শ্যামপুর ইউনিয়ন পাগলা নদীর তীরে অবস্থিত। শ্যামপুর ইউনিয়ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, শিবগঞ্জ উপজেলা এর ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত । এ ইউনিয়নের উত্তরে শাহ্বাজপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণে দূর্লভপুর ইউনিয়ন, পূর্বে কানসাট ইউনিয়ন, পশ্চিমে বিনোদপুর ইউনিয়ন ও মনাকষা ইউনিয়ন।
উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী শ্যামপুর ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা ৪০,৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২,৩৬৫ জন এবং মহিলা ১১,৭৬১ জন। ২০১০ সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ২৪,১২৬ জন।[১]
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সড়ক পথ- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হইতে সম্পূর্ণ পাকা সড়ক পথে ১৯ কি.মি. চলার পর শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ তারপর আবার সড়ক পথে ৭ কি.মি. চলার পর কানসাট ইউনিয়ন হয়ে ৩ কিঃমি পশ্চিমে আসার পর অত্র ইউনিয়নে আসা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
নদী পথ- মহানন্দা ও পাগলা নদী পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হইতে অত্র ইউনিয়নে আসা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রশাসনিক এলাকা
শ্যামপুর ইউনিয়নে গ্রামের সংখ্যা ২২টি, মৌজার সংখ্যা ১০টি।
কয়লার দিয়াড়
দক্ষিণ উমরপুর
বাজিতপুর
সদাশিবপুর
হাদিনগর
উত্তর বাবুপুর
পশ্চিম গোপালনগর
শরৎনগর
উত্তর ভবানীপুর
পূর্বশ্যামপুর
ইতিহাস
শ্যামপুর এলাকাটি বহুবছর পূর্বে অবিভক্ত বাংলা তথা ভারতবর্ষের মালদহ জেলার শেরসাহাবাদ পরগনার অন্তর্ভুক্ত একটি এলাকা ছিলো। এই এলাকার ইতিহাস অতি প্রাচীন ও সম্ভ্রান্ত। প্রায় ৪০০-৪৫০ বছর পূর্বে বর্তমান শ্যামপুর (মিঞাপাড়া ও চৌধুরীর-পাড়া) এলাকায় তর্তীপুর নৌ বন্দর ও নদী পথে যাতায়াত ভালো হওয়ায় মধ্যযুগীয় দিল্লির একজন শক্তিশালী সম্রাট যিনি সুরি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শেরশাহ এর একজন সেনাবিভাগের কর্মকর্তার পরিবার তথা শ্যামপুর চৌধুরী বংশের অন্যতম প্রভাবশালী পূর্বপুরুষ জনাব মোহাম্মদ আব্দুল করিম চৌধুরী ও ধনাঢ্য মুসলিম বণিক বা সওদাগর ব্যক্তিবর্গ তথা শ্যামপুর মিঞা বংশের পূর্বপুরুষ জনাব মোহাম্মদ হাজ্বী জহির উদ্দিন বিশ্বাসের পূর্বপুরুষগণ বর্তমান শ্যামপুর চৌধুরীরপাড়া ও মিঞাপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং ব্যবসা-বানিজ্যর ব্যাপক প্রসার করেন। ঐ সময় এই এলাকার নাম শ্যামপুর পাহাড়পুর সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলো বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ইংরেজ কর্মকর্তা লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ ইং সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনে জমিদারী প্রথা প্রবর্তিত করলে তাহারা এই এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। অতীত সময় থেকেই জমিদারগণ অত্যন্ত দানশীল, সহানুভূতিশীল অর্থাৎ প্রজাগণদের সাহায্য সহযোগিতায় সর্বদা পাশে থেকেছেন ও বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করে শ্যামপুর এলাকার উন্নয়ন,শিক্ষা ও জনহিতকর বিভিন্ন পরিকল্পনায় ব্যাপক উন্নয়ন সংগঠিত করেন। যার ফলশ্রুতিতে এলাকায় সর্বস্তরের প্রজাদের মাঝে অত্যন্ত সন্মান লাভ করেন। আফগানিস্তান সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই এলাকায় আসতেন বলে জানা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায়, কানসাট রাজবাড়িতে বসবাসকারী ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকার রাজ শেরশাহাবাদ এস্টেটের সন্মানিত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী,মহারাজা শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী বাহাদুর,কানসাটের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কেদার প্রসন্ন কুন্ড, মালদহ চাঁচল রাজবাড়ির চাঁচল রাজ এস্টেটের প্রভাবশালী রাজা শরৎচন্দ্র রায় চৌধুরী, রহনপুর জমিদারী এস্টেট এর জমিদার যামিনীকান্ত রায় চৌধুরী, ইংরেজ জমিদার পরিবারের মিসেস টমাস মণ্টরী রবিনসন ও জন জেমস্ গ্রে সহ বিভিন্ন মহারাজা ও জমিদারদের সাথে এই এলাকার জমিদার পরিবার দুটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যাতায়াত ছিলো বলে জানা যায়। এমনকি ব্রিটিশ কর্মকর্তাগণও তাহাদের সন্মান প্রদর্শন করে চলতেন। এলাকায় কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে প্রজাগণ জমিদারদের জানাতেন, ইংরেজ কর্মকর্তাগণও কোন সমস্যায় এলাকায় আসলে জমিদারগণের অনুমতি গ্রহন করে সন্মান প্রদর্শন করতেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কানসাটের রাজবাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদে মাগরিবের আজান ও নামাজের সময় রাজবাড়ির শঙ্খ বাজানো কে কেন্দ্র করে মহারাজ কে বিচার দেওয়া হলে তা তিনি প্রত্যাখান করে ও শঙ্খ বাজিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে শ্যামপুর চৌধুরী জমিদার বাড়ির নেতৃত্বে এলাকার মুসলমান সম্প্রদায় একজোট হয়ে উঠেন ও নদীর এক প্রান্তে অবস্থান নেয় এবং রাজবাড়ির সৈন্যরা অপরপ্রান্তে অবস্থান নেন। রাজবাড়ির সৈন্যদের সাথে কয়েকদিন ব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ সংগঠিত হয়, অবশেষে মহারাজ হার মেনে নেয় ও জমিদারগণের সাথে বৈঠক করে ব্যাপারটি সমঝোতা করে নেন। এই থেকেই বোঝা যায় এই এলাকার মানুষ বলিষ্ঠ প্রচন্ড সাহসী ও প্রতিবাদ মূখর ছিলেন।পরবর্তীতে পূর্ববঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ব আইন ১৯৫০ পাস হলে অনন্য এলাকার মত শ্যামপুরেও জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অতীতে শ্যামপুর শরৎনগর মিঞাপাড়া ঈদগাহ সংলগ্ন বৃহৎ এলাকা জুড়ে কয়লা খনির সন্ধান করা হয়েছিলো। যেখানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকার কর্মকর্তা ও শ্রমিক কাজ করতেন কিন্তু পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এই এলাকা পূর্ব থেকেই আমের জন্য বিখ্যাত ও এখনও আম্র কানন পরিবেষ্ঠিত এলাকা। বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখনও আম বাগান পরিদর্শন করতে দূর দূরান্ত থেকে আসেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]