উপহার প্রদানের রীতিটিসহ বড়দিন উৎসবের নানা অনুষঙ্গ খ্রিষ্টান ও অ-খ্রিষ্টানদের অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই উৎসব উপলক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ের একটি বিশেষ মরসুম চলে। বিগত কয়েকটি শতাব্দীতে বিশ্বে বিভিন্ন অঞ্চলে বড়দিনের অর্থনৈতিক প্রভাবটি ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে দেখে গেছে। ভারত ও বাংলাদেশে বড়দিন একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
ব্যুৎপত্তি
ইংরেজি খ্রিস্টমাস (Christmas) শব্দটি "খ্রিস্টেরমাস (উৎসব)" শব্দবন্ধটির যুগ্ম অর্থ থেকে উৎসারিত। শব্দটির ব্যুৎপত্তি ঘটে মধ্য ইংরেজিChristemasse ও আদি ইংরেজিCristes mæsse শব্দ থেকে। শেষোক্ত শব্দটির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় ১০৩৮ সালের একটি রচনায়। "Cristes" শব্দটি আবার গ্রিক Christos এবং "mæsse" শব্দটি লাতিন missa (পবিত্র উৎসব) শব্দ থেকে উদগত। প্রাচীন গ্রিক ভাষায়Χ (চি) হল Christ বা খ্রিষ্ট শব্দের প্রথম অক্ষর। এই অক্ষরটি লাতিন অক্ষর X-এর সমরূপ। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে তাই এই অক্ষরটি খ্রিষ্ট শব্দের নামসংক্ষেপ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়।[৮] এই কারণে খ্রিষ্টমাসের নামসংক্ষেপ হিসেবে এক্সমাস কথাটি চালু হয়।
আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধানে যিশু খ্রিষ্টের জন্মোৎসব উৎসবটিকে বাংলায় বড়দিন আখ্যা দেওয়ার কারণটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে: "২৩ ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশ বড়ো এবং রাত ছোটো হতে আরম্ভ করে"।[৯]
এটিকে বাংলায় "বড়দিন" নামকরণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন,
"মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন।"
"যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন, বিশ্বব্যাপী বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী। যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তার জন্মদিন। সে কারণেই এটিকে বড়দিন হিসেবে বিবেচনা করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।"
তিনি আরো বলেন,
"আঠারো ও উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা এসে এ অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করে। যারা ধর্মটি গ্রহণ করেছেন তাদের কাছে এটি আরও মহিমান্বিত বিষয়।"
"বাঙালি যারা খ্রিস্টান তাদের অধিকাংশই এই ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছেন। তারা ভাবেন যিশু এমন একজন যিনি তাকে ধর্ম দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিনটাই তারা সব আবেগ দিয়ে পালন করেন। এ কারণেই দিনটি তাদের কাছে বড়দিন হিসেবে বিবেচিত।"[১০]
বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রেই বড়দিন একটি প্রধান উৎসব তথা সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। এমনকি অ-খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশেও মহাসমারোহে বড়দিন উদযাপিত হতে দেখা যায়। কয়েকটি অ-খ্রিষ্টান দেশে পূর্বতন ঔপনিবেশিক শাসনকালে বড়দিন উদ্যাপনের সূত্রপাত ঘটেছিল। অন্যান্য দেশগুলিতে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান জনসাধারণ অথবা বৈদেশিক সংস্কৃতির প্রভাবে বড়দিন উদ্যাপন শুরু হয়। তবে চীন, হংকং, ম্যাকাও, সৌদি আরব,নেপাল, আলজেরিয়া, থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, উত্তর কোরিয়া, লিবিয়া, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, ইয়েমেন লাওস, কম্বোডিয়া এবং জাপান এর মতো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দেশে বড়দিন সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় না। তবে জাপানে এটি একটি জনপ্রিয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
অধিকাংশ দেশে প্রতি বছর বড়দিন পালিত হয় ২৫ ডিসেম্বর তারিখে। তবে রাশিয়া, জর্জিয়া, মিশর, আর্মেনিয়া, ইউক্রেন ও সার্বিয়ার মতো কয়েকটি ইস্টার্ন ন্যাশানাল চার্চ ৭ জানুয়ারি তারিখে বড়দিন পালন করে থাকে। কারণ এই সকল চার্চ ঐতিহ্যশালী জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে; জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ২৫ ডিসেম্বর প্রামাণ্য জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের ৭ জানুয়ারি তারিখে পড়ে।
সারা বিশ্বে, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় ঐতিহ্যগত পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে বড়দিন উৎসব উদ্যাপনের রূপটিও ভিন্ন হয়ে থাকে। জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা আনুপাতিকভাবে কম হলেও বড়দিন একটি জনপ্রিয় উৎসব। এই সব দেশে উপহার প্রদান, সাজসজ্জা, ও বড়দিনের বৃক্ষের মতো বড়দিনের ধর্মনিরপেক্ষ দিকগুলি গৃহীত হয়েছে।
