জেরুসালেমের জনসংখ্যার আকার এবং গঠন ৫,০০০ বছরের ইতিহাসে বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে। মধ্যযুগীয় যুগ থেকেই, জেরুসালেমেরপুরানো শহরটিইহুদি, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং আর্মেনিয়ান এই চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১৯০৫ সালের পূর্বের জনসংখ্যার তথ্য অনুমানের উপর ভিত্তি করে পাওয়া যায়। এগুলো প্রধানত জানা যায় বিদেশী পরিব্রাজক বা সংস্থার কাছ থেকে, কারণ পূর্বের জনসংখ্যার তথ্য সাধারণত জেরুসালেম জেলার মত বিস্তৃত এলাকার জন্য থাকত। [১] এই অনুমান থেকে পাওয়া যায় যে ক্রুসেডস শেষ হওয়ার পর, ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মুসলমানরা জেরুসালেমের বৃহত্তম গোষ্ঠী ছিল। ১৮৩৮ সাল থেকে ১৮৭৬ সালের মধ্যে, এই সময়ের মধ্যে ইহুদি বা মুসলমানরা সর্ববৃহৎ গোষ্ঠী ছিল কিনা তা নিয়ে বেশ কয়েকটি ধারণা বিদ্যমান, এবং ১৮৮২ সাল থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে কখন ইহুদীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
২০১৬ সালে, জেরুসালেমের মোট জনসংখ্যা ছিল ৮৮২,৭০০ জন। এর মধ্যে ৫৩৬,৬০০ জন ইহুদি এবং ৩৪৫,৯০০ জন অন্যান্য গোষ্ঠীর (৩১৯,৮০০ জন মুসলিম ১৫,৮০০ জন খ্রিস্টান এবং ১০,৩০০ জন শ্রেণীবিহীন) সদস্য ছিল। [২] ২০০৩ সালে পুরানো শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩,৯৬৫ জন ইহুদী এবং ৩১,৪০৫ জন "আরব ও অন্যান্য" ধর্মাবলম্বী (কোশেন ১২)।
বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির দ্বারা জেরুসালেমের দখলের দীর্ঘ ইতিহাসের কারণে এখানে বসবাসরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। এদের মধ্যে অনেক গোষ্ঠীকেই কোনও বিশেষ শাসক তাদের শাসনকালে সম্পূর্ণরূপে চিহ্নিত বা সম্পৃক্ত করেননি। এরা সেই বিশেষ রাজ্য ও সাম্রাজ্যের নাগরিক হয়ে নাগরিক ক্রিয়াকলাপ ও কর্তব্যের সাথে জড়িত থাকলেও, এ গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রায়শই নিজেদেরকে স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে মনে করতেন (উদাহরণস্বরূপ দেখুন, আর্মেনিয়ান)। [৩] অটোমান মিলেট ব্যবস্থায় অটোমান সাম্রাজ্যের সংখ্যালঘুদেরকে একটি বৃহত্তর কাঠামো পদ্ধতির মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা প্রদান, তা বজায় রাখা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী থেকে পৃথক থাকতে দেওয়া হয়েছিল। শহরের কিছু ফিলিস্তিনি অধিবাসী নিজেদের পরিচয় দিতে ফিলিস্তিনের বিশেষণ হিসেবে মকদিসি বা কুদ্দি শব্দটি ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন। [৪]
ধর্মের ভিত্তিতে জনসংখ্যার ইতিহাস
নিচের তালিকাগুলোতে ইহুদি জনসংখ্যার ভিত্তিতে সময়ের সাথে সাথে জেরুসালেমেরজনসংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্যের পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। পাঠকদের জেনে রাখা উচিত যে, বিগত সময়ে জেরুসালেমের সীমানা বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে এবং জেরুসালেমকে অটোম্যান, ব্রিটিশ, বা ইজরায়েলি শাসনের অধীনে একটি জেলা বা এমনকি উপজেলা হিসেবেও উল্লেখ করা যেতে পারে (দেখুন, জেরুসালেম জেলা)। অর্থাৎ, পরিবর্তনশীল ভৌগোলিক এলাকার কারণে এদের প্রতি বছরের আদমশুমারির তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।
