বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বান্দরবান জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[২] ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীদের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল এবং খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সহশিক্ষা কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষা, মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও পাবলিক পরীক্ষাসমূহে ধারাবাহিক ভালো ফলাফল এবং সুসংগঠিত ও নিয়মিত সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সুনাগরিক গঠনে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বিখ্যাত।[৩]
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সারাদেশে ২৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজকেও এমপিওভুক্ত (মান্থলি পে অর্ডার) করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে স্কুল শাখাকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।[৪]
বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত শৈলজনপদ বান্দরবান অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আকর। দিগন্ত বিস্তৃত গিরিশ্রেণী, শৈল তটিনী সাঙ্গু, আর মেঘ পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি এই জেলার ভূ-বৈচিত্র্যে অনুপম নান্দনিক যোজনা। তবে দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতা, সচেতনতার অভাব, দারিদ্র্য, পাহাড়ি জনপদের শ্রমঘন জীবনযাপনের ঐতিহাসিক বাস্তবতা-সব মিলিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামকেই পশ্চাৎপদ করে রেখেছে।এমন পটভূমিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এ অঞ্চলে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথমে রাঙ্গামাটিতে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও জমিসংক্রান্ত জটিলতায় প্রথমে খাগড়াছড়ি ও পরে বান্দরবানে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল সরে যায়। [৪]
অবশেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি(একনেক) এর অনুমোদনক্রমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বান্দরবানে নির্মিত হয়। ২০০৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ (পরবর্তীতে জেনারেল ) এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।[৫]
বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ সরাসরি ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি পদাধিকারবলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার পদাধিকারবলে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সাধারণত সেনাশিক্ষা কোরের মেজর/লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা হয়ে থাকেন। সভাপতি, অধ্যক্ষ তথা সচিব, স্কুল ও কলেজ শাখা থেকে একজন করে শিক্ষক প্রতিনিধি, তিনজন অভিভাবক প্রতিনিধির সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত।
অধ্যক্ষই হলেন প্রশাসনের প্রাণ এবং তাঁর সহায়তাকারী গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ হলো প্রশাসনিক সমন্বয়কারী। হিসেবে আছেন একজন উপধ্যক্ষ, একজন উপধ্যক্ষ (স্কুল) এবং একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো হলো হিসাব সমন্বয়কারী,শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি, হোস্টেল সুপার, প্রত্যেক শাখায় একজন করে একাডেমিক সমন্বয়কারী প্রভৃতি। এসব পদে শিক্ষকদের মধ্য থেকেই পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। [১]
বর্তমান সভাপতি: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ, এসজিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি
অধ্যক্ষ: লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শাহাজাহান সিরাজ ভূঁইয়া, এমফিল, এইসি।
উপাধ্যক্ষ (কলেজ) : আতিকুর রহমান আতিক, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি।
উপাধ্যক্ষ (স্কুল): আব্দুর রহিম, সিনিয়র শিক্ষক, সামাজিক বিজ্ঞান।
সহকারী প্রধান শিক্ষক: সজল কুমার বিশ্বাস, সিনিয়র শিক্ষক, গণিত।
কলেজের বর্তমান ভৌত অবকাঠামো:
[৭] [৮]
তিনটি হাউজে বিভক্ত হয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও বছরব্যাপি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে হাউসগুলোর নামকরণ হয়েছে ভাষায় বিভিন্নভাবে অবদান রাখা মানুষদের নামানুসারে। হাউসগুলো হলঃ
বিসিপিএসসিতে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রম সাফল্যের সাথে পরিচালিত হয়। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা আলোকিত মানুষ হিসেবে বিকশিত হয়, তেমনি প্রতিষ্ঠানের জন্য বয়ে নিয়ে আসে অনেক সম্মান।
[৯]
বিসিপিএসসির বিতর্ক ক্লাব অত্যন্ত সংগঠিত একটি সংগঠন যা প্রতিষ্ঠানের সকল ক্লাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও পাহাড়ে বিতর্কচর্চায় একমেবাদ্বিতীয়ম। এই প্রতিষ্ঠানের বিতার্কিকরা কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া জেলা পর্যায়ের সকল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পাশাপাশি একাধিকবার বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিজয় এবং জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনেছে। বিখ্যাত অর্জনগুলো হল দুদক আয়োজিত দুর্নীতি প্রতিরোধ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৮ এ জাতীয় পর্যায়ে(কলেজ শাখা) রানারআপ ও শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক; দুর্নীতি প্রতিরোধ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৭ এ জাতীয় পর্যায়ে(স্কুল শাখা) সেরা ৮ দলে স্থান; আন্তঃক্যান্টপাবলিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৭ এ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ান(স্কুল শাখা); বাংলাদেশ টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৭ এ অংশগ্রহণ করে বিজয় অর্জন; সমকাল স্কুল বিজ্ঞান বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৫ এ চট্টগ্রাম বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ান; পার্বত্য বিতর্ক উৎসব ২০১৫ এ চ্যাম্পিয়ান প্রভৃতি।[১০] [১১]
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক জেলা ভিত্তিক নাটক মঞ্চায়ন কর্মসূচীর আওতায় এবং এ ছাড়াও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় প্রতিবছর বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কয়েকটি নাটক ছাড়া এর অধিকাংশই মৌলিক বা কোন গল্প-উপন্যাস থেকে নাট্যরূপ দেওয়া। উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো বুমেরাং, স্পার্টাকাস ৭১, ভাটির বাঘ, বরিহাটির স্কুল,নোলক, জঙ্গিবাদবিরোধী নাটক বিভ্রমের বিষলতা প্রভৃতি। এর কয়েকটি ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয়েছে।[১২] উল্লেখ্য, মৌলিক নাটকগুলো বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াকুব কর্তৃক রচিত বা নাট্যরূপ দেওয়া এবং তাঁর নেতৃত্বেই মঞ্চায়িত। তিনি সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রশাসনিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবসরগ্রহণ করেন। [১৩] [১৪]
<ref>