ইসলামফ্রান্সে খ্রিস্টান ধর্মের পরে সর্বাধিক প্রচলিত ধর্ম। ফ্রান্সে পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিম বসবাস করে। ফ্রান্সে মুসলিম জনসংখ্যা প্রধানত মাগরেব, পশ্চিম আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে অভিবাসনের কারণে বৃদ্ধি পায়।[২][৩][৪][৫]ফরাসি পোলিং কোম্পানি আইএফওপি ২০১৬ সালে অনুমান করে যে, ফরাসি মুসলমানের সংখ্যা ৩ থেকে ৪ মিলিয়নের মধ্যে এবং এও দাবি করে যে, ১৫ বছরের বেশি বয়সী ফরাসি জনগণের ৫.৬% এবং ২৫ বছরের কম বয়সী জনগণের ৫% মুসলমান।[৬] ইউরোব্যারোমিটার পোল (২০১৯) অনুসারে, ফ্রান্সে মুসলিম জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫%।[৩]
ফ্রান্সের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সুন্নি সম্প্রদায়ের এবং বিদেশী বংশোদ্ভূত। ফরাসি বিদেশী অঞ্চল মায়োতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে।একটি সমীক্ষা অনুসারে, ফ্রান্সের ৩৯% মুসলমান বলেছেন যে, তারা ২০০৮ সালে ইসলাম মতে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্তনামাজ পালন করেছেন, যা ১৯৯৪ সালে জরিপকৃত ৩১% থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।[৭]জুমার নামাজের জন্যে মসজিদে উপস্থিতি ২০০৮ সালে বেড়ে ২৩% হয়েছে, যা ১৯৯৪ সালের ১৬% থেকে কিছুটা বেড়েছে। ২০০৮ সালে রমজানে রোজা পালনকারীর সংখ্যা ৭০%, যা ১৯৯৪ সালের ৬০% এর তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অ্যালকোহল পান করা ৩৯% থেকে কমে ৩৪% হয়েছে।[৭][৮]
ইতিহাস
প্রাথমিক ইতিহাস
ইতিহাস মতে, ৮ম শতাব্দীতে ফ্রান্সের কয়েকটি অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে। মুসলিম সেনাবাহিনী স্পেন জয় করে সেখানে আমিরাত প্রতিষ্ঠা করার পর কয়েকবার বর্তমান ফ্রান্সের কয়েকটি অঞ্চল সাময়িক দখল করলেও সেখানে ইসলামি শাসন স্থায়ী হয়নি। হিস্পানিয়া বিজয় এবং গল আক্রমণের পর উমাইয়া মুসলিম বাহিনী ৭৩২ সালে তুরের যুদ্ধে পরাজিত হয়। কিন্তু ৭৫৯ সাল পর্যন্ত সেপ্টিমেনিয়া ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এরপর ৯ম শতাব্দীর পর থেকে মুসলিম বাহিনী দক্ষিণ ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি ঘাঁটি জয় করে এবং ৮৮৭ সালে ফ্র্যাক্সিনেটে আমিরাত [৯] প্রতিষ্ঠা করে। তবে ৯৭৫ সালে তারা পরাজিত হয়ে মুসলিম অঞ্চলে চলে আসে। তখন কিছু মুসলিম ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে যায়।[১০]
১৫৪৩-১৫৪৪ সালের শীতকালে নিস অবরোধের পর অ্যাডমিরাল হায়রেদ্দিন বারবারোসার অধীনে তুলোন একটি অটোমান নৌ ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। খ্রিস্টান জনসংখ্যাকে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং অটোমানদের প্রস্থান না হওয়া পর্যন্ত তুলোন ক্যাথেড্রালকে সংক্ষিপ্তভাবে একটি মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। ১৬০৯-১৬১৪ সালে স্পেন থেকে মরিস্কোদের বিতাড়নের পর হেনরি ল্যাপেয়ারের গবেষণা অনুসারে প্রায় ৫০,০০০ মরিস্কো ফ্রান্সে প্রবেশ করেছিল।[১১]
যদিও ফ্রান্স একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, তবে সাম্প্রতিক ফ্রান্স সরকার ফরাসি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠিত করার চেষ্টা করেছে। ২০০২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাস সারকোজি 'ফরাসি কাউন্সিল অফ মুসলিম ফেইথ' (Conseil Français du Culte Musulman) গঠনের সূচনা করেন। যদিও ব্যাপক সমালোচনা দাবি করে যে, এটি অন্যকিছু নয়, শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহিত করবে। যদিও CFCM অনানুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সরকার কর্তৃক স্বীকৃত,কিন্তু এটি একটি বেসরকারী অলাভজনক সমিতি এবং এর কোনো বিশেষ আইনি মর্যাদা নেই।
দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী
মুসলিম অভিবাসীদের প্রথম প্রজন্ম, যাদের আজ বেশিরভাগই কর্মশক্তি থেকে অবসরপ্রাপ্ত, তারা তাদের দেশের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রেখেছিল। কারণ সেখানে তাদের পরিবার বাস করত। ১৯৭৬ সালে[১২] সরকার এই অভিবাসীদের পরিবারকে ফ্রান্সে বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়ে একটি আইন পাস করে। এভাবে এই অভিবাসীদের স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ফ্রান্সে আসেন। বেশিরভাগ অভিবাসী বুঝতে পারে যে, তারা নিজেদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে না বা চায় না। তাই স্বাভাবিকভাবে অবসর নেওয়ার আগেই তারা ফরাসি জাতীয়তা চেয়েছিল। যাহোক, অনেকেই আবাসন প্রকল্পে সেখানে একা থাকেন এবং তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে তাদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছেন। ফ্রান্সে নবজাতকদের এক তৃতীয়াংশের মুসলিম পিতা-মাতা রয়েছে এমন মিথ্যা দাবি[১৩] আমেরিকীয় অভিবাসন বক্তৃতায় লালিত-পালিত হয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এটি বহুবার ভুল প্রামাণিত হয়েছে।
মাগরিব
আইএনইডির একজন গবেষক মিশেল ট্রিবালাতের মতে, ফ্রান্সের মাগরেবি বংশোদ্ভূত লোকেরা মুসলিম জনসংখ্যার ৮২% প্রতিনিধিত্ব করে। আলজেরিয়া থেকে ৪৩.২%, মরক্কো থেকে ২৭.৫% ও তিউনিসিয়া থেকে ১১.৪%। অন্যরা সাব-সাহারান আফ্রিকা (৯.৩%) এবং তুরস্ক (৮.৬%) থেকে এসেছে।[১৪] তিনি অনুমান করেন যে, ২০০৫ সালে ফ্রান্সে মাগরেবি বংশোদ্ভূত ৩.৫ মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করেছিল, যা মোট ফরাসি মেট্রোপলিটন জনসংখ্যার ৫.৮%।[১৫] মাগরেবিরা মূলত ফ্রান্সের শিল্প অঞ্চল, বিশেষ করে প্যারিস অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। অনেক বিখ্যাত ফরাসি ব্যক্তি যেমন এডিথ পিয়াফ,[১৬]ইসাবেল আদজানি, আর্নাউড মন্টেবার্গ, অ্যালাইন বাশুং, ড্যানি বুন এবং আরো অনেকেরই মাগরেবি বংশের ভিন্নতা রয়েছে। নীচে ফ্রান্সের মাগরেব বংশোদ্ভূত জনসংখ্যার একটি সারণী দেওয়া হল:
২০০৫ সালে মাগরেবি বংশোদ্ভূত ১৮ বছরের কম বয়সী যুবকদের শতাংশ (অন্তত একজন অভিবাসী পিতামাতা) মেট্রোপলিটন ফ্রান্সে প্রায় ৭%, গ্রেটার প্যারিসে ১২% এবং সেইন -সেন্ট-ডেনিসের ফরাসি ডিপার্টমেন্টে ২০% এর উপরে ছিল।[১৭][১৮]
২০০৮ সালে ফরাসি জাতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট ইন্সে অনুমান করেছে যে, ১১.৮ মিলিয়ন বিদেশে জন্মগ্রহণকারী অভিবাসী এবং তাদের সরাসরি বংশধর (ফ্রান্সে জন্মগ্রহণকারী) ফ্রান্সে বসবাস করত, যা দেশের জনসংখ্যার ১৯% প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪ মিলিয়ন মাগরেবি বংশোদ্ভূত। [১৯] কিছু অসমর্থিত সূত্র অনুসারে, মাগরেবি বংশোদ্ভূত ৫ থেকে ৬ মিলিয়ন লোক ফ্রান্সে বাস করে, যা মোট ফরাসি মেট্রোপলিটন জনসংখ্যার প্রায় ৭-৯% এর অনুরূপ।
ধর্মীয় অনুশীলন
মুসলমানদের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের ধর্মকে ফরাসি কাঠামোর মধ্যে পালন করে। কারণ ধর্মীয় আচরণবিধি অবশ্যই জনসাধারণের এলাকা লঙ্ঘন করবে না। সমীক্ষা অনুসারে ৩৯% পাঁচবার নামাজ পড়েন[৭] এবং বেশিরভাগই রমজানের রোজা পালন করেন (৭০%)। বেশিরভাগই শুকরের মাংস খান না এবং ওয়াইন পান করেন না। র্যাচেল ব্রাউন দেখান যে, ফ্রান্সের কিছু মুসলমান ফরাসি সংস্কৃতিতে 'একীকরণ' দেখানোর মাধ্যম হিসাবে এই ধর্মীয় রীতিগুলির কিছু পরিবর্তন করে, বিশেষ করে খাদ্য অনুশীলনে।[২০][২১] বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক ফ্রেগোসির মতে, "যদিও রমজান মাসে রোজা রাখা সবচেয়ে জনপ্রিয় অভ্যাস, তবে এটি ধর্মপরায়ণতার চেয়ে মুসলিম পরিচয়ের চিহ্ন হিসাবে বেশি স্থান পায় এবং এটি একটি সংস্কৃতি এবং একটি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হওয়ার লক্ষণ।[৭] তিনি আরো বলেন যে, অ্যালকোহল পান না করা আরো একটি সাংস্কৃতিক আচরণ বলে মনে হচ্ছে।[৭]
কিছু মুসলমান (উদাহরণস্বরূপ UOIF) ফ্রান্সে একটি ইসলামি সম্প্রদায়ের একটি সরকারী মর্যাদাসহ স্বীকৃতির জন্য অনুরোধ করে। ফরাসি কাউন্সিল অফ মুসলিম ফেইথ (CFCM) দ্বারা দুটি প্রধান সংগঠন স্বীকৃত। একটি হল, ফেডারেশন অফ দ্য ফ্রেঞ্চ মুসলিম"( Fédération des musulmans de France), অপরটি ইউনিয়ন দে সংস্থা ইসলামিকস ডি ফ্রান্স (UOIF)। ২০০৮ সালে ফ্রান্সে প্রায় ২,১২৫টি মসজিদ ছিল।[২২]
শিক্ষা
