ড্যারেন জন প্যাটিনসন (ইংরেজি: Darren Pattinson; জন্ম: ২ আগস্ট, ১৯৭৯) লিঙ্কনশায়ারের গ্রিমসবি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০০-এর দশকের শেষদিকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন ড্যারেন প্যাটিনসন।
শৈশবকাল
বেশ কয়েক বছর মেলবোর্নের ক্লাব ক্রিকেটে খেলার পর জুলাই, ২০০৮ সালে বড়দের ক্রিকেটে খেলার সুযোগ ঘটে। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবকাল অতিবাহিত করেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সেখানকার ভিক্টোরিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেটে ড্যান্ডেনং ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে কয়েকজন বোলারের আঘাতপ্রাপ্তির কারণে ভিক্টোরিয়া দলের পক্ষে তার খেলার সুযোগ ঘটে। জানুয়ারি, ২০০৭ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম ইনিংসে ৪/৮৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এরপর ঐ গ্রীষ্মে আরও কয়েকটি খেলায় সুন্দর ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৭-০৮ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে তাকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়। তবে, ঐ মৌসুম জুড়ে তিনি মাত্র দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন।
রুফ-টাইলার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পেশাদারী পর্যায়ে খেলোয়াড়ী জীবনের স্বপ্নে বিভোর থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালকে ঘিরে ইংরেজ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে নটিংহ্যামশায়ারের সাথে দুই বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৬ এপ্রিল তারিখে কেন্টের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম ইনিংসে তিনি ৫/২২ লাভ করেন। এরপর, ট্রেন্ট ব্রিজে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ৬/৩০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ড্যারেন প্যাটিনসনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ২৭ বছর বয়সে চুক্তিবিহীন অবস্থায় পুরা কাপ, সীমিত ওভারের ক্রিকেট ও টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে অভিষেক হয়। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪/২৪ লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে, ২০০৭-০৮ মৌসুমে রাজ্য দলের পক্ষে তাকে চুক্তিতে নিয়ে আসা হয়। তবে, দ্বিতীয় মৌসুমে পুরা কাপে তিনি মাত্র দুইটি খেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। দলীয় সঙ্গী ডেভিড হাসি’র সুপারিশক্রমে ড্যারেন প্যাটিনসনকে নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে খেলার সুযোগ এনে দেয়।
দলে যুক্ত হয়েই নটিংহ্যামশায়ারের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হন। ২০১০ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু, ২০১১ সালে আঘাতের কবলে নিপতিত হন ও ২০১২ সালের প্রথম দুই মাসে পিঠের আঘাতে আক্রান্ত হন। তবে, তিনি টুয়েন্টি২০ ও সিবি৪০ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০১২ সালে তিনি কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেননি। পাঁচ বছর দলের সাথে যুক্ত থাকার পর অস্ট্রেলিয়ায় ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভিক্টোরিয়ায় স্বীয় ভ্রাতা জেমস প্যাটিনসনের সাথে একত্রে খেলতে থাকেন ও ডিসেম্বর, ২০১১ সালে জেমস প্যাটিনসন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে এক শতাব্দী পর দুই ভাইয়ের দুইটি ভিন্ন দেশের পক্ষে টেস্ট খেলার গৌরব এনে দেয়।
টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে ড্যারেন প্যাটিনসন কার্যকর বোলারে পরিণত হয়েছিলেন। ২০১১ সালে ১৬ খেলায় অংশ নিয়ে ২৩ উইকেট দখল করেন। সংখ্যার দিক দিয়ে এটি নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে যে-কোন বোলারের চেয়ে শীর্ষে ছিল। তন্মধ্যে, ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৫/২৫ লাভ করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ড্যারেন প্যাটিনসন। ১৮ জুলাই, ২০০৮ তারিখে লিডসে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তাকে কোন ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।
৩ জুলাই, ২০০৮ তারিখে আন্তর্জাতিক দলের পক্ষে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন দেয়া হয়। এ পর্যায়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে ঘিরে ইংল্যান্ডের ৩০-সদস্যের প্রাথমিক তালিকায় তাকে রাখা হয়েছিল। এর এক পক্ষ সময়কাল পর হেডিংলিতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে জেমস অ্যান্ডারসনের সহকারী হিসেবে দলের রাখা হয়। পরদিন পিঠের আঘাতের কবলে পড়ে রায়ান সাইডবটমকে দলের বাইরে রাখা হয়। ফলশ্রুতিতে, ড্যারেন প্যাটিনসনের টেস্ট খেলায় অভিষেকের লক্ষ্যে দলে যুক্ত করা হয়।
নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণেই মূলতঃ তাকে ইংরেজ দলের সদস্যরূপে রাখা হয়। ২০০৮ সালের শুরুরদিকে মাত্র ২০-এর অল্প বেশি গড়ে ২৯ উইকেট লাভ করেছিলেন তিনি। এ সাফল্যটি যে-কোন খেলোয়াড়ের জন্যে উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতিবিশেষ। টেস্টে অংশ নেয়ার পূর্বে তিনি মাত্র ১১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১]
হেডিংলিতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে ২৯তম জন্মদিন উদযাপনের দুই সপ্তাহ পূর্বে ড্যারেন প্যাটিনসনের টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১১ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান তুলে দলের সংগ্রহকে ২০৩ রানে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে জেমস অ্যান্ডারসনের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামেন তিনি। দ্বিতীয় দিন হাশিম আমলা’র উইকেট পান। তবে, টিভিতে ধারণকৃত চিত্রে এলবিডব্লিউ’র সিদ্ধান্তটি সন্দেহজনক ছিল। অ্যাশওয়েল প্রিন্সকে কট বিহাইন্ডে ১৪৯ রানে বিদেয় করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ৫২২ রানে অল-আউট হয়। তিনি ৩০ ওভারে ২/৯৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।[২]
বেশ দূরূহ ক্যাচ তালুবন্দী করেন। মার্ক বাউচারকে বোল্ড করার সুযোগ পান ও ইনিংসের শেষদিকে ডেল স্টেইনের ক্যাচ ফস্কে যায়। তবে, শেষ খেলোয়াড় হিসেবে মাখায়া এনটিনি’র সাথে ডেল স্টেইন অবশ্য স্বল্প সময় পরই বিদেয় নিয়েছিলেন।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩ রান করেন। তন্মধ্যে, স্টুয়ার্ট ব্রডের সাথে ৬১ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। ফলশ্রুতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে পুনরায় ব্যাট হাতে নামতে হয়। তবে, তার বোলিং থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়সূচক রান সংগ্রহ করে ও দশ উইকেটে জয় পায়।
মূল্যায়ন
অনেকটা বিস্ময়করভাবে জুলাই, ২০০৮ সালে হেডিংলিতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নেয়া হলে গণমাধ্যমে যথেষ্ট আলোচিত হন। সাবেক ইংরেজ অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ তার এ অন্তর্ভূক্তিকে তার দেখা অন্যতম মাঠ বহির্ভূত সিদ্ধান্তরূপে গণ্য করেন।[৩]
ক্রিস্টোফার মার্টিন-জেনকিন্স ড্যারেন প্যাটিনসনের টেস্ট অভিষেক হবার বিষয়টিকে ডগলাস কারের সাথে তুলনান্তে মন্তব্য করেন যে, ৯৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের ঘটনাবিশেষ।[৪] সাবেক ইংরেজ অধিনায়ক ইয়ান বোথাম আরও এক ধাঁপ এগিয়ে মন্তব্য করেন।[৫]
আমার দেখা সর্বাপেক্ষা অযৌক্তিক, হতাশাদায়ক ও বাজে নির্বাচনপ্রক্রিয়াবিশেষ। দল নির্বাচকমণ্ডলী ইংরেজ ক্রিকেটকে বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে গেছেন। ইংল্যান্ডের সমর্থকদের পক্ষ থেকে এর উপযুক্ত ব্যাখ্যা দাবী করছি।
আরও একজন সাবেক অধিনায়ক জিওফ্রে বয়কট মন্তব্য করেন যে,[৫]
ইংল্যান্ডের নবনিযুক্ত দল নির্বাচকমণ্ডলীর অন্যতম বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সন্দেহাতীতভাবেই এটি বাজে ধরনের সিদ্ধান্ত ছিল। তাদের ভুলের বিষয়টি বোঝা প্রয়োজন ও উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, বুনো কুঁজোদের দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল গঠন করা সম্ভব নয়।
ইংল্যান্ডের পরাজয়ের পর মাইকেল ভন দল নির্বাচকদের সমালোচনায় মুখরিত হন:[৬]
দৃশ্যতঃ নির্বাচনের বিষয়টি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তবে, একজন ব্যক্তিকে যদি মনোনীত করে তাহলে তুমি টেস্টে পরাজিত হবে না।
ভন পরবর্তীতে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সাথে স্বাক্ষাৎ করে বক্তব্য দেন ও প্রকাশ্যে তা তুলে ধরেন।[৫] বিবিসি রেডিও ফাইভলাইভের ফাইটিং টক আলাপচারিতামূলক অনুষ্ঠানে ম্যাথু হগার্ডের বিপরীতে প্যাটিনসনের অন্তর্ভূক্তির বিষয়ের প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করেন:
এ বছরটি ম্যাথু হগার্ডের আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বছর ছিল। খেলাটি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে। রায়ান সাইডবটম বুধবার আঘাত পান ও মঙ্গলবার ম্যাথু হগার্ডের আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অনুষ্ঠান ছিল। এ পর্যায়ে তিনি সন্দেহাতীতভাবেই হিমশিম খাচ্ছিলেন। সেকারণেই আমরা তাকে দলে রাখতে পারিনি।[৭]
অবসর
ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলা সত্ত্বেও ২০০৯-১০ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে খেলতে যান। তবে, ভিক্টোরিয়ার সেরা বোলারদের অন্যতম ছিলেন না বিধায় দল নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক উপেক্ষিত হন। তার পরিবর্তে কনিষ্ঠ ভ্রাতা জেমস প্যাটিনসনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তবে, জেমসসহ ফাস্ট বোলারদের আঘাতের ফলে মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধ্বে অধিকাংশ সময় খেলতে দেখা যায়।
২০১০ সালে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করে নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে থাকেন। ঐ মৌসুমে নটিংহ্যামশায়ার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয় করে। এ পর্যায়ে তিনি ৩১ উইকেট নিয়ে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ফ্রেন্ডস প্রভিডেন্ট টি২০ প্রতিযোগিতায় ১৭ উইকেট নিয়ে ক্লাবের শীর্ষস্থানীয় উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন।[৮]
২০১০-১১ মৌসুমে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮/৩৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে যাত্রা শুরু করেন ও ভিক্টোরিয়ার জয়ে ভূমিকা রাখেন।[৯]
ড্যারেন প্যাটিনসনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা জেমস প্যাটিনসন ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন।[১০] ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। সোফি ও অলিভিয়া নাম্নী দুই কন্যা সন্তানের জনক তিনি।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