জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা হলো ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার জাঠিভাঙ্গা এলাকায় বাঙালি হিন্দু ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দেশীয় সহযোগী রাজাকারদের দ্বারা চালিত একটি গণহত্যা।[১][২] পাকিস্তানিদের সহযোগীরা ছিলেন জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরা। গণহত্যার শিকার সকলেই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। ধারণা করা হয়, গণহত্যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩,০০০ জনেরও বেশি বাঙালি হিন্দু প্রাণ হারান।
ঘটনাবলি
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল জগন্নাথপুর, চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চণ্ডীপুর, আলমপুর, বাসুদেবপুর, গৌরীপুর, মিলনপুর, খামারভোপলা, শুকানপুকুরী, ঢাবঢুবসহ ১২টি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায় ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।[৩] যাত্রার এক পর্যায়ে তারা জাঠিভাঙ্গা নামক স্থানে একত্রিত হয়। জাঠিভঙ্গায় আসার পর স্থানীয় দালালেরা তাদের পথরোধ করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে খবর দেয়।[৪] হিন্দু পুরুষদের জাঠিভাঙ্গা মাঠে একত্রিত করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুইটি সামরিক ট্রাকে করে তদস্থলে আগমন করে এবং হিন্দুদের সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। সকালে গণহত্যা শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত চলে। সেনাবাহিনীর প্রস্থানের পর স্থানীয় সহযোগীদরা মৃতদেহ পাশের পাথরাজ নদীর ধারে নিয়ে আসে এবং মাটিচাপা দেয়।[৩]
ঘটনায় ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ জন নিহত হন বলে ধারণা করা হয়।[৫] তবে, হত্যাকাণ্ডে তিন সহস্রাধিক ব্যক্তি নিহত হন বলে স্বীকৃত। আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ জন নারী বিধবা হন বলে ধারণা করা হয়।
স্মৃতিসৌধ
২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার গণহত্যার স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করে।[৩] ২০১১ সালে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়রা নিহতদের স্মরণে শোকর্যালি বের করে এবং স্মরণসভার আয়োজন করে। সভায় বক্তারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবি করেন।[৪]
২০১১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সরকার গণহত্যায় নিহত ৮৯ জনের বিধবা স্ত্রীকে ২,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলারউপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুল ইসলামের মতে, গণহত্যার শিকার পাঁচশত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রীকে ধাপে ধাপে স্কিমের আওতায় আনা হবে।[৬]