উটের যুদ্ধ

উটের যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: প্রথম ফিতনা
তারিখ৭ নভেম্বর ৬৫৬ ( ১৩ জমাদিউল আউয়াল, ৩৬ হিজরি)
অবস্থান
ফলাফল খিলাফতে রাশিদার বিজয়
বিবাদমান পক্ষ

খিলাফতে রাশিদা

Aisha's forces and বনু উমাইয়া

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
Ali ibn Abi Talib
Hasan ibn Ali
Hussein ibn Ali
Malik al-Ashtar
Ammar ibn Yasir
Muhammad ibn Abu Bakr
Abdul-Rahman ibn Abi Bakr
Muslim ibn Aqeel
Harith ibn Rab'i
Jabir ibn Abd-Allah
Muhammad ibn al-Hanafiyyah
Abu Ayyub al-Ansari
Abu Qatada bin Rabyee
Qays ibn Sa'd
Qathm bin Abbas
Abd Allah ibn Abbas
Khuzaima ibn Thabit
Jondab-e-Asadi
Aisha
Talhah 
Muhammad ibn Talha 
Zubayr ibn al-Awam 
Kaab ibn Sur 
Abd Allah ibn al-Zubayr
Marwan I যু. বন্দী
Waleed ibn Uqba যু. বন্দী
Abdullah ibn Safwan ibn Umayya ibn Khalaf
শক্তি
~২০,০০০[] ~৩০,০০০[]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি

>৪০০-৫০০[]

~৫,০০০[][]

>২,৫০০[]

~১৩,০০০[][]

উটের যুদ্ধ (আরবি: مَعْرَكَة اَلْجَمَلِ) বা জঙ্গে জামাল হলো ইরাকের বসরার বাইরে সংঘটিত একটি যুদ্ধ যা ৩৬ হিজরিতে (৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে) সংঘটিত হয়েছিলো। যুদ্ধের এক পক্ষে ছিলো চতুর্থ খলিফা আলীর ( শা. ৬৫৬–৬৬১) সেনাবাহিনী এবং অন্য পক্ষে ছিলো আয়েশা, তালহাজুবায়েরের নেতৃত্বে বিদ্রোহী বাহিনী। আলী ছিলেন ইসলামের নবী মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং জামাতা, অন্যদিকে আয়েশা ছিলেন মুহাম্মদের একজন বিধবা এবং তালহা ও জুবায়ের উভয়ই ছিলেন মুহাম্মাদের বিশিষ্ট সাহাবি। এই যুদ্ধে আলী বিজয় লাভ করেন, তালহা এবং জুবায়ের উভয়েই নিহত হন এবং আয়েশাকে যুদ্ধের পরে হেজাজে ফেরত পাঠানো হয়। আপাতদৃষ্টিতে তৃতীয় খলিফা উসমানের (শা. ৬৪৪–৬৫৬ ) হত্যার প্রতিশোধ নিতে আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো এই সমন্বিত শাসকত্রয়ী, যদিও জানা যায় যে আয়েশা এবং তালহা উভয়েই সক্রিয়ভাবে ওসমানের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনজনই আলীকে পদ থেকে অপসারণ এবং তার উত্তরাধিকারী নিয়োগের জন্য তালহা ও জুবায়েরকে নিয়ে একটি কুরাইশ কাউন্সিল ( শুরা ) গঠনের আহ্বান জানান।