যেহেতু ১৯০৫ সালে চার্চ ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদের কারণে ফ্রান্সে সরকারীভাবে অর্থায়নকৃত রাষ্ট্রীয় স্কুলগুলি অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে, তাই অধিকাংশ মুসলিম পিতামাতা তাদের সন্তানদের ধর্মীয় স্কুলে শিক্ষিত করতে চান। তারা প্রায়ই প্রাইভেট ক্যাথলিক স্কুল বেছে নেন। এছাড়া বিশেষ করে কয়েকটি মুসলিম স্কুল তৈরি করা হয়েছে। রেউনিওঁতে একটি মুসলিম স্কুল রয়েছে এবং ২০০১ এগার থেকে পনের বছর বয়সাী ছাত্রদের জন্য আউবারভিলিয়ার্সে প্রথম মুসলিম কলেজ চালু করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ বেসরকারী বিদ্যালয়ের বিপরীতে এই ধর্মীয় বিদ্যালয়গুলি বেশিরভাগ অভিভাবকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের হয়। কারণ তাদের সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হতে পারে।
মৌলবাদ
২০১৫2 সালের নভেম্বরে প্যারিস হামলার পর ফরাসি কর্তৃপক্ষ চরমপন্থী কার্যকলাপ এবং মৌলবাদের কারণ হিসাবে প্রথমবারের মতো তিনটি মসজিদ বন্ধ করে দেয়। মসজিদগুলো ল্যাগনি-সুর-মারনে, লিয়ন ও জেনিভিলিয়ার্সে অবস্থিত ছিল।[২৩] মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা জনসাধারণের বিবৃতিতে প্যারিস হামলার ব্যাপক নিন্দা করেছেন এবং ফরাসি সরকারের ইসলামপন্থী চরমপন্থার বিরোধিতা করার প্রচেষ্টার প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।[২৪]
২০১৬ সালে ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানায় যে, ২,৫০০টি ইসলামি প্রার্থনা হলের মধ্যে ১২০টি সালাফি ধারণা প্রচার করছে এবং ২০টি মসজিদ ঘৃণাত্মক বক্তব্যের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷[২৫] ২০১৬ সালে ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানায় যে, নিরাপত্তা হুমকির তালিকায় থাকা ২০০০০ ব্যক্তির মধ্যে ১৫০০০ইসলামপন্থী আন্দোলনের অন্তর্গত।[২৬] ২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বয়কারী গিলস ডি কেরচোভ অনুমান করেন যে, বর্তমান ফ্রান্সে ১৭,০০০ মৌলবাদী মুসলিম এবং জিহাদি বসবাস করছে।[২৭]
২০১৮ সালে ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি প্রায় ১১,০০০ ব্যক্তির উপর নজরদারি করেছে, যাদের উগ্র ইসলামবাদের সাথে সন্দেহ রয়েছে। ফ্রান্স সন্ত্রাস-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকে সাজা দিয়েছে যা কারাগারের জনসংখ্যা বাড়িয়েছে।[২৮] এর ফলে ফরাসি কারাগারে মৌলবাদ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।[২৮] ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেনোবলের কর্তৃপক্ষ আল-কাওসার মসজিদটি "উগ্র ইসলামপন্থী মতাদর্শ" প্রচার করার কারণে ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দেয়। আল-কাওসার মসজিদে প্রায় ৪০০ জন নিয়মিত নামাজি ছিল। অভিযোগ ছিল যে, বেশ কয়েকটি খুতবায় ইমাম সশস্ত্র জিহাদ, সহিংসতা এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে প্রজাতন্ত্রবিরোধী মূল্যবোধকে বৈধতা দিয়েছেন এবং শরিয়া আইনের প্রচার করেছেন।[২৯]
২০১৯ সালের নভেম্বরে ফরাসি কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক ইসলাম এবং সাম্প্রদায়িকতাবাদী ধারণাগুলি প্রচার করার কারণে প্রায় ১৫টি ক্যাফে, স্কুল ও মসজিদ বন্ধ করে দেয়।[৩০] ২০২০ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সের মুসলিম সম্প্রদায়গুলিতে ইসলামবাদী বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে একটি ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করে বলেছিলেন যে, এই উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বিল ২০২১ সালের প্রথম দিকে পার্লামেন্টে পাঠানো হবে। পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে, বিদেশী ইমামদের উপর নিষেধাজ্ঞা, হোম স্কুলিং এর উপর নিষেধাজ্ঞা এবং ইসলামি মৌলবাদকে মোকাবেলায় একটি "ইসলামোলজি ইনস্টিটিউট" তৈরি করা।[৩১] তাঁর সরকার একটি বিল উত্থাপন করেছে, যা প্রচলিত ধর্মীয় বিবাহের জন্য কুমারীত্বের প্রশংসাপত্র প্রদানকারী যেকোন ডাক্তারকে জেলের শাস্তি এবং জরিমানা করবে।[৩২][৩৩]
মহিলা ইমাম
