প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক রচনাসমগ্র (Scientific literature) বলতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান ক্ষেত্রে মৌলিক অভিজ্ঞতাভিত্তিক (পরীক্ষা-নিরীক্ষাভিত্তিক) ও তাত্ত্বিক গবেষণাকর্ম প্রতিবেদনকারী পাণ্ডিত্যপূর্ণ উচ্চশিক্ষায়তনিক প্রকাশনাগুলিকে বোঝায়। কোনও নির্দিষ্ট উচ্চশিক্ষায়তনিক ক্ষেত্রের অভ্যন্তরে এটিকে কেবলমাত্র "প্রকাশিত রচনাসমগ্র" (Literature) নামেও নির্দেশ করা হতে পারে। বিজ্ঞানীরা উচ্চশিক্ষায়তনিক প্রকাশনা নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের গবেষণাকর্মের প্রতিবেদন প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক রচনাসমগ্রে যোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রায়শই প্রকাশনার আগে উচ্চশিক্ষায়তনিক সমকক্ষীয় পর্যালোচনা নামক একটি প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাময়িকীগুলিতে প্রথমবারের মতো মৌলিক কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সেটিকে প্রকাশিত মৌলিক রচনাসমগ্র (primary literature) বলে। কৃতিস্বত্ত্ব এবং ছোট মাপের গবেষণাকর্মের ফলাফল ও প্রকৌশল ও নকশাকর্ম (যার মধ্যে কম্পিউটার সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত) বিষয়ক কারিগরি প্রতিবেদনকে প্রকাশিত মৌলিক রচনাসমগ্র হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।
পর্যালোচনামূলক নিবন্ধ (যেগুলিতে প্রকাশিত গবেষণাকর্মের ফলাফল ও সিদ্ধান্তগুলির সারাংশ প্রদান করে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও নতুন গবেষণার পথসমূহের উপর জোর দেওয়া হয়) এবং গ্রন্থগুলিকে (বৃহৎ প্রকল্পের জন্য বা ব্যাপকতর যুক্তিপ্রদানের জন্য রচিত গ্রন্থ কিংবা অনেকগুলি নিবন্ধের সংকলন গ্রন্থ) দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকাশিত রচনাসমগ্র বা দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।
ব্যাপকভাবে সাধারণ জনগণের পাঠ্য বিশ্বকোষ ও এই জাতীয় রচনাকর্মগুলিকে তৃতীয় পর্যায়ের প্রকাশিত রচনাসমগ্র বা তৃতীয় পর্যায়ের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক রচনার প্রকারভেদ
প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক রচনাসমগ্রে নিম্নলিখিত প্রকারের প্রকাশনাগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:[১]
একজন রচয়িতা বা একাধিক সহ-রচয়িতার রচিত পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ
সম্পাদিত খণ্ড (Edited volume), যার প্রতিটি অধ্যায় রচনার দায়িত্ব একটি ভিন্ন রচয়িতা বা রচয়িতা দলের উপর ন্যস্ত থাকে এবং খণ্ডের সম্পাদক রচনাপ্রকল্পের পরিধি, সময়মত কাজ সমাধা করা, রচনাশৈলী ও বিষয়বস্তুর মধ্যে সঙ্গতি, ইত্যাদি নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি প্রতিবেদন, যেমন কোনও সরকারি সংস্থার কোনও আদালতি তদন্তের প্রতিবেদন।
বিশ্বব্যাপী পরিগণক জালব্যবস্থায় প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক রচনাবলী (বর্তমানে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাময়িকীও আন্তর্জালে প্রকাশিত হচ্ছে)।
একক গবেষক বা গবেষণা সংস্থার দ্বারা নিজ উদ্যোগে প্রকাশিত গ্রন্থ, কারিগরি প্রতিবেদন, প্রাথমিক পত্র (working paper), ইত্যাদি; এগুলিকে কখনও কখনও একটি ধারাবাহিকে বিন্যস্ত করা হতে পারে।
এছাড়া বৈজ্ঞানিক রচনাসমগ্র ঐতিহ্যবাহী প্রণালীগুলির বাইরে অন্য কোনও মাধ্যমেও প্রকাশিত হতে পারে; এগুলিকে ধূসর রচনাসমগ্র হিসেবে গণ্য করা হয়।[১] এই জাতীয় রচনাগুলি প্রধান প্রধান উপাত্তাধারগুলিতে সূচীবদ্ধ হয় না। এগুলির মধ্যে পাঠ্যপুস্তক, সারগ্রন্থ, অভিসন্দর্ভ, সংবাদ-পরিপত্র (নিউজলেটার), সংবাদবিজ্ঞপ্তি (বুলেটিন), ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।[১]
উচ্চশিক্ষায়তনিক পাঠ্যবিষয় তথা শাস্ত্রভেদে বিভিন্ন ধরনের প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক রচনাসমগ্রের তাৎপর্য ভিন্ন হতে পারে এবং সময়ের সাথে এগুলির পরিবর্তন হতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] জেমস স্পাইট ও রাসের ফুটের মতে সমকক্ষীয় পর্যালোচনাভিত্তিক গবেষণা সাময়িকীগুলি বর্তমানে সবচেয়ে বিশিষ্ট ও মর্যাদাবাহী প্রকাশিত রচনাসমগ্র হিসেবে পরিগণিত হয়।[২] অধিকন্তু বাণিজ্যিক মুদ্রণালয় অপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব মুদ্রণালয় থেকে প্রকাশিত রচনাসমগ্র অধিকতর মর্যাদাবাহী।[৩] প্রাথমিক পত্র ও সম্মেলনের কার্যবিবরণীগুলির মর্যাদা উচ্চশিক্ষায়তনিক শাস্ত্রের উপর নির্ভর করে; সাধারণত ফলিত বিজ্ঞানগুলিতে এগুলির গুরুত্ব বেশি। অতীতে প্রাকমুদ্রণ (Preprint) বা বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনের তাৎপর্য কম ছিল, কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু শাস্ত্রে যেমন গণিতশাস্ত্র বা উচ্চ শক্তির পদার্থবিজ্ঞান ক্ষেত্রে এগুলি বিকল্প হিসেবে গৃহীত হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র ও নিবন্ধ
বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রগুলিকে দশটি প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। এগুলির মধ্যে আটটির উদ্দেশ্য বিশেষ ধরনের হয়ে থাকে, এবং অপর দুইটি শৈলী ও উদ্দীষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।[৪]
যেসব প্রকারের গবেষণাপত্র বিশেষ লক্ষ্যে রচিত হয়, সেগুলি নিম্নরূপ:[৪]
মৌলিক নিবন্ধ (original article), যা সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা সমর্থিত মৌলিক গবেষণাকর্ম সম্পর্কে এ পর্যন্ত অপ্রকাশিত নতুন তথ্য প্রদান করে।
একক ঘটনার প্রতিবেদন (case report), যেগুলিতে কোনও ঘটনার একটিমাত্র উদাহরণের উপরে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সেটির বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়।
কারিগরি টীকাপত্র (technical note), যাতে সাম্প্রতিক উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে, এমন কোনও কারিগরি কৌশল বা যন্ত্রপাতির বর্ণনা থাকে।
চিত্রধর্মী প্রবন্ধ (pictorial essay), যা শিক্ষণমূলক উদ্দেশ্যে প্রকাশিত উচ্চমানের চিত্রের সমাহার।
পর্যালোচনাপত্র (review article) যাতে কোনও বিষয়ের সাম্প্রতিক বিকাশগুলির ব্যাপারে বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়।
মন্তব্য (commentary), যা রচয়িতার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ।
সম্পাদকীয় (editorial), যেগুলি মৌলিক নিবন্ধসমূহের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা বা বিরুদ্ধ সমালোচনা।
