প্রথম ফিতনা (আরবি: فتنة مقتل عثمانFitnat Maqtal Uthmān, "The Fitna of the Killing of Uthman") ছিল ইসলামের প্রথম গৃহযুদ্ধ। ৬৫৬ সালে মিশরীয় বিদ্রোহীদল কর্তৃক খলিফা উসমান ইবনে আফফানের খিলাফতের প্রথম ৬ বছর পর এই ফিতনা শুরু হয়। উসমান নিহত হন৷ তার উত্তরাধিকারী আলি ইবনে আবি তালিবের খিলাফতকালেও এই অবস্থা চলতে থাকে। আলীর পরেও শেষ হয়নি ; ৬৬১ সালে আলির পুত্র ও উত্তরাধিকারী হাসান ইবনে আলিমুয়াবিয়ার সাথে চুক্তিতে আসার পর এর অবসান হয়। এরপর মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। [১]
মুহাম্মদসা. ও প্রথম তিন খলিফার অধীনে মুসলিম রাষ্ট্র খুব দ্রুত বিস্তৃত লাভ করে। অধিকৃত অঞ্চলের স্থানীয় ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের উপর বাইজেন্টাইন-সাসানীয় যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য অধিক হারে করারোপ করা হত। তাই বাইজেন্টাইন ও সাসানীয়দের কাছ থেকে বিভিন্ন অঞ্চল জয় করতে তারা মুসলিমদেরকে সাহায্য করে।[২][৩] নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সাথে সাথে ইসলামি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মুক্ত বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এসময় শুধু সম্পদের উপর কর ধার্য করা হত, বাণিজ্যের উপর না।[৪] মুসলিমরা যাকাত হিসেবে গরীবদের অর্থ দিত। মদিনার সনদমুহাম্মদ সাঃ কর্তৃক চালু করা হয়েছিল। এর আওতায় ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ইসলামি রাষ্ট্রের ভেতর তাদের নিজ নিজ আইন দ্বারা পরিচালিত হত এবং নিজেদের বিচারক দ্বারা বিচারকাজ পরিচালিত করতে পারত।[৫][৬][৭] তাই তাদের শুধু জানমালের নিরাপত্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হত। রাষ্ট্রের দ্রুত সম্প্রসারণের সহায়তার জন্য বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় কর সংগ্রহের নিয়ম চালু রাখা হয় এবং বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় আমলের চেয়ে জনপ্রতি কম কর ধার্য করা হয়। মুহাম্মদ আরবকে ঐক্যবদ্ধ করার আগে আরবরা বিভক্ত ছিল। অন্যদিকে বাইজেন্টাইন ও সাসানীয়রা নিজেদের পক্ষের গোত্র ছিল যারা তাদের পক্ষে লড়াই করত।
৬৩৯ সালে প্রথম মুয়াবিয়া সিরিয়ার গভর্নর নিযুক্ত হন। ইতঃপূর্বে তার বড় ভাই ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান এখানকার গভর্নর ছিলেন। তিনি ও তার পূর্বের গভর্নর আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহপ্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মুয়াবিয়াকে সে দায়িত্ব দেয়া হয়। এসময় আরো ২৫,০০০ লোক মারা যায়। আরব-বাইজেন্টাইন যুদ্ধের সময় সমুদ্রপথে হামলা প্রতিহত করার জন্য মুয়াবিয়া ৬৪৯ সালে নৌবাহিনী গঠন করেন। এতে মনোফিসাইট খ্রিষ্টান, কপ্ট ও জেকোবাইট সিরিয়ান খ্রিষ্টান এবং মুসলিম সেনাদের নিয়োগ দেয়া হয়। ৬৫৫ সালে মাস্তুলের যুদ্ধে বাইজেন্টাইন নৌবাহিনী পরাজিত হয় এবং ভূমধ্যসাগর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।[৮][৯][১০][১১][১২] ৫০০ বাইজেন্টাইন জাহাজ যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়। সম্রাট দ্বিতীয় কনস্টান্স এসময় প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। খলিফা উসমান ইবনে আফফানের নির্দেশে মুয়াবিয়া এরপর কনস্টান্টিনোপল অবরোধের জন্য প্রস্তুত হন।
সিরিয়া ও মিশরে মুসলিমরা দ্রুত বিজয় লাভ করে। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য লোকবল ও এলাকা হারিয়ে ফেলায় তাদের অস্তিত্বের লড়াই শুরু হয়। পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়।
