মসলিন বিশেষ এক ধরনের তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুতকৃত সূতা দিয়ে বয়ন করা এক প্রকারের অতি সূক্ষ্ম কাপড়বিশেষ। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মসলিন উৎপাদন করা হত; তবে অবিভক্ত বাংলার প্রধান উৎপাদন ক্ষেত্র ছিল ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও শান্তিপুর। এছাড়াও মালদা ও হুগলিতে মসলিন উৎপাদিত হত। ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উৎপাদিত মসলিন ছিল উৎকৃষ্ট মানের, যা ঢাকাই মসলিন নামে সুবিদিত। নদীয়ার শান্তিপুরে উৎপাদিত বিখ্যাত মসলিন শান্তিপুরী মসলিন হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল, যা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃকও স্বীকৃত ছিল। ঢাকায় ফুটি কার্পাস নামক তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হত, অপরদিকে মালদা, রাধানগর ও বর্ধমানে নুরমা বা কৌর নামক তুলা থেকে প্রস্তুত সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হত। চড়কা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হত যার ফলে মসলিন হত কাচের মত স্বচ্ছ। এই মসলিন রাজকীয় পোশাক নির্মাণে ব্যবহার করা হত। মসলিন প্রায় ২৮ রকম হত যার মধ্যে জামদানী এখনও ব্যাপক আকারে প্রচলিত। ইংল্যান্ডের সস্তা কাপড় ও উপনিবেশিকদের অত্যাচারের কারণে আঠারো শতকের শেষার্ধে বাংলায় মসলিন বয়ন বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতে বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে এবং বাংলাদেশে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে পুনরায় মসলিন বুননের উদ্যোগ গৃহীত হয়, এবং এই শিল্পকে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ঢাকাই মসলিন এবং বাংলার মসলিন যথাক্রমে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসাবে এবং ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।[১][২]
শব্দের উৎস
বাংলা মসলিন শব্দটি আরবি, ফার্সি কিংবা সংস্কৃতমূল শব্দ নয়। এস. সি. বার্নেল ও হেনরি ইউল নামের দুজন ইংরেজ কর্তৃক প্রকাশিত অভিধান 'হবসন জবসন'-এ উল্লেখ করা হয়েছে মসলিন শব্দটি এসেছে 'মসুল' থেকে। ইরাকের এক বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র হল মসুল।[৩][৪] এই মসুলেও অতি সূক্ষ্ম কাপড় প্রস্তুত হত। এই 'মসুল' এবং 'সূক্ষ কাপড়' -এ দুয়ের যোগসূত্র মিলিয়ে ইংরেজরা অতিসূক্ষ্ম কাপড়ের নাম দেয় 'মসলিন'।[৫] অবশ্য বাংলার ইতিহাসে 'মসলিন' বলতে বোঝানো হয় তৎকালীন ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উৎপাদিত অতি সূক্ষ্ম এক প্রকার কাপড় |
ইতিহাস
পারম্ভিক সময়কাল
ভারতীয় সূক্ষ্ম ও মিহি সুতি বস্ত্র (মসলিন) প্রাচীনতম নমুনাটি ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মমির শবাচ্ছাদনবস্ত্র হিসাবে মিশরে পাওয়া গিয়েছিল। দ্য পেরিপ্লাস অফ দ্য ইরিথ্রিয়ান সি (৬৩ খ্রি.) গ্রন্থে ভারতীয় তুলার প্রথম বাণিজ্যিক উল্লেখ পাওয়া যায়। উক্ত গ্রন্থে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইউরোপে মসলিম জাতিয় সূক্ষ্ম ও মিহি সুতি বস্ত্র রপ্তানির উল্লেখ রয়েছে। ভারতের পূর্ব তথা বাংলা (বঙ্গ) এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মসলিন উৎপাদিত হত, তবে গুণোমানের ক্ষেত্রে বাংলার মসলিন ছিল শ্রেষ্ঠ। গ্রন্থটির বিবরণ অনুসারে, বাংলার গঙ্গা বন্দর থেকে ইউরোপের বণিকগণ মসলিন সংগ্রহ করত। প্রথম খ্রিস্টাব্দের প্রথম শতকে রোম সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে অভিজাত রোমান নারীরা মসলিন পরে দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শন করতে ভালোবাসতেন। গ্রন্থটিতে মোটা ধরনের মসলিনকে মলোচিনা, প্রশস্ত ও মসৃণ মসলিনকে মোনাচি এবং সর্বোৎকৃষ্ট মসলিনকে গেনজেটিক নামে উল্লেখ করা হয়েছে। নবম শতকে রচিত আরব ভৌগোলিক সোলাইমানের 'সিলসিলাত উত তাওয়ারীখে 'রুমি' নামক একটি রাজ্যের বিবরণ পাওয়া যায়। সেখানে এমন সূক্ষ্ম ও মিহি সুতি বস্ত্র পাওয়া যেত যে, ৪০ হাত লম্বা ও ২ হাত চাওড়া। এক টুকরো কাপড় আংটির ভিতর দিয়ে অনায়াসে নাড়াচড়া করা যেতো। তৎকালীন এই বস্ত্র তিনি সেখানে ব্যতীত আর কোথাও দেখেন নি। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে ও তার পরে মসুলে খুব সূক্ষ্ম সুতি কাপড় তৈরি করা হত। আরব বণিকরা এটিকে পণ্য হিসেবে ইউরোপে নিয়ে যায়, এবং মন্ত্রমুগ্ধ ইউরোপীয়রা একে মসলিন বলে ডাকত; এর পর থেকেই অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সুন্দর সুতির কাপড় মসলিন নামে পরিচিত হতে শুরু করে। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলায় আগত মরক্কো দেশিয় পর্যটক ইবনে বতুতা তার কিতাবুর রেহালায় গ্রন্থে সোনারগাঁওয়ে তৈরি সুতি বস্ত্রের বিশেষ প্রশংসা করেন। পঞ্চদশ শতকে বাংলায় আগত চীনা লেখকগণ সুতি বস্ত্রের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
মুঘল সময়কাল
বাংলায় ষোড়শ থেকে আঠারো শতকের মধ্যে মসলিন শিল্পের বিকাশ ঘটে। এই সময়ে বাংলার প্রধান মসলিন উৎপাদন কেন্দ্রগুলি ছিল ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা, শান্তিপুর, মালদা ও হুগলি। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়, ইসলাম খান চিশতী ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে রাজমহল থেকে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তর করলে ঢাকা বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধতা লাভ করে। এই সময়ে ঢাকায় উৎপাদিত মসলিনের উৎকৃষ্টতা লাভ করেছিল, এবং এখানে উৎপাদিত মসলিন ঢাকাই মসলিন নামে জগত বিখ্যাত হয়।[৪][৬] মোগল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল সোনারগাঁওয়ে প্রস্তুতকৃত এই সূক্ষ্ম সুতি বস্ত্রের প্রশংসা করেছিলেন।[৭][৮] এভাবে সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে বাংলার রাজধানী ঢাকায় ইউরোপিয় ব্যবসায়ীরা বাংলায় আসা শুরু করেন। এই সকল বণিকগণ ইউরোপে রপ্তানি করার জন্য বাংলা থেকে সুতি বস্ত্র ও মসলিন সংগ্রহ করত। এসকল বণিক ও কোম্পানিগুলোর তৎকালীন দলিল-দস্তাবেজ এবং ঐ সমকালীন ইউরোপীয় লেখকদের বিবরণে মসলিন সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
মুর্শিদাবাদ বাংলার রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরে কাশিমবাজার—মুর্শিদাবাদ শহর থেকে দক্ষিণে ভাগীরথীর তীরবর্তী একটি ছোট শহর ছিল, বর্তমানে বহরমপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত—হয়ে ওঠে একটি রেশম ও সুতি বস্ত্র ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। ভাগীরথীর যে শাখাটি বিভক্ত হয়ে জলঙ্গীতে মিলিত হয়েছিল তাকে বলা হত কসিমবাজার নদী, এবং পদ্মা, ভাগীরথী ও জলঙ্গী দ্বারা বেষ্টিত ত্রিকোণ ভূমিকে কসিমবাজার দ্বীপ বলা হত। এটি মসলিন ও রেশমের জন্য একটি বড় বাণিজ্য দ্বীপ ছিল এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য কেন্দ্র (কুঠি) ছিল। ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে, স্ট্রেয়নশাম মাস্টার বলেছিলেন যে মালদা, শান্তিপুর, হুগলি প্রভৃতি স্থানে মসলিন উৎপাদন করা হত। অদ্বৈতাচার্য গোস্বামী রচিত শান্তিপুর পরিচয় গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে উল্লেখ করা হয়েছে—ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উনবিংশ শতাব্দীর পারম্ভে বাৎসরিক ১,৫০,০০০ পাউণ্ড মুল্যের মসলিন ক্রয় করতেন।
হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে, জেমস টেইলরের রচনা অবলম্বনে ইতিহাসবিদআব্দুল করিম তার ঢাকাই মসলিন গ্রন্থে উদ্বৃতি পেশ করেন। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন যে, সমসাময়িক লেখকদের (যেমন, জেমস টেলর, বোল্ট, জন টেলর প্রমূখ) বিবরণের অভাবে প্রকৃতপক্ষে মোগল আমলে মসলিন কত সূক্ষ্ম ও মিহি ছিল তার কোন সঠিক ও অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইংরেজ ইতিহাসবিদদের লেখাতে এ বিষয়ে কিছু মতামত পাওয়া গেলেও সেগুলো পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়।[৪] কারণ, তাদের কেউই মোগল আমলের স্বর্ণযুগ দেখেনি। এছাড়াও তাদের মাঝে পরস্পর বিরোধী অসংখ্য মতানৈক্যের ছড়াছড়ি লক্ষ্যণীয়। তারা এমন সময় বাংলায় আসেন যখন বাংলায় মসলিন শিল্প বিলুপ্তির পথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি অর্ধ-টুকরা একখানি মসলিন (১০গজ × ০১গজ) ১৮৫১ সালে বিলেতের প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হয়েছিল, যার ওজন ছিলো আট তোলা।[৯] পাশাপাশি, ঢাকা জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত মসলিন খানির দৈর্ঘ্যও ১০ গজ এবং চওড়া ১ গজ, এর ওজন মাত্র ৭ তোলা। তাহলে ঢাকার মসলিন মোগল শিল্পের স্বর্ণযুগে যে, আরো সূক্ষ্মভাবে তৈরি করা যেতো সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।[৪]
ব্রিটিশ শাসন ও বিলুপ্তি
ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা ভারতীয় তুলা থেকে বোনা ব্রিটিশদের মিলের তৈরি সস্তা কাপড়ের প্রচলনের জন্য পরিকল্পিতভাবে মসলিন বুনন ধ্বংস করেছিল। ভারতে ব্রিটিশশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের উপরে ৭০ হতে ৮০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যেখানে ব্রিটেনে প্রস্তুত-করা আমদানীকৃত কাপড়ের উপরে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিল। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশেরতাঁতশিল্পে ধস নামে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন বয়নকারী তাঁতিদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে দিয়েছিল।[৫] তবে অধুনা অন্য আরেকটি দাবি বেশ যৌক্তিকভাবে সামনে উঠে এসেছে, তা হল — তাঁতিদের হাত ব্রিটিশরা নয়, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের আঙ্গুল কেটে নিত, যাতে এই তাঁতের কাজ আর না করতে হয়।[১০] হুমকিপ্রাপ্ত অনেক তাঁতি পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে বসতি স্থাপন করে, যা বাংলার সুতি পণ্যের জন্য বিখ্যাত। মসলিন তাঁতিরা তাদের পরিচয় গোপন করার জন্য মোটা সুতা ব্যবহার করে কাপড় বুনতে শুরু করেছিল। মসলিন বুনন ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
পুনর্জন্ম: ১৯৫০-এর দশক—বর্তমান
ভারত
