সৌদি আরবের ইতিহাস যদিও এই অঞ্চলের মানব বসতির ইতিহাস ২০০০ বছরের পুরনো, তবে রাজ্যের বর্তমানে যে রূপ তার ভিত্তি স্থাপিত হয় ১৭৪৪ সালে। এই অঞ্চল বিশ্ব ইতিহাসে দুবার বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করেছে:
৭ম শতাব্দীতে মুহাম্মাদ (সঃ)এখানে ইসলামের প্রচার করেন এবং এটি খিলাফতের প্রথম কেন্দ্র।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে বিশাল তেলের মজুদ আবিষ্কার দেশটিকে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে।
৭ম শতক থেকে মক্কা ও মদিনা শহরগুলো মুসলিম বিশ্বের জন্য সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক তাৎপর্যপূর্ণ অঞ্চল। মক্কাহজ্জ পালনকারীদের একটি গন্তব্যস্থল। সামর্থ্যবান প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য জীবনে একবার হলেও এখানে আসা বাধ্যতামূলক।[১] তবুও এই অঞ্চলটি পূর্বে আপেক্ষিক অদৃশ্য এবং বিচ্ছিন্ন ছিল
ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় এই অঞ্চলের অধিকাংশ স্থান একজন স্থানীয় শাসকের দ্বারা কোন রকমে পরিচালিত হতো। আল সৌদ (সৌদি রাজকীয় পরিবার) কেন্দ্রীয় আরবের নজদের ছোটখাট স্থানীয় শাসক হিসেবে আবির্ভূত হয়। পরবর্তী ১৫০ বছর ধরে আল সউদ অঞ্চল পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। যাইহোক, ১৯০২ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে আল সউদ নেতা আব্দুল আজিজ বিজয় অর্জনের একটি সিরিজ পরিচালনা করেন যা ১৯৩০ সালে সৌদি আরব রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫৩ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত, আব্দুল আজিজ একটি পুরাদস্তর রাজতন্ত্র হিসেবে সৌদি আরবকে শাসন করেন। এর পরে উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর ছয় পুত্র রাজ্যটির শাসন করেছে:
সৌদ আব্দুল আজিজের পরবর্তী উত্তরাধিকারী, রাজ পরিবারের অধিকাংশের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখোমুখি হন এবং অবশেষে পদত্যাগ করেন।
ফয়সাল ১৯৬৪ সালে সৌদকে বদলে দেন। ১৯৭৫ সালে এক ভ্রাতুষ্পুত্রের দ্বারা তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত, ফয়সাল তেল সম্পদ দ্বারা চালিত বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের সময়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৩-এর তেল সংকটে সৌদি আরবের ভূমিকা এবং পরবর্তীতে তেলের মূল্য বৃদ্ধি দেশটির রাজনৈতিক তাৎপর্য এবং সম্পদ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করে।
খালিদ ফয়সালের উত্তরাধিকারী। বিরোধীতার প্রথম প্রধান লক্ষণের সময় তিনি রাজা হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে ইসলামিক চরমপন্থীরা সাময়িকভাবে মক্কারমসজিদ আল-হারামের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ফাহাদ ১৯৮২ সালে রাজা হয়েছিলেন। তার শাসনামলে সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। যাইহোক, ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্যদের সাথে দেশটি নিজেকে যুক্ত করার ফলে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ২০০০ সালের শুরুতে, ইসলাম বিরোধীরা সন্ত্রাসী হামলার একটি সিরিজ পরিচালনা করে।
আবদুল্লাহ ২০০৫ সালে ফাহাদকে অনুসরণ করে। তিনি দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নে বেশ কয়েকটি হালকা সংস্কার শুরু করেন এবং কিছুটা হলেও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেন।
প্রমাণ আছে যে প্রায় ৬৩,০০০ বছর পূর্ব থেকে আরব উপদ্বীপে মানুষের বাসস্থান আছে।[২][৩]
প্রত্নতত্ত্ব কিছু প্রাথমিক বসতিপূর্ণ সভ্যতা উদ্ঘাটন করেছে: আরব উপদ্বীপের পূর্ব দিকে দিলমুন সভ্যতা, হেজাজের উত্তরে ঠামুড এবং আরব উপদ্বীপ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কিন্দাহ রাজ্য এবং আল-মগার সভ্যতা। আরবের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত প্রমাণ হচ্ছে উপদ্বীপ থেকে প্রতিবেশী অঞ্চলে স্থানান্তরিত হওয়া।[৪]
তিমনা (ইসরায়েল) এবং টেল এল-খালেফিহ (জর্ডান) থেকেও স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়। উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবের হেজাজ অঞ্চলে স্থানীয় কোরাইয়া/মিদিয়ানী মৃৎপাত্র উৎপন্ন হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে বাইবেলের মিদিয়নীরা জর্ডান এবং দক্ষিণ ইস্রায়েলে বিস্তৃত হওয়ার পূর্বে প্রকৃত অর্থে উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবের হেজাজ অঞ্চল থেকে এসেছে।[৫][৬]
সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা আধুনিক সৌদি আরবের একটি মরূদ্যানের আড়ালে চার হাজার বছরের পুরনো একটি সুরক্ষিত শহরের সন্ধান পেয়েছেন। শহরটির নাম ছিল 'আল-নাতাহ'। গবেষকদের মতে ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম দিকে খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ অব্দে 'আল-নাতাহ' শহরটি গড়ে উঠেছিল। এর প্রায় এক হাজার বছর পর এটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।[৭]
ইসলামের পয়গম্বরমুহাম্মাদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে শহরে প্রচারণা শুরু করেন, কিন্তু ৬২২ সালে মদিনায়হিজরত করেন। সেখানে থেকে তিনি (স.) ও তার সঙ্গীরা (রা.) আরবের গোত্র গুলোকে ইসলামের পতাকা তলে একত্রিত করেন এবং আরব উপদ্বীপে একক আরব মুসলিম ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
আধ্যাত্মিক গুরুত্ব সত্ত্বেও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে আরব শীঘ্রই মুসলিম বিশ্বের একটি পেরিফেরাল অঞ্চল হয়ে ওঠে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যযুগীয় ইসলামি রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন সময়ে দামেস্ক, বাগদাদ, কায়রো এবং করডোবার মতো শহরগুলোকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। প্রাথমিক মুসলিম বিজয়গুলির পর সৌদি আরব শীঘ্রই পুনরায় ঐতিহ্যগত গোষ্ঠীভিত্তিক শাসনে ফিরে আসে। ফলে গোষ্ঠী এবং গোষ্ঠীভিত্তিক আমিরাতের অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্থায়িত্বের মৈত্রীর পর্যায়ক্রমিক আবর্তন চলতে থাকে।[১২][১৩]
প্রথম উমাইয়া খলিফা প্রথম মুয়াবিয়া (রা.), তার সময়ে মক্কায় ভবন নির্মাণ এবং কূপ খননের পদক্ষপে নিয়েছিলেন।[১৪] তার মারওয়ানি উত্তরাধিকারীর অধীনে, মক্কা কবি এবং সঙ্গীতশিল্পীদের পীঠস্থান হয়ে ওঠে। এমনকি উমাইয়া যুগে মদিনা মক্কার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি নতুন মুসলিম আদিবাসীদের আবাসস্থল।[১৪]আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়েরের বিদ্রোহে প্রথম ইয়াজিদেমক্কাতে সিরিয়ার সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসে।[১৪] একটি অগ্নিকাণ্ড আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের কর্তৃক নির্মিত কাবাকে ধ্বংস করে।[১৪] ৭৪৭ সালে ইয়েমেন থেকে একটি খারেজি বিদ্রোহ মক্কা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবরুদ্ধ করে রাখে। কিন্তু তিনি শীঘ্রই দ্বিতীয় মারওয়ান দ্বারা পরাজিত হন।[১৪] ৭৫০ সালে মক্কা খিলাফতের বাকি অংশসহ আব্বাসিদের কাছে হস্তান্তরিত হয়।[১৪]
দশম শতক থেকে (এবং প্রকৃতপক্ষে ২০ শতক পর্যন্ত) মক্কার শরিফআল-হাশিম অঞ্চলের সবচেয়ে উন্নত অংশে একটি রাষ্ট্র বজায় রেখেছিল। এটি হেজাজ। তাদের রাজ্য মূলত শুধুমাত্র মক্কা এবং মদিনার পবিত্র শহর নিয়ে গঠিত ছিল। কিন্তু ১৩ শতাব্দিতে এটি হেজাজের বাকি অংশ অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও শরীফরা হেজাজে স্বাধীন কর্তৃপক্ষের উপর কর্তৃত্ব করতেন, তবুও তারা সাধারণত সেই সময়ের প্রধান ইসলামি সাম্রাজ্য আধিরাজ্যের অধিকারী ছিল। মধ্য যুগে এগুলি বাগদাদেরআব্বাসীয় খিলাফত এবং মিশরের মামলুক, ফাতেমীয় খিলাফত এবং আইয়ুবীয় রাজবংশের অধিভুক্ত করে।[১২]
১৫১৭ সালে প্রথম সেলিমেরমদিনা এবং মক্কার অধিগ্রহণের শুরু থেকে ১৬ শতকে অটোমান তাদের সাম্রাজ্যকে হেজাজ, লোহিত সাগর সহ আশির অঞ্চল এবং পারস্য উপসাগর অঞ্চলের আল হাসাকে তাদের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে। এই অঞ্চল সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশে পরিনত হয় যা বর্তমান সৌদি আরব। এছাড়াও তারা মধ্যবর্তী অঞ্চল দাবি করে, যদিও এটি একটি নামমাত্র অধিরাজ্য। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের শক্তি ও দূর্বলতার তারতম্য অনুসারে এই জমির উপর নিয়ন্ত্রণের মাত্রা পরবর্তী চার শতাব্দী ধরে পরিবর্তিত হয়। হেজাজেমক্কার শরিফরা তাদের অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতো (যদিও এখানে প্রায়ই উসমানীয় এবং মক্কায় গ্যারিসন গভর্নর থাকতো)। দেশের পূর্ব দিকে অটোমানরা ১৭ শতকে আরব গোত্রগুলোর কাছে আল হাসা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে কিন্তু ১ ৯ শতকে আবার পুনরুদ্দার করে। এই সময়ের মধ্যে, অভ্যন্তর অঞ্চল বেশিরভাগ সময় পূর্ববর্তী শতাব্দীর মতো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগত শাসকদের শাসনের অধীনে ছিল।[১৫]
১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় আরবে সৌদি রাজবংশের উত্থান শুরু হয়। ঐ বছরে রিয়াদের নিকটে আদ-দরিয়াহ শহরের গোষ্ঠীভিত্তিক শাসক মুহাম্মদ বিন সৌদ, ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের সাথে যোগ দেন।[১৬][১৭] ১৮ শতকে গঠিত এই জোট সৌদি বিস্তারের মতাদর্শিক অনুপ্রেরণা প্রদান করে এবং আজকের সৌদি আরবীয় সাম্রাজ্যের ভিত্তি বজায় রেখেছে। পরের ১৫০ বছরে, সৌদ পরিবারের ভাগ্য একাধিকবার সুপসন্ন এবং অসুভ হয় কারণ সৌদি শাসকরা উপদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিশর, উসমানীয় সাম্রাজ্য, অন্যান্য আরব পরিবারের সাথে বিবাদে জড়িয়েছে।[৩][১২]
আল সউদ ১৮২৪ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসেন কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা মূলত নজদ সাম্রাজ্যের সৌদি ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ ছিল। এটি দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। যাইহোক, নাজদে তাদের শাসন শীঘ্রই নতুন পুনরূজ্জীবীত হা'ইলেররশিদের কর্তৃক প্রতিদ্বন্দ্বীর সম্মুখীন হয়। উনবিংশ শতাব্দীর বাকি সময় আল সৌদ এবং আল রশিদ সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করেছিলেন । ১৮৯১ সাল নাগাদ, আল-রশিদ আল সউদকে পরাজিত করে সৌদি আরবকে কুয়েত অভিযানে পাঠায়।[৩][১২][১২][১৯]
এদিকে, হেজাজে প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের পরাজয়ের পর, মিশরীয়রা ১৮৪০ সাল পর্যন্ত এলাকা দখল করে চলেছিল। তারা চলে গেলে, মক্কার শরীফরা তাদের কর্তৃত্ব পুনর্ব্যক্ত করে; যদিও অটোমান গভর্নর এবং গ্যারিসন উপস্থিত ছিলেন।[১২]
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে উসমানীয় সাম্রাজ্য উপদ্বীপের বেশিরভাগ অংশের উপরে নিয়ন্ত্রণ বা অধিরাজ্য (যদিও নামমাত্র) করে চলেছিল। এই অধিরাজ্যের অধীনে, আরব মক্কার শরিফদের সাথে প্রসিদ্ধ হয়ে এবং হেজাজ শাসন করে একজন গোষ্ঠীগত শাষক দ্বারা কোন রকমে শাষিত হয়েছে (আল সাউদ সহ যিনি ১৯০২ সালে নির্বাসন থেকে ফেরার পর – নিচে দেখুন)।[১২][১৫][২০]
আরব সেনাবাহিনী সমস্ত উপদ্বীপ থেকে বেদুঈন এবং অন্যান্যদের অন্তর্ভুক্ত করে তবে যারা বিদ্রোহে কিছু মাত্রায় অংশ নেননি সেই আল সউদ ও তাদের সংশ্লিষ্ট গোত্রদের নিয়ে নয়। অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের জন্য মক্কার শরিফদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এবং আংশিকভাবে আল রশিদকে হারানো তাদের অগ্রাধিকার ছিল। তবুও বিদ্রোহটি মধ্য-পূর্ব অংশে একটি ভূমিকা রেখেছে এবং হাজার হাজার অটোমান সৈন্যবাহিনীকে বাধা দিয়ে ১৯১৮ সালে অটোমানদের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের জন্য অবদান রাখে।[১২][২২]
তবে প্যান-আরব রাষ্ট্রকে সমর্থন করতে পরবর্তী অটোমান সাম্রাজ্যের বিভাজন সহ ব্রিটিশ ও ফরাসি হুসেনকে পরিত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও হুসেনকে হেজাজের রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, ব্রিটেন পরে আল সউদকে সমর্থন দিয়ে তাকে কূটনৈতিক এবং সামরিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। সেজন্য বিদ্রোহটির যে একটি প্যান-আরব রাষ্ট্র তৈরির লক্ষ্য ছিল তা ব্যর্থ হয়েছিল কিন্তু আরবকে অটোমান অভিনিবেশ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করা হয়েছিল।[২২]
১৯০২ সালে আল সউদের নেতা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ নির্বাসন থেকে কুয়েতে ফিরে এসে আল রশিদের সাথে সংঘর্ষ শুরু করে এবং রিয়াদকে আটক করে। বিজয়ীদের জয়ের একটি সিরিজ ১৯৩০ সালে সৌদি আরবকে শেষ পর্যন্ত আধুনিক রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে পরিণতি ঘটায়। এই বিজয় অর্জনের প্রধান হাতিয়ার ছিল সুলতান বিন বাজাদ আল উতাইবি এবং ফয়সাল আল দাউয়িশ এর নেতৃত্বাধীন ওয়াহাবী-বেদুঈন উপজাতীয় বাহিনী ইখওয়ান।[১৯][২৩][২৪]
১৯০৬ সাল নাগাদ আব্দুল আজিজ আল রশিদকে নজদ থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং অটোমানরা তাকে নজদে তাদের ক্লায়েন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তার পরের প্রধান অর্জন ছিল আল হাসা, যা তিনি ১৯১৩ সালে অটোমানদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। তাকে পারস্য উপসাগর উপকূলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার ফলে সৌদি আরব বিশাল তেলের ভাণ্ডারে পরিণত হয়। তিনি আরব বিদ্রোহে জড়িত হওয়া এড়িয়েছিলেন, ১৯১৪ সালে অটোমানদের স্বীকৃতি আদায় করেন এবং পরিবর্তে উত্তর আরবের আল রশিদের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৯২০ সালে ইখওয়ানের মনোযোগ দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘুরে যায়, যখন তারা হেজাজ এবং ইয়েমেনের মধ্যবর্তী অঞ্চল আসির অবরুদ্ধ করেন। পরের বছর আব্দুল আজিজ অবশেষে আল রশিদকে পরাজিত করে এবং সমস্ত উত্তর আরব সংযুক্ত করেন।[১৩][১৯]
১৯২৩ সালের আগে আব্দুল আজিজ হেজাজ আক্রমণের ঝুঁকি নেননি কারণ হেজাজের রাজা [[Hussein bin Ali, মক্কার শরিফ|হোসেন বিন আলী]]কে ব্রিটেন সমর্থন করেছিল। তবে সেই বছরে ব্রিটিশরা তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। প্রধানত নাজদ থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের আটকানো এবং "শরীয়ত লঙ্ঘনে"র কয়েকটি সরকারী নীতি বাস্তবায়ন বর্জন করার কারণে; ১৯২৪ সালের জুলাই মাসে রিয়াদে একটি সম্মেলনে হেজাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ইখওয়ান ইউনিট প্রথমবারের মতো ব্যাপক আকারে একত্রিত করে এবং খালিদ বিন লুয়াইয় এবং সুলতান বিন বাজাদ আল উতাইবি এর অধীনে দ্রুত মক্কাতে অগ্রসর হন। "ধর্মহীন" চর্চাগুলির প্রতীক হিসেবে লুন্ঠন ও ধ্বংস করে।