খ্রিষ্টধর্মে বড়দিন হল যিশুর জন্মোৎসব। খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি বাইবেলরত্রাণকর্তা-সংক্রান্ত একাধিক ভবিষ্যদবাণীতে বলা হয়েছে যে কুমারী মেরির গর্ভে তাঁদের মসিহা বা ত্রাণকর্তার জন্ম হবে। নূতন নিয়ম বা নূতন বাইবেলের মথিলিখিত সুসমাচার (মথি ১: ১৮ – ২: ১২) এবং লূকলিখিত সুসমাচার (লূক ১: ২৬ – ২: ৪০)-এ বর্ণিত যিশুর জন্মকাহিনী বড়দিনের উৎসবের মূলভিত্তি। এই উপাখ্যান অনুসারে, স্বামী জোসেফের সাহচর্যে বেথলেহেম শহরে উপস্থিত হয়ে মেরি যিশুর জন্ম দেন। জনপ্রিয় ধারণা অনুযায়ী, একটি আস্তাবলে গবাদি পশু পরিবৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন যিশু। যদিও বাইবেলের উপাখ্যানে আস্তাবল বা গবাদি পশুর কোনো উল্লেখই নেই। যদিও লূকলিখিত সুসমাচারে (লূক ২: ৭) একটি যাবপাত্রের উল্লেখ আছে: "আর তিনি আপনার প্রথমজাত পুত্র প্রসব করিলেন, এবং তাঁহাকে কাপড়ে জড়াইয়া যাবপাত্রে শোয়াইয়া রাখিলেন, কারণ পান্থশালায় তাঁহাদের জন্য স্থান ছিল না।" যিশুর জন্ম-সংক্রান্ত প্রথম দিকের চিত্রগুলিতে গবাদি পশু ও যাবপাত্র পরিবৃত একটি গুহায় যিশুর জন্মদৃশ্য দর্শানো হয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এটি বেথলেহেমের চার্চ অফ দ্য নেটিভিটির অভ্যন্তরে। এক স্বর্গদূত বেথলেহেমের চারিপার্শ্বস্থ মাঠের মেষপালকদের যিশুর জন্ম সম্বন্ধে অবহিত করেন। এই কারণে তাঁরাই সেই দিব্য শিশুকে প্রথম দর্শন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।[১১]
অনেক খ্রিষ্টানই মনে করেন, যিশুর জন্ম আদি বাইবেলেরত্রাণকর্তা-সংক্রান্ত ভবিষ্যদবাণীগুলিকে পূর্ণতা দেয়।[১২] মথিলিখিত সুসমাচার অনুসারে, কয়েকজন ম্যাজাই (জ্যোতিষী) স্বর্ণ, গন্ধতৈল ও ধূপ নিয়ে শিশুটিকে দর্শন করতে যান। কথিত আছে, একটি রহস্যময় তারা তাঁদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। সাধারণভাবে বেথলেহেমের তারা নামে পরিচিত এই তারাটি ছিল প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে ইহুদিদের রাজার জন্মবার্তার ঘোষক।[১৩] ম্যাজাইদের আগমনের স্মরণে পালিত হয় ৬ জানুয়ারির এপিফেনি উৎসব। কোনো কোনো চার্চে এই ৬ জানুয়ারিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে বড়দিন উৎসব সমাপ্ত হয়।
খ্রিষ্টানরা নানাভাবে বড়দিন উদ্যাপন করে থাকে। এগুলির মধ্যে বর্তমানে গির্জার উপাসনায় যোগ দেওয়া সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম জনপ্রিয় প্রথা বলে বিবেচিত হয়। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন উপাসনা পদ্ধতি ও জনপ্রিয় রীতিনীতি। বড়দিনের পূর্বে যিশুর জন্মোৎসব উপলক্ষে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চনেটিভিটি উপবাস পালন করে থাকে; অন্যদিকে পাশ্চাত্য খ্রিষ্টধর্মে অধিকাংশ চার্চে অ্যাডভেন্ট পালন করা হয়। বড়দিনের সর্বশেষ প্রস্তুতিটি নেওয়া হয় বড়দিনের পূর্বসন্ধ্যায়।
বড়দিন উৎসব পর্বের অন্যতম অঙ্গ হল গৃহসজ্জা ও উপহার আদানপ্রদান। কোনো কোনো খ্রিষ্টীয় শাখাসম্প্রদায়ে ছোটো ছেলেমেয়েদের দ্বারা খ্রিষ্টের জন্মসংক্রান্ত নাটক অভিনয় এবং ক্যারোল গাওয়ার প্রথা বিদ্যমান। আবার খ্রিষ্টানদের কেউ কেউ তাঁদের গৃহে পুতুল সাজিয়ে খ্রিষ্টের জন্মদৃশ্যের ছোটো প্রদর্শনী করে থাকেন। এই দৃশ্যকে নেটিভিটি দৃশ্য বা ক্রিব বলে। এই ধরনের প্রদর্শনী উৎসবের মুখ্য আকর্ষণ হয়ে ওঠে। কোথাও কোথাও লাইভ নেটিভিটি দৃশ্য ও ট্যাবলো ভাইভ্যান্টও অনুষ্ঠিত হয়; এই জাতীয় অনুষ্ঠানে অভিনেতা ও জন্তুজানোয়ারের সাহায্যে যিশুর জন্মদৃশ্যের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়।[১৪]
চিত্রশিল্পে যিশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলার ঐতিহ্যটি সুদীর্ঘ। এই সকল দৃশ্যে মেরি, জোসেফ, শিশু যিশু, স্বর্গদূত, মেষপালক এবং যিশুর জন্মের পর বেথলেহেমের তারার সাহায্যে পথ চিনে তাঁকে দর্শন করতে আসা বালথাজার, মেলকোয়ার ও ক্যাসপার নামক তিন জ্ঞানী ব্যক্তির চিত্র অঙ্কন করা হয়।[১৫]
বিভিন্ন সংস্কার
যে সকল দেশে খ্রিষ্টান সংস্কার প্রবল, সেখানে দেশজ আঞ্চলিক ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে মিলনের ফলে বড়দিন উদ্যাপনে নানা বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। অনেক খ্রিষ্টানের কাছে ধর্মীয় উপাসনায় অংশ নেওয়া এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। উল্লেখ্য, বড়দিন ও ইস্টারের মরসুমেই গির্জায় জনসমাগম হয় সর্বাধিক।
অনেক ক্যাথলিক দেশে বড়দিনের পূর্বদিন ধর্মীয় শোভাযাত্রা বা কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। অন্যান্য দেশে সান্টাক্লজ ও অন্যান্য মরসুমি চরিত্রদের নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই মরসুমের অন্যতম বহুলপ্রচলিত বৈশিষ্ট্য হল পারিবারিক সম্মেলন ও উপহার আদানপ্রদান। অধিকাংশ দেশেই বড়দিন উপলক্ষে উপহার আদানপ্রদান হয়; আবার কোনো কোনো দেশে এই প্রথাটির জন্য বেছে নেওয়া হয় ৬ ডিসেম্বরের সেন্ট নিকোলাস ডে বা ৬ জানুয়ারির এপিফেনির দিনগুলি।
অনেক পরিবারেই বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ পারিবারিক ভোজসভা আয়োজিত হয়। ভোজসভার খাদ্যতালিকা অবশ্য এক এক দেশে এক এক রকমের হয়। সিসিলি প্রভৃতি কয়েকটি অঞ্চলে খ্রিষ্টমাসের পূর্বসন্ধ্যায় যে ভোজসভা আয়োজিত হয় তাতে পরিবেশিত হয় বারো রকমের মাছ। ইংল্যান্ড ও ইংরেজি সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবান্বিত দেশগুলিতে সাধারণ বড়দিন ভোজসভার পদে দেখা যায় টার্কি (উত্তর আমেরিকা থেকে আনীত), আলু, শাকসবজি, সসেজ ও গ্রেভি; এছাড়াও থাকে খ্রিষ্টমাস পুডিং, মিন্স পাই ও ফ্রুট কেক। পোল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের ভোজে মাছের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়; তবে এই সব অঞ্চলে ভেড়ার মাংসের মতো অত্যধিক-চর্বিওয়ালা মাংসের ব্যবহারও বাড়ছে। জার্মানি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ায় হাঁস ও শূকরের মাংস বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া প্রায় সারা বিশ্বেই গোমাংস, হ্যাম ও মুরগির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফিলিপিনসের ভোজসভার প্রধান খাদ্য হল হ্যাম।
