শন উইলিয়াম টেইট (ইংরেজি: Shaun Tait; জন্ম: ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩) দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের নেয়ার্নে জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ও সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলিং করে থাকেন।[১]অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে টেস্ট, একদিনের আন্তর্জাতিক ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছেন শন টেইট। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার বোলিংয়ের ধরন অনেকটাই সাবেক অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার জেফ থমসনের অনুরূপ।[২][৩][৪]
আগস্ট, ২০১৩ সালে ভারতের সুইমস্যুট মডেল ও মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী মাশুম সিংহা’র সাথে বাগদানে আবদ্ধ হন টেইট। এরপর ১২ জুন, ২০১৪ তারিখে তাকে বিয়ে করেন তিনি।
প্রারম্ভিক জীবন
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের অধিকাংশ সময় সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলেন। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এ-দল ও ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহামে খেলেন। ১৫০-এরও অধিক উইকেট নেন যাতে স্ট্রাইক রেট ৫০-এর নিচে ছিল। ১৯ ডিসেম্বর, ২০০২ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। একমাত্র ইনিংসে ২২.২ ওভার বোলিং করে ৩/৭৭ লাভ করেন।
প্রথম মৌসুমে ৫ খেলায় ২২.৫৫ গড়ে ২০ উইকেট পান। প্রথম মৌসুমেই দূর্দান্ত ফলাফল অর্জন করায় বেন হিলফেনহাস ও লুক রঙ্কি’র সাথে তাকেও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়।
খেলোয়াড়ী জীবন
২০০৪-০৫ মৌসুমে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে কুইন্সল্যান্ডের ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি বিকেলের পরিবর্তে চুক্তিবদ্ধ হন। টেইট দল নির্বাচকমণ্ডলীর মুখ রক্ষা করে পুরা কাপে ২০.১৬ গড়ে ৬৫ উইকেট পান।
২০০৪ সালে আঘাতপ্রাপ্ত ব্রেট লি’র পরিবর্তে শ্রীলঙ্কা সফরে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু সফরের কোন টেস্টে তাকে খেলানো হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে সফলতম মৌসুম অতিক্রান্তের পর তাকে ২০০৫ সালের অ্যাশেজ সফরে খেলার জন্য ইংল্যান্ডে দলের সাথে প্রেরণ করা হয়। ২৫ আগস্ট, ২০০৫ তারিখে ট্রেন্ট ব্রিজে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।
২০০৫ সালের সুপার সিরিজে আইসিসি বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে খেলার সময় কাঁধে চোট পান। এরফলে অন্য খেলাগুলো থেকে তাকে দূরে থাকতে হয়।
খেলার ধরন
শন টেইটকে ‘ওয়াইল্ড থিং’ নামে ডাকা হয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা দ্রুতগতিসম্পন্ন ফাস্ট বোলার হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়।[৫][৬] তিনি নিয়মিতভাবে ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার বেগে বোলিংয়ে পারদর্শী।[৭][৮] অনেক সময় তারচেয়ে বেশি গতিতে বোলিং করতে সক্ষম। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৬০.৭ কিমি/ঘ বেগে বোলিং রেকর্ড ধারণ করা হয়।[৯][১০] প্রচণ্ড গতি থাকা স্বত্ত্বেও টেইটের বোলিং অনেকাংশে ভারসাম্যহীন ও অনেকগুলো অতিরিক্ত রান দিয়ে থাকেন।[১১] তাস্বত্ত্বেও ব্যাটসম্যানদেরকে আউট এবং স্ট্রাইক রেটের জন্য দলে রাখা হয়।[১][১২] এছাড়াও, টেইটকে ব্যয়বহুল ওভার পরিচালনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[১৩]
বিতর্ক
১১ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখে টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের কাছে ত্রাসরূপে হাজির হন ও ২/২২ দখল করেন।[১৪] দলনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও কোচ জন ব্রেসওয়েল তার বোলিংয়ের ধরন সম্পর্কে জনসমক্ষে তাদের সন্দেহের কথা তুলে ধরেন।[১৫] এরফলে তাকে অমার্জনীয় ও টেস্টে তার বোলিংয়ের বৈধতা প্রমাণের জন্য বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়।[১৬]
ওডিআই থেকে অবসর
২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার একদিনের দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাত খেলায় তিনি ১১ উইকেট পান। কোয়ার্টার-ফাইনালে ভারতের কাছে তার দল বিদায় নেয়। পরবর্তীতে টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে মনোঃসংযোগের উদ্দেশ্যে ২৮ মার্চ, ২০১১ তারিখে একদিনের আন্তর্জাতিক থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।[১৭] জুলাই, ২০১৪ সালে লর্ডসে দ্বি-শতবার্ষিকী উদ্যাপন খেলায় এমসিসির পক্ষাবলম্বন করেন।