রাজকুমারী বিবিজী অমৃত কৌরডি সেন্ট জে (২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৮৯ – ৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪)[১] ভারতের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং দশ বছর কাজ করেন। তিনি একজন বিখ্যাত গান্ধিবাদী, মুক্তিযোদ্ধা এবং সামাজিক কর্মী ছিলেন। যে সংগঠনটি ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, কৌর তার সদস্য ছিলেন।
প্রথম জীবন
অমৃত কৌর, ১৮৮৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি, উত্তর প্রদেশেরলখনউতে (তখন যুক্ত প্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। রাজা হরনাম সিংএর জীবিত আটটি সন্তানের মধ্যে, ছিলেন, তিনি এবং তার সাত ভাই। তার বাবা ছিলেন পাঞ্জাব অঞ্চলেকাপুরথালা রাজ্যের রাজকীয় পরিবারের সদস্য।[২] তার মা ছিলেন রাণী প্রিসিলা কৌর সাহিবা (বিবাহপূর্ব প্রিসিলা গোলোকনাথ)।
রাজা হরনাম সিং, গোপালকৃষ্ণ গোখলে সহ অন্যান্য কংগ্রেস (আই এন সি) নেতাদের আস্থাভাজন ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ভারতে ফিরে আসার পর, তার বাবার বাড়িতে আসা এই নেতাদের দেখে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আগ্রহী হন। ১৯১৯ সালে, মুম্বই (মুম্বই)তে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করার পরে, দেশের জন্য গান্ধিজীর চিন্তা ও স্পষ্ট ধারণা তাকে গান্ধিজীর দিকে আকৃষ্ট করে। সেই বছরেই ব্রিটিশ রাজের সৈন্য দ্বারা ঘটিত কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, যেখানে অধিকাংশ শিখদের হত্যা করা হয়েছিল, ব্রিটিশ রাজ থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাকে দৃঢ় বিশ্বাস দেয়। তিনি আইএনসিতে যোগ দেন, এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং ভারতের সামাজিক সংস্কার কর্মকান্ডেও অংশ নিতে শুরু করেন।
১৯৩০ সালে, গান্ধী নেতৃত্বাধীন ২৪০ মাইল লবণ সত্যাগ্রহে তার অংশগ্রহণের জন্য ব্রিটিশ রাজ কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারে পাঠায়।
তিনি ১৯৩৪ সালে মহাত্মা গান্ধীর আশ্রমে বাস করতে যান। তার জীবনযাপন অভিজাত হওয়া সত্ত্বেও, সেখানে তিনি সাধারণ জীবন যাপন করেছিলেন। তিনি ১৬ বছর ধরে গান্ধীর সচিবদের একজন হিসেবে কাজ করেছিলেন।
আই এন সি এর প্রতিনিধি হিসাবে, ১৯৩৭ সালে, তিনি একটি শুভেচ্ছা মিশনে বান্নু তে যান। আজকের দিনে এটির নাম খাইবার - পাখতুনখোয়া। ব্রিটিশ রাজ কর্তৃপক্ষ তাকে রাজদ্রোহে অভিযুক্ত করে এবং কারাদন্ড দেয়।
১৯৪২ সালে, তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেন, এবং রাজ কর্তৃপক্ষ তাকে আবার কারাগারে পাঠায়।
তিনি সর্বজনীন মৈত্রীর পক্ষে ছিলেন, এবং ভারতীয় ভোটাধিকার ও সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে লোথিয়ান কমিটির সামনে এবং সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে ব্রিটিশ সংসদের যৌথ নির্বাচন কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
তিনি অল ইন্ডিয়া উইমেন্স এডুকেশন ফান্ড এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নতুন দিল্লির লেডি আরউইন কলেজের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ রাজ তাকে শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন; (তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছিলেন)। তিনি লন্ডন ও প্যারিসে যথাক্রমে ১৯৪৫ এবং ১৯৪৬ সালে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি অল ইন্ডিয়া স্পিনারস এসোসিয়েশন এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি নিরক্ষরতা কমাতে এবং বাল্যবিবাহ এবং কিছু ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত মহিলাদের পর্দা প্রথাকে নির্মূল করার জন্য কাজ করেছিলেন।
স্বাধীনোত্তর সময়ে কাজ
তিনি সংবিধান পরিষদের অংশ ছিলেন।[৩] এছাড়াও তিনি মৌলিক অধিকারের উপর উপ-কমিটি এবং সংখ্যালঘুদের উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। [৪]
ভারতের স্বাধীনতার পর, অমৃত কৌর জওহরলাল নেহ্রুর প্রথম মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন; তিনি মন্ত্রিপরিষদ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম মহিলা ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত হন এবং মন্ত্রিসভায় জন মাথাই এবং তিনি, এই দুজনই মাত্র ভারতীয় খ্রিস্টান ছিলেন। ১৯৫০ সালে, তিনি ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির সভাপতি নির্বাচিত হন, প্রথম মহিলা এবং প্রথম এশিয়ান হিসাবে তিনি এই পদের অধিকারী হন।; এই সংগঠনের ইতিহাসের প্রথম ২৫ বছরে, কেবলমাত্র দুজন মহিলাই এই পদটি পেয়েছিলেন।
নতুন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠার পেছনে কৌরের শক্তিশালী অবদান ছিল এবং তিনি এটির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠার জন্য, তিনি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পশ্চিম জার্মানি, সুইডেন, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাহায্য নিয়ে আসেন। তিনি এবং তার ভাইদের মধ্যে একজন হিমাচল প্রদেশের শিমলায়, তাদের পূর্বপুরুষ সম্পত্তি এবং বাড়ি (ম্যানরভিল নামক), ইনস্টিটিউটের কর্মী ও নার্সদের ছুটি কাটানোর জায়গা হিসাবে দান করেন।
চৌদ্দ বছর ধরে কৌর ভারতীয় রেড ক্রস সোসাইটিরর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তার নেতৃত্বে, ইন্ডিয়ান রেড ক্রস ভারতের পশ্চাৎ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি অগ্রণী কাজ করেছিল। তিনি মাদ্রাজে (চেন্নাই) টিউবারকিউলোসিস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া এবং সেন্ট্রাল লেপ্রসি টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট শুরু করেছিলেন। তিনি অমৃত কৌর কলেজ অফ নার্সিং এবং ন্যাশনাল স্পোর্টস ক্লাব অব ইন্ডিয়া শুরু করেন।