বিশেষ ধরনের টার্ট ও কেকের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ ডেসার্টও তৈরি হয় বড়দিন উপলক্ষে: ফ্রান্সে bûche de Noël বা ইতালিতে panettone। মিষ্টি আর চকোলেট সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। বড়দিনের বিশেষ মিষ্টিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য জার্মান স্টোলেন, মারজিপান কেক বা ক্যান্ডি এবং জামাইকান রাম ফ্রুট কেক। উত্তর দেশগুলিতে শীতকালে যে অল্প কয়েকটি ফল পাওয়া যায় তার মধ্যে কমলালেবু বড়দিনের বিশেষ খাদ্য হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে পরিচিত।
বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার ইতিহাসটি অতি প্রাচীন। প্রাক-খ্রিষ্টীয় যুগে, রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসী শীতকালে চিরহরিৎ বৃক্ষের শাখাপ্রশাখা বাড়ির ভিতরে এনে সাজাত। খ্রিষ্টানরা এই জাতীয় প্রথাগুলিকে তাদের সৃজ্যমান রীতিনীতির মধ্যে স্থান দেয়। পঞ্চদশ শতাব্দীর লন্ডনের একটি লিখিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, এই সময়কার প্রথানুসারে বড়দিন উপলক্ষে প্রতিটি বাড়ি ও সকল গ্রামীণ গির্জা "হোম, আইভি ও বে এবং বছরের সেই মরসুমের যা কিছু সবুজ, তাই দিয়েই সুসজ্জিত করে তোলা হত।"[১৬] প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, হৃদয়াকার আইভিলতার পাতা মর্ত্যে যিশুর আগমনের প্রতীক; হলিপ্যাগান (অখ্রিষ্টান পৌত্তলিক) ও ডাইনিদের হাত থেকে রক্ষা করে; এর কাঁটার ক্রুশবিদ্ধকরণের সময় পরিহিত যিশুর কণ্টকমুকুট এবং লাল বেরিগুলি ক্রুশে যিশুর রক্তপাতের প্রতীক।[১৭]
খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দীতে রোমে নেটিভিটি দৃশ্য প্রচলিত ছিল। ১২২৩ সালে সেন্ট ফ্রান্সিস অফ আসিসি এগুলিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এরপর শীঘ্রই তা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।[১৮] সমগ্র খ্রিষ্টান বিশ্বে স্থানীয় প্রথা ও প্রাপ্ত দ্রব্যাদির অনুষঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার প্রথা চালু রয়েছে। ১৮৬০-এর দশকে শিশুদের হাতে নির্মিত কাগজের শিকলের অনুপ্রেরণায় প্রথম বাণিজ্যিক বড়দিনের সজ্জা প্রদর্শিত হয়।[১৯]
বড়দিনের বৃক্ষ ও চিরহরিৎ শাখাপ্রশাখার ব্যবহার দক্ষিণ অয়নান্তকে ঘিরে প্যাগান প্রথা ও অনুষ্ঠানগুলির খ্রিষ্টীয়করণের ফলস্রুতি; এক ধরনের প্যাগান বৃক্ষপূজা অনুষ্ঠান থেকে এই প্রথাটি গৃহীত হয়েছিল।[২০]ইংরেজি ভাষায় "Christmas tree" শব্দটির প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৩৫ সালে।[২১] শব্দটি গৃহীত হয়েছিল জার্মান ভাষা থেকে। মনে করা হয়, আধুনিক বড়দিনের বৃক্ষের প্রথাটির সূচনা ঘটেছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর জার্মানিতে।[২০] যদিও অনেকের মতে, এই প্রথাটি ষোড়শ শতাব্দীতে মার্টিন লুথার চালু করেছিলেন।[২২][২৩] প্রথমে তৃতীয় জর্জের স্ত্রী রানি শার্লোট এবং পরে রানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালে আরও সফলভাবে প্রিন্স অ্যালবার্ট জার্মানি থেকে ব্রিটেনে এই প্রথাটির আমদানি করেন। ১৮৪১ সাল নাগাদ বড়দিনের বৃক্ষের প্রথাটি সমগ্র ব্রিটেনে যথেষ্ট প্রসার লাভ করেছিল।[২৪] ১৮৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও বড়দিনের বৃক্ষের প্রথাটি গ্রহণ করে।[২৫] বড়দিনের বৃক্ষ আলোকসজ্জা ও গহনার দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে পোইনসেটিয়া নামে মেক্সিকোর একটি দেশজ বৃক্ষ বড়দিনের প্রথার সঙ্গে যুক্ত হয়। অন্যান্য জনপ্রিয় হলিডে গাছ হল হলি, মিসলটো, লাল অ্যামারিলিস, ও বড়দিনের ক্যাকটাস। বড়দিনের বৃক্ষের সঙ্গে মালা ও চিরসবুজ পত্রসজ্জায় সজ্জিত এই সব গাছ দিয়েও বাড়ির অভ্যন্তর সাজানো হয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপে বাড়ির বাইরে আলোকসজ্জা, এবং কখনও কখনও আলোকিত স্লেজ, স্নোম্যান, ও অন্যান্য বড়দিনের চরিত্রের পুতুল সাজানোর প্রথা রয়েছে। পুরসভাগুলিও এই সাজসজ্জার পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। রাস্তার বাতিস্তম্ভে বড়দিনের ব্যানার লাগানো হয় এবং টাউন স্কোয়ারে স্থাপন করা হয় বড়দিনের বৃক্ষ।[২৬]
অনেক দেশে নেটিভিটি দৃশ্যের উপস্থাপনা বেশ জনপ্রিয়। এই সব দেশে জনসাধারণকে সম্পূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত নেটিভিটি দৃশ্য সৃজনে উৎসাহিত করা হয়। কোনো কোনো পরিবারে যেসকল দ্রব্য বা পুতুল দিয়ে এই দৃশ্য রচিত হয়, সেগুলিকে উত্তরাধিকার সূত্রে মূল্যবান পারিবারিক সম্পত্তি মনে করা হয়। ৫ জানুয়ারির পূর্বসন্ধ্যায় দ্বাদশ রজনীতে খ্রিষ্টমাস সাজসজ্জা খুলে নেওয়া হয়। খ্রিষ্টমাসের প্রথাগত রংগুলি হল পাইনসবুজ (চিরহরিৎ), তুষারধবল ও হৃদয়রক্তবর্ণ।