পার্সিয় যুগ
হাখমানেশি সাম্রাজ্যেরইয়াহুদ মেডিনাটায় (ইহুদি প্রদেশ) জেরুসালেমের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ১,৫০০ থেকে ২,৭৫০ এর মধ্যে। [৫]
প্রথম শতাব্দী জুদাহ
প্রথম ইহুদি-রোমান যুদ্ধের সময় (৬৬-৭৩ খ্রিষ্টাব্দ), রোমান ইতিহাসবিদ টেসিটাসের মতে জেরুসালেমের জনসংখ্যা ছিল ৬০০,০০০ জন। জোসেফাসের অনুমান মতে এই যুদ্ধে প্রায় ১,১০০,০০০ জন মানুষ নিহত হয়েছিল। [৬] জোসেফাস লিখেছিলেন যে ৯৭,০০০ জন ইহুদীকে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করা হয়। ইহুদিদের বিপক্ষে রোমানদের বিজয়ের পর, নিসান ও তমুজ মাসের মধ্যে একটি গেট দিয়ে ১১৫,৮৮০টি মৃতদেহ বহন করা হয়েছিল। [৭]
৭০ খ্রিষ্টাব্দে জেরুসালেমের উপর রোমানদের সর্বশেষ অবরোধের সময় জেরুসালেমের জনসংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। এর আকার ছিল ১৯৭৪ সালে উইলকিনসনের মতে ৭০,৩৯৮ জন,[৮] ১৯৭৮ সালে ব্রোশির মতে ৮০,০০০,[৯] ও ২০০২ সালে লেভিনের মতে ৬০,০০০–৭০,০০০ জন [১০]জোসেফাসের মতে, শহরের পুরুষ পণ্ডিতগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ছিল নিম্নরূপ: ৬,০০০ এরও বেশি ফারিসি, ৪,০০০ এরও বেশি এসিনি এবং গুটিকয়েক সাডুসি। [১১][১২] নিউ টেস্টামেন্ট বিশেষজ্ঞ কুসল্যান্ড উল্লেখ করেন যে, "সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী জেরুসালেম শহরের জনসংখ্যা এক লাখের আশেপাশে।" [১৩] তবে হিলেল জেভা এ ব্যাপারে প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা থেকে ধারণা করেছেন যে, ৭০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে জেরুসালেমের জনসংখ্যা ২০ হাজারের বেশি ছিল না। [১৪]
১৮১৪ সালে হেনরি লাইট জেরুসালেম পরিদর্শন করেন। তার রিপোর্ট অনুযায়ী মুসলমানরা ১২,০০০ জন জনসংখ্যা নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, কিন্তু ইহুদিরা সর্ববৃহৎ একক সম্প্রদায় তৈরি করেছিল। [১৮] ১৮১৮ সালে, আর্ল অফ বেলমোরদের পারিবারিক ডাক্তার রবার্ট রিচার্ডসন, অনুমান করেন যে ইহুদিদের সংখ্যা ১০,০০০ যা, মুসলমানদের সংখ্যার দ্বিগুণ। [১৯][২০]
১৮৩৮ সাল থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত, শহরের জনসংখ্যায় মুসলিমরা নাকি ইহুদিরা "সংখ্যাগরিষ্ঠ" ছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
১৮৪১ সালে, বাইবেল বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড রবিনসন সে সময় জেরুসালেমের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক অনুমানের উপাত্তকে পরম্পরবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ১৮৩২ সালের মোসেস মন্টেফিয়োরের একটি অনুমানকে উল্লেখ করে তিনি বলেন "ইহুদিদের কাছে, প্রশ্নবিদ্ধ হিসাবটি তারা নিজেরাই তৈরি করেছিল কারণ, প্রতিটি নামের জন্য তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আশা করত। অতএব, এটি স্পষ্ট যে এই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তাদের কাছে যথেষ্ট শক্তিশালী কারণ ছিল, কারণ অন্যান্য পরিস্থিতিতে তারা প্রায়ই এটির অবমূল্যায়ন করতে পারত। এছাড়া, এই ৭০০০ সংখ্যাটি কেবলমাত্র প্রতিবেদনেই রয়েছে; স্যার মোসেস নিজে এই বিষয়ে কিছুই প্রকাশ করেননি, এমনকি লন্ডনে তার প্রতিনিধি আমাকে ১৮৪০ সালের নভেম্বরেও কোন তথ্য দিতে পারেননি।" [২৮] ১৮৪৩ সালে শ্রদ্ধেয় এফ.