২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের এ-গ্রুপের খেলাগুলো ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ, ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। গ্রুপটিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াসহ ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং স্কটল্যান্ড ক্রিকেট দল একে-অপরের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার এই পর্বে সাতটি দল রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে খেলে। শীর্ষস্থানীয় চার দল - নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে বি-গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় চার দলের মুখোমুখি হয়। এর ফলে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও প্রত্যেক দলই কমপক্ষে ছয়টি খেলায় অংশ নিতে পেরেছে।[১]
স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল টসে পরাজিত হয়ে ব্যাটিংয়ে নামে। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চ শূন্য রানে বেঁচে যান। পরবর্তীতে তিনি ১২৮ বলে ১৩৫ রান তোলেন।[৩] ইনিংসের শেষ তিন বলে ব্রাড হাড্ডিন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল জনসনকে ধারাবাহিকভাবে আউট করে স্টিভেন ফিন একদিনের আন্তর্জাতিকে হ্যাট্রিক করেন।[৪]
জেমস অ্যান্ডারসনকে রান আউটের মাধ্যমে খেলার সমাপ্তি ঘটে। এরপূর্বে জেমস টেলরকে এলবিডব্লিউ দেয়া হলে সিদ্ধান্ত তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে চলে যায় ও ব্যাটসম্যানের অনুকূলে আসে। পরবর্তীতে আইসিসি এ সিদ্ধান্তের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে জানায় যে, সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা পদ্ধতির ধারা ৩.৬এ এর পরিশিষ্ট ৬-এর নিয়ম অনুযায়ী বলটি ডেড হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সুতরাং ভুলবশতঃ অ্যান্ডারসনকে আউট দেয়া হয়েছে।[৫]
নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় সেরা (৭/৩৩) ও নিউজিল্যান্ডের একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।[৯] নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম (১৮ বলে) অর্ধ-শতক ও একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে তৃতীয় সেরা ব্যাটিং করেন।[১০]
লাহিরু থিরিমানে ও তিলকরত্নে দিলশান - শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয় গোল্ডেন ডাক পান। একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় ঘটনা।[১২] প্রথম আফগান বোলার হিসেবে হামিদ হাসান ৫০ ওডিআই উইকেট পান। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে ৭ম দ্রুততম সময়ে তিনি এ কৃতিত্বের অধিকারী।[১২]
প্রথমবারের মতো স্কটল্যান্ড বিশ্বকাপে দুই শতাধিক রান সংগ্রহ করে।[১৩] ৯ম উইকেট জুটিতে অ্যালাসডেয়ার ইভান্স ও মজিদ হক স্কটল্যান্ডের একদিনের ইতিহাসে ৬২ রানের সেরা জুটি গড়েন।[১৩] প্রথমবারের মতো আফগানিস্তান বিশ্বকাপে জয়ী হয়।[১৩]
তিলকরত্নে দিলশান ও কুমার সাঙ্গাকারা শ্রীলঙ্কার একদিনে আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে দ্বিতীয় উইকেটে অপরাজিত ২১০* রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন।[১৪] চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে সাঙ্গাকারা ৪০০ ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করেন।[১৫] দিলশানের অপরাজিত ১৬১* রান একদিনে আন্তর্জাতিকে ছক্কাবিহীন সর্বোচ্চ রান।[১৬]
বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়া সর্বনিম্ন রান সংগ্রহ করে।[১৮] অস্ট্রেলিয়ার একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ধস নামে। ২৬ রানের ব্যবধানে শেষ ৮ উইকেটের পতন ঘটে।[১৯] এ খেলাটি চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফির অংশবিশেষ। সাধারণতঃ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ওডিআই সিরিজে ট্রফি প্রদান করা হয়।[২০]
অস্ট্রেলিয়ার ৪১৭/৬ রানের সংগ্রহ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। [২২] আফগানিস্তানের দৌলত জাদরান বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচের ইতিহাসে তৃতীয় বোলার হিসেবে একই ম্যাচে ১০০ রানের উপরে রান দেন।[২২]
কাইল কোয়েতজার স্কটল্যান্ডের পক্ষে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেঞ্চুরি করেন। এছাড়াও তার এ সংগ্রহটি সহযোগী দেশগুলোর পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান।[২৩] বিশ্বকাপের কোন খেলায় স্কটল্যান্ড প্রথমবারের মতো ৩০০+ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশ সফলভাবে একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে বিজয়ী হয়।[২৪] দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে তামিম ইকবাল একদিনের আন্তর্জাতিকে ৪,০০০ রান সংগ্রহ করেন।
আম্পায়ার হিসেবে ইয়ান গোল্ড তার শততম একদিনের আন্তর্জাতিকের খেলা পরিচালনা করেন।[২৭] গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একদিনের আন্তর্জাতিকে তার প্রথম সেঞ্চুরি করেন। এছাড়াও ৫১ বলে গড়া তার এ সেঞ্চুরিটি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দ্রুততম ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরি।[২৮]
একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে কুমার সাঙ্গাকারা ১৪,০০০ রান সংগ্রহ করেন।[২৯] কুমার সাঙ্গাকারা ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় শতরান করেন।[২৬] মিচেল জনসনের বলে তিলকরত্নে দিলশান একাধারে ছয়টি চারের মার মারেন। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।[৩০] দীনেশ চন্ডিমাল রিটায়ার্ড হার্ট হন। ফলে, তিনি নিজ ইনিংস সম্পন্ন করতে পারেননি।[২৬]
বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের পক্ষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রথম সেঞ্চুরি করেন।[৩৩] বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপের যে-কোন উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ-মুশফিকুর রহিম ১৪১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন।[৩৪] এছাড়াও একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলগতভাবে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তোলে।[৩৩] বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করে ও কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।[৩২]
কুমার সাঙ্গাকারা একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে ৪র্থ শতরান করে রেকর্ড গড়েন।[৩৫] উইকেট-কিপার হিসেবে তিনি ৫৪ ডিসমিসাল করেন যা ক্রিকেট বিশ্বকাপে যে-কোন খেলোয়াড়ের তুলনায় সর্বাধিক।[৩৫] অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস শ্রীলঙ্কার পক্ষে বিশ্বকাপে দ্রুততম ও একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধ-শতক করেন মাত্র ২০ বলে।[৩৫] একদিনের আন্তর্জাতিকে স্কটল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সর্বোচ্চ রান তোলে।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন।[৩৬] নিউজিল্যান্ডের ৪র্থ খেলোয়াড় হিসেবে রস টেলর একদিনের আন্তর্জাতিকে ৫,০০০ রান সংগ্রহ করেন।[৩৬]