২০১৯ সালে ফ্রান্সে কাহিনা বাহলৌল নামে একজন মহিলা প্রথম মুসলমানদের নামাজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে আপত্তিজনক হওয়ায় এটি তখন অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।[৩৪]
বৃহত্তর সমাজের সাথে সম্পর্ক
ফরাসি নাগরিক
বেশ কয়েকটি গবেষণা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ফ্রান্স হল এমন ইউরোপীয় দেশ, যেখানে মুসলমানরা তাদের দেশের জন্য সবচেয়ে ভাল এবং সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করে এবং বিভিন্ন ধর্মের সহকর্মী নাগরিকদের সম্পর্কে ফরাসি মুসলমানদের সবচেয়ে ইতিবাচক মতামত রয়েছে।[৩৫]প্যারিস এবং আশেপাশের ইল-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলে ( যেখানকার ফরাসি মুসলমানরা বেশি শিক্ষিত এবং ধর্মীয় হওয়ার প্রবণতা বেশি) বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠরা সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, তারা ইসলাম ও মুসলমানদের উপর তুলনামূলক গবেষণাকারী নেটওয়ার্ক ইউরো-ইসলামের গবেষণা অনুসারে ফ্রান্সের প্রতি অনুগত।[৩৬][৩৭]
অন্যদিকে ফরাসি দৈনিক ল্য মোঁদ দ্বারা প্রকাশিত ২০১৩ সালের একটি আইপিএসওএস সমীক্ষা ইঙ্গিত করে যে, ফরাসি উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ২৬% বিশ্বাস করেন, যে ইসলাম ফরাসি সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ (এর তুলনায় ৮৯% ক্যাথলিক ধর্মকে এবং ৭৫% ইহুদি ধর্মকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করে)।[৩৮][৩৯] পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সমস্ত ইউরোপীয়দের মধ্যে ফরাসিরা মুসলিম সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে অনুকূলভাবে দেখেছে এবং ৭২% এর অনুকূল মতামত রয়েছে।[৪০][৪১][৪২] অন্যান্য গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে এই ইতিবাচক মনোভাব সর্বদা জনপ্রিয় মতামতে প্রতিফলিত হয় না এবং ফ্রান্সে মুসলিম একীকরণের বিষয়টি অনেক বেশি সংক্ষিপ্ত এবং জটিল।[২১]
২০১৮ সালের এপ্রিলে একজন আলজেরীয় মুসলিম মহিলা নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানে ধর্মীয় কারণে একজন কর্মকর্তার সাথে করমর্দন করতে অস্বীকার করেন। যেহেতু একজন আবেদনকারীকে অবশ্যই সমাজে একীভূত হওয়ার পাশাপাশি ফরাসি মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, তাই কর্মকর্তারা তাকে একীভূত নয় বলে বিবেচনা করে তার নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।[৪৩]
ধর্মীয় কার্যক্রম
২০২০ সালে আইএফডিপির একটি জরিপ অনুসারে, ৪৬% মুসলমান এই মতামত দিয়েছেন যে, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলি ফরাসি প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধ এবং আইনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ বছরের কমবয়সী মুসলমানদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যা (৭৪%) তাদের ধর্মকে ফরাসি আইন ও মূল্যবোধের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।[৪৪]
সমকামিতার গ্রহণযোগ্যতা
২০০৯ সালে গ্যালাপ জরিপ দেখায় যে, ৩৫% ফরাসি মুসলমান বিশ্বাস করেন যে, সমকামিতা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য।[৪৫]
বেকারত্ব
২০২০ সালের অক্টোবরে মুসলমানদের মধ্যে বেকারত্ব অন্যান্য জনসংখ্যার (৮%) তুলনায় (১৪%) বেশি ছিল।[৪৬]
শিক্ষা
২০১৬ সালে আইএমের একটি পোল অনুসারে ফ্রান্সের ১৫% মুসলমানের মোটেও শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না এবং ২৫% মাধ্যমিক শিক্ষার চেয়ে কম স্তরের ছিল৷ ২০% এর ২ বছরের বেশি উচ্চ শিক্ষা ছিল।[৪৭] এটি অনুমান করা হয়েছে যে, ফরাসি ক্যাথলিক স্কুলের ছাত্রদের ১০% এরও বেশি ছাত্র মুসলিম।[৪৮]
বৈষম্য
২০১০ সালে "ফরাসি মুসলমানরা কি তাদের নিজের দেশে বৈষম্যের শিকার হয়"? এমন একটি জরিপে দেখা গেছে যে, যে সকল মুসলিম চাকরির আশায় জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছেন তারা খ্রিস্টানদের তুলনায় ২.৫ গুণ কম সুযোগ পেয়েছেন"।[৪৯]মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যের অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে আররাসের কাছে ১৪৮টি ফরাসি মুসলিম কবরের পবিত্রতা নষ্ট করা। সেখানে একটি শুয়োরের মাথা একটি শিরোনামে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং কিছু কবরে ইসলাম ও মুসলমানদের অবমাননাকারী অশ্লীল শব্দগুলি দাগানো হয়েছিল।[৫০]