প্রাচীনতম যে বিশেষ খ্রিষ্টমাস স্তোত্রবন্দনাগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি রচিত হয়েছিল খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমে। মিলানের আর্কবিশপ অ্যামব্রোস রচিত Veni redemptor gentium ইত্যাদি লাতিন স্তোত্রগুলি এরিয়ানিজম বিরোধী যিশুর অবতারবাদের ধর্মীয় তত্ত্বকথার পবিত্র ভাষ্য। স্প্যানিশ কবি প্রুডেন্টিয়াস (মৃত্যু ৪১৩ খ্রি.) রচিত Corde natus ex Parentis (Of the Father's love begotten) স্তোত্রটি আজও কোনো কোনো গির্জায় গীত হয়।[২৭]
নবম ও দশম শতাব্দীতে উত্তর ইউরোপের খ্রিষ্টীয় মঠগুলিতে বার্নার্ড অফ ক্লেয়ারভক্স কর্তৃক ছন্দায়িত স্তবকে সজ্জিত হয়ে খ্রিষ্টমাস "সিকোয়েন্স" বা "প্রোজ" প্রচলিত হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে পেরিসিয়ান সন্ন্যাসী অ্যাডাম অফ সেন্ট ভিক্টর জনপ্রিয় গানগুলি থেকে সুর আহরণ করে প্রথাগত খ্রিষ্টমাস ক্যারোলের মতো এক প্রকার সঙ্গীত সৃষ্টি করেন।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফ্রান্স, জার্মানি, এবং বিশেষ করে ফ্রান্সিস অফ আসিসির প্রভাবাধীন ইতালিতে আঞ্চলিক ভাষায় জনপ্রিয় খ্রিষ্টমাস সঙ্গীতের একটি শক্তিশালী প্রথা গড়ে ওঠে।[২৮] ইংরেজি ভাষায় প্রথম খ্রিষ্টমাস ক্যারোল পাওয়া যায় শ্রপশায়ারের চ্যাপলেইন জন অডেলের রচনায়। তাঁর তালিকাভুক্ত পঁচিশটি "ক্যারোলস অফ ক্রিসমাস" ওয়েসেলারদের দল বাড়ি বাড়ি ঘুরে গেয়ে শোনাত।[২৯] যে গানগুলিকে আমরা খ্রিষ্টমাস ক্যারোল বলে জানি, আসলে সেগুলি ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকসংগীত। বড়দিন ছাড়াও "হারভেস্ট টাইড" উৎসবেও সেগুলি গাওয়া হত। পরবর্তীকালে গির্জায় ক্যারোল গাওয়ার সূচনা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে ক্যারোল মধ্যযুগীয় কর্ড প্যাটার্নে সুরারোপিত হয়ে থাকে। এই কারণে এই গানগুলির সুর বেশ স্বতন্ত্র ধরনের হয়ে থাকে। "Personent hodie", "Good King Wenceslas", এবং "The Holly and the Ivy" ক্যারোলগুলি মধ্যযুগের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত। এখনও গীত হয় এমন প্রাচীনতম গানগুলির অন্যতম এগুলি। Adeste Fidelis (O Come all ye faithful) ক্যারোলটি তার বর্তমান রূপটি পরিগ্রহ করে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে; যদিও গানটির কথা সম্ভবত ত্রয়োদশ শতাব্দীর রচনা।
উত্তর ইউরোপে প্রোটেস্টান্ট সংস্কার আন্দোলনের পর সাময়িকভাবে ক্যারোলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। যদিও মার্টিন লুথারের মতো কোনো কোনো সংস্কারক ক্যারোল রচনা করতেন এবং উপাসনায় ক্যারোল ব্যবহারকে উৎসাহিতও করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জনপ্রিয় সঙ্গীতের আকারে পুণরুজ্জীবনের পূর্বে ক্যারোল সাধারণ গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে প্রচলিত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজ সংস্কারক চার্লস উইজলি উপাসনায় সঙ্গীতের প্রয়োজনীতা অনুধাবন করেন। তিনি একাধিক সামে সুরারোপ করেছিলেন। এগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাজাগরণে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়াও তিনি অন্তত তিনটি খ্রিষ্টমাস ক্যারোলের বাণী রচনা করেন। এগুলির মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ক্যারোলটির আদি শিরোনাম ছিল "Hark! How All the Welkin Rings"; বর্তমানে গানটির শিরোনাম "Hark! the Herald Angels Sing".[৩০]ফেলিক্স মেন্ডেলসন উইজলির কথার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ একটি সুরও রচনা করেছিলেন। ১৮১৮ সালে অস্ট্রিয়ায় মোর ও গ্রুবার এই সংগীতধারায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ওবার্নডর্ফের সেন্ট নিকোলাস চার্চের জন্য তাঁরা রচনা করেছিলেন "Silent Night" ক্যারোলটি। উইলিয়াম বি. স্যান্ডিজ রচিত ক্রিসমাস ক্যারোল এনসিয়েন্ট অ্যান্ড মডার্ন (১৮৩৩) গ্রন্থে একাধিক নব্য-ধ্রুপদি ইংরেজি ক্যারোল প্রথম প্রকাশিত হয়। এগুলি ভিক্টোরিয়ান যুগের মধ্যভাগে উৎসবের পুনরুজ্জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।.[৩১]
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ খ্রিষ্টমাস ঋতুসঙ্গীতের উদ্ভব ঘটে। ১৭৮৪ সালে রচিত হয় "ডেক দ্য হলস"। আমেরিকান "জিঙ্গল বেলস" গানটির মেধাসত্ত্ব ১৮৫৭ সালের। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে আফ্রিকান আমেরিকানদের সংস্কৃতি ও ধর্মচেতনায় সমৃদ্ধ তাদের নিজস্ব ধর্মীয় সঙ্গীত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিংশ শতাব্দীতে মরসুমি ছুটির দিনের গান বাণিজ্যিকভাবে গাওয়া হতে থাকে। এই জাতীয় গানগুলির মধ্যে জ্যাজ ও ব্লুজ জাতীয় গানের নানা রূপ পরিলক্ষিত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন সঙ্গীতের পুনরুজ্জীবনেও আগ্রহ দেখা যেতে থাকে। গাওয়া হতে থাকে দ্য রিভেলস-এর মতো লোকসঙ্গীত এবং আদি মধ্যযুগীয় ও ধ্রুপদি সংগীতও।