[২৫] ইখওয়ান ১৯২৫ সালের শেষ নাগাদ হেজাজের বিজয় অর্জন করেন। ১৯২৬ সালের ১০ জানুয়ারি আব্দুল আজিজ নিজেকে হেজাজের রাজা ঘোষণা করেন এবং তারপর ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি নাজদের রাজা (তাঁর পূর্ববর্তী উপাধি ছিল সুলতান) উপাধি গ্রহণ করেন। বিজয়কে প্রভাবিত করার জন্য ইখওয়ানের ব্যবহার হেজাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি ছিল: পুরাতন অসাম্প্রদায়িক সমাজ উচ্ছেদ করা হলো এবং একটি নতুন বাধ্যতামূলক সামাজিক ব্যবস্থা হিসেবে ওয়াহাবি সংস্কৃতির একটি মৌলিক সংস্করণ প্রয়োগ করা হলো।[২৬]
১৯২৭ সালের ২০ মে স্বাক্ষরিত জেদ্দার চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য স্বাধীন আব্দুল আজিজের রাজত্বের স্বীকৃতি (তারপর হেজাজ ও নাজদ এর রাজত্ব হিসেবে পরিচিত) পায়।[১৩][১৯]হেজাজের বিজয় অর্জনের পর ইখওয়ান নেতারা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন ট্রান্সজর্ডান, ইরাক এবং কুয়েতে ওয়াহাবি রাজ্যের সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখতে চেয়েছিলেন। তবে আবদুল আজিজ ব্রিটিশদের সাথে সরাসরি বিরোধের বিপদের আশঙ্কায় এটিতে একমত হতে অস্বীকার করেন। ইখওয়ান সেজন্য বিদ্রোহ করে কিন্তু ১৯২৯ সালে সাবিলার যুদ্ধে পরাজিত হন। সেই সাথে ইখওয়ানের নেতৃত্বের যবানিকপাত ঘটে।[২৭]
১৯৩০ সালে, হেজাজ ও নাজদের দুটি রাজ্য 'সৌদি আরবের রাজত্ব' হিসাবে একত্রিত হয়েছিল।[১৯][২৩] ইরাক ও কুয়েতের সাথে দুটি "নিরপেক্ষ অঞ্চল" সহ ট্রান্সজর্ডান, ইরাক এবং কুয়েতের সীমান্তগুলি ১৯২০-এর দশকে বেশ কিছু চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়েমেনের সাথে দেশটির দক্ষিণ সীমান্ত ১৯৩৪ সালের তাইফ চুক্তির দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়, যা দুইটি রাজ্যগুলির মধ্যে সংক্ষিপ্ত সীমানা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। [২৮]
১৯৩৮ সালে পারস্য উপসাগর উপকূল বরাবর আল-হাস অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তেল আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত আব্দুল আজিজের সামরিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্থনৈতিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ১৯৪১ সালে উন্নয়ন শুরু হয় এবং ১৯৪৯ সালে উৎপাদন পুরো দমে ছিল।
১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুয়েজ খালের ইউএসএস কুইনসি এলাকায় রাজা আব্দুল আজিজ প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। একটি ঐতিহাসিক করমর্দনের মাধ্যমে সৌদি সরকারকে সুরক্ষার বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল সরবরাহ শুরু হয়। সাতজন সৌদি রাজা এবং বারোজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্বারা এটি বহাল আছে।
আব্দুল আজিজ ১৯৫৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। রাজা সৌদ ১৯৫৩ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন। তেল সৌদি আরবকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ রাজনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। একই সময়ে, সরকার ক্রমবর্ধমান অপচয়ী এবং অপব্যয়ীতে পরিণত হয়। নতুন সম্পদ সত্ত্বেও, অপ্রত্যাশিত খরচ ১৯৫০-এর দশকে সরকারি ঘাটতি ও বৈদেশিক ঋণের দিকে পরিচালিত করে।[১৩][২৯][৩০]
যাইহোক ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে, রাজা ও তার সৎ-ভাই প্রিন্স ফয়সালের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হয়, যা সৌদের যোগ্যতার উপর রাজকীয় পরিবারের সন্দেহ দ্বারা প্রসারিত হয়। ফলস্বরূপ, ১৯৬৪ সালে ফয়সালের পক্ষে সৌদকে বহিষ্কার করা হয়।[১৩]
