উচ্চশিক্ষায়তনিক সমকক্ষীয় পর্যালোচনা

উচ্চশিক্ষায়তনিক সমকক্ষীয় পর্যালোচনা এমন একটি পদ্ধতি যা ব্যবহার করে উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে কোনও গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে এর পাণ্ডুলিপিটির গুণমান (বর্ণিত গবেষণা পদ্ধতি, উপাত্ত ও সিদ্ধান্ত) যাচাই করা হয়। কোনও গবেষণা সাময়িকীতে একটি পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করা উচিত কি না, সে ব্যাপারে ঐ গবেষণা সাময়িকীর সম্পাদকদেরকে সাহায্য করার জন্য প্রাসঙ্গিক গবেষণা ক্ষেত্রে কর্মরত স্বাধীন গবেষকেরা (অর্থাৎ রচয়িতার সমকক্ষরা) জমাদানকৃত পাণ্ডুলিপিগুলির মৌলিকতা, বৈধতা ও তাৎপর্য যাচাই করে দেখেন।[]

বর্ণনা

যখন কোনও পাণ্ডুলিপি একটি গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য জমা দেওয়া হয়, তখন প্রথমে সাময়িকীর সম্পাদক মণ্ডলী যাচাই করেন যে এটি সাময়িকীর লক্ষ্য ও পরিধির মধ্যে পড়ে কি না এবং এটি জমাদানের মানদণ্ডগুলিতে উত্তীর্ণ হয়েছে কি না। উত্তীর্ণ হলে সম্পাদকমণ্ডলী গবেষণাক্ষেত্রের ভেতর থেকে সম্ভাব্য কিছুসংখ্যক (২ থেকে ৩ জন) সমকক্ষ পর্যালোচকদের নির্বাচন করেন, যাদের কাজ হল পাণ্ডুলিপিটিকে পর্যালোচনা করা এবং বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা। তারা পাণ্ডুলিপিটিকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, সংশোধন করতে পারেন কিংবা গ্রহণ করতে পারেন। তাদের পর্যালোচনাটি সম্পাদক যাচাই করে রচয়িতার কাছে প্রেরণ করেন। পর্যালোচনার দিকনির্দেশনা ও পরামর্শগুলি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে রচয়িতা সংশোধিত পাণ্ডলিপিটি আবার সাময়িকী বরাবর জমা দেন। যদি এবার সাময়িকীটি পাণ্ডুলিপিটি গ্রহণ করে, তাহলে সেটিকে প্রকাশ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে এক বছর লেগে যেতে পারে।

উদ্দেশ্য

সমকক্ষীয় পর্যালোচনা বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যা একটি প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপির বৈধতা, গুণমান ও মৌলিকতা নিশ্চিত করে। এর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল অবৈধ বা নিম্নমানের নিবন্ধগুলিকে ছেঁকে দূর করে বিজ্ঞানের শুদ্ধতা বজায় রাখা। অন্যদিকে প্রকাশকেরা উচ্চমানের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে তাদের সাময়িকীর সুনাম বৃদ্ধি করতে পারেন। সমকক্ষ পর্যালোচনা রচয়িতাদেরকে উচ্চমানের নিবন্ধ রচনায় উৎসাহিত করে এবং জমাদানকৃত নিবন্ধের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

সমকক্ষীয় পর্যালোচকরা তাদের নিজ গবেষণা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের সময় ব্যয় করে পর্যালোচিত পাণ্ডুলিপিটির গুণমান উন্নত করার চেষ্টা করেন। তারা মূলত তিনটি প্রধান প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করেন - গবেষণাপত্রে বর্ণিত পরীক্ষণ পদ্ধতিগুলি কি বৈধ, তথ্য-উপাত্তগুলি কি পরিস্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং গবেষণাপত্রের সিদ্ধান্ত কি উপাত্ত দ্বারা সমর্থিত?

সমকক্ষীয় পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হল প্রথমত পাণ্ডুলিপিকে যৌক্তিকভাবে শক্তিশালী করা - সমকক্ষীয় পর্যালোচকেরা কোনও গবেষণাপত্রের মধ্যে ফাঁক-ফোকর নির্দেশ করতে পারেন, যেগুলির অতিরিক্ত ব্যাখ্যা বা পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত তারা পাণ্ডুলিপিটির সহজপাঠ্যতা বৃদ্ধি করেন; যদি পাণ্ডুলিপির অংশবিশেষ সহজবোধ্য না হয়, তাহলে সমকক্ষীয় পর্যালোচকেরা সেটিতে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন। তৃতীয়ত, সমকক্ষ পর্যালোচকরা গবেষণা ক্ষেত্রের অন্যান্য গবেষকদের কাছে গবেষণাপত্রটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন এবং এটিকে কীভাবে আরও উপকারী রূপদান করা যায়,তার চেষ্টা করেন।

প্রকারভেদ

বিভিন্ন প্রকারের সমকক্ষীয় পর্যালোচনা হতে পারে। নিচে এগুলির কয়েকটির বিবরণ দেওয়া হল।

একক-অজ্ঞাতনামা সমকক্ষীয় পর্যালোচনা

এক্ষেত্রে পর্যালোচক পক্ষ রচয়িতাদের নাম জানেন, কিন্তু রচয়িতারা পর্যালোচকদের নাম জানেন না, যদি না কোনও পর্যালোচক তার প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। এই প্রকারভেদটির সুবিধা হল পর্যালোচক কোনও রচয়িতার সমালোচনার ভয় না করে সততার সাথে পর্যালোচনা সম্পাদন করতে পারেন এবং রচয়িতার নাম ব্যবহার করে তার পূর্ববর্তী গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। এর অসুবিধা হল রচয়িতার নাম জানা থাকে বলে তার সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক পূর্বসংস্কার পর্যালোচনার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, নারী-পুরুষ ও জাতীয়তাভিত্তিক বৈষম্যের সম্ভাবনা থাকে।

