ঘাট শব্দটি সংস্কৃত ঘট্ট (সংস্কৃত: घट्ट) থেকে জাত।[৩]
ঘাটের ধরণ
পার্বত্য ঘাট
হিন্দি ভাষায় ঘাটী (घाटी) মানে উপত্যকা। [৪]মারাঠি, হিন্দি, গুজরাটি ও কন্নড় ভাষায় ঘাট শব্দটি ব্যবহার করা হয় কোন পাহাড়ের উপর দুর্গম সরু পথ বোঝাতে।[৫]
এমন একটি পথ হলো ভোর ঘাট যেটা মুম্বইয়ের প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মা) উত্তরে জাতীয় সড়ক ৪৮ উপর খোপোলি এবং খন্ডালা, শহর দুটিকে সংযোগ করেছে। কর্নাটকের চারমাদি ঘাটও উল্লেখযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রেই "পশ্চিমঘাট" এবং "পূর্বঘাট"-এর মতো ঘাট শব্দটি পর্বতমালাকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঘাট্টাম মালায়ালাম ভাষায়ও এ রকম পর্বতমালা বোঝায় যখন ঐ পর্বতমালাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, যেমন পাসচিমা ঘাট্টাম, অর্থাৎ পশ্চিমঘাট। ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী স্থলভাগে পূর্বঘাট এবং পশ্চিম তীরের পশ্চিমঘাট ভারতের পার্বত্য এলাকায় সবচেয়ে বড় ঘাট। [৬]
পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, যা সহ্যাদ্রি (কল্যাণময়ী পাহাড়) নামেও পরিচিত, ১,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৫৪,০০০ মা২) জুড়ে বিস্তৃত এক পর্বতমালা যা ভারতের পশ্চিম উপকূলবর্তী স্থলভাগের ১,৬০০ কিলোমিটার (৯৯০ মা) সমান্তরাল ভাবে বর্ধিত হয়েছে এবং কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত রাজ্যের মধ্যে দিয়ে পেরিয়ে গেছে।[৭] এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এবং জীব বৈচিত্র্য অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় আটটি স্থানের মধ্যে অন্যতম।[৮][৯] কখনও কখনও এটাকে ভারতের বিশাল খাড়া উঁচু পাহাড় বলে ডাকা হয়। [১০] ভারতের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের একটা বড় অংশে এখানে আছে, এটা জীব বৈচিত্রের একটা উৎকৃষ্ট নমুনা এবং অনেক কিছুই শুধু মাত্র এই এলাকায় আছে, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও খুজেঁ পাওয়া যাবে না।[১১]ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমঘাট হিমালয়ের চেয়েও পুরাতন। এটা গ্রীষ্মের শেষের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে আসা ভেজা মৌসুমির ঝড়ো হাওয়ার দিক অদল বদল করে দিয়ে ভারতের মৌসুমি আবহাওয়ার ধরনও বদলে দেয়।[১২].এর সীমানা উত্তর থেকে দক্ষিণে ডেকান মালভূমির পশ্চিম পাড় পর্যন্ত যেটা আরব সাগরের পার্শ্ববতী কোঙ্কণ নামের সরু উপকূলীয় সমভূমিকে এই মালভূমি থেকে আলাাদা করেছে। সর্বমোট ৩৯টি স্থাপনাকে বিশ্বজনীন ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা ধরা হয় যার মধ্যে আছে জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং সংরক্ষিত অরণ্য। এর মধ্যে ২০টি কেরলে, ১০টি কর্ণাটকে, ৫টি তামিলনাড়ুতে ও চারটি মহারাষ্ট্রে অবস্থিত।[১৩][১৪] ঘাটি, যার আভিধানিক অর্থ "পাহাড়ের বা ঘাটের (উপত্যকা) বাসিন্দা", পশ্চিমঘাটের মারাঠি লোকদের বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত, অনেকটা নিন্দাসূচক অর্থে।[১৫][১৬][১৭]
পূর্বঘাট পর্বতমালা পশ্চিমঘাটের মতো উচ্চ নয় এবং পূর্বঘাট পর্বতমালা পশ্চিমঘাটের চেয়ে পুরাতন এবং এর নেপথ্যে আছে অতিমহাদেশরডিনিয়ার ভাঙ্গা গড়া ও গন্ডোয়ানা নামক অতিমহাদেশ তৈরি হওয়ার জটিল এক ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস। পূর্বঘাট পর্বতমালা গঠিত হয়েছে বিভিন্ন রকম চারনোকাইট, গ্র্যানাইট পাথরনাইস্, খন্ডালাইট, রূপান্তরিতনাইস ও কোয়ার্টজাইট পাথরের স্তরসমষ্টি তৈরীর মাধ্যমে। পূর্বাঞ্চলীয় ঘাটগুলোর পুরো গঠনপ্রনালীতে দেখা যায় শিলাখন্ডগুলোর পারস্পরিক সংঘর্ষ এবং সমান্তরাল ভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার নমুনা । [১৮] পূর্ব ঘাটের পাহাড়গুলোতে পাওয়া যায় চুনাপাথর, অ্যালুমিনিয়ম-ঘটিত আকরিক এবং লৌহ আকরিক।
নদীর ঘাট
গঙ্গানদীর পাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাট হলো বারাণসীর ঘাট (বারাণসী শহরে ৮৮টি ঘাট আছে) এবং এগুলি "গঙ্গানদীর ঘাট" বলেই পরিচিত। এর বেশিরভাগই তৈরি হয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীতে মারাঠা শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়, যেমন অহল্যাবাই হলকার (১৭৬৭ থেকে ১৭৯৫ পর্যন্ত মালোয়া রাজ্যের রাণী)।[১৯]
শ্মশান - শবদাহ ঘাট
এ রকম ঘাটগুলো পার্থিব কাজ (যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ) এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা আচার যেমন পূণ্যস্নান বা অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান উভয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে; এ ছাড়াও "শ্মশান" "শবদাহ" বা মৃতদেহ সৎকার করার জন্য করার জন্য নদীর তীরে সুনির্দিষ্ট ঘাট আছে। নদীর তীরে হবার জন্য মৃতদেহের ভষ্ম নদীর পানিতে সহজেই ভেসে যেতে পারে। এ কাজের জন্য উল্লেখযোগ্য ঘাট হলো নিগমবোধ ঘাট এবং দিল্লিতেযমুনার তীরে অবস্থিত রাজ ঘাট। এই রাজ ঘাটেই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর শবদাহ শেষকৃত্য করা হয়েছিল এবং তার পরে আরও অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। এরপর আছে গঙ্গার পাড়ে বারাণসীতে মানিকর্ণিকা ঘাট।
পাক ভারত উপমহাদেশের বাইরে কোন কোন এলাকায় যেখানে ভারতীয় সম্প্রদায় বসবাস করে সেখানেও এই শব্দটির ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন, মালয়শিয়ারজর্জ টাউন, পেনাংএ, জেটি হিসেবে পুনরুদ্ধার করার আগে, এই "ঘাট" শব্দটির প্রচলন ছিল ঐ সব রাস্তার বর্ধিত অংশকে বোঝাতে যেগুলো আগে কোন ঘাটে গিয়ে শেষ হতো। (উদাহরণ স্বরুপ, চার্চ সেন্ট ঘাট - মালয়ভাষায়গাত লেবুহ গেরেজা -চার্চ সড়কের বর্ধিত অংশের নাম যেটা পার হয়ে ঘাট পেরিয়ে নদীর পানিতে নামতে হতো।) পেনাং এবং সিঙ্গাপুর,দুই এলাকায়ই ধোবি ঘাট নামে জায়গা আছে। (ব্যক্তি না ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বোঝান হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে ধোবি শব্দটি "ধোলাইকারী" বা "ধোপাখানা" বোঝাত।)
আপ্রবাসী ঘাট বা দ্য ইমিগ্রেশন ডিপোভারত মহাসাগরেরমরিশাস দ্বীপের পোর্ট লুইসে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত একটি দালান।
এই দ্বীপটি প্রথম বৃটিশ উপনিবেশ যেখানে ভারত থেকে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কর্মী আনার ব্যাপারে শর্ত নির্ধারন করা হয়।[২১]
১৮৪৯ সাল থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত, পঞ্চাশ লক্ষ ভারতীয় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কর্মী এই ইমিগ্রেশন ডিপোর মাধ্যমে গৃহীত হয় এবং ব্রিটিশ রাজত্বের বিভিন্ন জায়গায় চাষাবাদের জন্য স্থানান্তরিত করা হয়। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক অন্য দেশে স্থায়ী হওয়ার কারণে ভারতীয় অধ্যুষিত সাবেক অনেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতীয় বংশোদ্ভুত নাগরিক দিয়ে গঠিত এবং তারা এ সমাজে একটা চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। [২২]
শুধু মরিশাসেই বর্তমান মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাশেরও বেশি ভারতীয় বংশধর। এভাবেই ইমিগ্রেশন ডিপো মরিশাসের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। [২৩][২৪]
↑নভনীত মারাঠি ইংলিশ ডিকশনারী। মুম্বাই ৪০০০২৮: নভনীত পাবলিকেশন্স (ইন্ডিয়া) লিমিটেড। ২০০৯-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑এক্, ডায়ানা এল, (১৯৯৯)। Banaras : city of light (repr. সংস্করণ)। নিউ ইর্য়ক: কলম্বিয়া ইউনির্ভাসিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৯০,২২২। আইএসবিএন9780231114479। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭।