চার্লস আলবার্ট জর্জ জ্যাক রাসেল (ইংরেজি: Jack Russell; জন্ম: ৭ অক্টোবর, ১৮৮৭ - মৃত্যু: ২৩ মার্চ, ১৯৬১) এসেক্সের লেটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২০ থেকে ১৯২৩ সময়কালে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ঘরোয়া কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন জ্যাক রাসেল। মূলতঃ ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাশাপাশি ডানহাতে স্লো মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি।
এসেক্সের প্রথমদিককার নিয়মিত উইকেট-রক্ষকের সন্তান ছিলেন রাসেল। এছাড়াও কেন্টের বোলার টিচ ফ্রিম্যান তার কাকাতো ভাই ছিলেন। ১৯০৮ সালে এসেক্সের পক্ষে খেললেও ১৯১৩ সালের পূর্ব-পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেননি। ঐ বছর তিনি ১,০০০ রান তুলেন। পরবর্তী তিন বছরও এ ধারা বহমান থাকে। ১৯২০ সালে লর্ডসে মিডলসেক্সের পক্ষে ১৯৭ রান তুলে শীর্ষমানের ব্যাটসম্যানের খ্যাতি পান। তার করা ২,৪৩২ রান জ্যাক হবস ও প্যাটসি হেনড্রেনের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ছিল।
১৯২২ সালে রাসেলের সেরা মৌসুম কাটে। তার করা ২,৫৭৫ রান নিজস্ব সেরা ছিল ও হবসের চেয়ে এগিয়ে থেকে শীর্ষ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন ও লর্ডসে ১৬২ রান তুলেন।
১৯২৩ সালে অসুস্থতার কারণে রাসেলের খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়। জুনের শেষে দুই সপ্তাহ বিশ্রাম শেষে খেলতে নেমে তার ব্যাটিং গড় ৫২ থেকে ২৯.৭১ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে প্রতিনিধিত্বমূলক সম্মাননার হিসেব-নিকেশ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয় ও হার্বার্ট সাটক্লিফ ঐ বছর প্রতিনিধিত্বমূলক খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাস্বত্ত্বেও ১৯২৫ সালে তিনি সাতটি সেঞ্চুরি করেন ও ২,০৮০ রান তুলেন। ১৯২৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ১৩১ ও ১০৪ রান তুলেন। ঐ মৌসুমে ল্যাঙ্কাশায়ার উপর্যুপরি তৃতীয়বার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা পায়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে চমৎকার সফলতা লাভ করায় ১৯২০ সালের শীতকালে অ্যাশেজ সফরে নির্দ্বিধায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার শক্ত পিচে ইংল্যান্ডের পেশাদার বোলারেরা ব্যর্থ হওয়ায় পাঁচ টেস্টের সবগুলোতেই পরাজিত হয়েছিল তার দল। তবে সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে ৫৮.৪২ গড়ে রান তুলেছিলেন তিনি। তন্মধ্যে অ্যাডিলেডে ১৩৫ রানের মনোরম ইনিংস উপহার দেন। ১৯২০ সালের পর তার ব্যাটিং আরও শাণিত হয় ও দুই সেঞ্চুরি করেন তিনি।
১৯২২ সালের শীতকালে রাসেল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ম্যাটিং পিচে ৬৩ গড়ে ৪৩৬ রান তুলেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থা থেকে সেরে উঠে সিরিজের সিদ্ধান্তসূচক খেলায় অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে ১৪০ ও দেরীতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে সোয়া চার ঘণ্টায় ১১১ রান তুলেন। এরফলে ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একই টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখান।[১] এছাড়াও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে শেষ টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন রাসেল।[২]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কাউন্টি ক্রিকেটে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। রাসেলের প্রধান শক্তি ছিল লেগ সাইডে খেলা। তবে অকার্যকর পিচেও সতর্কতার সাথে তার ব্যাটিংয়ের কার্যকারিতা উল্লেখ করার মতো ছিল।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বিশাল সফলতার কারণে ১৯২৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন তিনি।
১৯২৯ সালে আঘাতে জর্জরিত ছিলেন। আরও এক মৌসুম খেলেন তিনি। অবসর নেয়ার পর কাউন্টি দলের কোচ মনোনীত হন ও পরবর্তীকালে গ্রাউন্ডসম্যান হন। ১৯৪৯ থেকে মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত প্রথম পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এমসিসির সদস্য ছিলেন তিনি।
ভূলবশতঃ তার খেলোয়াড়ী জীবনে আলবার্ট চার্লস রাসেল নামে লেখা হয়েছিল। ২৩ মার্চ, ১৯৬১ তারিখে লেটনস্টোনের হুইপস ক্রসে তার দেহাবসান ঘটে।