বাংলার মসলিনের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে খাদি ও গ্রামীণ শিল্প কমিশন কর্তৃক দুটি মসলিন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, যেগুলি একটি হল পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বাসোয়া, এবং অন্যটি অন্ধ্রপ্রদেশে রাজ্যের শ্রীকাকুলাম জেলার পান্ডুরু। প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর পৃষ্ঠপোষকতায়, কিছু সুতা কাটুনিদের সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বাসোয়াতে মসলিনের হারানো খ্যাতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কালীচরণ শর্মা নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি বীরভূমের শুষ্ক জলবায়ুকে মসলিন সুতা কাটানোর জন্য বেশ অনুপযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করেন। এরপরে পার্শ্ববর্তী জেলা মুর্শিদাবাদে তার কর্ম কেন্দ্র স্থানান্তর করেন, এবং এই বয়ন শিল্পের স্থান হিসাবে চক ইসলামপুরকে বেছে নেন। অশান্ত পদ্মার শাখা বৈরব নদীর তীরে অবস্থিত চক ইসলামপুর একটি অতি প্রাচীন গ্রাম যা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকে চরকা ও বুননের জন্য বিখ্যাত। স্বাধীনতার পর উচ্চমানের রেশম বুননের জন্য এটি ইতিমধ্যেই খ্যাতি অর্জন করে। কালীচরণ শর্মার তত্ত্বাবধানে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে চক ইসলামপুরে একটি মসলিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়।
প্রথমে ঐতিহ্যবাহী কিষাণ চরখা নিয়ে সুতা কাটার পরীক্ষা শুরু হয়, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী চরখায় ২৫০ কাউন্টের বেশি করা সম্ভব হয়নি। তাই কালীচরণ শর্মা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করেন এবং একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ছয়টি স্পিন্ডেল আম্বার চরখা উদ্ভাবন করেন যা ৫০০ কাউন্টের সুতা কাটতে সক্ষম হয়। এই নতুন চরখা উৎপাদন খরচ কমানো এবং সুতা কাটুনিদের মজুরি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এই আম্বার চরখার প্রচলন মসলিনের পুনর্জন্মের জন্য কার্যকর এবং প্রতিশ্রুতিশীল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। মসলিন সুতা কাটায় মনোনিবেশ করার জন্য, খাদি সমিতি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে বহরমপুরে একটি দ্বিতল পৃথক প্রশস্ত ভবন নির্মাণ করে।
খাদির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে "প্রজেক্ট মসলিন" নামে একটি উদ্যোগ চালু করে। এই উদ্যোগে লক্ষ্য ছিল মসলিন বস্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং তাঁতিদের সহায়তা করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মসলিন কাপড় বুনতে সক্ষম মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ, বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি ও ঝাড়গ্রাম জেলার তাঁতিদের সনাক্ত করা হয়েছিল। এই সকল তাঁতিদের উন্নত মানের মসলিন উৎপাদনের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। তাঁতিরা ৫০০ কাউন্টের মসলিন তৈরির সক্ষমতা অর্জন করে; চেষ্টা চলছে ৬০০ কাউন্টের মসলিন তৈরির।[১১][১২] "প্রজেক্ট মসলিন"-এরঅধীনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মসলিন উৎপাদনের প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়। পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত মসলিন ২০২৪ সালে বাংলার মসলিন নামে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বত্বের অনুমোদন লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত মসলিন পণ্যের মধ্যে রয়েছে রুমাল, ধুতি, বিছানার চাদর এবং পুরুষ ও মহিলাদের পোশাক। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী, উক্ত পণ্যগুলির দাম ছিল ৪০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত, যখন এই বিভাগে কিছু প্রিমিয়াম শাড়ির দাম ৭০,০০০ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে ছিল।