খ্রিষ্টমাস কার্ড হল এক প্রকারের চিত্রিত শুভেচ্ছাবার্তা। সাধারণত বড়দিনের পূর্বের সপ্তাহগুলিতে বন্ধুবান্ধব ও পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে খ্রিষ্টমাস কার্ড আদানপ্রদান চলে। পাশ্চাত্য সমাজ ও এশিয়ার অখ্রিষ্টান সম্প্রদায় সহ এক বিরাট সংখ্যক জনসাধারণের মধ্যে এই প্রথা জনপ্রিয়। চিরাচরিত শুভেচ্ছাবার্তার বাণীটি হল "পবিত্র খ্রিষ্টমাস ও শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন" ("wishing you a Merry Christmas and a Happy New Year")। ১৮৪৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত স্যার হেনরি কোল নির্মিত প্রথম বাণিজ্যিক খ্রিষ্টমাস কার্ডের বাণীটিও এই প্রকারই ছিল। যদিও এই শুভেচ্ছাবার্তা রচনার বহুতর পন্থা বিদ্যমান। অনেক কার্ডে একদিকে যেমন ধর্মীয় অনুভূতি, কবিতা, প্রার্থনা বা বাইবেলের স্তব স্থান পায়, তেমনই অন্যদিকে "সিজন’স গ্রিটিংস"-এর মতো কার্ডগুলি ধর্মীয় চেতনার বাইরে সামগ্রিক ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়।
বড়দিন উৎসব সম্পর্কিত চিত্রকর্ম সংবলিত বা বাণিজ্যিকভাবে নকশাকৃত মরসুমের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতাযুক্ত খ্রিষ্টমাস কার্ডের বিক্রির পরিমাণ যথেষ্টই। কার্ডের নকশায় স্থান পায় যিশুর জন্মদৃশ্য-সংবলিতখ্রিষ্টমাসের বর্ণনা, অথবা বেথলেহেমের তারা বা পবিত্র আত্মা ও বিশ্বে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ইত্যাদি খ্রিষ্টীয় প্রতীক। ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়কেন্দ্রিক কার্ডগুলিতে খ্রিষ্টমাস সংস্কারের নানা দৃশ্য, সান্টাক্লজ প্রভৃতি খ্রিষ্টমাস চরিত্র, বা বড়দিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মোমবাতি, হলি ও বাবল, শীত ঋতুর নানা চিত্র, খ্রিষ্টমাসের নানা প্রমোদানুষ্ঠান, তুষারদৃশ্য ও উত্তরদেশীয় শীতের জন্তুজানোয়ারের ছবি স্থান পায়। এছাড়াও পাওয়া যায় হাস্যরসাত্মক কার্ড এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর পথেঘাটে ক্রিনোলাইন দোকানদারদের চিত্রসংবলিত নস্টালজিক কার্ডও।
অনেক দেশেই বড়দিন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। ডাকব্যবহারকারীরা খ্রিষ্টমাস কার্ড পাঠানোর সময় এই ডাকটিকিটগুলি ব্যবহার করে থাকেন। ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের কাছেও এগুলি খুব জনপ্রিয়। খ্রিষ্টমাস সিল ও মাত্র এক বছরের বৈধতা ছাড়া এগুলি সাধারণ ডাকটিকিটের মতোই হয়ে থাকে। এগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ছাপা হয় এবং অক্টোবরের সূচনা থেকে ডিসেম্বরের সূচনা পর্যন্ত এই ডাকটিকিট বিক্রি হয়।
১৮৯৮ সালে ইম্পিরিয়াল পেনি পোস্টেজ হারের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি কানাডিয়ান ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছিল। এই ডাকটিকিটে বিশ্বের একটি মানচিত্রের তলায় "XMAS 1898" কথাটি খোদিত ছিল। ১৯৩৭ সালে অস্ট্রিয়া গোলাপ ও জোডিয়াক চিহ্ন সংবলিত দুটি "ক্রিসমাস গ্রিটিংস স্ট্যাম্প" প্রকাশ করে। ১৯৩৯ সালে ব্রাজিল চারটি অর্ধ-ডাকটিকিট প্রকাশ করে; এগুলির বিষয় ছিল: তিন রাজা ও বেথলেহেমের তারা, স্বর্গদূত ও শিশু, দক্ষিণী ক্রুশ ও শিশু, এবং এক মা ও শিশু।
আধুনিককালে এই চরিত্রগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় হল লাল পোশাক পরিহিত পৌরাণিক উপহার প্রদানকারী সান্টাক্লজ। সান্টাক্লজের উৎস একাধিক। সান্টাক্লজ নামটি ডাচ সিন্টারক্লাস নামের অপভ্রংশ; যার সাধারণ অর্থ সেন্ট নিকোলাস। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর নিকোলাস ছিলেন অধুনা তুরস্কের মিরার বিশপ। অন্যান্য সন্তসুলভ অবদানগুলির পাশাপাশি শিশুদের পরিচর্যা, দয়া ও উপহার প্রদানের জন্য তিনি খ্যাতনামা ছিলেন। অনেক দেশে তাঁর সম্মানে ৬ ডিসেম্বর উপহার আদানপ্রদানের মাধ্যমে উৎসব পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, বিশপের পোশাক পরিহিত নিকোলাস তাঁর সহকারীদের সহায়তায় বিগত এক বছরে শিশুদের আচরণের খোঁজখবর নিতেন; তারপর স্থির করতেন সেই শিশু উপহার পাওয়ার যোগ্য কিনা। খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সেন্ট নিকোলাসের নাম নেদারল্যান্ডে পরিচিতি লাভ করে এবং মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে তাঁর নামে উপহার আদানপ্রদানের ঐতিহ্য চালু হয়ে যায়। সংস্কার আন্দোলনের সময় অনেক প্রোটেস্টান্ট উপহার প্রদানকারীর চিরাচরিত চরিত্রটি বর্জন করে শিশু খ্রিষ্ট (Christ Child) বা Christkindl (ইংরেজি অপভ্রংশে ক্রিস ক্রিঙ্গল) চরিত্রটির আমদানি করেন এবং উপহার প্রদানের তারিখটি ৬ ডিসেম্বর থেকে বদলে হয় খ্রিষ্টমাস পূর্বসন্ধ্যা।[৩২]
যদিও সান্টাক্লজের আধুনিক রূপকল্পটির সৃষ্টি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। এই রূপান্তরের পশ্চাতে ছয়জন মুখ্য অবদানকারী ছিলেন। এঁদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ওয়াশিংটন আরভিং এবং জার্মান-আমেরিকান কার্টুনিস্ট টমাস ন্যাস্ট (১৮৪০–১৯০২)। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নিউ ইয়র্কের অধিবাসীরা শহরের অ-ইংরেজ অতীতের কিছু প্রতীক ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। প্রকৃতপক্ষে নিউ ইয়র্ক শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ডাচ ঔপনিবেশিক শহর নিউ আমস্টারডাম নামে এবং ডাচ সিন্টারক্লাস ঐতিহ্যটি সেন্ট নিকোলাস নামে সেখানে পুনরাবিষ্কৃত হয়েছিল।[৩৩] ১৮০৯ সালে নিউ ইয়র্ক হিস্টোরিকাল সোসাইটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিহাস স্মরণ করে Sancte Claus-কে নিউ ইয়র্ক শহরের ডাচ নাম নিউ আমস্টারডামের পৃষ্ঠপোষক সন্ত বা প্যাট্রন সেন্ট ঘোষণা করেন।[৩৪] ১৮১০ সালের প্রথম আমেরিকান উপস্থিতিতে সান্টাক্লজকে বিশপের আলখাল্লায় অঙ্কন করা হয়েছিল। যদিও নতুন শিল্পীরা তাঁর চিত্রাঙ্কনের ভার নিলে, সান্টাক্লজের পোষাকেও ধর্মনিরপেক্ষতার স্পর্শ লাগে।[৩৫] ১৮৬৩ সাল থেকে ন্যাস্ট প্রতি বছর সান্টাক্লজের ছবি আঁকতেন। ১৮৮০-এর দশকে ন্যাস্টের সান্টা তার আধুনিক রূপটি পরিগ্রহ করে। এই রূপটি সম্ভবত ইংরেজ ফাদার খ্রিষ্টমাসের আদলে আঁকা হয়েছিল। ১৯২০-এর দশকে বিজ্ঞাপননির্মাতাদের সৌজন্যে এই রূপটিই স্থায়িত্ব লাভ করে।[৩৬]
সান্টাক্লজ চরিত্রটির পূর্বসূরি ফাদার খ্রিষ্টমাস হাস্যরসিক, নাদুসনুদুস ও দাড়িওয়ালা ব্যক্তি। তিনি বড়দিনের শুভ চেতনার প্রতীক। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগের ইংল্যান্ডে ফাদার খ্রিষ্টমাসে লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য সে সময় ছেলেমেয়েদের উপহার প্রদানের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না। তিনি সংযুক্ত ছিলেন বড়দিনের আমোদপ্রমোদ ও মাতলামির সঙ্গে।[২১]ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেনে সান্টার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তাঁর চরিত্রটি পুনঃসৃজিত হয়। এই পথে ফ্রান্সে গড়ে ওঠে পেরে নোয়েল চরিত্রটিও। ইতালিতে সান্টাক্লজের ভূমিকাটি পালন করে বাব্বো নাতালে; এদেশে উপহার প্রদানকারী চরিত্রটি হলেন লে বাফানা। তিনি এপিফেনির পূর্বসন্ধ্যায় উপহার নিয়ে আসেন। কথিত আছে, লা বেফানা শিশু যিশুর জন্য উপহার আনতে বেরিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি পথ হারিয়ে ফেলেন। এখন তিনি সব শিশুর জন্যই উপহার নিয়ে আসেন। কোনো কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসারে সান্টাক্লজের সঙ্গী হলেন নেচ রুপরেক বা কালো পিটার। অন্যান্য গল্প অনুসারে, এলফেরা উপহার প্রস্তুত করে। সান্টাক্লজের স্ত্রীর নাম দেওয়া হয়েছে মিসেস ক্লজ।
সেন্ট নিকোলাসের সান্টায় রূপান্তরিত হওয়ার আমেরিকান কাহিনিটির কিছু বিরোধিতাও ধ্বনিত হতে শোনা যায়। দাবি করা হয় সেন্ট নিকোলাস সোসাইটি ১৮৩৫ সালের পূর্বে স্থাপিত হয়নি; যা আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্তত পঞ্চাশ বছর পরের ঘটনা।[৩৭] সর্বোপরি, চার্লস জোনস কৃত নিউ আমস্টারডামের "শিশুসাহিত্য পুস্তক, সাময়িকপত্র ও পত্রিকা"র গবেষণায় সেন্ট নিকোলাস বা সিন্টারক্লাসের কোনো উল্লেখ নেই।[৩৮] যদিও ১৯৭৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত জোনসের গবেষণার প্রতি সকল বিশেষজ্ঞ আস্থা রাখেন না।[৩৯] নিউ ব্রানসউইক থিওলজিক্যাল সেমিনারির হাওয়ার্ড জি. হেজম্যান হাডসন ভ্যালির আদি বসতির সিন্টারক্লাস সংস্কৃতির আদলে নিউ ইয়র্কের সিন্টারক্লাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।[৪০]
ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার মতো কিছু লাতিন আমেরিকান দেশের সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসারে, সান্টা খেলনা প্রস্তুত করে যিশুকে তা দেন; যিশুই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেলেমেয়েদের সেই খেলনা উপহার দিয়ে যান। এই বিশ্বাস ঐতিহ্যগত ধর্মীয় বিশ্বাস ও আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত সান্টা সংস্কৃতির এক মেলবন্ধনের প্রয়াস।
অল্টো আদিগে/সাদতিরোল (ইতালি), অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, দক্ষিণ জার্মানি, হাঙ্গেরি, লেচেনস্টেইন, স্লোভাকিয়া ও সুইজারল্যান্ডে ক্রাইস্টকাইন্ড (চেক ভাষায় Ježíšek, হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় Jézuska, স্লোভাক ভাষায় Ježiško) উপহার প্রদান করেন। জার্মান সেন্ট নিকোলাউস ও ওয়েনাকসম্যান চরিত্রদুটি এক নয়। ওয়েনাকসম্যান আধুনিক সান্টার জার্মান সংস্করণ। সেন্ট নিকোলাউস নেচ রুপরেকের সহযোগিতায় ৬ ডিসেম্বর ক্যান্ডি, নাটবাদাম ও ফলের মতো ছোটো ছোটো উপহার নিয়ে আসেন। সারা বিশ্বেই পিতামাতারা তাদের সন্তানদের সান্টাক্লজ ও অন্যান্য উপহার প্রদানকারীদের সম্পর্কে শিক্ষা দিলেও, কেউ কেউ এগুলি কুসংস্কার বলে প্রত্যাখ্যান করেন।[৪১]
অনেক দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বড়দিন বৃহত্তম বাৎসরিক ঘটনা। প্রায় সকল পাইকারি বাজার ও দোকানে এই উপলক্ষে ব্যবসাবাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। লোকে উপহার, সাজসজ্জার সামগ্রী ও অন্যান্য দ্রব্যাদি প্রচুর পরিমাণে কেনে বলে নতুন নতুন উৎপন্নদ্রব্য বাজারে ছাড়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড়দিনের কেনাকাটার মরসুম সাধারণ শুরু হয় থ্যাঙ্কসগিভিং-এর পরদিন। এই দিনটি ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামেও পরিচিত। তবে অনেক আমেরিকানই অক্টোবর মাস থেকেই বড়দিনের দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে শুরু করে দেন। কানাডাতে ব্যবসায়ীরা হ্যালোউইনের (৩১ অক্টোবর) অব্যবহিত পূর্বে প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং ১১ নভেম্বর রিমেম্বারেন্স ডে-র পরে বাজারে পণ্যদ্রব্য ছাড়তে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত আয়ের এক-চতুর্থাংশ বড়দিনের কেনাকাটায় ব্যয়িত হয়।