সি. ইওয়াল্ড নামের একজন খ্রিস্টান পর্যটক, আলজিয়ার্স থেকে ১৫০ জন ইহুদীর আগমনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে তখন আফ্রিকার উপকূল থেকে বিপুল সংখ্যক ইহুদী এসেছিল, যারা পৃথক পৃথক দল গঠন করেছিল। [২৯]
১৮৮১ থেকে ১৮৮২ সালে, ইহুদিদের একটি গোষ্ঠী মেসিয়ানিক তাড়নার ফলে ইয়েমেন থেকে আগত হয়, যে পর্যায়টি প্রথম আলিয়াহ নামে পরিচিত। [৫০][৫১]পুরানো শহরে কয়েক বছর থাকার পর তারা সিটি অফ ডেভিডের সম্মুখে অবস্থিত পাহাড়ে চলে যান, এবং সেখানে পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতে শুরু করেন। [৫২] ১৮৮৪ সালে ২০০ জন সদস্যবিশিষ্ট এই সম্প্রদায়টি তাদের জন্য একটি ইহুদি দাতব্য সংস্থার তৈরি কয়েকটি নতুন পাথরের তৈরি বাড়িতে চলে আসেন। [৫৩]
বেলফোর ঘোষণার পর ১৯১৯-১৯২৩ সালে তৃতীয় আলিয়াহর ফলে জেরুসালেম তথা বিস্তৃত ফিলিস্তিনের ইহুদি জনসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। এর আগে, ১৯১৯ সালের একটি ব্রিটিশ জরিপে উল্লেখ করা হয় যে জেরুসালেমে বেশিরভাগ ইহুদীই ছিল মূলত অর্থোডক্স এবং জিওনিস্টরা ছিল সংখ্যালঘু। [৫৪]
২০০৬ সালের ২৪শে মে এর হিসাব অনুযায়ী, জেরুসালেমের জনসংখ্যা ছিল ৭২৪,০০০ জন (যা ইসরায়েলের জনসংখ্যার প্রায় ১০%), যাদের মধ্যে ৬৫% ইহুদি (যাদের আনুমানিক ৪০% পূর্ব জেরুসালেমের বাসিন্দা), ৩২% মুসলিম (যাদের প্রায় সবাই পূর্ব জেরুসালেমে বাস করেন) এবং ২% খ্রিষ্টান। শহরের ৩৫% জনসংখ্যার বয়স ১৫ বছরের নিচে। ২০০৫ সালে শহরে ১৮,৬০০ নবজাতক জন্মগ্রহণ করে। [৫৭]
এই সমস্ত ইসরায়েলি সরকারি পরিসংখ্যান ইসরায়েলের পরিবর্ধিত জেরুসালেম পৌরসভাকে নির্দেশ করে। এর মধ্যে কেবল ১৯৬৭ পূর্ববর্তী ইসরায়েলি ও জর্দানীয় পৌরসভার এলাকাগুলোই নয় বরং শহরের পূর্বাঞ্চলের যেসকল ফিলিস্তিনি গ্রাম ও শহরগুলো ১৯৬৭ সালের আগে পূর্ব জেরুসালেমের অংশ ছিল না তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৬৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যার উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, আরব জনসংখ্যা আপেক্ষিক ও পরম উভয়ভাবেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শহরের সামগ্রিক জনসংখ্যায় ইহুদিদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ১৯৬৭ সালে, শহরের জনসংখ্যার ৭৩.৪% ছিল ইহুদি, যেখানে ২০১০ সালে এটি ৬৪% এ দাড়ায়। একই সময়ের মধ্যে আরব জনসংখ্যা ১৯৬৭ সালে ২৬.৫% থেকে বেড়ে ২০১০ সালে ৩৬% হয়েছে। [৫৮][৫৯] ১৯৯৯ সালে, ইহুদিদের মোট প্রজনন হার ছিল জনপ্রতি নারীতে ৩.৮টি শিশু, এবং ফিলিস্তিনিদের হার ছিল ৪.৪টি শিশু। এর ফলে আশঙ্কা করা হয় যে আরবরা শেষ পর্যন্ত শহরের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে।