পটভূমি

উসমানের বিরোধিতা

আলী প্রায়শই তৃতীয় খলিফা উসমানকে কুরআনসুন্না থেকে বিচ্যুত বলে অভিযুক্ত করতেন, [১০] [১১] [১২] এবং তালহা ও জুবায়ের সহ বেশিরভাগ জেষ্ঠ্য সাহাবীরা এই সমালোচনায় যোগ দেন। [১১] [১৩] উসমানের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, [১৪] দুর্নীতি, [১৫] [১৬] এবং অবিচারের ব্যাপক অভিযোগ আনা হয়েছিলো, [ [১৭] [১৮] এবং অন্যদিকে আলী খলিফা ওসমানের নিজ আত্মীয়দের মাঝে অঢেল উপহার দান সহ নানান আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন বলে জানা যায়। [১৯] [১২] এছাড়াও তিনি আবু জর আল-গিফারী এবং আম্মারের মতো স্পষ্টভাষী সাহাবিদেরকে [২০] খলিফার ক্রোধ থেকে রক্ষা করেছিলেন। [২১] প্রথম দিককার সূত্রমতে আলী সরাসরি উসমানের বিরোধিতা না করে বরং তার উপর একজন প্রভাবক হিসেবে আবির্ভূত হন। [২০] আলীর কিছু সমর্থক তালহা [২২] এবং জুবায়েরের প্রচেষ্টায় খলিফা উসমানের বিরোধিতায় যুক্ত হয়েছিলো,[২৩] [২৪] তারা উভয়েই মুহাম্মদের সাহাবি ছিলেন এবং মুহাম্মাদের বিধবা স্ত্রী আয়েশার প্রচেষ্টায় তারা এই বিরোধিতায় যোগ দিয়েছিলেন। [২৫] [২৩] শেষের দিকে আলী খলিফা ওসমানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় কাজে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনেন এবং আয়েশার পেনশন হ্রাস করার বিরুদ্ধেও আপত্তি জানিয়েছিলেন। [২৬] আলীর সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন মালিক আল-আশতার (মৃ. ৬৫৭) এবং আরও বেশ কয়েজন ক্বারী [২৭]। তারা আলীকে পরবর্তী খলিফা হিসাবে দেখতে চেয়েছিল, যদিও তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ বা সমন্বয় করেছিলেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। [২৮] আলী বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এমনটিও বলা হয়, [১০] [২৯] তবে এটাও বলা হয় যে হতে পারে তিনি বিদ্রোহীদের অভিযোগের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, [৩০] [২৯] এবং এই কারণে স্বাভাবিক ভাবেই অথবা অন্তত নৈতিকভাবে তিনি বিরোধীদের কাছে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হন [৩১][১০] এটাও সম্ভব যে কিছু সাহাবি উসমানকে ক্ষমতাচ্যুত করার আশায় অথবা তার নীতিমালা পরিবর্তন করতে এই বিদ্রোহ সমর্থন করেছিলেন[২৩], এভাবে উসমানের বিরোধিতার তীব্রতাকে অবমূল্যায়ন করেছিলেন। [৩২]

