ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ট্রান্সভালের সদস্য ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। পাশাপাশি লেগ ব্রেক বোলিংয়েও পারদর্শিতা দেখান আলী বাখের। এছাড়াও, তিনি জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
লিথুয়ানীয়-ইহুদি বংশোদ্ভূত পরিবারের সন্তান তিনি। পরবর্তীতে তার পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় অভিবাসিত হন। সাত বছর বয়সে বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র আলী বাবা থেকে তার ডাকনাম ‘আলী’ রাখা হয়।
জোহানেসবার্গের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড স্কুলে অধ্যয়নকালীন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন।[২] ১৭ বছর বয়সে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেন।[৩] ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৫ রান করেন যা যে-কোন দক্ষিণ আফ্রিকানের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ঐ খেলায় তিনি পাঁচ ক্যাচসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ এনে দেন।[৪]
খেলোয়াড়ী জীবন
পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দেন।[৫] সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ১২ টেস্টে অংশ নেন। তিনটি ইংল্যান্ডের ও নয়টি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলেন। তন্মধ্যে, শেষ চার টেস্টে দলের নেতৃত্বে ছিলেন।[৬]
১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। ঐ সিরিজের চার টেস্টের সবগুলোতেই তার দল বিজয়ী হয়। এরপর তিনি ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ড এবং ১৯৭১-৭২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু স্বাগতিক দেশে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভের কারণে কোন সফরেই যাওয়া হয়নি তার।
প্রশাসকত্ব
বিশ্বাস করতেন যে, তার জীবদ্দশায় বর্ণবাদের অবসান ঘটবে না।[৭] সেলক্ষ্যে ১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটকে উজ্জ্বীবিত রাখতে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বিদ্রোহী দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আয়োজন করেন।[৮] একই সময়ে অ-শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ক্রিকেট উন্নয়নের দিকে ধাবিত হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের ভবিষ্যতে অনিশ্চিত ভেবে কৃষ্ণাঙ্গ শহরগুলোয় কোচিং প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হন।[৯]
১৯৯০ সালে বর্ণবাদ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের একমাত্র পরিচালনা পরিষদ গঠনে অগ্রসর হন। এএনসি’র ক্রীড়াবিষয়ক প্রধান স্টিভ তশিতের সাথে পরামর্শক্রমে সংগঠনগুলোকে একীভূত পরিষদে নিয়ে আসতে সম্মত করা। তশিতে চুক্তিতে আবদ্ধসহ উভয়ে একে-অপরের বন্ধু হন।[১০] ১৯৯১ সালে তারা লন্ডন ভ্রমণ করেন ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আবেদন করলে তা গৃহীত হয়।[১১]
১৯৯১ সালে ভারতে সংক্ষিপ্ত সফরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে প্রেরণ করেন।[১২] ১৯৯২ সালে ক্রিকেটে প্রথম ভিডিও-রিভিও সিস্টেমের প্রবর্তন ঘটান।[১৩] এছাড়াও, ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিচালনা করেন।[১৪] ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান রাগবি ইউনিয়নের ব্যবসায়িক অংশীদার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন।[১৫]
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। ১৯৬৫ সালে শিরা তিগার নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।[১৬] তাদের সংসারে দুই কন্যা ও এক পুত্র রয়েছে। তার ভাইপো অ্যাডাম বাখের ১৯৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৭৯ সালে চিকিৎসা পেশা ত্যাগ করে সংক্ষিপ্তকালের জন্য পারিবারিক ব্যবসায় মনোনিবেশ ঘটান।[১৭] ১৯৮১ সালে হৃদজনিত অস্ত্রোপচার হয়। তারপর তিনি ট্রান্সভালের শীর্ষস্থানীয় পেশাদার ক্রিকেট প্রশাসনের চাকরি নেন।[১৮] ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট ইউনিয়নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন।[১৯]
অর্জনসমূহ
১৯৭২ সালে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কারি কাপে ৫,০০০ রান তুলেছিলেন।[২০] এরফলে একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মাননা হিসেবে স্পোর্টস মেরিট অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার লাভ করেন তিনি।[২১]