১৯৯৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে, ইহুদি প্রজনন হার বৃদ্ধি ও আরব প্রজনন হার হ্রাস পাওয়ার ফলে জনসংখ্যা প্রবণতা বিপরীত হয়ে যায়। উপরন্তু, জেরুসালেমে বসবাস করতে আগ্রহী বিদেশী ইহুদী অভিবাসী সংখ্যা স্থিরভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১০ সাল নাগাদ, ইহুদিদের বৃদ্ধির হার আরবদের তুলনায় বেশি হয়ে যায়। সেই বছর, শহরের জন্মহার হয়ে দাঁড়ায় ইহুদি মায়েদের জন্য ৪.২টি শিশু ও আরব মায়েদের ৩.৯টি শিশু। অধিকন্তু, বিদেশ থেকে ২,২৫০ জন ইহুদী অভিবাসী জেরুসালেমে বসতি স্থাপন করে। মনে করা হয় যে ইহুদিদের প্রজনন হার এখনও বাড়ছে, যেখানে আরবদের প্রজনন হারের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। [৬০]
২০১৬ সালে, জেরুসালেমের জনসংখ্যা ছিল ৮৮২,৭০০ জন যাদের মধ্যে ৫৩৬,৬০০ জন ইহুদি (৬০.৮%), ৩১৯,৮০০ জন মুসলিম (৩৬.২%) ১৫,৮০০ জন খ্রিষ্টান (১.৮%) এবং ১০,৩০০ জন শ্রেণীবহির্ভূত (১.২%) মানুষ ছিল। [২]
জনসংখ্যার গুরুত্বপূর্ণ দিনপঞ্জি
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০০–৩৫০০ : গিহন ঝরনার কাছে প্রথম উপনিবেশ স্থাপন (প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ)।
আনু. খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০: বাইবেল অনুসারে, রাজা ডেভিড জেরুসালেম শাসন করেন এবং এটিকে ইসরায়েল রাজ্যের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন (২ স্যামুয়েল ৫:৬–৭:৬)। তার পুত্র রাজা সলোমন টেম্পল মাউন্টে প্রথম ইহুদী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৭–৬: বাবিলীয়দের দ্বারা জেরুসালেম দখল; সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার ফারাও অ্যাপ্রিসেরজুদাহ আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। জেরুসালেম প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় যার মধ্যে প্রথম মন্দিরটিও ছিল। শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিরা ব্যাবিলনে চলে যান (কেবলমাত্র বাইবেলের উৎস)।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৪: হাসমোনিয়ানরা জেরুসালেমের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়, যখন সেলুকিডরা শহরের আক্রা দুর্গ ও চারপাশের বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।.
১৩৬ খ্রিষ্টাব্দ: হাদ্রিয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে জেরুসালেম শহরকে অ্যালিয়া ক্যাপিটোলিনা নামে পুনঃস্থাপন করেন, এবং শহরে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেন। তবে খ্রিষ্টানদের উপর এই নিষেধাজ্ঞা দুই বছর পর শিথিল করা হয়।
৩২৪–২৫ খ্রিষ্টাব্দ: সম্রাট কন্সট্যান্টাইননিসিয়ার প্রথম মন্ত্রিসভা গঠন করেন এবং জেরুসালেমে একটি খ্রিষ্টান বিশপের কার্যালয় স্থাপন করেন। [৬২] এর ফলে শহরে বিপুল পরিমাণে খ্রিষ্টানদের আগমন শুরু হয়। ইহুদিদের উপর শহরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে, তবে তাদেরকে বছরে একবার তিশা বা'আব উৎসবের সময় বোরাক দেয়ালে প্রার্থনা করতে শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হত।
