পশ্চিমবঙ্গেরসংস্কৃতিভারতীয় সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এই সংস্কৃতির শিকড় নিহিত রয়েছে বাংলা সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা, নাটক ও চলচ্চিত্রে। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুমহাকাব্য ও পুরাণ-ভিত্তিক জনপ্রিয় সাহিত্য, সংগীত ও লোকনাট্যের ধারাটি প্রায় সাতশো বছরের পুরনো। উনিশ শতকে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ছিল বাংলার নবজাগরণ ও হিন্দু সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। বিশ শতকের প্রথমার্ধ্বে এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমগ্র বাংলার প্রধান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে আজও অক্ষুণ্ণ। এই সময়েই চলচ্চিত্র পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর। এরপর ১৯৫০-এর দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটকের মতো চিত্র পরিচালকদের আবির্ভাব হয় এবং পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা লাভ করতে শুরু করে।
পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব ব্যাপক। হিন্দুধর্ম পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠের (৭২.৫%) ধর্ম হওয়ায়, এই ধর্মের প্রভাবই সর্বাধিক লক্ষিত হয়। শারদীয়া দুর্গাপুজো পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব। কালীপুজোও মহাসমারোহে উদ্যাপিত হয়। অন্যান্য উৎসবের মধ্যে প্রধান সরস্বতী পুজো, দোলযাত্রা, রথযাত্রা, পয়লা বৈশাখ, বইমেলা, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নেতাজি জয়ন্তী ইত্যাদি।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের বেশি পুরনো। ৭ম শতাব্দীতে লেখা বৌদ্ধ দোহার সঙ্কলন চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য, লোকগীতি, ও পালাগানের প্রচলন ঘটে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা কাব্য ও গদ্যসাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাঢ় বাংলার তথা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ বাংলা ভাষায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার লোক সাহিত্যও সমৃদ্ধ; মৈমনসিংহ গীতিকায় এর পরিচয় পাওয়া যায়। ষাটের দশকে পশ্চিমবঙ্গের হাংরি আন্দোলন , শ্রুতি, শাস্ত্রবিরোধী ও নিমসাহিত্য আন্দোলনগুলি বাংলা সাহিত্যকে একটি নূতন বাঁকবদল এনে দিয়েছিল ।
বাংলার সঙ্গীত বাণীপ্রধান; এখানে যন্ত্রসঙ্গীতের ভূমিকা সামান্য। গ্রাম বাংলার লোক সঙ্গীতের মধ্যে বাউল গান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, গম্ভীরা, কবিগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গ্রামাঞ্চলের এই লোকসঙ্গীতের সাথে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মূলত একতারা, দোতারা, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
নৃত্য বৈশিষ্ট্য
নৃত্যশিল্পের নানা ধরন বাংলায় প্রচলিত। এর মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় নৃত্য, লোক নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ইত্যাদি। দেশের গ্রামাঞ্চলে যাত্রা পালার প্রচলন রয়েছে। কলকাতা-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র শিল্প থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হতে ১০০টি বাংলা চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়।
রন্ধন
বাংলার রান্না-বান্নার ঐতিহ্যের সাথে ভারতীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের রান্নার প্রভাব রয়েছে। ভাত, ডাল ও মাছ বাঙালিদের প্রধান খাবার, যেজন্য বলা হয়ে থাকে মাছে ভাতে বাঙালি। দেশে ছানা ও অন্যান্য প্রকারের মিষ্টান্ন , যেমন রসগোল্লা, চমচম বেশ জনপ্রিয়।
পোশাক
পশ্চিম বাংলার নারীর প্রধান পোশাক শাড়ি। যদিও বর্তমানে নারীদের পোশাকে অনেকটাই পাশ্চাত্য প্রভাব আছে। জিন্স প্যান্ট আর কুর্তা খুবই জনপ্রিয়। পুরুষদের প্রধান পোশাক ধুতি এবং পাঞ্জাবি, তবে বর্তমানে পাশ্চাত্যের পোশাক শার্ট-প্যান্ট প্রচলিত। বিশেষ অনুষ্ঠানে এখনও পুরুষেরা ঐতিহ্যবাহী ধুতি-পাঞ্জাবি আর নারীরা শাড়ি পরিধান করে থাকেন।
ক্রিকেট ও ফুটবল বাংলার জনপ্রিয়তম খেলা। হকি বাংলার(ভারতের) জাতীয় খেলা। অন্যান্য খেলার মধ্যে কাবাডি, হ্যান্ডবল, সাঁতার এবং দাবা উল্লেখযোগ্য। এ যাবৎ ২ জন বাঙালি - দিব্যেন্দু বড়ুয়া এবং সূর্যশেখর গাঙ্গুলি - দাবার আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব অর্জন করেছেন। সৌরভ গাঙ্গুলি বাংলার ক্রিকেটের অন্যতম মুখ। একইসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা অধিনায়াক।