ইউরোপীয় মনিটরিং সেন্টার অন রেসিজম অ্যান্ড জেনোফোবিয়ার রিপোর্টে ফ্রান্সে মুসলিম কবর ধ্বংস ও ভাংচুরকে ইসলামফোবিয়া হিসেবে দেখা হয়েছে।[৫১] কয়েক বছর ধরে ফ্রান্সে বেশ কয়েকটি মসজিদও ভাংচুর করা হয়েছে।[৫২][৫৩] ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, প্যারিসে শার্লি এবদোর গুলিবর্ষণের পর থেকে ফ্রান্সের ২৬টি মসজিদ আক্রমণের শিকার হয়েছে।[৫৪] ২০১৭ সালের ৩৯ জুন একজন ব্যক্তি প্যারিসের শহরতলী ক্রেটেইলে[৫৫] একটি মসজিদ থেকে বের হওয়া নামাজীদের ভিড়ের মধ্যে তার গাড়িটি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।তবে কেউ আহত হয়নি। লে প্যারিসিয়েন দাবি করেছিলেন যে, সন্দেহভাজন আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত ছিল এবং সে বাটাক্লান চ্যাম্পস-এলিসিস হামলার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন।[৫৬]
২০১৯ সালে ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক রিসার্চ (IFOP) ২৯ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ বা তার বেশি বয়সী ১০০৭ জন মুসলমানের নমুনার উপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা পরিচালনা করে।[৫৭] গবেষণা অনুসারে, ফ্রান্সের ৪০% মুসলমান মনে করেন যে, তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।[৫৮][৫৯][৬০] এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ঘটনা গত পাঁচ বছরে রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ফ্রান্সে মুসলমানদের প্রতি সামগ্রিক দুর্ব্যবহার বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।[৬১] সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হেডস্কার্ফ পরা ৬০% মহিলা বৈষম্যের শিকার হন।[৬২] ফ্রান্সের ৩৭% মুসলমান মৌখিক হয়রানি বা মানহানিকর অপমানের শিকার হয়েছেন।[৫৭] তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৪৪% মুসলিম মহিলা যারা হেডস্কার্ফ পরেন না, তারাও নিজেদের মৌখিক হয়রানি বা মানহানিকর অপমানের শিকার বলে মনে করেন।[৫৭] জরিপে দেখা গেছে যে, ধর্মীয় বৈষম্যের ১৩% ঘটনা ঘটেছে পুলিশ কন্ট্রোল পয়েন্টে এবং ১৭% ঘটেছে চাকরির ইন্টারভিউতে।[৫৭] ১৪% ঘটনা ঘটেছে মুসলমানরা ভাড়া বা বাসস্থান কিনতে চাইছিল।[৫৭] আইএফওপি জানিয়েছে যে, ২৪% মুসলমান তাদের জীবদ্দশায় মৌখিক আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়েছেন।[৫৭][৬১][৬৩]
জন মতামত
২০১৭ সালেরর ফেব্রুয়ারিতে চ্যাথাম হাউসের ১০টি ইউরোপীয় দেশে ১০,০০০ জনের একটি জরিপে দেখা গেছে যে, গড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫৫%) লোক মুসলিম অভিবাসনের বিরোধিতা করেছে। বিশেষত অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামে বেশি বিরোধিতা করা হয়েছে। পোল্যান্ড ব্যতীত অন্যরা সবাই সম্প্রতি জিহাদি হামলার শিকার হয়েছে বা শরণার্থী সংকটের কেন্দ্র ছিল।[৬৪]পিউ রিসার্চ সেন্টার দ্বারা ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৭২% ফরাসি উত্তরদাতা তাদের দেশের মুসলমানদের প্রতি অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছেন এবং ২২ শতাংশের প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।[৬৫]
হিজাব বিতর্ক
ফ্রান্সে হিজাব পরা ১৯৮৯ সাল থেকে একটি খুবই বিতর্কিত বিষয়। বিতর্কটি মূলত উদ্বেগজনক এ নিয়ে যে, যে সকল মুসলিম মেয়ে হিজাব পরা পছন্দ করে তারা রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে তা করতে পারে কিনা। একটি গৌণ বিষয় হল, তরুণ মুসলিম নারীদের অবাধ পছন্দ এবং অন্যান্য অধিকার কীভাবে রক্ষা করা যায়; যেমন যারা পর্দা করতে চায় না, কিন্তু পারিবারিক চাপে তা করতে হয়। চিকিৎসা সেবায় মুসলিম নারীদের পুরুষ মুসলিম চিকিৎসক গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা বিদ্যমান।