৬১৪ খ্রিষ্টাব্দ: ৬২৯ সালে পুনুরুদ্ধারের আগ পর্যন্ত জেরুসালেম ইহুদি ও পার্সি শক্তির কাছে নত ছিল, বিশেষ করে দ্বিতীয় খসরুরসাসানীয় সাম্রাজ্যের কাছে। এটি ছিল ভূমধ্যসাগরের পূর্ব অংশে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের হিরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্রোহের ফলাফল। [৬৩] এ সময় পবিত্র সেপুলকারের গির্জাটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং শহরের বেশিরভাগ খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা হয়। [৬৪][৬৫]
৬৩৬–৭ খ্রিষ্টাব্দ: খলিফাউমর জেরুসালেম জয় করেন। মুহাম্মদ ইবনে জারির আল-তাবারির মতে, গোষ্ঠীপ্রধান সোফ্রোনিয়াস ও উমরের মধ্যে উমরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা খ্রিষ্টানদেরকে ধর্মপালনের স্বাধীনতা দিলেও ইহুদিদের শহরে থাকা নিষিদ্ধ করে। আর্মেনীয় অ্যাপোস্টোলিক চার্চ ৬৩৮ সালে জেরুসালেমে তাদের নিজস্ব বিশপ নিয়োগ করা শুরু করে। যদিও বেঁচে যাওয়া একজন ইহুদির কায়রো গেনিজা বিবরণী থেকে জানা যায় যে, উমর সত্তরটি ইহুদি পরিবারকে শহরে থাকার অনুমতি দেন। [৬৬] এই ইহুদিরা শহরের দক্ষিণ অংশে টেম্পল মাউন্টের কাছে বাস করার অনুমতির জন্য আবেদন করেন যা মঞ্জুর করা হয়। ১০৬৪ সালের একটি গেনিজা পত্রে এই ইহুদি কোয়ার্টারটির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে দশম ও একাদশ শতাব্দীর লিপি থেকে জানা যায় যে, "রাজা ইশমায়েল" তাদেরকে শহরে থাকার অনুমতি দেন। [৬৭]
১১৮৭: সালাহউদ্দিন ক্রুসেডারদের থেকে জেরুসালেমের দখল নেন এবং ইহুদী ও প্রথাগত খ্রিষ্টানদের বসবাসের সুযোগ করে দেন। কুব্বাত আস-সাখরা পুনরায় একটি ইসলামী প্রার্থনালয়ে পরিণত হয়।
১২২৯: খ্রিষ্টানদের অরক্ষিত শহরে বসবাসের স্বাধীনতা প্রদান করে একটি ১০-বছর মেয়াদী চুক্তি সই হয়। আইয়ুবীয় রাজবংশ শহরের মুসলিম পুণ্যস্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।
১২৬৭: নাখম্যানাইডস জেরুসালেমে আসেন ও বোরাক দেয়ালে প্রার্থনা করেন। তিনি শহরে কেবল দুইটি ইহুদি পরিবারকে পেয়েছেন বলে জানান।
১৪৮২: ডোমিনিকান পাদ্রী ফেলিক্স ফাব্রি জেরুসালেম পরিদর্শন করে একে "সব ধরনের কদর্যতার আখড়া" হিসেবে বর্ণনা করেন। "দুষ্কৃতিকারী" হিসেবে তিনি আরব বেদুইন, গ্রিক, সিরিয়ান, জ্যাকোবাইট, অ্যাবিসিয়ানিয়ান, নেস্টোরিয়ান, আর্মেনিয়ান, গ্রেগরিয়ান, ম্যারোনাইট, তুর্কমেনীয়ান, বেদুইন, আততায়ী, সম্ভবত দ্রুজ ও মামলুকদের একটি গোষ্ঠী এবং সবথেকে বেশি দোষীসাব্যস্ত করেন ইহুদিদেরকে। শুধুমাত্র লাতিন খ্রিস্টানরাই "তাদের সমস্ত মনপ্রান দিয়ে শহরে খ্রিস্টান রাজাদের আগমন এবং রোমান চার্চের কর্তৃত্ব করতে উদ্বুদ্ধ করে"।
১৬০৪: প্রথম প্রটেক্টরেট অফ মিশনস স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে ফ্রান্সের চতুর্থ হেনরির অধীনস্থ প্রজারা জেরুসালেমের পুণ্যস্থানগুলো অবাধে দর্শন করার অধিকার লাভ করেন। ফরাসি সন্ন্যাসিরা জেরুসালেম ভ্রমণ করতে আরম্ভ করেন।
১৭০০: জুদাহ দ্য পায়স তার ১,০০০ অনুসারী সমেত জেরুসালেমে বসতি স্থাপন করেন।
১৭৭৪: রাশিয়াকে জেরুসালেমের সকল খ্রিষ্টানদের সুরক্ষার অধিকার প্রদান করে কুকিত কিনারকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৮২১: গ্রিক স্বাধীনতা যুদ্ধে –জেরুসালেমের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে (যাদের বেশিরভাগই ছিল গ্রিক অর্থোডক্স), অটোম্যান কর্তৃপক্ষ তাদের অস্ত্র পরিত্যাগ করতে, কালো পোশাক পরিধান করতে এবং শহরের সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে।
