লিপিতে ‘গুন্টুর’ নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ১১৪৭ ও ১১৫৮ সালের দুটি লিপিতেও এই নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
বৌদ্ধযুগের সূচনাকাল থেকেই গুন্টুর ছিল সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সভ্যতার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ গৌতম বুদ্ধ গুন্টুরের কাছে ধরণীকোটা বা ধান্যকটকমে ধর্মপ্রচার করেছিলেন এবং কালচক্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।[৭] বৌদ্ধ সন্ন্যাসী তারানাথ লিখেছেন, “বোধিলাভের পরের বছর চৈত্রপূর্ণিমায় ধান্যকটকের মহাস্তুপে বুদ্ধ কালচক্র স্থাপন করেন।”[৮] প্রাচীনকালে বৌদ্ধরা ধান্যকটক ও অমরাবতীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। গুন্টুর জেলার গ্রামগুলিতে অনেক বৌদ্ধ স্তুপের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল। ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ বিশিষ্ট বৌদ্ধদার্শনিকনাগার্জুননাগার্জুনকোন্ডায় ধর্মপ্রচার করেছিলেন এবং কথিত আছে, এখানে তিনি অভ্র আবিষ্কার করেছিলেন। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে চীনা পর্যটক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হিউয়েন সাং অমরাবতীতে এসেছিলেন এবং কিছুকাল সেখানে অবস্থান করে ‘অভিধম্মপিটকম্’ অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন, সেখানে অনেক বৌদ্ধ বিহার জনশূন্য। তার থেকে অনুমান করা হয়, সেই যুগে হিন্দুধর্ম আবার পুনরুত্থিত হচ্ছিল। হিউয়েন সাং তাঁর রচনায় এই অঞ্চলের বিহার ও মঠগুলির উচ্চ প্রশংসা করেছেন।[৯]
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠন – উভয় ক্ষেত্রেই গুন্টুর অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। গুন্টুর সহ মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরাংশের তেলুগু-ভাষী অঞ্চলগুলি স্বাধীনতার পর থেকেই পৃথক রাজ্যের দাবি জানাতে থাকে। ১৯৫৩ সালে মাদ্রাজের উত্তরাংশের ১১টি জেলা নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়। ১৯৭০ সালে গুন্টুর জেলার একাংশ বিভাজিত করে প্রকাশম জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১০]
বর্তমানে এই জেলাটি নকশাল সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা উপদ্রুত রেড করিডোরের অংশ।
ভারতের দক্ষিণপূর্ব দিকে গুন্টুর উপকূল অবস্থিত। এই উপকূল করমণ্ডল উপকূল নামেও পরিচিত। গুন্টুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষ্ণা নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে। জালের আকৃতবিশিষ্ট নদী অববাহিকা, বিস্তৃত প্লাবন সমভূমি ও প্রসারিত বালুকারাশি দেখে মনে করা হয়, কৃষ্ণা নদী একটি অপেক্ষাকৃত সমতল ভূমিতে প্রবাহিত হয় এবং প্রচুর পরিমাণে পলি সঞ্চয় করে। বর্ষাকালে এই নদীতে পলি সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বাপাটলার কাছে সূর্যলঙ্কা ও রেপল্লির কাছে বোব্বারা লঙ্কা গুন্টুর উপকূলের দুটি বিখ্যাত সৈকত।
প্রোলয় বেমা রেড্ডি তাঁর রাজত্বকালে অনেকগুলি শিবমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। বসিরেড্ডি বেঙ্কটাদ্রি নায়ুডুর রাজত্বকালে কৃষ্ণা উপত্যকায় অনেক মন্দির নির্মিত হয়েছিল। গুন্টুর জেলার বহু গ্রাম ও শহরে এই মন্দিরগুলির ‘গালি গোপুরম’ বা সুউচ্চ গোপুরমগুলি তাঁর ভক্তি ও দয়ার নিদর্শন। রাজাবোলুর নদিবেলাম্মা টাল্লি মন্দিরে প্রতি বছর চৈত্রপূর্ণিমায় একটি বিখ্যাত উৎসব আয়োজিত হয়। অমরাবতী মন্দিরে শিবের একটি ১৫ ফু (৪.৬ মি) উঁচু লিঙ্গ আছে। মঙ্গলগিরি শৈলশহরটি নৃসিংহের মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। এই পাহাড়ের উপর পানাকলা নরসিংহ স্বামী মন্দির আছে। পাহাড়ের পাদদেশে আছে লক্ষ্মীনৃসিংহ মন্দির এবং চূড়ায় আছে গণ্ডল নৃসিংহ মন্দির। অন্যান্য বিখ্যাত মন্দিরগুলি হল বাপাটলার ভবনারায়ণ স্বামী মন্দির, মাচেরলার লক্ষ্মী চেন্নাকেশব স্বামী মন্দির, তেনালির কোটাপ্পাকোন্ডা,[২১] পেডাকাকানি ও বৈকুণ্ঠপুরমের মন্দিরসমূহ।
↑ কখগ"District - Guntur"। Andhra Pradesh Online Portal। ২৮ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৪।
↑"CITY PROFILE"(পিডিএফ)। Guntur Municipal Corporation official website। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৪।
↑"District Profile"। National Informatics Centre। ৭ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৫।
↑"Guntur district"। AP state portal। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৬।
↑"About Guntur"। AP Capital Region Development Authority। ২৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৫।
↑"Guntur History"। National Informatics Centre। ৮ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৪।
↑Buddha's Preaching of the Kalachakra Tantra at the Stupa of Dhanyakataka, H. Hoffman, in: German Scholars on India, Vol. I, 1973, pp. 136–140, Varanasi
↑US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১। Central African Republic 4,950,027
↑"Urban Local Bodies"। Commissioner & Director of Municipal Administration - Government of Andhra Pradesh। National Informatics Centre। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।