উসমানের হত্যাকাণ্ড

অভিযোগের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকলে, বিভিন্ন প্রদেশ থেকে অসন্তুষ্ট লোকজন দলে দলে ৩৫/৬৫৬ সালে মদিনায় আসতে শুরু করে। [৩৩] তাদের প্রথম প্রচেষ্টায়, [৩৪] মিশরীয় বিরোধীরা আলীর পরামর্শ চেয়েছিল, যিনি তাদেরকে তালহা এবং আম্মার ইবনে ইয়াসিরের বিপরীতে উসমানের সাথে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন, যারা মিশরীয়দের শহরে অগ্রসর হতে উৎসাহিত করতে পারে। [৩৫] আলী একইভাবে ইরাকি বিরোধীদের সহিংসতা এড়াতে বলেছিলেন, যা মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। [৩৬] এছাড়াও তিনি উসমান এবং প্রাদেশিক ভিন্নমতাবলম্বীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন [৩৩] [৩৭] [৩০] একাধিকবার [৩৮] তাদের অর্থনৈতিক [৩৯] এবং রাজনৈতিক [৩৩] অভিযোগের সমাধান করতে। বিশেষ করে, তিনি উসমানের পক্ষ থেকে আলোচনা ও গ্যারান্টি দিয়েছিলেন যে প্রতিশ্রুতিগুলি বিদ্রোহীদের দেশে ফিরে যেতে প্ররোচিত করেছিল এবং প্রথম অবরোধ শেষ করেছিল। [৪০] [৩৩] আলী তখন উসমানকে প্রকাশ্যে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, যা তিনি করেছিলেন। [৪১] খলিফা শীঘ্রই তার বিবৃতি প্রত্যাহার করে নেন, তবে সম্ভবত কারণ তার সেক্রেটারি মারওয়ান তাকে বিশ্বাস করেছিলেন যে অনুতাপ শুধুমাত্র বিরোধীদের উৎসাহিত করবে। [৪২] বাড়ি ফেরার পথে, কিছু মিশরীয় বিদ্রোহী তাদের শাস্তির আদেশ দিয়ে একটি সরকারী চিঠি আটকে দেয়। তারা তখন মদিনায় ফিরে আসে এবং দ্বিতীয়বার পদত্যাগ করার দাবিতে উসমানের বাসভবন ঘেরাও করে। খলিফা ওসমানে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে তিনি চিঠিটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, [৪৩] প্রাথমিক কিছু তথ্যসূত্র মতে এই অনবগতির জন্য প্রায়শই মারওয়াকে দায়ী করা হয়। [৪৪] [৪৫] [৪৬] আলী এবং অন্য একজন সঙ্গী চিঠিটি সম্পর্কে উসমানের পক্ষে ছিলেন, [৪৩] এবং মারওয়াকে সন্দেহ করেছিলেন, [৪৭] যখন সুন্নি আল-বালাধুরি ( d. ৮৯২) খলিফা চিঠি জালিয়াতির জন্য আলীকে অভিযুক্ত করে। [৪৭] এটি সম্ভবত যখন আলী উসমানের জন্য আরও সুপারিশ করতে অস্বীকার করেছিলেন। [৪৩] [৪৮] চিঠির পিছনে আলী যে ছিলেন তাও লিওন কেতানির মতামত ( d. 1935 )। জর্জিও লেভি ডেলা ভিদা ( d. 1967 ) অনিশ্চিত, যখন উইলফার্ড ম্যাডেলুং দৃঢ়ভাবে অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করেছেন, বলেছেন যে এটি কোনও প্রমাণের অভাবে "কল্পনাকে প্রসারিত করে"। [৪৭] পরিবর্তে, তিনি মারওয়ানকে অভিযুক্ত করেন, [৪৪] উসমানের বেলিকোস সেক্রেটারি, [৪৯] যেখানে হিউ এন কেনেডি উসমানকে চিঠির জন্য দায়ী করেন। [৫০] খলিফাকে 35 হিজরির শেষ দিনগুলিতে (জুন 656) মিশরীয় বিদ্রোহীদের দ্বারা [৪৪] মদিনায় তাঁর বাসভবনে একটি অভিযানের সময় হত্যা করা হয়। [৫১] [৫২] [৫৩] [৫৪]

উসমান হত্যা

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যুবরণ করার পরে ইসলামের তৃতীয় খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন উসমান। উসমান এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে। উসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে উসমান অপসারণের দাবী করতে থাকে। উসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।

আলী খেলাফত

উসমান মৃত্যুবরণের পর ইসলামের চতুর্থ খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন আলী ইবনে তালিব। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরেই সারা মহল থেকে উসমান হত্যার বিচারের দাবী আসে। তালহা ও জুবায়ের আলী এর খিলাফত সমর্থন করেছিল মূলত উসমান হত্যা বিচারের জন্য। এমনকি কিছু কিছু মহল থেকে দাবী উঠে উসমান হত্যাকারীদের দ্রুত মৃত্যুদণ্ড প্রদানের জন্য।

আয়েশা তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহযুবাইর ইবনুল আওয়ামকে সমর্থন করে উসমান হত্যা বিচারের দাবী জানায়। কিছু ঐতিহাসিকের মতে আলীর বিরুদ্ধে আয়েশার কিছু ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ছিল যা এই সমর্থনকে প্রান জুগিয়েছিল। কিন্তু আরব বেদুইন ও কৃতদাসরা ইসলামী সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে বিধায় আলী আন্দোলনকারীদের কিছু দিন অপেক্ষা ও শান্ত হতে বলে। এভাবে ধীর্ঘ ৪ মাস অপেক্ষা করার পরেও উসমান হত্যার বিচার হচ্ছিলো না।

যুদ্ধ পূর্ব ঘটনা

এদিকে আলী খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেই বিভিন্ন প্রদেশে নতুন নতুন প্রাদেশিক কর্মকর্তা নিয়োগ দান করেন এবং পুরাতন সাহাবাদের পদত্যাগ করতে অনুরোধ করেন।অনেকে আলীর অনুরোধে পদত্যাগ করলেও সিরিয়ার প্রাদেশিক শাসনকর্তা মুয়াবিয়া তার নির্দেশ অমান্য করে এবং পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন।

উসমান হত্যা বিচারের বিলম্বতা সহ্য না করতে পেরে আয়েশা, তালহা ও জুবায়ের ইরাক মক্কা ও মদিনা থেকে ৩০০০ সৈন্য সংগ্রহ করে বসরার দিকে অগ্রসর হন। ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর বসরা আক্রমণ করে বসরার শাসক হানিফা বন্দি করেন। হযরত আলী বিদ্রোহকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না চাইলেও আয়েশা এর বসরা আক্রমণ তাকে অস্ত্রধারন করতে বাধ্য করে। তিনি তখন কাফেলা নিয়ে মুয়াবিয়াকে দমন করতে যাচ্ছিলেন। বসরা আক্রমণের খবর শুনে তিনি যুদ্ধ কাফেলা ঘুরিয়ে বসরার দিকে অগ্রসর হন। তার সাথে পর্যাপ্ত সৈন্য না থাকার কারণে কুফাতে অবস্থান করেন। তিনি কুফাকে রাজধানী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কুফার জনগণ আলীর পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে আলীর পুত্র হাসানের সহযোগিতায় ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে বসরার অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। খলিফা হিসাবে আলী আবারো আয়েশা, তালহা-জুবায়ের কে প্রস্তাব করেন যে, খিলাফতের প্রাথমিক সংকট কেটে গেলেই তিনি উসমান হত্যার বিচার করবেন। এই মর্মে তিনি আয়েশার নিকট "শান্তি প্রস্তাব" করেন।তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা আলী এর প্রস্তাব মেনে নিয়ে শান্তি চুক্তিতে রাজি হন।[৫৫]

মূল যুদ্ধ ঘটনা

এদিকে প্রাথমিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেলে দুষ্কৃতিকারী "ইবনে সাবাহ" এর সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা ধারণা করে বসে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে উসমান হত্যা বিচারে তারাই প্রথম শিকার হবে। তাই ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর আশতার, নাখয়ী ইবনে সাওদা সহ তাদের দলের আরো কয়েকজন আলী ও আয়েশা উভয় শিবিরেই আক্রমণ করে। তৃতীয় পক্ষ আক্রমণ করার ফলে দুই পক্ষের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি হয়। তাদের আঁধারে আক্রমণ হলে ভোর হতেই দুই দলের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আর এটাই সর্বপ্রথম মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানের অস্ত্র ধারণ। দুই দলের মধ্যে তুমুলভাবে যুদ্ধ চললেও কোন দলই এই যুদ্ধ চায়নি। বরঞ্চ এটি ছিল তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের ফলে একটি ভুল বোঝাবুঝি।

এই যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই পুনরায় আলী তালহাজুবায়েরকে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান ও যুদ্ধ বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। তারা আলী এর কথা মেনে নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করে ফেরত যাওয়ার পথে উভয়ই হত্যার স্বীকার হন। যুবায়ের কে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে আমর বিন জুরমূয।[৫৬][৫৭] আর তালহা জনৈক ব্যক্তির তীরের আঘাতে নিহত হয়। (আল-বিদায়াহ ৭/২৪৭)। ফলে যুদ্ধ সমাপ্ত ঘটে না যুদ্ধ পুনরায় আবারো আয়েশার নেতৃত্বে পুরোদমে চলতে থাকে। এই যুদ্ধে আয়েশা উটের উপরে থেকে পরিচালনা করছিলেন বিধায় এই যুদ্ধ উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

ফলাফল

প্রচণ্ড যুদ্ধের এক পর্যায়ে আয়েশা এর দল পরাজয় বরণ করেন। উভয় দলেই প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আলী মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রী আয়েশাকে সসন্মানে তার ভাই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের নিকট মদিনায় পাঠিয়ে দেন। এবং শত্রু পক্ষ এতে খুশি হয়, এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ফাটল তৈরি করে।

ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ

ইসলামের প্রথম গৃহ যুদ্ধ হিসাবে এই যুদ্ধের তাৎপর্যতা অনেক বেশি। ঐতিহাসিক মুর বলেন, এই যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজারের মত মুসলিম প্রান হারান। এটাই প্রথম যুদ্ধ যেখানে মুসলমান মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম গৃহ যুদ্ধ বা ইসলামের প্রথম ফিতনা শুরু হয়। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি বলেন, এই যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী ফলাফল হিসাবে এই যুদ্ধ মুসলমানদের খিলাফতকে দুর্বল করে দিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে উসমান হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Madelung 1997, pg. 168
  2. Madelung ১৯৯৭, pg. 166
  3. Madelung 1997, pg. ১৭৬-১৭৭
  4. Madelung 1997, pg. 167-8
  5. Crone 1980, pg. 108
  6. https://books.google.com/books?id=axL0Akjxr-YC&pg=PT472
  7. Madelung ১৯৯৭, pg. ১৭৭
  8. Jibouri, Yasin T. Kerbalā and Beyond. Bloomington, IN: Authorhouse, ২০১১. Print. আইএসবিএন ১৪৬৭০২৬১৩১ Pgs. ৩০
  9. Muraj al-Thahab Vol. ৫, Pg. ১৭৭
  10. Veccia Vaglieri 2012a
  11. Gleave 2008
  12. Madelung 1997, পৃ. 108।
  13. Momen 1985, পৃ. 21।
  14. Madelung 1997, পৃ. 87।
  15. Veccia Vaglieri 1970, পৃ. 67।
  16. Shah-Kazemi 2022, পৃ. 84।
  17. Madelung 1997, পৃ. 113।
  18. Dakake 2012, পৃ. 52।
  19. Jafri 1979, পৃ. 53।
  20. Hinds 1972, পৃ. 467।
  21. Madelung 1997, পৃ. 109।
  22. Madelung 1997, পৃ. 98।
  23. Jafri 1979, পৃ. 63।
  24. Daftary 2013, পৃ. 30।
  25. Madelung 1997, পৃ. 100-2।
  26. Cappucci 2014, পৃ. 19।
  27. Jafri 1979, পৃ. 59।
  28. Madelung 1997, পৃ. 107-8।
  29. Momen 1985, পৃ. 22।
  30. Jafri 1979, পৃ. 62।
  31. Ayoub 2014, পৃ. 62।
  32. Donner 2010, পৃ. 157।
  33. Poonawala 1982
  34. Madelung 1997, পৃ. 121।
  35. Madelung 1997, পৃ. 118-9।
  36. Madelung 1997, পৃ. 128।
  37. Anthony 2013, পৃ. 31।
  38. Madelung 1997, পৃ. 111।
  39. Veccia Vaglieri 1970, পৃ. 68।
  40. Madelung 1997, পৃ. 111, 119।
  41. Madelung 1997, পৃ. 122।
  42. Madelung 1997, পৃ. 123।
  43. Madelung 1997, পৃ. 112।
  44. Madelung 1997, পৃ. 127।
  45. Levi Della Vida ও Khoury 2012
  46. Ayoub 2014, পৃ. 71।
  47. Madelung 1997, পৃ. 126।
  48. McHugo 2018, পৃ. 49।
  49. Madelung 1997, পৃ. 127, 135।
  50. Kennedy 2015, পৃ. 64।
  51. Glassé 2003, পৃ. 423।
  52. Madelung 1997, পৃ. 81।
  53. Hinds 1972
  54. Donner 2010, পৃ. 152।
  55. রাসুল এই বিপ্লবী জীবন -উটের যুদ্ধ অংশ 
  56. হাকেম হাদিস নং (৫৫৮০) 
  57. আহমাদ হা/৭৯৯ - (সনদ হাসান) 

বহিঃসংযোগ

পূর্বসূরী
লেভান্তে মুসলমানদের বিজয়
মুসলিম যুদ্ধ
বছরঃ ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ
উত্তরসূরী
সিফফিনের যুদ্ধ


Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!