বিজয়পুরের সাদামাটি, যা চীনামাটি বা কেওলিন নামেও পরিচিত, বাংলাদেশেরনেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর এলাকায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ।[১] ১৯৫৭ সালে ভূতাত্ত্বিক জরিপে এই অঞ্চলে সাদামাটির উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ২০২১ সালে বিজয়পুরের সাদামাটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে।[২]
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন
বিজয়পুরের সাদামাটির খনি দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় অবস্থিত।[৩]এই খনিজ অঞ্চলটি প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ, যা ছোট-বড় টিলা, পাহাড় ও সমতল ভূমি নিয়ে গঠিত।[৪]
ইতিহাস ও আবিষ্কার
বিজয়পুরের সাদামাটির পাহাড় মূলত টারশিয়ারি যুগের।
১৯৫৭ সালে ভূতাত্ত্বিক জরিপে এই সাদামাটির উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। কোহিনূর অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস ১৯৬০ সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চিনামাটি উত্তোলন শুরু করে।[৫] এরপর ১৯৬৪-৬৫ সালে পরীক্ষামূলক ১৩ টি কূপ খনন করা হয় এবং ১৯৬৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে মাটি উত্তোলন শুরু হয়।[৬] প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, এই অঞ্চলে প্রায় ২৪.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন সাদামাটি মজুদ রয়েছে, যা বাংলাদেশের ৩০০ বছরের চাহিদা পূরণে সক্ষম।[৭]
উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য
সাদামাটি মূলত কেওলিনাইট খনিজ দ্বারা গঠিত, যা সিরামিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বিজয়পুরের সাদামাটি প্রাকৃতিকভাবে কেওলিন বা অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ, যা উৎকৃষ্ট মানের চীনামাটি হিসেবে পরিচিত। সাধারণত সিরামিকের তৈজসপত্র, টাইলস, স্যানিটারি ওয়্যার ও গ্লাস তৈরির ক্ষেত্রে এ মাটি ব্যবহৃত হয়।[৮]
পর্যটন ও জীববৈচিত্র্য
বিজয়পুরের সাদামাটি খনি এলাকা এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ২০১৬ সালে আদালতের নির্দেশে সাদামাটি উত্তোলন বন্ধ করা হয়, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনগণের জীবিকা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।[৯] বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ থাকলেও সাদামাটির পাশাপশি এখানে কালো, লালচে, খয়েরি, বেগুনি ও নীল সহ বিভিন্ন রঙের মাটির স্তর রয়েছে। এছাড়াও ছোট-বড় টিলা, পাহাড় এবং নীল পানির লেকের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।[১০]