বাংলার মসলিন (বিংশ শতাব্দী)
বেঙ্গল মসলিন কাপড়ের প্রদর্শন, যেগুলি ১০০ কাউন্ট থেকে ৫০০ কাউন্ট পর্যন্ত সুতায় বয়ন করা হয়েছে।
আংটির মধ্যদিয়ে মসলিন শাড়ির অতিক্রম।
প্যাকেটজাত মসলিন শাড়ি
পশ্চিমবঙ্গের কালনায় মসলিন শাড়ি বয়ন।
বাংলাদেশ
২১তম শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশে মসলিন উৎপাদন পদ্ধতি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন ঘটানোর পরিকল্পনা— বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার—গ্রহণ করা হয়েছিল।[১১] এই প্রকল্পের অধিনে ভারত, ব্রিটেন সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে থেকে মসলিনের নমুনা পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। মেঘনা নদীর পুরোনো মানচিত্র পরীক্ষা করা ও আধুনিক উপগ্রহ চিত্রের সাথে মিলিয়ে সম্ভাব্য জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয় - যেখানে এখনো ফুটি কার্পাস গাছ পাওয়া যেতে পারে। সেখান থেকে উদ্ধারকৃত তুলোর গাছের জেনেটিক সিকোয়েন্স তৈরি করা এবং আসলটির সাথে তা মিলিয়ে দেখা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে একটি কার্পাস গাছকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা ফুটি কার্পাসের সাথে ৭০ শতাংশ মিলে যায়। এই কার্পাস উৎপাদনের জন্য ঢাকার ৩০ কিলোমিটার উত্তরে মেঘনার একটি দ্বীপকে নির্বাচন করা হয়। এখানে ২০১৫ সালে তারা পরীক্ষামূলকভাবে কিছু বীজ বপন করা হয়, এবং সেই বছরই ফসল হিসেবে তাদের প্রথম তুলা পাওয়া যায়। কিন্তু সেই সময়ে বাংলাদেশে সূক্ষ্ম সুতা তৈরি করার মত দক্ষ সুতা কাটুনি ছিল না, অপরদিকে ভারতের সুতা কাটুনিরা তুলা থেকে ২০০-৩০০-৪০০-৫০০ কাউন্টের সূক্ষ্ম সুতা তৈরি করতে সক্ষম ছিল। ফলে ভারতীয় তাঁতীদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাধারণ ও ফুটি কার্পাস তুলা মিলিয়ে একটি হাইব্রিড সুতা তৈরি করা হয়, যা ২০০ ও ৩০০ কাউন্টের সুতা ছিল।[১৩][১৪] সুতা থেকে কাপড় তৈরির করতে অন্তত ৫০টি মত যন্ত্র দরকার ছিল, যা নতুন করে তৈরির করতে হয়েছিল, কারণ সেগুলি মসলিনের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়েছিল। তাঁতিরা ছয় মাসের কঠোর পরিশ্রম শেষে আমিন ৩০০ থ্রেড কাউন্টের একটি শাড়ি বানাতে সক্ষম হয়, যা আসল ঢাকাই মসলিনের মানের কাছাকাছি নয়; কিন্তু গত অনেক প্রজন্মের তাঁতীরা যা বানিয়েছেন - তার চেয়ে অনেক উন্নত মানের। এই মসলিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে এবং তার কোন কোনটি হাজার হাজার পাউণ্ড দামে বিক্রিও হয়েছে।[১৩]
বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, এবং পুনরুদ্ধারের কাজটি ২০২০ সালে শেষ হয়েছে। ঢাকাই মসলিনকে ২০২০ সালের ২৮শে ডিসেম্বর জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) স্বত্বের অনুমোদন দেয়া হয়।[১৫][১৬] বাংলাদেশ সরকার ২০২২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে মাসে ঢাকা মসলিনের আনুষ্ঠানিক ভাবে পুনরুজ্জীবনের ঘোষণা করে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ২০২২ খ্রিস্টাব্দে তারাব পৌর এলাকায় ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ গড়ে তোলা হয়।[১৭] ‘ঢাকাই মসলিন বাণিজ্যিকীকরণ’ নামে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়।[১৮] মসলিনের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি, ফলে রফতানি মূল্যও হবে কয়েক গুণ; আধুনিকতার স্বার্থে নকশা ও মানের গুরুত্ব রয়েছে। এসব কারণে এটি বেসরকারি খাতে উৎপতপাদনের কথা ভাবছে বাংলাদেশ সরকার।[১৯]