দ্বৈত-অজ্ঞাতনামা সমকক্ষীয় পর্যালোচনা

এক্ষেত্রে পর্যালোচকগণ ও রচয়িতাগণ কোনও পক্ষই অপরের নাম জানেন না। এই ধরনটি সামাজিক বিজ্ঞান ও মানববিদ্যার গবেষণা সাময়িকীগুলিতে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এর সুবিধাগুলি হল ন্যায়সঙ্গতভাবে কোনও পক্ষপাত ছাড়াই পর্যালোচনা সম্ভব হয় এবং রচয়িতা ও পর্যালোচক একে অপরের সমালোচনা থেকে কিছু সুরক্ষা লাভ করেন। এর অসুবিধাগুলি হল নাম অজ্ঞাত রাখা নিশ্চিত করা দুরূহ এবং লেখার শৈলী বা গবেষণা ক্ষেত্র ধরে সহজেই রচয়িতার নাম আবিষ্কার করা যেতে পারে, এবং দ্বিতীয়ত পর্যালোচক রচয়িতা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বিধায় অপেক্ষাকৃত অধিক তথ্যভিত্তিক বিচার করতে পারেন না, ফলে তার পর্যালোচনা সম্পূর্ণ মানসম্মত হয় না।

উন্মুক্ত সমকক্ষীয় পর্যালোচনা

এক্ষেত্রে পর্যালোচক ও রচয়িতা উভয় পক্ষই একে অপরের সম্পর্কে জানেন। যদি পাণ্ডুলিপিটি গৃহীত হয়, তাহলে কদাচিৎ গবেষণাপত্রের পাশাপাশি পর্যালোচকের নামসহ তার পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি এবং ঐ প্রতিবেদনের বিপরীতে রচয়িতাদের প্রত্যুত্তরও প্রকাশিত হয়। এই ধরনটির সুবিধা হল উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ বিধায় জবাবদিহিতা ও শিষ্টতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ফলে সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা ও নিবন্ধের মান দুই-ই বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত পর্যালোচকেরা তাদের সুনাম বজায় রাখতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাদের পর্যালোচনাগুলি সমাধা করেন। অসুবিধাগুলি হল পর্যালোচকেরা নেতিবাচক পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে আক্রমণের শিকার হওয়া এড়াতে উন্মুক্ত সমকক্ষীয় পর্যালোচনায় অংশ নেওয়া প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। পর্যালোচকরা অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ গবেষকদের কাজের সমালোচনা করতে অনীহা প্রকাশ করতে পারেন, বিশেষ করে যদি এতে তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

স্বচ্ছ সমকক্ষীয় পর্যালোচনা

এক্ষেত্রে পর্যালোচকেরা রচয়িতাদের নাম জানেন,কিন্তু রচয়িতারা পর্যালোচকদের নাম জানেন না, যদি না পর্যালোচক তার প্রতিবেদনে নাম স্বাক্ষর করেন। যদি পাণ্ডুলিপিটি গৃহীত হয়, তাহলে বেনামী পর্যালোচক প্রতিবেদন এবং প্রতিবেদনের বিপরীতে রচয়িতাদের প্রত্যুত্তর প্রকাশিত হয়।

প্রকাশনা-পরবর্তী সমকক্ষীয় পর্যালোচনা

এক্ষেত্রে প্রকাশনার পরেও কোনও গবেষণাপত্রের মূল্যায়ন ও সংশোধনের পছন্দটি বজায় থাকে। প্রকাশিত গবেষণাপত্রের জন্য আন্তর্জালে একটি মন্তব্য পাতা বা আলোচনাচক্রের রূপে এইরূপ পর্যালোচনা বাস্তবায়িত হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল প্রকাশনা-পরবর্তী সমকক্ষীয় পর্যালোচনা প্রকাশনা-পূর্ব পর্যালোচনাকে প্রতিস্থাপন করে না, বরং সেটির সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। এর সুবিধাগুলি হল এতে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিবর্তনশীল প্রকৃতিটির প্রতিফলন ঘটে এবং প্রকাশনার পরেও গবেষণাপত্র সংশোধন বা উন্নয়নের সুযোগ থাকে। এর অসুবিধাগুলি হল প্রকাশনার পরে পর্যালোচনা ও সংশোধন করা হলে ভবিষ্যতে গবেষণাপত্রের কোন সংস্করণের উদ্ধৃতি প্রদান করতে হবে, সে ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়ে এবং স্থিতিশীল নথিভুক্ত সংস্করণের প্রেক্ষাপটে নতুন গবেষণা সম্পাদনা করার যে বর্তমান প্রথা, তার উপর আঘাত আসতে পারে। দ্বিতীয়ত প্রকাশিত বিষয়বস্তুর ভুলত্রুটি বা কমতির ব্যাপারটি ঠিক করতে ঐতিহ্যগতভাবে পরবর্তী সংখ্যায় ত্রুটিস্বীকার ও সংশোধনীর আকারে এবং সম্পাদকের কাছে পাঠানো পত্র প্রকাশের আকারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা সাময়িকী ভিন্ন ভিন্ন সমকক্ষীয় পর্যালোচনা পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। সাধারণত গবেষণা সাময়িকীর ওয়েবসাইটে পছন্দের পদ্ধতিটির উল্লেখ থাকে।

তথ্যসূত্র

  1. "What is peer review?"। Wiley। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০২২ 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!