[৪২]যুক্তরাষ্ট্র সেন্সর ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, ২০০৪ সালের নভেম্বরে দেশজুড়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; ২০০৪ সালেরই ডিসেম্বরে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যান্য ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির পরিমাণ আরও বেশি – বুকস্টোরে এই বৃদ্ধি ১০০ শতাংশ এবং গহনার দোকানে ১৭০ শতাংশ। এই একই বছরে বড়দিনের আগের দুই মাসে আমেরিকার রিটেল স্টোরগুলিতে কর্মীনিয়োগের পরিমাণ ১.৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে হয় ১.৮ মিলিয়ন।[৪৩] বড়দিনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল শিল্পগুলির মধ্যে অন্যত্ম হল বড়দিনের কার্ড শিল্প ও লাইভ বড়দিনের বৃক্ষ। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১.৯ বিলিয়ন কার্ড পাঠানো হয়েছিল এবং ২০.৮ মিলিয়ন গাছ খ্রিষ্টমাস বৃক্ষ হিসেবে কাটা হয়েছিল।[৪৪]
অধিকাংশ পাশ্চাত্য দেশে বড়দিনের দিনটি ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা কম কর্মবহুল দিন। এই দিন সব ধরনের দোকান ও বাজার বন্ধ রাখা হয়। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে খ্রিষ্টমাস ডে (ট্রেডিং) অ্যাক্ট ২০০৪ অনুসারে, বড়দিনের দিন সব রকম ব্যবসাবাণিজ্য আইনত নিষিদ্ধ। স্কটল্যান্ডেও অনুরূপ আইন আনার চিন্তাভাবনা চলছে। ফিল্ম স্টুডিওগুলি বড়দিন উপলক্ষে বিভিন্ন বড় বাজেটের বড়দিনের চলচ্চিত্র, ফ্যান্টাসি ও লাভজনক চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়ে থাকে।
ক্রিসমাস কখনো কখনো বিতর্ক এবং আক্রমণের বিষয়বস্তু হয়েছে, যা খ্রিস্টান এবং অ-খ্রিস্টান উভয়ের পক্ষ থেকেই এসেছে। ঐতিহাসিকভাবে, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথে (১৬৪৭–১৬৬০) পিউরিটানদের শাসনামলে ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ১৬৫৯ সালে ঔপনিবেশিক নিউ ইংল্যান্ডেও পিউরিটানরা ক্রিসমাস উদযাপনকে বেআইনি ঘোষণা করে, কারণ এটি বাইবেলে উল্লেখ নেই এবং তাদের মতে, এটি সংস্কারিত উপাসনার নিয়ম লঙ্ঘন করে।[৪৫][৪৬]
স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট, যা প্রেসবাইটেরিয়ানদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল, ১৬৩৭ থেকে ১৬৯০ সালের মধ্যে ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ করার জন্য একাধিক আইন পাস করে। ১৮৭১ সালের আগে পর্যন্ত ক্রিসমাস স্কটল্যান্ডে সরকারি ছুটি হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।[৪৭][৪৮][৪৯] আজও কিছু রক্ষণশীল সংস্কারিত গির্জা, যেমন ফ্রি প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চ অফ স্কটল্যান্ড এবং রিফর্মড প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চ অফ নর্থ আমেরিকা, ক্রিসমাস উদযাপনকে প্রত্যাখ্যান করে। তাদের মতে, ক্রিসমাস অ-ধর্মীয় উৎস এবং বাইবেলের ভিত্তি থেকে বিচ্যুত।[৫০][৫১]
জেহোভাহ'স উইটনেস ধর্মীয় গোষ্ঠীতেও ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ, কারণ তাদের পরিচালনা পর্ষদ বিশ্বাস করে যে ক্রিসমাসের উৎস পৌত্তলিক এবং এটি বাইবেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।[৫২] এছাড়াও, সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো নাস্তিক রাষ্ট্র[৫৩] এবং সাম্প্রতিককালে সোমালিয়া, তাজিকিস্তান এবং ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।[৫৪]
কিছু খ্রিস্টান এবং প্রতিষ্ঠান, যেমন প্যাট রবার্টসনের আমেরিকান সেন্টার ফর ল অব জাস্টিস, অভিযোগ করে যে ক্রিসমাসের ওপর আক্রমণ চলছে (যা তারা "ক্রিসমাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" বলে অভিহিত করে)।[৫৫] এমন গোষ্ঠীগুলোর দাবি, "ক্রিসমাস" শব্দটি বা এর ধর্মীয় দিকগুলো ক্রমশ সেন্সর, এড়িয়ে চলা বা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতা, খুচরা বিক্রেতা, সরকার (বিশেষত স্কুল), এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে। এক বিতর্কের বিষয় হলো ক্রিসমাস গাছের নাম পরিবর্তন করে হলিডে ট্রি রাখা।[৫৬]
যুক্তরাষ্ট্রে, শুভ বড়দিন এর পরিবর্তে হ্যাপি হলিডে ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়, যা ইহুদিদের হনুক্কাহ উৎসবের সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে বিবেচিত হয়।[৫৭] যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায়, যেখানে হলিডে শব্দের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি, এই শব্দের ব্যবহার এবং "ক্রিসমাস" শব্দটি এড়িয়ে যাওয়াকে রাজনৈতিকভাবে সঠিক বলে সমালোচনা করা হয়েছে।[৫৮][৫৯][৬০] ১৯৮৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট লিঞ্চ বনাম ডনেলি মামলায় রায় দিয়েছিল যে রোড আইল্যান্ডের পটুকেট শহরের মালিকানাধীন এবং প্রদর্শিত একটি ক্রিসমাস প্রদর্শনী (যার মধ্যে একটি যিশুর জন্ম দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল) প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করেনি।[৬১]
আমেরিকান মুসলিম পণ্ডিত আবদুল মালিক মুজাহিদ বলেছেন, মুসলমানদের ক্রিসমাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত, যদিও তারা এটির সাথে একমত না হতে পারে।[৬২]
চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার রাষ্ট্র atheism সমর্থন করে[৬৩] এবং এ উদ্দেশ্যে ধর্মবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছে।[৬৪] ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, কর্মকর্তারা ক্রিসমাসের আগে খ্রিস্টান গির্জাগুলোতে অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করতে বাধ্য করে; ক্রিসমাস গাছ এবং সান্তা ক্লজের মূর্তিও জোর করে সরিয়ে ফেলা হয়।[৬৫][৬৬]
বিশুদ্ধতাবাদী খ্রিস্টানরা বড়দিনের উৎসবকে পাপাচারিতা বলে মনে করতেন। ১৬৪৪ সালে বিশুদ্ধতাবাদী খ্রিস্টানরা বড়দিন রহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারা ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান বিশ্বাসের অনুসারী। তাদের মতে, এসব বর্বর ও ধর্মহীনদের উৎসব, যার সাথে খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের কোন সম্পর্ক নেই। তারা বলতেন, ২৫শে ডিসেম্বর যে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন বাইবেলে এমন তথ্যের কোন ভিত্তি নেই। তাই বেশ কিছুদিন বড়দিনের সাথে সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি সেদিন গির্জাগুলোতে ধর্মীয় প্রার্থনাও অবৈধ ছিল। ইংল্যান্ডে ১৬৬০ সাল পর্যন্ত বড়দিন নিষিদ্ধ ছিল। আমেরিকাতেও বিশুদ্ধতাবাদী খ্রিস্টানরা এই উৎসবকে ধর্মবিরোধী বলে মনে করতো। সেখানেও কিছু এলাকায় একই কারণে বড়দিন নিষিদ্ধ ছিল। যেমন, ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে ১৬৫৯ থেকে ১৬৮১ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবত ছিল। [৬৭]
↑Lejeune, Marie Claire. Compendium of symbolic and ritual plants in Europe, p.550. University of Michigan আইএসবিএন৯০-৭৭১৩৫-০৪-৯
↑Shoemaker, Alfred Lewis. (1959) Christmas in Pennsylvania: a folk-cultural study. Edition 40. pp. 52, 53. Stackpole Books 1999. আইএসবিএন০-৮১১৭-০৩২৮-২.
↑"History of the Society"। The Saint Nicholas Society of the City of New York। ২০০৯-০১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৫।
↑Jones, Charles W., "Knickerbocker Santa Claus", The New-York Historical Society Quarterly, XXXVIII (4)উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) .
↑Charles W. Jones, Saint Nicholas of Myra, Bari, and Manhattan: Biography of a Legend (Chicago: U of Chicago P, 1978).
↑Anon (মে ২২, ২০০৭)। "Bank Holiday Fact File"(পিডিএফ)। TUC press release। TUC। জুন ৩, ২০১৩ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১২, ২০১০।
↑Daniels, Bruce Colin (1995). Puritans at Play: Leisure and Recreation in Colonial New England. Macmillan, p. 89, আইএসবিএন৯৭৮-০-৩১২-১৬১২৪-৮
↑Roark, James; Johnson, Michael; Cohen, Patricia; Stage, Sarah; Lawson, Alan; Hartmann, Susan (২০১১)। Understanding the American Promise: A History, Volume I: To 1877। Bedford/St. Martin's। পৃষ্ঠা 91।
↑"ACLJ, Christmas laws"। Aclj.org। ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩।
↑Aliweiwi, Jehad (নভেম্বর ২৮, ২০০৫)। "A Christmas Tree or a Holiday Tree?"। Muslim Canadian Congress। ডিসেম্বর ৩১, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩। (previous title: "Christmas controversy article")
↑Dillon, Michael (২০০১)। Religious Minorities and China(পিডিএফ)। Minority Rights Group International। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩।
↑Buang, Sa'eda; Chew, Phyllis Ghim-Lian (মে ৯, ২০১৪)। Muslim Education in the 21st Century: Asian Perspectives। Routledge। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন978-1-317-81500-6।
The Battle for Christmas, by Stephen Nissenbaum (1996; New York: Vintage Books, 1997). আইএসবিএন০-৬৭৯-৭৪০৩৮-৪
The Origins of Christmas, by Joseph F. Kelly (August 2004: Liturgical Press) আইএসবিএন৯৭৮-০-৮১৪৬-২৯৮৪-০
Christmas Customs and Traditions, by Clement A. Miles (1976: Dover Publications) আইএসবিএন৯৭৮-০-৪৮৬-২৩৩৫৪-৩
The World Encyclopedia of Christmas, by Gerry Bowler (October 2004: McClelland & Stewart) আইএসবিএন৯৭৮-০-৭৭১০-১৫৩৫-৯
Santa Claus: A Biography, by Gerry Bowler (November 2007: McClelland & Stewart) আইএসবিএন৯৭৮-০-৭৭১০-১৬৬৮-৪
There Really Is a Santa Claus: The History of St. Nicholas & Christmas Holiday Traditions, by William J. Federer (December 2002: Amerisearch) আইএসবিএন৯৭৮-০-৯৬৫৩৫৫৭-৪-২
St. Nicholas: A Closer Look at Christmas, by Jim Rosenthal (July 2006: Nelson Reference) আইএসবিএন১-৪১৮৫-০৪০৭-৬
Just say Noel: A History of Christmas from the Nativity to the Nineties, by David Comfort (November 1995: Fireside) আইএসবিএন৯৭৮-০-৬৮৪-৮০০৫৭-৮
4000 Years of Christmas: A Gift from the Ages, by Earl W. Count (November 1997: Ulysses Press) আইএসবিএন৯৭৮-১-৫৬৯৭৫-০৮৭-২
Sammons, Peter (মে ২০০৬)। The Birth of Christ। Glory to Glory Publications (UK)। আইএসবিএন0-9551790-1-7।