সম্পাদক বরাবর পত্রাবলী (letters to the editor), যেগুলিতে পাঠকেরা প্রকাশিত রচনার উপরে প্রশ্ন উত্থাপন করেন বা ঐগুলির উপরে গঠনমূলক সমালোচনা প্রদান করেন।
উপরের আটটি প্রকারের বাইরে আরও দুইটি প্রকার আছে, যেগুলি বিচিত্র প্রকৃতির, এবং এগুলির মধ্যে উদাহরণস্বরূপ ঐতিহাসিক নিবন্ধ ও বক্তৃতাগুলি অন্তর্ভুক্ত:[৪]
"অবৈজ্ঞানিক রচনাবলী" (Nonscientific material): এই ধরনের রচনাগুলি কোনও বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশের ফলাফল হিসেবে সৃষ্টি করা হয়। এগুলি বৈজ্ঞানিকভাবে নিবন্ধটির কোনও অগ্রগতি সাধন করে না, কিন্তু সেটির সুনাম বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
"বিবিধ": উপরের আটটি প্রকারভেদ ও অবৈজ্ঞানিক রচনাবলী ব্যতীত অন্য যেকোনও ধরনের রচনা বা পত্র, যেগুলি লক্ষ্য ও রচনাশৈলী বিচিত্র হতে পারে।
বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের প্রতিদিনের লিপিবদ্ধ বিবরণগুলি গবেষকের টোকাখাতা (research notebook) বা দৈনন্দিন বিবরণী বহিতে (logbook) সংরক্ষিত থাকে। এগুলির সচরাচর অনির্দিষ্টকাল যাবৎ গবেষণাকর্মের প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে সংরক্ষিত করে রেখা দেওয়া হয়। প্রায়শই এগুলির অবিকল অনুলিপি স্বাক্ষরিত ও আইনি লেখ্যপ্রমাণক দ্বারা প্রত্যয়িত করে সংরক্ষণাগারভুক্ত করে রাখা হতে পারে। এই কাজের উদ্দেশ্য হল বৈজ্ঞানিক অগ্রাধিকারের সাক্ষ্যপ্রমাণ সুরক্ষিত করে রাখা, যা কৃতিস্বত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই লিপিবদ্ধ নথিপত্রগুলি বৈজ্ঞানিক বিতর্কেও ব্যবহৃত হতে পারে। পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটার সুলভ হবার পর থেকে কিছু তথ্যবহুল গবেষণাক্ষেত্রের টোকাখাতা বা বিবরণীগুলি উপাত্তাধারভুক্ত নথি (database record) হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত যথোপযুক্ত সফটওয়্যার বা পরিচালনা সামগ্রীগুলি বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য। [৫]
কোনও প্রকল্পের গবেষণাকর্ম সাধারণত এক বা একাধিক কারিগরি প্রতিবেদন হিসেবে কিংবা নিবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হয়। কিছু কিছু গবেষণা ক্ষেত্রে উভয় প্রকারের রচনাই ব্যবহৃত হয়, এবং কখনও কখনও প্রাথমিক প্রতিবেদন (preliminary report), প্রাথমিক পত্র (working paper), প্রাকমুদ্রণ ইত্যাদি প্রকাশ পরে আনুষ্ঠানিক নিবন্ধ বা গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। সাধারণত একটি প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে নিবন্ধ প্রস্তুত করা হয়। কখনও কখনও বিশেষ কোনও বড় প্রকল্পের একটি ধাপ শেষেও নিবন্ধ লেখা হতে পারে। ঐসব নিবন্ধ লেখার সময় বৈজ্ঞানিক রচনালিখনের প্রচলিত নিয়মগুলি কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়।
প্রায়শই কর্মজীবনে অগ্রগতির ব্যাপারটি উচ্চমাত্রায় প্রভাবশালী গবেষণা সাময়িকীগুলিতে নিবন্ধ প্রকাশের উপরে নির্ভর করে। "কঠিন" (ভৌত ও প্রাকৃতিক) ও ফলিত বিজ্ঞানগুলির ক্ষেত্রে এই গবেষণা সাময়িকীগুলি সাধারণত ইংরেজি ভাষাতে প্রকাশিত হয়। [৬] ফলে যেসব বিজ্ঞানীর ইংরেজিতে রচনার দক্ষতা সমৃদ্ধ নয়, তারা ঐসব গবেষণা সাময়িকীতে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায় পড়েন, যার সাথে প্রকৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণাটির গুণমানের কোনও সম্পর্ক নেই।[৭] তা সত্ত্বেও বহু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের গবেষণাপত্র ও নিবন্ধ ঐসব উচ্চমাত্রায় প্রভাবশালী গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশ পাওয়া আবশ্যক হিসেবে গণ্য করে।