১৯৯৪ সালে ফরাসী শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামি পর্দা নিষিদ্ধ করার জন্য শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের নিকট সুপারিশ পাঠায়। ইনস্টিটিউট অফ লেবার ইকোনমিক্সের ২০১৯ সালের সমীক্ষা অনুসারে, ১৯৮০ সালের পরে জন্মগ্রহণকারী মুসলিম পটভূমিসহ আরো বেশি মেয়ে ১৯৯৪ বিধিনিষেধ চালু হওয়ার পরে হাই স্কুল থেকে স্নাতক হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রায়ই ধর্মের স্বাধীনতা সীমিত করার জন্য সমালোচনা করা হলেও সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, পাবলিক স্কুলগুলি মহিলা ছাত্রদের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত কিছু গোষ্ঠীর শিক্ষাগত ক্ষমতায়নের প্রচার করেছে"।[৬৬] লেইলা বেবিস তার বই "The Veil Demystified" এ বিশ্বাস করেন যে, বোরখা পরা একটি মুসলিম ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা থেকে উদ্ভূত নয়।[৬৭]
ফরাসি সরকার এবং জনমতের একটি বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ যেকোনো ধর্মীয় অভিব্যক্তি (পোশাক বা প্রতীক) পরিধানের বিরোধিতা করে। কারণ এটি ল্যাসিটি - এর ফরাসি পদ্ধতির সাথে বেমানান। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরাক বলেছিলেন যে, এটি গির্জা এবং রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ লঙ্ঘন করে এবং ফ্রান্সের বহুসংস্কৃতির সমাজে উত্তেজনা বাড়াবে ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে অনেক মেয়ে ক্লাসে তাদের মাথা উন্মোচন করতে অস্বীকার করার পরে মুসলিম হিজাবের বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দেয়। ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে ইসলামি হেড স্কার্ফ পরা তিনজন মুসলিম স্কুল ছাত্রীকে উত্তর প্যারিসেরগ্যাব্রিয়েল-হাভেজ কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি শিরাক সিদ্ধান্ত নেন যে, ল্যাসিটির প্রয়োজনীয়তা অনুসারে আইনে স্কুলে দৃশ্যমান ধর্মীয় চিহ্ন পরিধান নিষিদ্ধ করা উচিত।পরে ২০০৪ সালের মার্চে আইনটি সংসদ দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। এই আইন দ্বারা নিষিদ্ধ আইটেমগুলির মধ্যে রয়েছে মুসলিম হিজাব, ইহুদি ইয়ারমুলকস বা বড় খ্রিস্টান ক্রস।[৬৮] তবে বিশ্বাসের ছোট প্রতীক; যেমন: ছোট ক্রস, দায়ুদের তারকা বা ফাতিমার হাতপরা এখনো অনুমোদিত। তখন ইরাকে কর্মরত দুইজন ফরাসি সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান চেসনোট এবং জর্জেস মালব্রুনটকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে "ইসলামিক আর্মি ইন ইরাক" জিম্মি করে এবং মাথার স্কার্ফের আইন প্রত্যাহার না করা হলে সেই দুই সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেওয়ার হয়। পরে অবশ্য দুইজনকেই অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়।[৬৯]
মুসলিম গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র প্রস্তাবিত আইন নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে উল্লেখ করেন যে, "তারা বোরকা নিষিদ্ধ করলেও, এটি সেখানে থামবে না। এটা সত্যিই খারাপ হতে পারে এবং আমি এটা ভয় করছি। আমার মনে হচ্ছে তারা আমাদের উপর স্ক্রু ঘুরিয়ে দিচ্ছে"।[৭০] ২০১০ সালের ২৫ জানুযারি ঘোষণা করা হয়েছিল যে, সংসদীয় কমিটি তার অধ্যয়ন শেষ করে সুপারিশ করবে যে, হাসপাতাল ও স্কুলের মতো পাবলিক লোকেশনে মুখ ঢেকে রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। তবে ব্যক্তিগত ভবনে বা রাস্তায় নয়।[৭১]
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপের বৃহত্তম ক্রীড়া খুচরা বিক্রেতা ডেকাথলন ফ্রান্সে তাদের দোকানে একটি স্পোর্টস হিজাব বিক্রি শুরু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। ডেকাথলন আগের সপ্তাহে মরক্কোতে পণ্যটি বিক্রি করা শুরু করেছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পরিকল্পনার সমালোচনা করা হয় এবং বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ পণ্যটি বিক্রি করা নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেন। ডেকাথলন তখন দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যুক্তি দিয়েছিল যে, তারা "গণতন্ত্রীকরণ" এবং খেলাধুলার দিকে মনোনিবেশ করেছিল। সংস্থাটি একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যে, তাদের লক্ষ্য ছিল "বিচার না করে তাদের একটি উপযুক্ত ক্রীড়া পণ্য অফার করা"। নাইকি ইতিমধ্যে ফ্রান্সে হিজাব বিক্রি করলেও ডেকাথলন অনেক বেশি যাচাই-বাছাইয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। দোকানে একাধিক বিক্রয়কর্মীকে শারীরিকভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কোম্পানিটি পণ্যটির বিষয়ে শত শত কল এবং ইমেল পেয়েছে। ডেকাথলন পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল এবং তারপর থেকে স্পোর্টস হিজাব বিক্রি করার তাদের পরিকল্পনা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফ্রান্স জুড়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এবং একজন মুসলিম উদ্যোক্তা বলেন, "এটা লজ্জাজনক যে ডেকাথলন দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারেনি।"[৭২]
রাজনীতি
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মুসলিম সংগঠনগুলো নতুন ফরাসি নাগরিকদের একত্রিত হতে সাহায্য করে। ফ্রান্সে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এখন হাজির হয়েছে। তাদের সবচেয়ে কার্যকলাপ হল, হোমওয়ার্ক সাহায্য, আরবি ভাষায় ভাষা ক্লাস, পিং পং, ইসলামি আলোচনা ইত্যাদি। ফ্রান্সে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হল সিএফসিএম ( Conseil Français du Culte Musulman )। সিএফসিএমের লক্ষ্য হল, রাষ্ট্রের সাথে ধর্মীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা, কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা এবং ফরাসি মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনকে সংগঠিত করা। সিএফআইম স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ফরাসি মুসলমানদের দ্বারা নির্বাচিত হয়। এটি ফরাসী মুসলমানদের একমাত্র সরকারি দৃষ্টান্ত। ২০০৩ সালে সিএফসিএমের প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাচিত চারটি সংস্থা ছিল :
জিএমপি (Grande mosquée de Paris),
ইউওএফ (Union des organizations islamiques de France),
এফএনএমএফ (Fédération Nationale des musulmans de France),
সিসিএমটিএফ (Comité de coordination des musulmans Turcs de France)
২০০৮ সালে আরএমএফ (Rassemblement des musulmans de France) নামে একটি নতুন কাউন্সিল নির্বাচিত হয়। এটি একটি ব্যাপক বিস্তৃত তরুণ সংগঠন এবং প্রধান বিষয়গুলিতে ঐকমত্যের সূচনা রয়েছে। তারপর থেকে কয়েকবার নির্বাচন হয়েছিল এবং সর্বশেষটি ২০১৯ সালে হওয়ার কথা ছিল। তবে তা এখনো মুলতুবি রয়েছে।
অন্যান্য আরো কিছু সংস্থা রয়েছে। যেমন: পিসিএম (PCM), এটি রাজনৈতিক সংহতি (বর্ণবাদ, যৌনতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে) ও আধ্যাত্মিক সভাগুলিকে একত্রিত করে এবং ফরাসি সমাজে জড়িত হওয়ার উপর জোর দেয়। ইন্টিগ্রেশন সহজ করার জন্য সরকার এখনো কোনো অফিসিয়াল নীতি প্রণয়ন করেনি। উপরে উল্লিখিত হিসাবে, ফ্রান্সে কাকে মুসলমান বলা যেতে পারে তা নির্ধারণ করা কঠিন। ফ্রান্সের কিছু মুসলিম নিজেদেরকে "অ-অভ্যাসকারী" বলে বর্ণনা করেন। বেশিরভাগই কেবল রমজান এবং অন্যান্য মৌলিক নিয়ম পালন করে। অন্যথায় তারা ধর্মনিরপেক্ষ।
পরিসংখ্যান
১৮৭২ সালের একটি বিশেষ আইনে ফরাসি প্রজাতন্ত্র জাতি বা তাদের বিশ্বাসের বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য করে আদমশুমারি সম্পাদন নিষিদ্ধ করে। তবে এই আইনটি জরিপ এবং ভোটের সাথে সম্পর্কিত নয়। তারা যারা ইচ্ছা করলে এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে পারে। আইনটি INED বা ইন্সের মতো পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্যও বিশেষ শর্তে একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুমতি দেয়, যাদের কাজ হল জনসংখ্যা, সামাজিক প্রবণতা এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলির ডেটা সংগ্রহ করা। শর্ত হল এই ধরনের ডেটা সংগ্রহের অনুমোদন CNIL এবং জাতীয় কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
ঘোষণার উপর ভিত্তি করে অনুমান
২০১০ সালের অক্টোবরে INED এবং ইন্সের সমীক্ষা এই উপসংহারে পৌঁছে যে, ফ্রান্সে ২.১ মিলিয়ন ঘোষিত মুসলিম রয়েছেন।[৭৩]
মানুষের ভৌগোলিক উৎসের উপর ভিত্তি করে অনুমান
ফরাসি সরকারের মতে ২০১০ সালে মেট্রোপলিটন ফ্রান্সে ৫ থেকে ৬ মিলিয়ন মুসলমান ছিল৷ সরকার ফ্রান্সের সেই সমস্ত লোককে গণনা করেছে, যারা প্রভাবশালী মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলি থেকে অভিবাসী হয়েছিল বা যাদের পিতামাতা অভিবাসনের মাধ্যমে ফ্রান্সে এসেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এটিকে মোট মুসলিম জনসংখ্যাকে ১০% রেখেছে।[৭৪] ২০০৮ সালের দুটি জরিপে এটি মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩% অনুমান করা হয়।[৭৫]সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক এটিকে ৭-৯% এ রাখে।[৭৬] ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত পিউ ফোরামের একটি সমীক্ষা ২০১০ সালে ফ্রান্সে ৪.৭ মিলিয়ন মুসলিম অনুমান করেছে এবং 2030 সালে ৬.৯ মিলিয়ন হওয়ার পূর্বাভাস করেছে।[৭৭] ২০১৬ সালে ফরাসি পোলিং কোম্পানি আইএফওপি অনুমান করে যে, ফরাসি মুসলমানদের সংখ্যা ৩ থেকে ৪ মিলিয়নের মধ্যে।[৬] ২০১১ সালে লা ক্রোইক্স পত্রিকার একটি জরিপ অনুসারে ৭৫% লোক "মুসলিম বংশোদ্ভূত" পরিবার থেকে।[৭৮]
১৯৯৯ সালের একটি সমীক্ষামুসলিমদের নিম্নোক্ত আনুমানিক বণ্টনটি প্রকাশ করে:[৭৯]
২০০৮ সালে পোলিং গ্রুপ IFOP এর একটি জরিপে ২৯% শতাংশ মুসলমান বলেছে যে, তারা প্রতিদিন ইসলামি বিধান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পালন করেছেন।[৭]জুমার নামাজের জন্য মসজিদে উপস্থিতি ২৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ১৯৯৪ সালের ১৬% থেকে বেড়েছে। ২০০৮ সালে রমজানে রোজা পালনকারী ৭০%, যা ১৯৯৪ সালের ৬০% এর তুলনায় বেশি। ইসলামে নিষিদ্ধ মদ্যপান ১৯৯৪ সালের ৩৯% শতাংশ থেকে কমে ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি মুসলিম বংশোদ্ভূত ৫৩৭ জন মানুষের জরিপ অনুসারে।[৭] ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১২,০০০ পর্যন্ত ফরাসি মুসলিম খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। কিন্তু উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সংখ্যাটিকে অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে এবং এতে শুধুমাত্র প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মান্তরিতরা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।[৮০]
জিনপল গৌরেভিচের মতে ২০১১ সালে মেট্রোপলিটন ফ্রান্সে ৮.৫ মিলিয়ন মুসলিম বংশোদ্ভূত লোক ছিল।[৮১] ২০১৭ সালে ইন্সের জনসংখ্যা জরিপ শাখার প্রাক্তন প্রধান এবং INED (ফ্রেঞ্চন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ) এর পরিচালক বলেন যে, ২০১৭ সালে ফরাসি জনসংখ্যার প্রায় এক অষ্টমাংশ মুসলিম বংশোদ্ভূত ছিল (৮.৪ মিলিয়ন)।[৮২] সর্বশেষ স্পেশাল ইউরোব্যারোমিটার (২০১৯) অনুসারে ফ্রান্সে মুসলিম জনসংখ্যা ৫% বা ৩.৩৫ মিলিয়ন বলে অনুমান করা হয়েছে।[৩]পিউ রিসার্চ সেন্টার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ২০৫০ সালে ফ্রান্সে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে ৮.৬ মিলিয়ন বা দেশের ১২.৭ শতাংশ হবে।[৮৩]
সেমিটিজম
২০০৬ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি সাম্প্রতিক এবং বিস্তৃত ইউরোপ-ব্যাপী সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ফরাসি মুসলমানরা তাদের ইহুদি স্বদেশীদের প্রতি সবচেয়ে শক্তিশালী ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং তাদের ৭১% ইরানের পরমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বিরুদ্ধে মত দেয়।[৩৫]
উল্লেখযোগ্য ফরাসি মুসলমান
ক্রীড়াবিদ
নিকোলাস আনেলকা, ফুটবল খেলোয়াড় (ইসলামে ধর্মান্তরিত)।
↑Brown, Rachel (২০১৬)। "How Gelatin Becomes a Symbol of Muslim Identity: Food Practice as a Lens into the Study of Religion and Migration.": 185–205। ডিওআই:10.1558/rsth.32558।
↑"Desecration of a mosque in France"। Ennahar Online English। El Athir For the Press। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৯। ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯।