মেঘনা গুলজার (জন্ম: ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭৩) হলেন একজন ভারতীয় লেখিকা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। গীতিকার ও কবিগুলজার ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী রাখীর কন্যা মেঘনা তার পিতার চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৯৯ সালে তার পিতার পরিচালিত হু তু তু চলচ্চিত্রে চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি স্বাধীন পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং তার প্রথম চলচ্চিত্র ফিলহাল... (২০০২) পরিচালনা করেন। তিনি তার পিতাকে নিয়ে বিকজ হি ইজ... (২০০৪) লিখেন।
২০০৭ সালে জাস্ট ম্যারিড ও দস কহানিয়াঁ নির্মাণের দীর্ঘ আট বছর বিরতি নিয়ে তিনি তলবার (২০১৫) চলচ্চিত্র পরিচালনা করে সমাদৃত হন এবং এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসেও মাঝারিমানের ব্যবসা করে। তিনি ২০১৮ সালে গোয়েন্দাধর্মী লোমহর্ষক চলচ্চিত্র রাজি পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। এটি ভারতের সর্বকালের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের একটি। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
এরপর তিনি জীবনীমূলক নাট্যধর্মী ছপাক (২০২০) নির্মাণ করেন, যা সমালোচকদের নিকট থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে। তার পরবর্তী চলচ্চিত্র স্যাম বাহাদুর (২০২৩) সমাদৃত হয়।
প্রারম্ভিক জীবন
মেঘনা ১৯৭৩ সালের ১৩ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গীতিকার ও কবি গুলজার ও মাতা অভিনেত্রী রাখী (প্রদত্ত নাম: মজুমদার)।[১] তার মাতা তার নামকরণ করেন বাংলাদেশের নদী মেঘনার নামানুসারে।[২] তার পিতা পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত এবং মাতা বাঙালি বংশোদ্ভূত। তার মাতামহ-মাতামহীরা হিন্দি ও ইংরেজি জানতেন না, ফলে তাকে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থে বাংলা ভাষা শিখতে হয়েছিল।[১]
মেঘনা দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ করেন। এই সময়ে তিনি আশা ভোঁসলে ও নাসিরুদ্দিন শাহের সাক্ষাৎকার নেন। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর চলচ্চিত্র নির্মাতা সাঈদ আখতার মির্জার সহকারী হিসেবে কাজ করেন।[৩] ১৯৯৫ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিশ স্কুল অব আর্টস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বল্পকালীন কোর্স করেন। তিনি পরে মাচিস (১৯৯৬) চলচ্চিত্রের নির্মাণোত্তর কাজে এবং হু তু তু (১৯৯৯) চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যে তার পিতা গুলজারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন।[৩]
মেঘনা ২০১৮ সালে হরিন্দর সিক্কার উপন্যাস কলিং সেহমত অবলম্বনে নির্মাণ করেন রাজি। জংলি পিকচার্স ও ধর্ম প্রডাকশন্সের প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন আলিয়া ভাট ও ভিকি কৌশল।[১০][১১] এটি ৬৪তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার লাভ করে এবং মেঘনা শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি বর্তমানে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৮১৪ ছিনতাই নিয়ে নীলেশ মিশ্রের রচিত বই অবলম্বনে বিশাল ভরদ্বাজের সাথে কাজ করছেন।[১২] এছাড়া তিনি এসিড নিক্ষেপ থেকে বেঁচে যাওয়া লক্ষ্মী আগরওয়ালকে নিয়ে ছাপক চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন।[১৩] এতে আগরওয়ালের চরিত্রে অভিনয় করবেন দীপিকা পাড়ুকোন এবং এই ছবি দিয়ে পাড়ুকোনের প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে।[১৪]