১০০-বলের ক্রিকেট হচ্ছে ক্রিকেট খেলার একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। এই পদ্ধতিতে দুটি দল সর্বোচ্চ ১০০-বলের একটি করে ইনিংস খেলে। এই খেলা প্রায় দুই ঘণ্টা ত্রিশ মিনিটকাল স্থায়ী হয়।[১] বর্তমানে এটি কেবল ইংল্যান্ডের কেন্ট এর বেলমন্ট হাউজে অনুষ্ঠিত দ্য পার্চেজারস বার্ষিক ক্রিকেট উৎসব -এ, আর ক্লাব পর্যায়ে ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ড অঞ্চলের ওয়ারউইকশায়ার সান্ডে স্ম্যাশ এবং সোয়ানকোট এনার্জি স্ম্যাশ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে ২০২১ সাল থেকে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস থেকে দল নিয়ে, পেশাদার পর্যায়ে শহর-ভিত্তিক একটি প্রতিযোগিতা শুরুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
১৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে, প্রথম শ্রেণির কাউন্টি দলসমূহের মালিক ও প্রধান নির্বাহীগণ এবং এমসিসি'র কাছে, আরও বিস্তারিত একটি প্রস্তাবনা, ইসিবি কর্তৃক উত্থাপিত হয়। প্রস্তাবটি ঐ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।[৩][৪]
জুলাই ২০১৮ সালে, নতুন পদ্ধতির পরামর্শক হিসেবে ট্রেন্ট উডহিলকে নিয়োগ দেয় ইসিবি।[৫] প্রতিযোগিতায় আটটি শহর-ভিত্তিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, ৯০ জন খেলোয়াড়ের খসড়া তালিকা হতে দলগুলো খেলোয়াড় বাছাই করতে পারবে বলে নির্ধারিত হয় (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ)।[৬] প্রতিযোগিতা থেকে সৃষ্ট আয় হতে বর্তমান কাউন্টি দলগুলোর প্রত্যেকে বার্ষিকভাবে অন্তত ১৩ লক্ষ ব্রিটিশ পাউন্ড পাবে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এই অর্থপ্রাপ্তির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, প্রতিযোগিতার জন্য কাউন্টি দলগুলোর মাঠ ব্যবহারের অনুমতি প্রদান; এই কাঠামো অনুসরণে কোন দল আপত্তি জানায়নি।[৩]
নভেম্বর ২০১৮ সালে, ওয়ারউইকশায়ার ক্রিকেট বোর্ড এবং ওয়ারউইকশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব কর্তৃক ক্লাব পর্যায়ের একটি টুর্নামেন্ট এর সূচনা করা হয়, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে মিডল্যান্ড অঞ্চলজুড়ে রবিবারের ক্লাব ক্রিকেটকে পুনরুজ্জীবিত করা। ওয়ারউইকশায়ার সানডে স্ম্যাশ নামে অভিহিত এই প্রতিযোগিতায়, ১৬টি দলকে ৩টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়, যেখানে জুন-জুলাই মাসব্যাপী প্রত্যেক দল নিজ বিভাগের বাকি দলগুলোর সাথে স্বাগতিক (হোম) এবং সফরকারী (অ্যাওয়ে) হিসেবে খেলবে। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে: সলিহাল ব্লসমফিল্ড ক্রিকেট ক্লাব, নোল অ্যান্ড ডরিজ, সাটন কডফিল্ড, বেডওয়ার্থ, অ্যালচেস্টার অ্যান্ড র্যাগ্লি, স্ট্র্যাটফোর্ড আপন এভন, ওয়াল্টার অর্টন, ফোর ওক্স সেইন্টস, মোজলি অ্যাশফিল্ড, এবং আস্টন ম্যানর। এরা প্রত্যেকেই মিডল্যান্ড ক্লাব ক্রিকেট কনফারেন্স এর সদস্য। প্রত্যেক লিগের শীর্ষ দলগুলো এবং সেরা দ্বিতীয় দলটি নিয়ে সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে এজবাস্টনে, যুক্তরাজ্যের প্রথম ১০০-বলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর ফাইনালে, নোল অ্যান্ড ডরিজ দলকে পরাজিত করে শিরোপা জিতে নেয় স্ট্র্যাটফোর্ড আপন এভন।[৭]
ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে, ইসিবি এই পদ্ধতির সংশোধিত নিয়মাবলি ঘোষণা করে। এতে বলা হয় যে, এই পদ্ধতিতে প্রতিটি ওভার হবে ১০-বলের (অর্থাৎ, দশ বল পরপর প্রান্ত বদল হবে)। একজন বোলার টানা ৫টি অথবা ১০টি বল করতে পারবেন। এক ইনিংসে একজন বোলার সর্বোচ্চ ২০টি বল করতে পারবেন। পাওয়ারপ্লে'র নিয়মাবলিও এতে উল্লেখ করা হয়।[৮]
শ্রপ্শায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব কর্তৃক জুন ২০১৯ সালে, সোয়ানকোট এনার্জি স্ম্যাশ নামক একটি প্রতিযোগিতার ঘোষণা করা হয়। এতে ছয়টি দলকে দুই গ্রুপে বিভক্ত করা হয়, খেলা হবে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে। প্রত্যেক গ্রুপের বিজয়ী দল, সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর শুরুর দিকে, উদ্বোধনী টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলবে।[৯] প্রতিদ্বন্দ্বী ছয়টি দল হচ্ছে শিফনাল, ক্ল্যাভার্লি, ব্রিজনর্থ, চেলমার্শ, এবং অমবোর্ন।
একটি সরলীকৃত স্কোরবোর্ড এর প্রস্তাবনাও রাখা হয়েছে।[৬]
প্রতিক্রিয়া
দর্শকপ্রিয় করার অভিপ্রায়ে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততর পদ্ধতির প্রচলন টেস্ট ক্রিকেট এর প্রতি আগ্রহ বিনষ্ট করছে এবং খেলার মান বিনষ্ট করছে বলে অনেকের আশঙ্কা রয়েছে। ১০০-বলের ক্রিকেট সম্বন্ধে কোন কোন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন যে, ইসিবি কর্তৃক প্রস্তাবিত এই পদ্ধতি "ঐ গলি"-র দিকে ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যদিকে, অনেকে আবার একে চমৎকার উদ্ভাবন বলে প্রশংসা করেছেন।
ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক জো রুট, ২০২০ সালে এই নতুন পদ্ধতি প্রচলনের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। রুটের মতে, এটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের দর্শকদের আকৃষ্ট করবে।[১৩]ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক এউইন মরগান-ও এই পদ্ধতি সম্বন্ধে একই ধরনের মতামত প্রকাশ করেছেন।[১৪] প্রাক্তন টি-২০ অধিনায়ক স্টুয়ার্ট ব্রড বলেছেন যে, তিনি এই নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাপক আশাবাদী।[১৫] ব্রডের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে মাইকেল ভন বলেন যে, এই ধারণা সম্প্রচারকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]মাইকেল আথারটন উল্লেখ করেন যে, একটি টি-২০ ম্যাচ তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, এই নতুন পদ্ধতিতে সেটা করা সম্ভব হবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এমসিসি'র প্রাক্তন প্রধান কিথ ব্র্যাডশ ১০০-বলের টুর্নামেন্টকে উদ্ভাবনের নামে কেবল নামকাওয়াস্তে একটা উদ্ভাবন বলে অভিহিত করে বলেছেন, ইসিবির এই পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছে টি-২০ এর ব্যাপক প্রসার চলাকালে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারা।[১৮] সার্বিকভাবে, খেলোয়াড়েরা এই নতুন ধারণার প্রতি মুক্তমনা বলেই, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস এর পেশাদার ক্রিকেটার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে।[১৯]
ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ক্রিকেটের বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং তিনি এই পদ্ধতির পুরোপুরি পক্ষপাতী নন।[২০]
অন্যদিকে, বর্তমানে প্রচলিত বিগ ব্যাশ লিগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কোন অভিপ্রায় নেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া'র।[২১] তারা সংশয় প্রকাশ করে বলেছে যে, আরও সংক্ষিপ্ততর পদ্ধতির সূচনা টেস্ট ক্রিকেট আরও বেশি উপেক্ষা করার শামিল।[২২] তাদের ওয়েবসাইটে পরিচালিত এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮২ শতাংশেরও বেশি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন।[১৫]