কুরআন ও মুহাম্মদ এর বিদায় হজের ভাষণে মানুষের সাম্য ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে বলা হয়েছে।[১৩][১৪][১৫][১৬][১৭][১৮][১৯] এতে বংশীয় ও জাতিতাত্ত্বিক পার্থক্য নিরুৎসাহিত করা হয়। কিন্তু মুহাম্মদ এর মৃত্যুর পর পুরনো গোত্রীয় বিভেদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। রোমান-পারসিয়ান যুদ্ধ ও বাইজেন্টাইন-সাসানীয় যুদ্ধে প্রাক্তন পারস্য শাসিত ইরাক এবং বাইজেন্টাইন শাসিত সিরিয়ার মধ্যে গভীর প্রোথিত বিভেদ চালু ছিল। প্রত্যেক অঞ্চল নবগঠিত ইসলামি সাম্রাজ্যের রাজধানী নিজ অঞ্চলে পেতে আগ্রহী ছিল।[২০] পূর্ববর্তী খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব তার আঞ্চলিক গভর্নরদের শাসনের ক্ষেত্রে কঠোর ছিলেন এবং তার গোয়েন্দারা সর্বত্র তাদের উপর নজর রাখত। কোনো গভর্নর বা কমান্ডারের মধ্যে সম্পদের প্রতি আগ্রহ বা প্রশাসনিক যোগ্যতার তারতম্য দেখলে উমর তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিতেন।[২১]
প্রথমদিকে মুসলিম সেনারা শহর থেকে দূরে সেনাক্যাম্পে অবস্থান করত। উমর ইবনুল খাত্তাবের আশঙ্কা ছিল যে নাহয় সেনারা সম্পদের প্রতি আসক্ত হয়ে বিলাসিতায় ডুকে যাবে এবং এর ফলে তাদের আল্লাহ ভীতি হ্রাস পাবে ও বিভিন্ন রাজবংশের সৃষ্টি হবে।[২২][২৩][২৪][২৫] সৈনিকরা এসব ক্যাম্পে অবস্থানের ফলে শহরের জনগণের উপর বাড়তি চাপ পড়ত না। একইসাথে শহরের জনতা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত এবং নিজেদের বিচারক ও প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ পরিচালিত করত। এসব ক্যাম্পের মধ্যে কিছু পরবর্তীতে বড় শহরের আকার লাভ করে। এর মধ্যে রয়েছে ইরাকেরবসরা ও কুফা এবং মিশরেরফুসতাত।[২৬] কিছু শহরের অধিবাসীদের সাথে মুসলিমদের চুক্তি ছিল। ৬৩৭ সালে জেরুজালেম অবরোধের সময় এমন চুক্তি হয়।
উসমান ইবনে আফফান কর্তৃক নিয়োগকৃত গভর্নরদের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ছিলেন ওয়ালিদ ইবনে উকবা।[২৭] তাকে কুফার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। ৩০ হিজরিতে (৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ) কুফার অনেক মুসলিম তার কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।[২৮][২৯] ওয়ালিদ ইবনে উকবাকে এরপর সরিয়ে দেয়া হয় এবং তার স্থলে সাইদ ইবনুল আসকে কুফার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
↑Islam: An Illustrated History By Greville Stewart Parker Freeman-Grenville, Stuart Christopher Munro-Hay Page 40
↑R. B. Serjeant, "Sunnah Jami'ah, pacts with the Yathrib Jews, and the Tahrim of Yathrib: analysis and translation of the documents comprised in the so-called 'Constitution of Medina'", Bulletin of the School of Oriental and African Studies (1978), 41: 1-42, Cambridge University Press.
↑Watt. Muhammad at Medina and R. B. Serjeant "The Constitution of Medina." Islamic Quarterly 8 (1964) p.4.
↑Madelung, Wilferd. The Succession to Muḥammad: A Study of the Early Caliphate. Cambridge: Cambridge UP, 1997. Print. আইএসবিএন০-৫২১-৬৪৬৯৬-০ Pgs. 18, 87, 88, 90, 92-107, 111-113, 130, 134, 140-145, 147, 155-156, 158, 241 - 259, and 334
↑Sayyid, Kamāl, and Jasim Alyawy. Malik al-Ashtar. [Qum, Iran]: Ansariyan Foundation, 1996. Print. Pgs. 2-4
↑al-Nawawi, "Sharh Sahih Muslim" vol. 11 number 219 n.p Print
↑Muawiya Restorer of the Muslim Faith By Aisha Bewley Page 81
Djaït, Hichem (২০০৮-১০-৩০)। La Grande Discorde: Religion et politique dans l'Islam des origines। Editions Gallimard। আইএসবিএন2-07-035866-6। Arabic translation by Khalil Ahmad Khalil, Beirut, 2000, Dar al-Tali'a.