বয়নাড় জেলা, দক্ষিণভারতে অবস্থিত কেরল রাজ্যের ১৪ টি জেলার একটি জেলা৷ কেরলের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত এই জেলাটির জেলা সদর রয়েছে কালপেট্টা শহরে। সমগ্র জেলাটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উচ্চভূমি অঞ্চলে অবস্থিত, সমুদ্রতল থেকে জেলাটির উচ্চতা ৭০০ থেকে ২১০০ মিটারের মধ্যে হেরফের করে। [৪] ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ২লা নভেম্বর তারিখে কেরালার ১২ তম জেলা হিসেবে পূর্বতন কালিকট এবং কণ্ণুর জেলার কিছু কিছু তালুক নিয়ে নতুন বয়নাড় জেলা গঠন করা হয়। জেলাটির প্রায় ৮৮৫.৯২ বর্গ কিলোমিটার ঘন জঙ্গলে আচ্ছন্ন,[৫] এবং এটি কেরালার বনবিভাগের রক্ষণাধীন। বয়নাড় জেলায় রয়েছে তিনটি পুরসভা, এগুলি হলো—কালপেট্টা, মানন্তবাড়ি এবং সুলতান বতেরি। এই অঞ্চলে একাধিক জনজাতির বসবাস। [৬][৭]
নামকরণ
"বয়নাড়" শব্দটি এসেছে মালয়ালম শব্দ "বয়ল নাড়ু" থেকে, যেখানে বয়ল শব্দের অর্থ ধানখেত এবং নাড়ু শব্দের অর্থ ভূমি৷ [৫]
ইতিহাস
ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যীশু খ্রিস্টের জন্মেরও অন্ততপক্ষে দশ শতাব্দী পূর্বেও কেরালায় মনুষ্যবসতি ছিলো। বর্তমান বয়নাড় জেলার বিভিন্ন পাহাড় ও পাহাড়ের গুহায় নব্য প্রস্তর যুগে খোদিত একাধিক গুহাচিত্র রয়েছে যা ওই সময়ে এই অঞ্চলে মনুষ্যবসতির প্রামাণ্য তথ্য। এই জেলার এড়ক্কাল গুহায় প্রাপ্ত খোদাই কর্মগুলি ছয় হাজার বছর পুরনো নিওলিথিক যুগের বলে মনে করা হয়। তবে অষ্টম শতাব্দী থেকে এই জেলার লিখিত ইতিহাস সবিস্তারে পাওয়া যায়। পুরাকালে কেরালার এই অঞ্চল বেদ জনজাতির রাজাদের দ্বারা শাসিত হতো। [৮]
চের রাজবংশ
বয়নাড় জেলার লিপিভুক্ত ইতিহাসের খণ্ডের প্রামাণ্য অনুসারে এই জেলায় চের রাজবংশের প্রভাব প্রথম লক্ষ্য করা যায়। এই রাজবংশটি খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রথম অথবা দ্বিতীয় শতকের খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমগ্র কেরালা সহ কন্যাকুমারী জেলা এবং তামিলনাড়ুর পূর্বদিকের একাধিক জেলায় নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমান কেরালার উত্তর দিকে অবস্থিত কাসারগড়-কণ্ণুর-বয়নাড় জেলার সিংহভাগ অঞ্চলই মূষিক রাজবংশের অধীনস্থ ছিল। এই মূষকরাই পরবর্তীকালে কোলাদ্রি নামে পরিচিত হয়, তারা চের রাজাদেরই আত্মীয় ছিল। ঠিক একই রকমভাবে চের রাজাদেরই আত্মীয় ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবার শাসন করতো বর্তমান কন্যাকুমারী-তিরুবনন্তপুরম-কোল্লাম জেলার অঞ্চলগুলিতে। [৯][১০]
কুদুম্বীয় রাজবংশ
সুলতান বতেরির অম্বুকুঠি(মালা) পর্বতের দুটি গুহায় প্রাপ্ত (উভয়ই এড়ক্কাল গুহালেখ) গুহাচিত্র এবং খোদাই থেকে বিভিন্ন খণ্ডে যথেষ্ট পরিমাণ প্রাচীন নগরায়নের চিত্র অঙ্কিত হয়। এড়ক্কাল গুহার পর্বতপাদদেশে পুরাতন কন্নড় লিপিতে মহীশূরের কুদুম্বীয় রাজবংশের কন্নড়ীয় সেনাধ্যক্ষ বিষ্ণু বর্মার বেশকিছু অনুশাসন পাওয়া যায়৷ ঐতিহাসিকদের মতে এগুলি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর সময়ে খোদিত৷ এই অনুশাসন পাঠোদ্ধার করে পাওয়া গিয়েছে - 'পলপুলিতানমতকারি' অথবা 'পল পুলিনানম তকারি', শ্রী বিষ্ণুবর্মা কুটুম্ব্য কুলবর্দ্ধনস্য লি..ইত..আ..'৷ মাদ্রাজের সূত্রলিপিউৎকীরণ বিভাগের প্রধান লিপ্যোদ্ধারক স্যার হাল্জ-এর মতে, এই অনুশাসনটি কুদুম্বীয় রাজবংশের রাজকুলের শ্রেষ্ঠ তথা কন্নড় সেনাধ্যক্ষ বিষ্ণুবর্মার বীরত্ব ব্যক্ত করতে একাাধিক বাঘ হত্যার কথা উল্লেখ রয়েছে৷ আবার একাধিক ঐতিহাসিক এবং পণ্ডিতদের মতে কুদুম্বীয় এবং স্থানীয় কুরুম্বেরা একি রাজবংশ তথা সমার্থক। [১১][১২][১৩]
কদম্ব রাজবংশ
খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে কদম্ব রাজারা উত্তর কন্নড় অঞ্চলের গঙ্গ রাজাদের সিংহাসনচ্যুত করে।[১৪][১৫] এইসময় বয়নাড় অঞ্চল দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল, সেগুলি হল - বীর বয়লনাড় এবং চগি বয়লনাড়। মহীশূর অনুশাসনগুলির (সম্ভবত এগুলিতে উক্ত দেশের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের ফলে একাধিক বহিরাগত আক্রমণ এবং তাদের ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর কথা উল্লেখ রয়েছে) একটিতে উল্লেখ রয়েছে 'এই বায়ল ভূমিরই একটি বহুতলা বাড়ীতে থাকতেন কাল কুঞ্চিত চুল যুক্তা, পূর্ণচন্দ্র মুখসদৃশা, অপাঙ্গ দৃষ্টিযুক্তি এবং কৃষাঙ্গ দেহিনী চারজন পৃথক পৃথক অথবা উক্ত সকল বৈশিষ্ট্যসম্পন্না একজন নির্দিষ্ট ব্যভিচারিণী নারী।[১৬] বয়লনাড় খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর কালে কদম্ব ও রাজা রবিযম্মারস-এর এর শাসনকালে কদম্ব রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সেই সময় বয়লনাড়ের রাজধানী ছিলো পুন্নাড়। আবার ১০৯০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে কান্তিরাও-এর চগি বয়লনাড় অঞ্চলের রাজত্ব করার কথা উল্লেখ রয়েছে। ১১০৮ স্টাতে বীর বয়লনাড় অঞ্চলের শাসক ছিলেন রাজা রবি চল্লাম্মা।
হৈসল রাজবংশ
১১০৪ খ্রিস্টাব্দে হৈসল রাজ বংশের রাজা বিষ্ণুবর্ধন বয়লনাড় অঞ্চল আক্রমণ করে। তবে এরই মাঝে ১১৩৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কদম্ব রাজা মুক্কন্ন এই অঞ্চল শাসন করতেন বলেও জানা যায়।[১৭]
বিজয়নগর সাম্রাজ্য
হৈসল সাম্রাজ্যের পতনের পর খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজারা এই অঞ্চলের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। বিজয়নগরের সঙ্গম রাজবংশীয় এক সেনাধ্যক্ষ ইম্মাড়ি কদম্ব রায় বোডেয়াইয়া বয়লনাড় অঞ্চল শাসন করতেন বলে জানা যায়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মহীশূর ওয়াদেয়ার ও সুলতানী শাসন
১৬১০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মহীশূরের ওয়াদিয়ার রাজা উদয়র বয়লনাড় থেকে বিজয়নগরের সেনাধ্যক্ষকে অপসারিত করেন এবং নিজে বয়ালনাড়ু ও নীলগিরি শাসক হিসাবে পদগ্রহণ করেন৷ এই বয়লনাড়ই বর্তমান বয়নাড়৷ হায়দার আলির শাসনকালে এই অঞ্চলে বৈতিরী থেকে তাম্রসেরি পর্যন্ত গিরিপথ তৈরী করা হয়, যা ঘাটরোড নামে পরিচিত৷ [১৮] পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসকরা এই পথটি কার্টার রোড পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করেন৷ [১৯] টিপু সুলতানের রাজত্বকালে বয়লনাড়ুতে ব্রিটিশদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ এরপর সাম্রাজ্যের ওপর বহু ঝড়ঝঞ্ঝা ও প্রতিকূলতা আসে৷ ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি টিপু সুলতানের সাথে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি অনুসারে মালাবার অঞ্চল এর অংশ হিসেবে বয়নাড় দাবি করেন টিপু সুলতান ব্রিটিশ কোম্পানির গভার্নমেন্ট জেনারেল এর নিকট নিজের হার মেনে নেন। কিন্তু তার যুক্তি অনুযায়ী, বয়নাড়ের ওপর দীর্ঘ শতক ধরে কর্নাটকের কন্নড় রাজাদের আধিপত্যের দলিল এবং মালাবার অঞ্চল থেকে বয়নাড় অঞ্চলের ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক পার্থক্যকে প্রামাণ্য হিসেবে ধরে, ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড মর্নিংটন ঘোষণা করেন যে,[২০] ১৭৯২ এর চুক্তি অনুযায়ী বয়নাড় অঞ্চলকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সমর্পিত করা হয়নি। একই সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বয়নাড়ের ওপর থেকে তাদের ব্রিটিশ সেনাদের সরিয়ে নিয়ে টিপু সুলতানকে রাজত্বের দায়ভার ছেড়ে দেন। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের পর ওই বছরই মহীশূর চুক্তির দ্বারা ব্রিটিশ কোম্পানি মহীশূর রাজাকে এটি হস্তান্তর করেন। কিন্তু ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্য একটি পরিপূরক চুক্তির মাধ্যমে বয়নাড়কে প্রশাসনিকভাবে চোলদের অধীনস্থ করা হয়। আর্থার ওয়েলেসলি সাথে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি অনুসারে উত্তর বয়নাড় প্রাচীন কোট্টায়ম রাজবংশের পোলাচি রাজার শাসনাধীন হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্রিটিশ শাসন
অন্তিমে ব্রিটিশরা গভীর ডঙ্গলের ভেতর থেকে আত্মহননকারী রাজার মৃতদেহ উদ্ধার করেন৷ এভাবে বয়নাড় ব্রিটিশদের হস্তোগত ক্ষয় এই ধীরে ধীরে এটি গড়ে পরিণত হয়৷ বয়নাড়ুর দুরূহ খাঁড়াই পর্বতগাত্রে সড়ক নির্মাণ করে তারা জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চলগুলিতে চা এবং অন্যান্য একাধিক ফসল চাষে উৎসাহ দিতে থাকেন৷ নির্মিত হয় কালিকট ও তালসেরি অবধি বিস্তৃত সড়ক৷ পরে তারা গুড়লুর হয়ে কালপেট্টা থেকে মহীশূর এবং ঊটি অবধি পাকা সড়ক নির্মাণ করান৷ কেরালার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু মানুষ এখানে এসে বসবাস করা শুরু করেন এবং সময়ের সাথে বয়নাড় অর্থনৈতিক ফসলোৎপাদনের অন্যতম স্থানে পরিণত হয়৷ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে এই অঞ্চলে কৃষিকার্যের প্রসার বৃদ্ধি পায়৷ ঘটনাচক্রে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও ভাষার ভিত্তিতে এটি কেরালা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ এখনো এই জেলাতে যথেষ্ট পরিমানে ভাষিক সংখ্যালঘু কন্নড়ভাষী ও কন্নড় রাজাদের রাজত্বশাসনের বহু প্রমাণই প্রকট৷ ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে কেরালা রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার সময়ে বর্তমান বয়নাড়ু জেলাটি পূর্বতন কণ্ণুর জেলার অংশ ছিলো৷ পরবর্তীকালে দক্ষিণ বয়নাড় অঞ্চল পূর্বতন কালিকট জেলার সহিত সংযুক্ত করা হয়৷ উন্নতির স্বার্থে বয়নাড় অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি পূরণ করতে কণ্ণুর জেলা থেকে উত্তর বয়নাড় ও কালিকট থেকে দক্ষিণ বয়নাড় যুক্ত করে একটি অবিচ্ছিন্ন বয়নাড় জেলা গঠন করা হয়৷ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে কেরালার ১২তম জেলারূপে বয়নাড় জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়৷ [২১] নবগঠিত জেলাহ তিনটি তালুক হলো যথাক্রমে; বৈতিরি, মানন্তবাড়ি, এবং সুলতান বতেরি৷
আদিবাসী
কেরালার সর্বাধিক জনজাতিবহুল জেলা হলো এই বয়নাড় জেলা, এখানে রয়েছে আটটি জনগোষ্ঠী৷ এগুলি হলো; আদিয়ান, পণিয়ান, মুল্লুকূর্মণ, কুরিচ্যন, বেত্তাকূর্মণ, বয়লনাড় কাদার, কট্টুনিয়াকন এবং তচানদন মূপ্পন৷ প্রতিটি জনগোষ্ঠীরই নিজেদের পৃথক ভাষিক ঐতিহ্য ও বৈচিত্র রয়েছে৷ [২২]
ভূগোল
বয়নাড় জেলাটি দাক্ষিণাত্য মালভূমির দক্ষিণ দিকে অবস্থিত এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণাংশের পর্বতের ওপর অবস্থিত। জেলাটির একটি বৃহৎ অঞ্চল জঙ্গলাচ্ছন্ন হলেও ইদানীংকালে ঘটে যাওয়া একাধিক বন বিপর্যয়ের ঘটনা জনসমক্ষে উঠে এসেছে, যা ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণপ্রাকৃতিক সম্পদের উৎসের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। [২৩] জেলাটিতে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার গাত্র বরাবর একাধিক ট্র্যাকিংয়ের পথ রয়েছে, যা রাজ্যের পর্যটনকেও ত্বরান্বিত করে। বয়নাড় জেলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি হল ২১০০ মিটার উচ্চ চেম্ব্রা শিখর, এছাড়াও রয়েছে ২০৭৯ মিটার উচ্চ বাণাসুর শিখর।
জেলাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলাধার এবং জলের উৎস রয়েছে। জলবিভাজিকা অবস্থিত হওয়ার ফলে এই জেলাতে পূর্ববাহিনী এবং পশ্চিমবাহিনী উভয় প্রকার নদী বিদ্যমান। কাবেরী নদীর অন্যতম উপনদী কাবিনী এই জেলার প্রধান নদীগুলির একটি, এছাড়া কেরালা তিনটি পূর্ব বাহিনী নদীর মধ্যে একটি এই নদী। কাবিনী নদীর একাধিক উল্লেখযোগ্য উপনদী হল; তিরুনেল্লি নদী, পানমরম নদী এবং মানন্তবাড়ি নদী। এই ছোট ছোট নদী গুলি জেলাটিতে পর্যাপ্ত জলের উৎস এবং তার সাথে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের উপস্থিতি পর্যটক অনুকূল। পানমরম একাধিক উপর নদী বিধৌত জল একত্রিত করে গর্ভবতীর সংকীর্ণ কাঁধ বরাবর বয়ে পানমরম উপত্যকায় প্রবেশ করে। এই জেলা অতিক্রম করে বেশ কিছুটা দূরত্ব পর নদীটি তোণ্ডারমুড়ি নিম্ন উপত্যকা থেকে সৃষ্ট মানন্তবাড়ি নদীর সহিত মিলিত হয়। [২৪]
কালপেট্টায় অবস্থিত কাবিনী নদীর উপনদী কারমনতোড়ু নদীর ওপর বাণাসুর সাগর বাঁধ ভারতের বৃহত্তম এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভূ-বাঁধ বলে মনে করা হয়। বাঁধটি বানাসুর পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ার কারণে উহার এইরূপ নামকরণ। বাণাসুর ছিলেন কিরল এর বিখ্যাত শাসক তথা পুরাণে বর্ণিত রাজা মহাবলীর পুত্র। কাক্কয়ম হাইড্রো-ইলেকট্রিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে, সেচের জলের চাহিদা পূরণ করতে এবং পানীয় জলে সুলভ করতে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে বাণাসুর সাগর বাঁধ তৈরি প্রকল্পটি চালু করা হয়। কালপেট্টা থেকে ২১ কিলোমিটারে দূরে অবস্থিত এই বাঁধটি জেলার অন্যতম পর্যটন স্থল৷ বাঁধটি বৃহদাকৃতি পাথর ও বোল্ডারের দ্বারা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত৷[২৭]
কারাপ্পি বাঁধ
কাবিনী নদীর উপনদী কারাপ্পি নদীর ওপর নির্মীত কারাপ্পি বাঁধ ভারতের বৃহত্তম বাঁধগুলির একটি৷ বাঁধটি বৈতিরি তালুকের বলবট্টতে অবস্থিত৷ এই বাঁধটির জল বয়নাড় জেলার বৈতিরি তালুক এবং পার্শ্ববর্তী সুলতান বতেরি তালুকের মোট ৫৫৮০-৫৬০০ হেক্টর জমিতে সেচকার্যের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ জলাধারটির সর্বাধিক মোট ধারণক্ষমতা ৭৬.৫০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার এবং সাধারণ ধারণক্ষমতা ৭২ মিলিয়ন কিউবিক মিটার জল।[২৮]
অর্থনীতি
২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের গ্রামীণ বিকাশ এবং পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রণালয় বয়নাড় জেলাটিকে ভারতের তৎকালীন ৬৪০ টি জেলার মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া আড়াইশো টি জেলার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে। [২৯] এরকম পিছিয়ে পড়া জেলার তকমা প্রাপ্ত কেরালার দুটি জেলার মধ্যে বয়নাড় একটি। জেলাটি ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ড বা বিআরজিএফ এর আওতাভুক্ত।[২৯]
কেরালার অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে জেলা সদরের নাম থেকেই সমগ্র জেলাটির নাম এসেছে কিন্তু বয়নাড় ও ইদুক্কি জেলা দুটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। এই জেলাতে বয়নাড় শহর নামে কোন নেই।
২০১১ খ্রিস্টাব্দে ২০১১ ভারতের জনগণনা ভারতের জনগণনা অনুসারে বয়নাড় জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ৮,১৭,৪২০ জন,[৩১] যা কোমোরোস রাষ্ট্রের জনসংখ্যার সমতুল্য।[৩২] এটি কেরালার সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বিশিষ্ট জেলা। জনসংখ্যার বিচারে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মোট ৬৪০ টি জেলার মধ্যে এই জেলাটি ৪৮২তম স্থান অধিকার করেছে। জেলাটির জনঘনত্ব ৩৮৩ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৯৯০ জন/বর্গমাইল)। ২০০১ থেকে ২০১১ শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যেই জেলাটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৬০ শতাংশ। বয়নাড়ে প্রতি হাজার পুরুষে জন ১০৩৫ নারী বাস করেন। জেলাটিতে মোট সাক্ষরতার হার ৮৯.০৩ শতাংশ, যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৯২.৫১ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ৮৫.৭০ শতাংশ।
জেলাটির আদি অধিবাসীরা হলেন পণিয়া, উরালি কুরুম এবং কুরিচ্যরা৷ এখানে মোট ২১টি পল্লীগ্রামে বাডাগা জনজাতির লোকেরা বসবাস করেন৷ [৩৩] লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে এন্ড হিস্টরি অব কলোনেল উইলক্স অনুসারে সম্পূর্ণ বয়নাড় অঞ্চলটিই কন্নড় ভাষী অঞ্চল ছিল, যদিও পরবর্তীকালে রাজ্য পুনর্গঠন আইনে এটির মালায়ালাম ভাষী জেলা হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। [৩৪]
২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ২২শে মে তারিখে ইলেকশন কমিশন সুলতান বতেরিতে প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং ভোটার ভেরিফিকেশন পেপার অডিট ট্রায়াল মেশিনদুটি আনেন। [৩৫]
কালিকট থেকে কোল্লেগাল অবধি বিস্তৃত জাতীয় সড়ক ৭৬৬ (ভারত)|৭৬৬ নং জাতীয় সড়কটি বয়নাড়ু জেলার পশ্চিম থেকে পূর্বে বিস্তৃত৷ এই সড়কটি কেরালা-তামিলনাড়ু সীমান্তে বন্দীপুর জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘায়িত৷
তথ্যসূত্র
↑"ABOUT WAYANAD"। wayanadtourism.org। ১৭ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২০।
↑Francis, Walter (১৯০৮)। Madras District Gazetteers: The Nilgiris। 1। New Delhi: Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 90–94, 102–105। আইএসবিএন978-81-2060-546-6।
↑Rice, B. Lewis (১৯০২)। Epigraphica Carnatica(পিডিএফ)। Mangalore: Government of India। পৃষ্ঠা 24, 28, 32। ২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২০।
↑Madrass District Gazetteeers, The Nilgiris. By W. Francic. Madras 1908 Pages 90-104
↑Report of the Administration of Mysore 1863-64. British Parliament Library
↑Proclamation No:CLXXXLL, A. Collection of treaties and engagements, By W.Logan, Calicut 1879
↑ কখMinistry of Panchayati Raj (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "A Note on the Backward Regions Grant Fund Programme"(পিডিএফ)। National Institute of Rural Development। ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১।
↑US Directorate of Intelligence। "Country Comparison: Population"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১১। Comoros 794,683 July 2011 est.