ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বৈজ্ঞানিক এবং অলীক কল্পকাহিনী রুশ সাহিত্যের মূলধারার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। রুশ অলীক কল্পকাহিনীর উৎপত্তি হয়েছে শত শত বছরের পুরনো স্লাভীয় রূপকথা থেকে। রুশ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর উৎপত্তি হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এবং সোভিয়েত আমলে স্ত্রুগাতস্কি ভ্রাতৃদ্বয় এবং কির বুলিচেভের মতো লেখকদের আবির্ভাবের ফলে তা স্বর্ণযুগে উত্তীর্ণ হয়। আন্দ্রেই তার্কোভস্কির মতো সোভিয়েত চলচ্চিত্রকাররা বৈজ্ঞানিক ও অলীক কল্পকাহিনী নিয়ে বহু চলচ্চিত্রও তৈরি করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আধুনিক রাশিয়ায় অলীক কল্পকাহিনী রচনার ক্ষেত্রে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। রাশিয়ার বর্তমান সীমানার বাইরে ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানে বহু রুশভাষী লেখক রয়েছেন যাঁরা রুশ সাহিত্যের এই দুইটি শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
রুশ ভাষায় অলীক কল্পকাহিনী, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, ভৌতিক কল্পকাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শাখাকে একত্রে фантастика (ফান্তাস্তিকা) বলা হয়, যার বাংলা প্রতিশব্দ কল্পসাহিত্য। রুশ কল্পসাহিত্য পশ্চিমা কল্পসাহিত্যের মতো সুনির্দিষ্টভাবে বিভক্ত নয়। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকে রুশ ভাষায় বলা হয় научная фантастика (নাউচনায়া ফান্তাস্তিকা), যার আক্ষরিক বাংলা অর্থ "বৈজ্ঞানিক অলীক কল্পকাহিনী" বা "বৈজ্ঞানিক কল্পসাহিত্য"। সোভিয়েত আমলে প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী অলীক কল্পকাহিনী খুব কম রচিত হওয়ার কারণে পেরেস্ত্রোইকার আগ পর্যন্ত রুশরা সাহিত্যের এই শাখাটির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নাম ব্যবহার করত না। বর্তমানে রুশ প্রকাশক ও সমালোচকেরা এটিকে фэнтези (ফেন্তেজি) বলে অভিহিত করেন। গথিক এবং অতিপ্রাকৃতিক কল্পকাহিনীকে রুশ ভাষায় বলা হয় мистика (মিস্তিকা)।
বস্তুতপক্ষে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের আগে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রুশ সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে গড়ে ওঠে নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর আগের বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বিভিন্ন দিকের (যেমন: কল্পলোক বা কল্পভ্রমণ) দেখা পাওয়া যায়।
১৭৬৯ সালে ফিয়োদোর দিমিত্রিয়েভ-মামোনভ রচিত ধর্মযাজকবিরোধী একজন দার্শনিক অভিজাত: সাঙ্কেতিক উপস্থাপনা (Дворянин-философ. Аллегория) উপন্যাসটিকে রুশ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর প্রথম নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়[১]। এটি ভলতেয়ারের লেখা মাইক্রোমেগাস উপন্যাসটি দ্বারা প্রভাবিত[২]।
কল্পলোক ছিল প্রাথমিক রুশ কল্পসাহিত্যের একটি প্রধান শাখা। কল্পলোক নিয়ে রুশ সাহিত্যের প্রথম লেখনীটি ছিল আলেক্সান্দর সুমারোকভের ছোটগল্প সুখী সমাজের একটি স্বপ্ন (১৭৫৯)। কল্পভ্রমণের রূপে লেখা প্রাথমিক দুইটি কল্পলোক ছিল ভাসিলি লেভশিনের সবচেয়ে নতুন ভ্রমণ (১৭৮৪, চন্দ্রভ্রমণ নিয়ে লেখা প্রথম রুশ গল্প) এবং মিখাইল শ্চের্বাতভের ওফিরের দেশে যাত্রা। ফেনেলনের টেলিমাক-এর অনুকরণে লেখা ফিয়োদোর ইয়েমিন, মিখাইল খেরাস্কভ, পাভেল লভভ এবং পিওতর জাখারিনের আধা-ঐতিহাসিক বীরত্বসূচক রোমাঞ্চকর উপন্যাসগুলোও ছিল কল্পলোক নিয়ে। সেমিয়োন ববরোভের মহাকাব্য মহাবিশ্বের প্রাচীন রাত (১৮০৭) মহাকাশ নিয়ে রুশ সাহিত্যের প্রথম লেখনী। ফাদ্দেই বুলগারিনের কিছু গল্পের ঘটনাবলি ছিল ভবিষ্যৎ নিয়ে। অন্যান্যদের লেখনীর বিষয়বস্তু ছিল ফাঁপা পৃথিবী এবং মহাকাশ ভ্রমণ (যেমন: ওসিপ সেঙ্কোভস্কির ব্যারন ব্রাম্বিউসের অসাধারণ ভ্রমণসমূহ)।
রুশ গথিক সাহিত্যের প্রাথমিক লেখকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আলেক্সান্দর বেস্তুঝেভ (যিনি জার্মান গথিক সাহিত্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন), সের্গেই লিউবেতস্কি, ভ্লাদিমির ওলিন, আলেক্সেই তলস্তয়, এলিজাবেতা কোলোগ্রিগোভা এবং মিখাইল লের্মন্তভ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দিমিত্রি সিগভের সূর্য ও বুধগ্রহ এবং সকল দৃশ্যমান ও অদৃশ্য দুনিয়ায় ভ্রমণ (১৮৩২), পিওতর মাশকভের একজন পৃথিবীবাসীর সঙ্গে একজন চন্দ্রবাসীর চিঠি আদানপ্রদান (১৮৪২), সেমিওন দিয়াচকভের এক আশ্চর্য যন্ত্রে চন্দ্রভ্রমণ (১৮৪৪) এবং দেমোক্রিত তের্পিনোভিচের সূর্যভ্রমণ (১৮৪৬) - এই জাতীয় বইগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যান্য জনপ্রিয় গল্পের বিষয়বস্তু ছিল দৈত্য-দানব (রাফাইল জোতভের কিন-কিউ-তং), অদৃশ্যত্ব (ইভান শ্তেভেনের জাদু চশমা) এবং হ্রাসমান মানুষ (ভাসিলি আলফেরিয়েভের ছবি)।