গ্রিগরি স্কট ব্লিউয়েট (ইংরেজি: Greg Blewett; জন্ম: ২৯ অক্টোবর, ১৯৭১) দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ও সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার, নটিংহ্যামশায়ার, কেন্ট ও সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন ‘ব্লিউই’ ডাকনামে পরিচিত গ্রেগ ব্লিউয়েট।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৯৭০-এর দশকে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী বব ব্লিউয়েটের সন্তান তিনি।[১] ১৯৯০ সালে এআইএস অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমি থেকে বৃত্তিলাভ করেন তিনি।[২] ১৯৯১-৯২ মৌসুমে গ্রেগ ব্লিউয়েটের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ড ও ওয়ান ডে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সাউথ অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে থাকেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে বিশ্ব সিরিজ কাপ প্রতিযোগিতা চলাকালীন অস্ট্রেলিয়া এ দলের সদস্যরূপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এ প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার ক্রেগ ম্যাকডারমটের বোলিং প্রতিহত করে ব্যাটিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৪৬ টেস্ট ও ৩২টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন গ্রেগ ব্লিউয়েট। ২৬ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে অ্যাডিলেডে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৪ মার্চ, ২০০০ তারিখে ওয়েলিংটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
জানুয়ারি, ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে ঐ টেস্টে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখান। এরপর নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে আবারো সেঞ্চুরি হাঁকান। ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ডের এজবাস্টন টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। এরফলে, অ্যাশেজের প্রথম তিন টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি করার অধিকারী হন।
এছাড়াও, জাতীয় দলের সদস্যরূপে একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন গ্রেগ ব্লিউয়েট। স্বর্ণালী সময়ে তিনি আক্রমণাত্মকধর্মী ব্যাটিং উপহার দিতে সচেষ্ট হতেন। ফাস্ট বোলার কিংবা স্পিন বোলার উভয়েই তার হাতে নাকানিচুবানির শিকার হতো। স্কয়ার অঞ্চলে তিনি অধিক সক্রিয় ছিলেন। নিজ মাঠ অ্যাডিলেড ওভালে স্কয়ার বাউন্ডারীর দূরত্ব কম থাকায় তিনি অধিক রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, মিডিয়াম পেস বোলার হিসেবেও কার্যকর ভূমিকা রাখতেন। গড়ে তিনি ১২৫ কিলোমিটার বেগে বোলিং করতে পারতেন।
জোহেন্সবার্গে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজস্ব সর্বোচ্চ টেস্ট শতরান ২১৪ করেন। সাবেক দলীয় সঙ্গী ও দলনেতা স্টিভ ওয়াহ’র সাথে জুটি গড়ে এ রানগুলো তুলেছিলেন। এ জুটি ৩৮৫ রান তুলেছিল ও পুরো দিনটিই উইকেট না হারিয়ে সংগ্রহ করে।[৩][৪]
ব্যাটসম্যান হিসেবে অসাধারণ হলেও স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়। সাবেক পাকিস্তানি বোলার মুশতাক আহমেদ ও ভারতীয় ক্রিকেটার অনিল কুম্বলের বলে বেশ কয়েকবার আউট হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম বছরটি দূর্দান্তভাবে অতিবাহিত করলেও ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে মুশতাক আহমেদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। মুশতাকের ঘূর্ণায়মান বোলিং সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারেননি। তিনি ক্রমাগত লেগ বিফোর উইকেট কিংবা বোল্ড হচ্ছিলেন। ফলশ্রুতিতে, রিকি পন্টিংকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তবে, ১৯৯৬ সালে পন্টিংয়ের খেলার মান দূর্বলতর হতে থাকলে তিনি পুনরায় দলে নিজস্থান দখল করেন।
ভারত গমন, ১৯৯৮
১৯৯৮ সালে ভারত সফরের পূর্ব-পর্যন্ত তিনি ব্যাট হাতে বেশ ভালো খেলছিলেন। ভারত সফরে অনিল কুম্বলেকে যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে, জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে তার স্থলে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৯ সালে অধিনায়ক মার্ক টেলর অবসর গ্রহণ করলে ব্লিউয়েটকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরূপে খেলানো হয়। পরবর্তীতে, ২০০০ সালের শুরুতে খেলার মান দূর্বল হতে থাকলে ম্যাথু হেইডেনকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এভাবেই তার আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ২০০৬ সালে পেশাদারী ক্রিকেট সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও ঘরোয়া একদিনের খেলায় অংশ নেন যথাক্রমে কুইন্সল্যান্ড ও তাসমানিয়ার বিপক্ষে।
১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা স্টিভ ওয়াহ মন্তব্য করেন যে, গ্রেগ ব্লিউয়েটের রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলা প্রদর্শনে ত্রুটি ছিল। বল মোকাবেলাকালে ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করতেন।[৫] টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে তার গড় ছিল যথাক্রমে ৩৪ ও ২০। এর মাধ্যমেও তার এ ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে। শৃঙ্খলার অভাব ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই এর জন্যে দায়ী।[৫]
অবসর
পেশাদারী পর্যায়ের ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকর্মকে বেছে নেন গ্রেগ ব্লিউয়েট।[৬] ডিসেম্বর, ২০১৩ সালে ফেয়ারফ্যাক্স রেডিও নেটওয়ার্কের (এফআরএন) ধারাভাষ্য দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। এরফলে নেটওয়ার্ক স্টেশন বিশেষতঃ থ্রিএডব্লি মেলবোর্ন, টুইউই সিডনি, ফোরবিসি ব্রিসবেন, সিক্সপিআর পার্থ ও ডিজিটাল রেডিওতে টেস্ট খেলা, একদিনের আন্তর্জাতিক, বিগ ব্যাশ লীগ (বিবিএল) ও টি২০ আন্তর্জাতিকে সম্প্রচারকর্মে সাথে জড়িত হন।[৭][৮] ২০১৮ সালে টেস্ট ক্রিকেট ও বিগ ব্যাশ লীগের খেলা সম্প্রচারের জন্যে সেভেন নেটওয়ার্কে যুক্ত হন।
গ্রেগ ব্লিউয়েটকে ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়েতে একদিনের ত্রি-দেশীয় সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং পরামর্শক হিসেবে মনোনীত করা হয়। এরপর ২০১৪-১৫ মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এ দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে তৃতীয় পর্যায়ের কোচিং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন ও অস্ট্রেলিয়া এ দল ও ব্রিসবেনভিত্তিক ন্যাশনাল ক্রিকেট পারফরম্যান্স সেন্টারে ন্যাশনাল পারফরম্যান্স স্কোয়াডে কাজ করেন।[৯]
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। অ্যাডিলেডের বেতার ব্যক্তিত্ব জোডি ব্লিউয়েটের সাথে প্রথম পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির এক কন্যা ছিল।[১০] ২০১৪ সালে ক্যাথরিন র্যাপটোপোলসের সাথে দ্বিতীয়বার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এ সংসারে স্যামুয়েল হিউ নামীয় এক পুত্র সন্তান রয়েছে।[১১]
↑ কখWaugh, Steve (২০০৫)। STEVE WAUGH: Out of my comfort zone – the autobiography। Victoria: Penguin Group (Australia)। পৃষ্ঠা 336–337। আইএসবিএন0-670-04198-X।