কিছু আন্তর্জাতিক গবেষকরা এই সমস্যাটি উত্তরণের জন্য স্বনিযুক্ত ইংরেজি মাতৃভাষী ও দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি রচনা সম্পাদনার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ রচনা সংশোধকদের কাছে তাদের রচনার মান উন্নয়ন করার কাজটি ঠিকাদারিতে সংশোধন করতে দেন, যাতে লেখার মান উচ্চমাত্রায় প্রভাবশালী গবেষণা সাময়িকীগুলির জন্য গ্রহণযোগ্য স্তরে উন্নীত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যদিও কোনও বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের কাঠামো অপেক্ষা এর বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তার পরেও বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলিকে একটি আদর্শ কাঠামো মেনে চলার প্রথা রয়েছে। বিষয়ভেদে এই কাঠামোটির তেমন হেরফের হয় না। একটি নিবন্ধে সাধারণত চারটি বিভাগ থাকে; এগুলি হল ভূমিকা, পদ্ধতি, ফলাফল ও আলোচনা। প্রতিটি বিভাগেই আবার বৈজ্ঞানিক রচনাশৈলীর নির্দিষ্ট রীতিনীতি মেনে চলতে হয়।[৮]
প্রতিটি গবেষণা সাময়িকী তার নিজস্ব ঘরোয়া রচনাশৈলী মেনে চলতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে রচনাবিন্যাসের মূল নির্দেশনাগুলি নিম্নরূপ:
নিবন্ধের একটি শিরোনাম থাকবে, যার উদ্দেশ্য পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং তাকে নিবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা।[৯] শিরোনামের তিনটি প্রধান ধরন আছে। এগুলি হল ঘোষণামূলক শিরোনাম (যাতে গবেষণার মূল সিদ্ধান্তটি বর্ণিত হয়), বিবরণমূলক শিরোনাম (যাতে গবেষণাপত্রের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়) এবং প্রশ্নবাচক শিরোনাম (যাতে পাঠককে একটি প্রশ্ন করা হয় এবং গবেষণাপত্রে সেটির উত্তর প্রদান করা হয়)।[১০] কিছু কিছু গবেষণা সাময়িকীতে রচয়িতাদেরকে গ্রহণযোগ্য শিরোনামের ধরন ও দৈর্ঘ্যের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া থাকতে পারে।
নিবন্ধের সমস্ত রচয়িতার নাম ও কোনও (উচ্চশিক্ষা বা গবেষণা বা অন্য কোনও) প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের সংযুক্তির (affiliation) উল্লেখ থাকতে হবে। সম্প্রতি কিছু বৈজ্ঞানিক অসদাচরণমূলক ঘটনার পর থেকে প্রায়শই প্রকাশকেরা এ ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক করেছেন যে সমস্ত সহ-রচয়িতাকে নিবন্ধের বিষয়বস্তু জানা থাকতে হবে ও সেটির ব্যাপারে তাদের প্রত্যেকের সম্মতি থাকতে হবে।[১১]
নিবন্ধের একটি সারসংক্ষেপ( abstract) থাকতে হবে, যাতে (একটিমাত্র অনুচ্ছেদ বা একাধিক সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদের সমষ্টি) গবেষণাকর্মটির একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হয়। গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জির উপাত্তাধারগুলিতে এই সারসংক্ষেপটি উপস্থিত থাকে এবং রচনা অনুক্রমণকারী সেবাগুলির (indexing services) জন্য এটি বিষয়ভিত্তিক অধি-উপাত্ত প্রদান করে।