১৮৩৯–৪০: রাব্বি জুদাহ আলকালাই "দ্য প্লেজেন্ট পাথস" ও "দ্য পিস অফ জেরুসালেম" প্রকাশ করেন, এবং সেখানে ইউরোপের ইহুদিদেরকে জেরুসালেম ও ফিলিস্তিনে ফিরে আসার অনুরোধ করেন।
১৯২৪–২৮: চতুর্থ আলিয়াহর সময় ৮২,০০০ ইহুদী অভিবাসী মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন অঞ্চলে প্রবেশ করে।
১৯২৯–৩৯: পঞ্চম আলিয়াহর সময় ২৫০,০০০ ইহুদী অভিবাসী মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন অঞ্চলে অভিবাসিত হয়।
১৯৪৭–৪৯: ফিলিস্তিন যুদ্ধে সমস্ত শহর ও এর বিভাগগুলোর অধিবাসী ফিলিস্তিনি আরব ও ইহুদিদের স্থানচ্যুত করা হয়। শহরের সর্বপূর্ব অংশের সকল ইহুদি বাসিন্দাদের উৎখাত করা হয় এবং সম্পূর্ণ ইহুদি কোয়ার্টারটি ধ্বংস করা হয়।[৭২]লিফতা, আল-মালিহা, আয়ান করিম ও দেইর ইয়াসিনের মত ফিলিস্তিনি আরব গ্রামগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে।
১৯৬৭: ছয় দিনের যুদ্ধে পূর্ব জেরুসালেম ইসরায়েলের কাছে পরাজিত হয় এবং কয়েক সপ্তাহ পর ইসরায়েলি জেরুসালেম পৌরসভা, পূর্ব জেরুসালেম ও আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় সম্প্রসারিত হয়। আইডিএফ ও মাগরিবি মহল্লা, ১৩৫টি বাড়ি বিশিষ্ট পুরাতন শহরের দখল নেয় এবং, দ্বাদশ শতকের আফদালিয়া বা শেখ ঈদ মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে বোরাক দেয়ালের সামনে একটি চত্বর সৃষ্টি করে। ইসরায়েল জেরুসালেমকে একীভূত বলে ঘোষণা দেয় এবং এর সকল ধর্মীয় পুণ্যস্থানে সকল ধর্মের মানুষের অবাধ প্রবেশাধিকারের ঘোষণা দেয়।
↑Wilkinson, "Ancient Jerusalem, Its Water Supply and Population", PEFQS 106, pp. 33–51 (1974).
↑Estimating the Population of Ancient Jerusalem, Magen Broshi, BAR 4:02, Jun 1978
↑"According to Levine, because the new area encompassed by the Third Wall was not densely populated, assuming that it contained half the population of the rest of the city, there were between 60,000 and 70,000 people living in Jerusalem.", Rocca, "Herod's Judaea: A Mediterranean State in the Classical World", p. 333 (2008). Mohr Siebeck.
↑Cousland, "The Crowds in the Gospel of Matthew", p. 60 (2002). Brill.
↑Hillel Geva (২০১৩)। "Jerusalem's Population in Antiquity: A Minimalist View"। Tel Aviv। 41 (2): 131–160।
↑Avraham Yaari, Igrot Eretz Yisrael, p. 98.(Tel Aviv, 1943)
↑ কখগঘAmnon Cohen and Bernard Lewis (১৯৭৮)। Population and Revenue in the Towns of Palestine in the Sixteenth Century। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 14–15, 94। আইএসবিএন0-691-09375-X। The registers give counts of tax-paying households, bachelors, religious men, and disabled men. We followed Cohen and Lewis on taking 6 as the average household size, even though they call it "conjectural" and note that other scholars have suggested averages between 5 and 7.
