মার্ক অ্যান্থনি টেলর, এও (ইংরেজি: Mark Taylor; জন্ম: ২৭ অক্টোবর, ১৯৬৪) নিউ সাউথ ওয়লসের লিটনে জন্মগ্রহণকারী সাবেক ও বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা। টাবি বা টাবস ডাকনামে পরিচিত মার্ক টেলরঅস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলেরঅধিনায়কেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দলের একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার ও উত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বৈশ্বিক পরিচিতি পেয়েছেন। তার অধিনায়কত্ব ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও অত্যন্ত কার্যকরী। কিন্তু তুলনামূলকভাবে একদিনের আন্তর্জাতিকে তিনি তেমন সফলতা লাভ করতে পারেননি।
খেলোয়াড়ী জীবন
তিনি ১৯৭২ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের ওয়াগা ওয়াগা এলাকায় স্থানান্তরিত হন। এরপর তিনি লেক আলবার্ট ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলেন।[১] ১৯৮৫ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট অভিষেক ঘটে তার।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামতেন। সফল অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারের উত্তরসূরী হিসেবে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার দলের অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব পালন করেন। টেস্ট ক্রিকেটসহ একদিনের আন্তর্জাতিক দলে অধিনায়কত্ব করলেও ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া দল পরাভূত হলে তাকে ওডিআইয়ের অধিনায়কত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি ১০৪টি টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। ১৯টি শতক ও ৪০টি অর্ধ-শতকে গড়া ৭,৫২৫ রান করেন ৪৩.৪৯ রান গড়ে। ফার্স্ট স্লিপে অবস্থান করে চমকৎকার ফিল্ডারের ভূমিকা পালন করেন। ১৫৭ ক্যাচ লুফে নিয়ে টেস্ট রেকর্ড স্থাপন করেন। পরবর্তীতে রাহুল দ্রাবিড় তা ভেঙ্গে দেন। ক্যাপ্টেন গ্রাম্পি ডাকনামে পরিচিত অ্যালান বর্ডারের কাছ থেকে তিনি সর্বদাই অকুণ্ঠ সমর্থন কুড়িয়েছেন। টেলরের পূর্বসূরী স্টিভ ওয়াহও অস্ট্রেলিয়া দলকে সাজিয়েছেন ও অগণিত রেকর্ড সৃষ্ট করেছেন।
কীর্তিগাঁথা
বর্ডারের আমলে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অগ্রযাত্রার সূচনা ঘটে যা টেলরের অধিনায়কত্বে চলমান থাকে। ১৯৯৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের কাছে পরাজয়ের পর টেলরের দল স্বদেশ ও বিদেশের প্রত্যেকটি টেস্ট দলের বিপক্ষে সিরিজে জয়ী হয়। ব্যতিক্রম ছিল ভারতে সিরিজ জয়। ক্রিকেটের বাইবেলরূপে স্বীকৃত উইজডেন এ বিষয়ে মন্তব্য করে যে,
টেলর এমনভাবে কথা বলতেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের মানকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছেন যা সকল স্তরের ক্রিকেটারদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। বর্ডার অস্ট্রেলিয়া দলের পরাজয়কে রোধ করছেন কিন্তু টেলর দলকে বিজয়ী দলে রূপান্তর ঘটিয়েছেন।[২]
টেলর দলের উত্যক্ততারোধে সচেষ্ট হন যা বহিঃর্বিশ্বে বেশ সুনামহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরফলে অন্য যে-কোন সময়ের অস্ট্রেলীয় দলের তুলনায় বেশ সুনাম অর্জন করে। তিনি সর্বমোট ৫০ টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তন্মধ্যে দলের জয় ২৬, পরাজয় ১৩ ও বাদ-বাকী ১১ টেস্ট ড্র হয়। ডন ব্র্যাডম্যান ও ভিভ রিচার্ডসের দল ছাড়া এ সাফল্য পূর্বেকার পঞ্চাশ বছরের মধ্য ব্যাপক সাফল্যবাহক।[৩][৪]
বর্তমানে তিনি নাইন নেটওয়ার্কে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকাররূপে কাজ করছেন। প্রধানত অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত একদিনের আন্তর্জাতিক ও টেস্ট খেলাগুলোয় এ দায়িত্বে রয়েছে। এরফলে তিনি তার পরিবারের সাথে আরও অধিক সময় ব্যয় করতে পারছেন। সাইমন ও’ডনেলের সাথে দ্য ক্রিকেট শো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ ফুজিৎসু এয়ার-কন্ডিশনারের মুখপত্র হিসেবে দায়িত্ব নিয়োজিত রয়েছেন মার্ক টেলর।
সিডনি অঞ্চলসহ এনএসডব্লিউ ক্যাথলিক প্রাইমারি স্কুলের মার্ক টেলর শিল্ড ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় টেলর উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। ৬ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাবের অনুশীলনী মাঠ ওয়েইতারা ওভালের নাম পরবির্তন করে মার্ক টেলর ওভাল নামে পরিবর্তন করা হয়। তিনি ঐ ক্লাবের সাবেক প্রধান স্তরের অধিনায়ক ও আজীবন সদস্যরূপে রয়েছেন।[১০]