ক্রিস্টোফার ল্যান্স কেয়ার্নস (ইংরেজি: Chris Cairns; জন্ম: ১৩ জুন, ১৯৭০) মার্লবোরা অঞ্চলের পিকটনে জন্মগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডের সাবেক ও বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা। ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ নামে পরিচিত নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের পক্ষে তিনি দক্ষ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তার বাবা ল্যান্স কেয়ার্নস। নিউজিল্যান্ড দলে তিনি টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া চ্যাম্পিয়নশীপে ক্যান্টারবারি দলে খেলেছেন। নিয়মিত অধিনায়কস্টিফেন ফ্লেমিংয়ের অনুপস্থিতিতে জাতীয় দলে সাতটি টেস্টে অধিনায়কেরও দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রিস কেয়ার্নস।
অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ৩৩.৫৩ গড়ে রানসহ ২৯.৪০ বোলিং গড়ে উইকেট পেয়েছেন। ২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃক তিনি বর্ষসেরা পাঁচজন ক্রিকেটারের একজনরূপে বিবেচিত হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে তিনি নিউজিল্যান্ডের স্কাই স্পোর্ট টেলিভিশনে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
খেলোয়াড়ী জীবন
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে তিনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ও মাঠ বরাবর সোজা ছক্কা হাঁকাতে পারতেন। এছাড়াও তিনি বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার ছিলেন।[১] কিন্তু, ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্তির ফলে পেস আক্রমণ থেকে দূরে এসে ধীরগতিতে বল করতে শুরু করেন।
ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসে বেশ কিছু স্মরণীয় ইনিংস রচনা করেছেন। তন্মধ্যে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০০০ সালের আইসিসি নক-আউট ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১০২* রান করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করান। ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭২ বলে ১৫৮ রান করেন। ২০০০ সালে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের অন্যতম পুরোধা শেন ওয়ার্নের বল থেকে বেশ কিছু ছক্কা আদায় করেন। ফলে ওয়ার্নকে স্বল্পকালের জন্য দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়। ৮৭টি ছক্কার হাঁকিয়ে তিনি তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েন যা পরবর্তীকালে অস্ট্রেলীয় উইকেট-রক্ষকঅ্যাডাম গিলক্রিস্ট ভেঙ্গে ফেলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে ৭৫ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন। পরবর্তীতে অবশ্য কোরে অ্যান্ডারসন ৩৬ বলে নিজের করে নেন।
বল হাতে কেয়ার্নস তার নিজস্ব সেরা বোলিং করেন ৭/২৭। ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার এ অসাধারণ কৃতিত্ব রচিত হয়। রিচার্ড হ্যাডলি, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও ক্রিস মার্টিনের পর নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট লাভের অধিকারী হন। বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে সাতজন সেরা অল-রাউন্ডারের একজনরূপে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ইয়ান বোথামের পর ৫৮ টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম সময়ে তিনি ডাবলে পৌঁছান। একদিনের আন্তর্জাতিকেও ডাবলের কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। একদিনের আন্তর্জাতিকে ৪৯৫০ করেন। সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪.০২ গড়ে রান সংগ্রহ করেন ও সর্বকালের তালিকায় ৫ম স্থানে রয়েছেন।[২]
অর্জনসমূহ
নিউজিল্যান্ড হ্যারাল্ডের সাংবাদিক রিচার্ড বুক কেয়ার্নস প্রসঙ্গে বলেছেন যে, ‘ক্রিকেট খেলায় সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডারের একজন হিসেবে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’[৩]
কেয়ার্নসের খেলোয়াড়ী জীবন আঘাতপ্রাপ্তি নিত্যসঙ্গী ছিল। এরফলে তার পরিসংখ্যানও কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি করে ও তার খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাববিস্তার করে।[৩] কেয়ার্নস তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৬২ টেস্ট খেলেন ও আঘাতপ্রাপ্তির কারণে ৫৫ টেস্ট খেলা থেকে বঞ্চিত হন। ২০০৯ সালে ক্রীড়া সাংবাদিক সিদ্ধার্থ মঙ্গা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, কেয়ার্ন্সের খেলোয়াড়ী জীবনে প্রতিভা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।[১]
এছাড়াও কেয়ার্নস হক কাপে নর্থল্যান্ডের পক্ষে খেলেন।
অবসর
২০০৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন কেয়ার্নস। ২২ জুন, ২০০৬ তারিখে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একদিনের আন্তর্জাতিক থেকে তার অবসরের কথা জানান। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি সর্বশেষ টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে খেলায় অংশ নেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ তারিখে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড এক প্রতিবেদনে তার অবসর গ্রহণকে মাইকেল জর্ডান ও বিয়ন বর্গের সাথে তুলনা করে। কেয়ার্নসের দলে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলেও তিনি বলেছেন যে, আমি মনে করি না যে আবারো ফিরে আসবো।[৪]
কেয়ার্নস তার শেষ খেলায় চার ওভারে ২৪ রান দিয়ে কোন উইকেট পাননি এবং ক্রিস গেইলের বলে শূন্য রান করেন নয়বল মোকাবেলা করে। ক্রিকইনফো তার শেষ আন্তর্জাতিক খেলাকে অনুপযুক্ত বিদায় হিসেবে বর্ণনা করে ও লিখে যে তিনি আরও ভালো করতেন।[৫]
ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে চণ্ডীগড় লায়ন্সে যোগ দেন ও ২০০৮ সাল পর্যন্ত দলের অধিনায়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইংলিশ টুয়েন্টি২০ কাপ প্রতিযোগিতায় নটিংহ্যামশায়ার দলের হয়ে খেলছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
তার বোন লুইজ আগস্ট, ১৯৯৩ সালে রেল দূর্ঘটনায় নিহত হয়। এ প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে নিরাপদ রেল সচেতনতার অংশ হিসেবে ১,০০১ কিমি (৬২২ মা) হাঁটা পূর্ণ করেন।[৬]
সিডনিতে কর্মরত ক্রীড়া বাজারজাতকরণ গ্রুপ অক্টাগনে কর্মরত ‘মেলানি ক্রোজার’ নাম্নী এক অস্ট্রেলীয় রমণীকে বিয়ে করেন। এটি ছিল তার তৃতীয় বিবাহ। কেয়ার্নস ক্যানবেরায় বসবাস করছেন ও ২০১১-১২ মৌসুমে স্থানীয় নর্থ ক্যানবেরা গাঙ্গালিন ঈগলস দলে খেলার কথা ছিল। প্রথম খেলায় তিনি ৬৬ বলে ১৪১ রান করেন ১৩টি ছক্কার সাহায্যে। এ অর্জনের পথে তিনি শেষ ৯০ রান করেন মাত্র ২৭ বলে।
তৃতীয় শতকের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড প্রথমবারের মতো আইসিসি’র পুরস্কার লাভ করে। এ ফলাফল দুইয়ের অধিক দলের সমন্বয়ে গড়া ওডিআই প্রতিযোগিতায় একমাত্র শিরোপা অর্জনরূপে বিবেচিত।