মুকুল শুদ্ধেশ্বর আনন্দ (১১ অক্টোবর ১৯৫১ - ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭) ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। তিনি ইন্দর রাজ আনন্দের ভাইপো এবং টিনু আনন্দের চাচাতো ভাই।[১] তিনি খুদা গওয়াহ (১৯৯২) চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি অগ্নিপথ (১৯৯০) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
মুকুল ১৯৫১ সালের ১১ অক্টোবর মুম্বই শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা একজন নামকরা চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও ট্যাক্স কনসালটেন্ট ছিলেন। তিনি মিঠিবাঈ কলেজে পড়াশোনা করেন।[২]
কর্মজীবন
মুকুল পরিচালক চেতন আনন্দের সহকারী হিসেবে হিন্দুস্তান কী কসম (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এরপর তিনি রবি ট্যান্ডনের সহকারী হিসেবে জিন্দগি (১৯৭৬), মুকাদ্দর (১৯৭৮) ও চোর হো তোহ অ্যায়সা (১৯৭৮) চলচ্চিত্রে কাজ করেন।[২]
পরিচালক হিসেবে মুকুলের অভিষেক ঘটে কানুন ক্যায়া করেগা (১৯৮৪) চলচ্চিত্র দিয়ে। এটি জে. লি টমসনেরকেপ ফিয়ার (১৯৬২) চলচ্চিত্রের অনানুষ্ঠানিক পুনর্নির্মাণ। চলচ্চিত্র সাংবাদিক রউফ আহমেদ ডিম্পল প্রিভিউ থিয়টারে এর প্রদর্শনী দেখে চলচ্চিত্রটির কারিগরি দক্ষতার প্রশংসা করেন, যা পরবর্তীকালে মুকুল আনন্দের চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট হয়ে ওঠে।[২] তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এতবার (১৯৮৫) আলফ্রেড হিচককের ধ্রুপদী ডায়াল এম ফর মার্ডার (১৯৫৪) থেকে অনুপ্রাণিত। তাকে এই চলচ্চিত্রের ধারণা দেন ড্যানি ডেনজংপা এবং এটি প্রযোজনা করেন রমেশ শর্মা। চলচ্চিত্রটির প্রায় সম্পূর্ণ অংশই একটি কক্ষে ধারণ করা হয়।[২] তার পরবর্তী চলচ্চিত্র সালতানাত (১৯৮৬)-এ পিতা-পুত্র যুগল ধর্মেন্দ্র ও সানি দেওল প্রথমবারের মত একসাথে কাজ করেন এবং জুহি চাওলা অভিষিক্ত হন।[২] একই বছর তিনি ম্যাঁয় বলবান চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যেটি "রক এন রোল" ও "হাল্লা গাল্লা" এর মত হিট গানের জন্য সুপরিচিত।
তাঁর প্রথম বক্স অফিসে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হল ইনসাফ (১৯৮৭)। এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে সাময়িক বিরতির পর বিনোদ খান্নার কর্মজীবন ব্যপ্তি লাভ করে।[১] মুকুল এরপর মহা সংগ্রাম (১৯৯০) চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, এতে তিনি পুনরায় বিনোদ খান্নাকে নিয়ে কাজ করেন। চলচ্চিত্রটিতে আদিত্য পঞ্চোলির রাগী চরিত্রায়ন প্রশংসিত হয়।[১] দুটি চলচ্চিত্রই মুকুলের কাজের নিজস্বতা ও কল্পনাশক্তি দেখা যায়।[২]
১৯৯০-এর দশকের শুরুর ভাগে অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে নির্মিত ত্রয়ী চলচ্চিত্র তাঁকে ইতিহাসে জায়গা করে দেয়।[২]স্কারফেস (১৯৮৩) থেকে অনুপ্রাণিত অপরাধ-থ্রিলার অগ্নিপথ (১৯৯০) চলচ্চিত্রটি সময়ের সাথে সাথে বিপুল প্রভাব বিস্তার করে এবং কাল্ট তকমা লাভ করে। বচ্চনের প্রথম দৃশ্য ও স্বগতোক্তি, ড্যানির কাঞ্চা চিনা চরিত্র, মিঠুন চক্রবর্তীর কৃষ্ণন আইয়ার চরিত্র এবং মাস্টার মঞ্জুনাথের কিশোর বিজয় চবন চরিত্র দর্শকদের নজড় কাড়ে।[২] বচ্চন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[১] এছাড়া মুকুল এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। মুকুল ও বচ্চন পুনরায় পারিবারিক নাট্যধর্মী হাম (১৯৯১)-এ কাজ করেন। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সফল হয় এবং প্রথমবারের মত কোন হিন্দি চলচ্চিত্রের ৩০০ প্রিন্ট চার শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[২] এই চলচ্চিত্রের "জুম্মা চুম্মা" গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।[১] বচ্চনকে নিয়ে তাঁর তৃতীয় চলচ্চিত্র খুদা গওয়াহ (১৯৯২)-এর অধিকাংশই আফগানিস্তানে ধারণ করা হয়।[২] চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সফল হয় এবং এই চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য মুকুল শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[১]
তাঁর সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ত্রিমূর্তি (১৯৯৫)। মুকুল খুদা গওয়াহ-এর পর আরও বড় পরিসরে কাজের পরিকল্পনা করেন এবং চলচ্চিত্র মুঘল সুভাষ ঘাইয়ের সাথে যুক্ত হন। কিন্তু ত্রিমূর্তি চলচ্চিত্রটি শুরু থেকেই বিভিন্ন ঝামেলার সাথে জড়িত হয়। সঞ্জয় দত্ত, জ্যাকি শ্রফ, ও শাহরুখ খানকে নিয়ে মুম্বইয়ে মহরতের পর দত্ত মুম্বই বোমা হামলার মামলায় গ্রেফতার হন। দত্ত কয়েকটি দৃশ্যে অভিনয় করলেও চলচ্চিত্রটি চালিয়ে নেওয়ার জন্য তার পরিবর্তে অনিল কাপুরকে নেওয়া হয়। পাণ্ডুলিপি একাধিকবার পুনর্লিখনের ফলে চূড়ান্ত ফলাফল গোলমেলে হয়ে যায়। ফলে তারকাবহুল চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।[২]
মৃত্যু
মুকুল ১৯৯৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ৪৫ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন।[৩] তিনি তখন ইউটায় তার মারপিটধর্মী চলচ্চিত্র দস-এর শ্যুটিং লোকেশনে ছিলেন। সালমান খান, সঞ্জয় দত্ত, শিল্পা শেট্টি ও রবীনা ট্যান্ডন অভিনীত চলচ্চিত্রটির কাজ ১৯৯৭ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল এবং আগস্ট মাসের মধ্যে ৪০% কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। তবে এর কাজ শেষ করা হয়নি এবং মুক্তি দেওয়া হয়নি।[৪] মুকুলের ধারণকৃত প্রচারণামূলক ভিডিও ও ক্লিপ পরবর্তীকালে তার দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে দেখা যায়।[৩]