↑Buckingham, James Silk (১৮২১)। Travels in Palestine through the countries of Bashan and Gilead, east of the River Jordan, including a visit to the cities of Geraza and Gamala in the Decapolis। London: Longman, Hurst, Rees, Orme and Brown। During our stay here, I made the most accurate estimate that my means of information admitted, of the actual population of Jerusalem at the present moment. From this it appeared that the fixed residents, more than one half of whom are Mohammedans, are about eight thousand; but the continual arrival and departure of strangers, make the total number of those present in the city from ten to fifteen thousand generally, according to the season of the year. The proportion which the numbers of those of different sects bear to each other in this estimate, was not so easily ascertained. The answers which I received to enquiries on this point, were framed differently by the professors of every different faith. Each of these seemed anxious to magnify the number of those who believed his own dogmas, and to diminish that of the professors of other creeds. Their accounts were therefore so discordant, that no reliance could be placed on the accuracy of any of them. The Mohammedans are certainly the most numerous, and these consist of nearly equal portions of Osmanli Turks, from Asia Minor; descendents of pure Turks by blood, but Arabians by birth; a mixture of Turkish and Arab blood, by intermarriages; and pure Syrian Arabs, of an unmixed race. Of Europeans, there are only the few monks of the Catholic convent, and the still fewer Latin pilgrims who occasionally visit them. The Greeks are the most numerous of ail the Christians, and these are chiefly the clergy and devotees. The Armenians follow next in order, as to numbers, but their body is thought to exceed that of the Greeks in influence and in wealth. The inferior sects of Copts, Abyssinians, Syrians, Nestorians, Maronites, Chaldeans, &c. are scarcely perceptible in the crowd. And even the Jews are more remarkable from the striking peculiarity of their features and dress, than from their numbers, as contrasted with the other bodies.
↑Fisk and King, 'Description of Jerusalem,' in The Christian Magazine, July 1824, page 220. Mendon Association, 1824. (The figures are preceded by the comment "the following estimate seems to us as probably correct as any one we have heard". The authors also note that, "some think the Jews more numerous than the Mussulmans.")
↑Ellen Clare Miller, Eastern Sketches – notes of scenery, schools and tent life in Syria and Palestine. Edinburgh: William Oliphant and Company. 1871. Page 126: 'It is difficult to obtain a correct estimate of the number of inhabitants of Jerusalem...'
↑The New York Times, February 19, 1869 [১]; See also I. Harold Scharfman, The First Rabbi, Pangloss Press, 1988, page 524 which reports the figure as 3,100.
↑Burns, Jabez. Help-Book for Travelers to The East. 1870. Page 75
↑Hebrew Christian Mutual Aid Society. Almanack of 1869
↑Die heilige Stadt und deren Bewohner in ihren naturhistorischen, culturgeschichtlichen, socialen und medicinischen Verhältnissen. Published by Der Verfasser, page 216; 512 pages
↑Tudor Parfitt (১৯৯৭)। The road to redemption: the Jews of the Yemen, 1900–1950। Brill's series in Jewish Studies, vol 17। Brill Academic Publishers। পৃষ্ঠা 53।
↑Review Of Reviews. Volume IX. Jan–Jun, 1894. Albert Shaw, Editor. Page 98. "The present population of Jerusalem is not far from forty thousand, and more than half are Jews."
↑Schaff's Seven Ecumenical Councils: First Nicaea: Canon VII: "Since custom and ancient tradition have prevailed that the Bishop of Aelia [i.e., Jerusalem] should be honored, let him, saving its due dignity to the Metropolis, have the next place of honor."; "It is very hard to determine just what was the “precedence” granted to the Bishop of Aelia, nor is it clear which is the "metropolis" referred to in the last clause. Most writers, including Hefele, Balsamon, Aristenus and Beveridge consider it to be Cæsarea; while Zonaras thinks Jerusalem to be intended, a view recently adopted and defended by Fuchs; others again suppose it is Antioch that is referred to."
↑[Sharkansky, Ira (1996). Governing Jerusalem: Again on the world's agenda. Detroit: Wayne State University Press. p. 63.]
↑Hussey, J.M. 1961. The Byzantine World. New York, New York: Harper & Row, Publishers, p. 25.
↑Karen Armstrong. 1997. Jerusalem: One City, Three Faiths. New York, New York: Ballantine Books, p. 229. আইএসবিএন০-৩৪৫-৩৯১৬৮-৩
Palestinian Academic Society for the Study of International Affairs (২০০২)। "Jerusalem: Special Bulletin"(পিডিএফ)। অক্টোবর ৪, ২০০৬ তারিখে মূল(PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০০৬।
United Nations (১৯৯৭)। "The Status of Jerusalem"। UNISPAL. Division for Palestinian Rights. Prepared for, and under the guidance of, the Committee on the Exercise of the Inalienable Rights of the Palestinian People। নভেম্বর ২৫, ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০০৬।
Scholch, Alexander (১৯৮৫)। "The Demographic Development of Palestine"। International Journal of Middle East Studies। 17 (4): 485–505। জেস্টোর163415। ডিওআই:10.1017/s0020743800029445।
Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!