১৯৬০ সালের মাঝামাঝিতে সৌদি-মিশরীয় মতপার্থক্যের দ্বারা ইয়েমেনের উপর বাহ্যিক চাপ সৃষ্টি হয়। ১৯৬২ সালে যখন ইয়েমেনীয় রাজপুত্র ও প্রজাতন্ত্রের মধ্যবর্তী গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে মিশরীয়রা নতুন প্রজাতন্ত্র সরকারকে সমর্থন করার জন্য ইয়েমেনকে চাপ দেয়, অপরদিকে সৌদি আরব রাজকীয়দের সমর্থন করে। ১৯৬৭ সালে ইয়েমেন থেকে মিসরের সৈন্য প্রত্যাহার করার পর উত্তেজনা প্রশমিত হয়। ১৯৬৭ সালের জুনে সংঘটিত ছয় দিনের (আরব-ইস্রাইলি) যুদ্ধে সৌদি বাহিনী অংশ নেয়নি কিন্তু মিশর, জর্দান এবং সিরিয়ার অর্থনীতিতে সহায়তা করার জন্য সরকার পরবর্তীতে সৌদি ভর্তুকি প্রদান করে।[১৩][৩১]
ফয়সালকে ১৯৭৫ সালে তার ভাইপো রাজপুত্র ফয়সাল বিন মুসায়দ কর্তৃক হত্যা করা হয়।[৩২] তার সৎ-ভাই রাজা খালিদ তার স্থলাভিষিক্ত হন যার মেয়াদকালে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অত্যন্ত দ্রুত হারে অব্যাহত ছিল, দেশের অবকাঠামো ও শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপ্লব শুরু হয়; বৈদেশিক নীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রাজা খালিদ ১৯৮২ সালের জুন মাসে মারা যান।[১৩] ১৯৮২ সালে খালিদের পর তার ভাই রাজা ফাহাদ উত্তরাধিকারী হয়। যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার নীতিমালা বজায় রাখেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের সরবরাহ বৃদ্ধি করেন।
১৯৯৫ সালে ফাহাদ দুর্বল আক্রমণ সহ্য করে এবং রাজ্যের উত্তরাধিকারী রাজপুত্র আবদুল্লাহ দিনে দিনে শাসনতন্ত্রের প্রতি দ্বায়িত্ব অনুভব করে। ২০০৩ সালে, সৌদি আরব ইরাক আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সমর্থন করতে অস্বীকার করে।[১৩] ২০০৩ সালে সৌদি আরবের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, রিয়াদ চত্তরে বোমা হামলা এবং অন্যান্য হামলা সরকারকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল।[৩৩]
২০০৫ সালে রাজা ফাহদ মারা যান এবং তার সৎ-ভাই আবদুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ডাক সত্ত্বেও, রাজা মধ্যপন্থী সংস্কারের নীতি অব্যাহত রেখেছেন।[৩৪] রাজা আব্দুল্লাহ সীমিত নিয়ন্ত্রণহীনতা, বেসরকারীকরণ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য একটি নীতি অনুসরণ করেছেন। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে ১২ বছরের আলোচনা শেষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সৌদি আরবের সদস্যপদের সবুজ সংকেত দেয়।[৩৫]
২০১১ সালের প্রথম দিকে শুরু হওয়া আরব বসন্তের অস্থিরতা এবং প্রতিবাদ আরব বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে, রাজা আব্দুল্লাহ কল্যাণ ব্যয়ের বৃদ্ধি ঘোষণা করেন। এতে কোনো রাজনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়নি।[৩৬] একই সাথে বাহরাইনে অস্থিরতার কারণে সেখানে সৌদি সৈন্য পাঠানো হয়। রাজা আব্দুল্লাহ তিউনিশিয়ার পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি জাইন এল আবিদিন বেন আলিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছেন এবং মিশরের রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারককে তাঁর (পূর্ববৎ জবানবন্দিমূলক) সমর্থনের জন্য টেলিফোন করেছেন।[৩৭]
২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারীতে রাজা আব্দুল্লাহ মারা যান এবং রাজা সালমান তার স্থলাভিষিক্ত হন।
↑ কখগal-Rasheed, Madawi, A History of সৌদি আরব (Cambridge University Press, 2002) আইএসবিএন০-৫২১-৬৪৩৩৫-X
↑ কখগRobert Lacey, THE KINGDOM: Arabia & The House of Sa'ud, Harcourt Brace Jovanovich, Inc, 1981 (Hard Cover) and Avon Books, 1981 (Soft Cover). Library of Congress: 81-83741 আইএসবিএন০-৩৮০-৬১৭৬২-৫