ডেমরা গণহত্যা ১৯৭১ সালের ১৩ ই মে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাবনা জেলার বর্তমান ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রামের নিরস্ত্র হিন্দু বাসিন্দাদের উপর নির্মম এই গণহত্যা চালিয়েছিল। অনুমান করা হয় যে একদিনেই ৮০০-৯০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। [১][২] ধর্ষণ ও লুণ্ঠনও করা হয়েছিল এবং মসজিদ, মন্দির, স্কুল ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
পটভূমি
অপারেশন সার্চলাইটের অংশ হিসাবে পাকিস্তানি দখলদার সেনা যখন ঢাকা থেকে বাকি জেলাগুলির দিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন লোকেরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। হিন্দুরা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতে । তাদের পথে তারা ডেমরা ইউনিয়নের বাশগাড়ি নামে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। [২]
ঘটনাবলী
স্থানীয় সহযোগীদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনী বড়াল নদীর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং পরে বাঁশগাড়ি ও রূপসী গ্রাম ঘেরাও করে। [৩] আসাদ নামে এক সহযোগী পাকিস্তানি সেনাদের বাশগাড়ি গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাত্রে পুরুষদের তাদের বাড়ি থেকে টেনে এনে একটি লাইনে দাঁড় করানো হয়, এবং সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা তাদের সামনে মহিলাদের ধর্ষণ করেছিল । এরপরেই নারী-পুরুষ উভয়কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন বেঁচে যাওয়া লোক পরদিন সকালে একটি গণকবরে মৃতদেহ ফেলে রেখে যায়। [৪] বাশগাড়ি গ্রামের প্রায় ৩৫০ জন হিন্দু নিহত হয়েছিল। [২]
তদন্ত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১১ সদস্যের একটি দল ২০১০ সালে ডেমরা গণহত্যার তদন্ত করেছিল। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর সায়েদ রেজাউর রহমান। [২] তদন্তকারীরা বাশগাড়ি গ্রামে হত্যার স্থানগুলি পরিদর্শন করেছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধের সাক্ষীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তাদের তদন্তে তারা মতিউর রহমান নিজামীকে গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডিংয়ের জন্য দোষী বলে মনে করেন। ২০১৬ সালে নিজামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। [৫]
তথ্যসূত্র
- ↑ মো. হাবিবুল্লাহ (২০১২)। "ফরিদপুর উপজেলা"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ ক খ গ ঘ "Nizami the man behind Pabna mass murders"। দ্য ডেইলি স্টার। নভেম্বর ৭, ২০১০। এপ্রিল ১, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৪, ২০১২।
- ↑ "Demra massacre day today"। দ্য ডেইলি স্টার। মে ১৩, ২০০৯। জুলাই ২৫, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৩, ২০১২।
- ↑ Ahmed Humayun Kabir Topu (জানুয়ারি ২৮, ২০১২)। "Martyrs Without Names"। Star Insight। জুলাই ২৫, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৭, ২০১৪।
- ↑ "Nizami executed"। দৈনিক প্রথম আলো। ১১ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৬।