ঢাকাই মসলিন (২১শ শতাব্দী)
একটি ঢাকাই মসলিন শাড়ি, যা "বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম বোর্ড (বিএইচবি)" কর্তৃক "বাংলাদেশের মসলিন গোল্ডেন হেরিটেজ অব টেকনোলজি রিভাইভিং দ্য টেকনোলজি অফ মসলিন গোল্ডেন হেরিটেজ" প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকাই মসলিনের একটি স্কার্ফ, যা ৩০০ কাউন্ট সুতায় বয়ন করা হয়েছে।
মসলিন প্রস্তুত করা হত পূর্ব বাংলারসোনারগাঁও অঞ্চলে। কথিত আছে যে মসলিনে তৈরি করা পোশাকসমূহ এতই সূক্ষ্ম ছিল যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি দিয়াশলাইবাক্সে ভরে রাখা যেত। সেইসময়ে এক গজ ঢাকাই মসলিনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৪০০ পাউণ্ড, যা আজকের মূল্যমানে ৭,০০০ থেকে ৫৬,০০০ পাউণ্ড। তখনকার সবচেয়ে ভাল সিল্কের চাইতেও এই মসলিন ছিল ২৬ গুণ বেশি দামী।[১৩]
প্রকারভেদ
মসলিনের পার্থক্য করা হত সূক্ষ্মতা, বুননশৈলী আর নকশার পার্থক্যে।[৫] এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রকার মসলিনের আলাদা আলাদা নাম হয়ে যায়।
মলবুস খাস
'মলবুস খাস' মানেই হলো খাস বস্ত্র বা আসল কাপড়। এ জাতীয় মসলিন সবচেয়ে সেরা আর এগুলো তৈরি হত সম্রাটদের জন্য।[৫]
আঠারো শতকের শেষদিকে মলবুস খাসের মতো আরেক প্রকারের উঁচুমানের মসলিন তৈরি হত, যার নাম 'মলমল খাস'। এগুলো লম্বায় ১০ গজ, প্রস্থে ১ গজ, আর ওজন হত ৬-৭ তোলা। ছোট্ট একটা আংটির মধ্যে দিয়ে এ কাপড় নাড়াচাড়া করা যেত। এগুলো সাধারণত রপ্তানি করা হত।[৫]
সরকার-ই-আলা
এ মসলিনও মলবুস খাসের মতোই উঁচুমানের ছিল। বাংলার নবাব বা সুবাদারদের জন্য তৈরি হত এই মসলিন। সরকার-ই-আলা নামের জায়গা থেকে পাওয়া খাজনা দিয়ে এর দাম শোধ করা হত বলে এর এরকম নামকরণ। লম্বায় হত ১০ গজ, চওড়ায় ১ গজ আর ওজন হত প্রায় ১০ তোলা।[৫]
ঝুনা
'ঝুনা' শব্দটি, জেমস টেইলরের মতে, এসেছে হিন্দিঝিনা থেকে, যার অর্থ হল সূক্ষ।[২২] ঝুনা মসলিনও সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে তৈরি হ্ত, তবে সুতার পরিমাণ থাকত কম । তাই এ জাতীয় মসলিন হালকা জালের মতো হত দেখতে। একেক টুকরা ঝুনা মসলিন লম্বায় ২০ গজ, প্রস্থে ১ গজ হত। ওজন হত মাত্র ২০ তোলা। এই মসলিন বিদেশে রপ্তানি করা হত না, পাঠানো হতো মোঘল রাজ দরবারে। সেখানে দরবারের বা হারেমের মহিলারা গরমকালে এ মসলিনের তৈরি জামা গায়ে দিতেন।[৫]
আব-ই-রওয়ান
আব-ই-রওয়ান ফার্সি শব্দ, অর্থ প্রবাহিত পানি। এই মসলিনের সূক্ষ্মতা বোঝাতে প্রবাহিত পানির মতো টলটলে উপমা থেকে এর নামই 'আব-রওয়ান' হয়ে যায়। লম্বায় হত ২০ গজ, চওড়ায় ১ গজ, আর ওজন হত ২০ তোলা।[৫]
আব-ই-রওয়ান সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলোর সত্যতা নিরূপণ করা না গেলেও উদাহরণ হিসেবে বেশ চমৎকার। যেমন: একবার সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে তাঁর মেয়ে উপস্থিত হলে তিনি মেয়ের প্রতি রাগান্বিত হয়ে বললেন তোমার কি কাপড়ের অভাব নাকি? তখন মেয়ে আশ্চর্য হয়ে জানায় সে আব-ই-রওয়ানের তৈরী সাতটি জামা গায়ে দিয়ে আছে। অন্য আরেকটি গল্পে জানা যায়, নবাব আলীবর্দী খান বাংলার সুবাদার থাকাকালীন তাঁর জন্য তৈরী এক টুকরো আব-ই-রওয়ান ঘাসের উপর শুকোতে দিলে একটি গরু এতটা পাতলা কাপড় ভেদ করে ঘাস আর কাপড়ের পার্থক্য করতে না পেরে কাপড়টা খেয়ে ফেলে। এর খেসারৎস্বরূপ আলীবর্দী খান ওই চাষীকে ঢাকা থেকে বের করে দেন।[৫]
খাসসা
ফার্সি শব্দ খাসসা। এই মসলিন ছিল মিহি আর সূক্ষ্ম, অবশ্য বুনন ছিল ঘন। ১৭ শতকে সোনারগাঁ বিখ্যাত ছিল খাসসার জন্য। ১৮-১৯ শতকে আবার জঙ্গলবাড়ি বিখ্যাত ছিল এ মসলিনের জন্য। তখন একে 'জঙ্গল খাসসা' বলা হত। অবশ্য ইংরেজরা একে ডাকত 'কুষা' বলে।[৫]
শবনম
'শবনম' কথাটার অর্থ হলো ভোরের শিশির। ভোরে শবনম মসলিন শিশিরভেজা ঘাসে শুকোতে দেয়া হলে শবনম দেখাই যেত না, এতটাই মিহি আর সূক্ষ্ম ছিল এই মসলিন। ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ প্রস্থের শবনমের ওজন হত ২০ থেকে ২২ তোলা।[৫]
নয়ন সুখ
মসলিনের একমাত্র এই নামটিই বাংলায়। সাধারণত গলাবন্ধ রুমাল হিসেবে এর ব্যবহার হত। এ জাতীয় মসলিনও ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ চওড়া হত।[৫]
বদন খাস
এ জাতীয় মসলিনের নাম থেকে ধারণা করা হয় সম্ভবত শুধু জামা তৈরিতে এ মসলিন ব্যবহৃত হতো কারণ 'বদন' মানে শরীর। এর বুনন ঘন হত না। এগুলো ২৪ গজ লম্বা আর দেড় গজ চওড়া হত, ওজন হত ৩০ তোলা।[৫]
সর-বন্ধ
ফার্সি শব্দ সর-বন্ধ মানে হল মাথা বাঁধা। প্রাচীন বাংলা উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা মাথায় পাগড়ি বাঁধতেন, যাতে ব্যবহৃত হত সার-বন্ধ। লম্বায় ২০-২৪ গজ আর চওড়ায় আধা থেকে এক গজ হতো; ওজন হতো ৩০ তোলা।[৫]
ডোরিয়া
ডোরা কাটা মসলিন 'ডোরিয়া' বলে পরিচিত ছিল। লম্বায় ১০-১২ গজ আর চওড়ায় ১ গজ হত। শিশুদের জামা তৈরি করে দেয়া হত ডোরিয়া দিয়ে।[৫]
জামদানী
জামদানি কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র। প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙ্গালি নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণত শাড়িকেই বোঝান হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশি ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হত। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। এ ছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোশাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হত। তবে আগেকার যুগে 'জামদানী' বলতে বোঝানো হতো নকশা-করা মসলিনকে।[৫]
কামিস
আরবিতে কামিস অর্থ পোশাক। কুর্তা তৈরির জন্য এ জাতীয় মসলিন ব্যবহার করা হতো। কুর্তা এত দীর্ঘ ছিল যে, তা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে দিতো। এর জন্য দরকার হতো লম্বা ও সমান কাপড়ের, যাতে সুতার সংখ্যা ছিল ১,৪০০।[২৩]
এ ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকারের মসলিন ছিল: মলমল (সূক্ষ্মতম বস্ত্র), 'রঙ্গ' (স্বচ্ছ ও জালিজাতীয় বস্ত্র), 'আলাবালি' (অতিমিহি), 'তরাদ্দাম', 'তনজেব' (দেহের অলঙ্কার সদৃশ), 'সরবুটি', 'চারকোনা' (ছক কাটা বস্ত্র) ইত্যাদি।[৫]
↑ কখগঘকামারুজামান, মোহাম্মদ (নভেম্বর ২০১৯)। "মসলিনঃ একটি হৃত শিল্পের সুলুকসন্ধান"। বাঙ্গলানামা।
↑ কখগঘঙচছজঝঞটঠডঢণতথমুনতাসীর মামুন। ঢাকার মসলিন(প্রিন্ট)|format= এর |url= প্রয়োজন (সাহায্য) (ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংস্করণ)। সুবর্ণ। পৃষ্ঠা ৫৩। আইএসবিএন984-459-075-4|আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)।অজানা প্যারামিটার |origmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)