নিবন্ধে পূর্ববর্তী বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকর্মের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণত "ভূমিকা" অংশে বিদ্যমান প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক রচনাসমগ্রের প্রাসঙ্গিক নথিগুলিকে উদ্ধৃত করতে হয়।
নিবন্ধে পর্যবেক্ষণীয় কৌশলসমূহ (Empirical techniques), যেটিকে সচরাচর "উপাদান ও পদ্ধতিসমূহ" শীর্ষক অংশে বর্ণনা করতে হয়। কৌশলগুলিকে এমনভাবে বর্ণনা করতে হয় যাতে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট গবেষণা ক্ষেত্রে উপযুক্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী অপর একজন বিজ্ঞানী ঐ পর্যবেক্ষণগুলি পুনরাবৃত্তি করতে সক্ষম হবেন এবং একই ফলাফল পাবেন কি না তা জানতে পারবেন। এই উপাদানটি সব শাস্ত্রের জন্য প্রযোজ্য নয়, যেমন গণিতশাস্ত্র, এবং এগুলির শাস্ত্রভেদে ভিন্ন হতে পারে।
একইভাবে গবেষণা বা অনুসন্ধানের ফলাফল সাধারণত "ফলাফল" শিরোনামের একটি অংশে উপস্থাপন করতে হয়। এগুলিকে সারণি বা চিত্রলৈখিক আকারে (যেমন চিত্র, অঙ্কিত চিত্র, রেখাচিত্র, লেখচিত্র, প্রতীকী রেখাচিত্র) উপস্থাপন করতে হয়। এই প্রদর্শিত উপাদানগুলির সাথে বিবরণী যোগ করতে হয় এবং এগুলির উপরে নিবন্ধের পাঠ্যের ভেতরে আলোচনা করতে হয়।
ব্যাখ্যা (Interpretation) হল ফলাফলের তাৎপর্য। এটিকে সাধারণত "আলোচনা" বা "উপসংহার" নামক অংশে স্থাপন করা হয়। নতুন পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় এবং একই সাথে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানকেও গণনায় ধরতে হয়। এমনভাবে এটি করতে হয় যেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র সম্পর্কে জ্ঞানী যেকোনও পাঠক রচয়িতার যুক্তি অনুসরণ করতে পারেন এবং সিদ্ধান্তগুলি যে যুক্তিযুক্ত তা নিশ্চিত করতে পারেন। অন্য ভাষায় বলতে গেলে, সিদ্ধান্তগুলি কখনোই ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব, বাগালংকার দক্ষতা বা আস্থাভিত্তিক হতে পারবে না।
পরিশেষে একটি "তথ্যসূত্র" বা "উদ্ধৃত রচনাসমগ্র" নামক অংশে গবেষণাপত্রে রচয়িতাদের দ্বারা উদ্ধৃত উৎসসমূহের একটি তালিকা থাকবে।
↑ কখগÖchsner, Andreas (২০১৩), "Types of Scientific Publications", Introduction to Scientific Publishing, SpringerBriefs in Applied Sciences and Technology (ইংরেজি ভাষায়), Springer Berlin Heidelberg, পৃষ্ঠা 9–21, আইএসবিএন9783642386459, ডিওআই:10.1007/978-3-642-38646-6_3উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑ কখগPeh, Wilfred (২০০৮)। "Basic structure and types of scientific papers"। Effective Medical Writing। 49 (7): 522–5। পিএমআইডি18695858 – Singapore Medical Journal-এর মাধ্যমে।
↑Talbott, T.; M. Peterson; J. Schwidder; J.D. Myers (২০০৫)। "Adapting the electronic laboratory notebook for the semantic era"। International Symposium on Collaborative Technologies and Systems। Los Alamitos, CA, US: IEEE Computer Society। পৃষ্ঠা 136–143। আইএসবিএন0-7695-2387-0। ডিওআই:10.1109/ISCST.2005.1553305।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Vasilev, Martin। "How to write a good title for journal articles"। JEPS Bulletin। European Federation of Psychology Students’ Associations। ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।