কুশ (সংস্কৃত: कुश) এবং তাঁর যমজ ভ্রাতা লব ছিলেন রাম সীতার পুত্র। হিন্দুমহাকাব্য, রামায়ণ ও এটির অন্যান্য সংস্করণে তাঁদের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে,কুশ ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মধ্যে সমগ্র কাশ্মীর, সিন্ধু নদ ও হিন্দুকুশ শাসন করেছিলেন (তখন সমগ্র অঞ্চলটি হিন্দুকুশক্ষেত্র নামে পরিচিত ছিল) এবং সিন্ধু উপত্যকায় কাশ্মীর ও কাসুর শহর প্রতিষ্ঠা করেন,কাসুর শহরের পাশ্ববর্তী অঞ্চলটি ছিল লবপুরী (বর্তমান দিনের লাহোর) যা প্রতিষ্ঠা করেন তার ভ্রাতা লব।[১] যদিও স্থানীয় মতবাদ অনুসারে, ১৫২৫ সালে অভিবাসী পাঠানরা কাসুর প্রতিষ্ঠা করে।[২][৩][৪]
রামায়ণের প্রথম অধ্যায় বালকান্ডে বর্ণিত আছে যে, মহর্ষি বাল্মীকি দুুই ভাই লব-কুশকে রামায়ণ বর্ণনা করছেন। তাদের জন্ম ও শৈশবের কথা বর্ণিত আছে শেষ অধ্যায় উত্তরকান্ডে কিন্তু মনে করা হয় যে, উত্তরকান্ডের এই বর্ণনাগুলো বাল্মীকির নিজের মুুখনিঃসৃত নয়। কিংবদন্তি অনুযায়ী, রাজ্যে সীতার সতীত্ব নিয়ে নানান নেতিবাচক কথা শোনা গেলে তিনি স্বেচ্ছায় রাজ্য থেকে নির্বাসিত হন। নির্বাসিত হবার পর তিনি তমসা নদীর তীরে মহর্ষি বাল্মীকিরআশ্রমে শান্তিতে দিন অতিবাহিত করতে থাকেন। লব ও কুশ এই আশ্রমেই জন্মগ্রহণ করেন ও মহর্ষি বাল্মীকিরঅভিভাবকত্বে অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তারা এখানে ভগবানরামের সম্পর্কেও অবগত হন।[৫][৬][৭]
সেই যজ্ঞে লব-কুশ, শ্রীরামের উপস্থিতিতে বহু মানুষের সামনে রামায়ণ আবৃত্তি করেন। রামায়ণ ব্যাখা করার মাধ্যমে দুই ভাই যখন মা সীতার নির্বাসনের কথা পিতা রামকে জানালেন,তখন তিনি শোকাহত হয়ে পরেন এবং বাল্মীকি তখন সীতাকে সেখানে নিয়ে আসেন। তখন বিহ্বল ও অত্যন্ত শোকগ্রস্ত হয়ে সীতা তাঁর মা (ভূমিকে) তাকে গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালেন এবং নিচের জমি ফাঁক হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি সেখানে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। রাম তখন জানতে পারেন যে, লব ও কুশ তাঁরই সন্তান।[৮]
কিছু গ্রন্থে এমন নিদর্শনও পাওয়া গেছে যে, অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়াটিকেলব-কুশ ধরে ফেলেছিলেন এবং রামের ভাইদের ও তাদের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ফেলেন। তখন অজ্ঞাতসারে স্বয়ং রাম তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসলে, বাল্মীকি ও সীতা সেখানে মধ্যস্থতা করার জন্য আসেন ও পিতা-পুত্রদের একীভূত করার জন্য প্রচেষ্টা করতে থাকেন। সীতা তখন লব-কুশ কে বলেন যে, রাম তাঁদের পিতা এবং বাল্মীকি তখন লব-কুশ কে বলেন যে, তাদের দুই ভাই সীতার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা পবিত্র রামায়ণ আবৃত্তির মাধ্যমে সবাইকে জানাতে হবে এবং সীতার পবিত্র সতীত্বের প্রমাণ হিসেবে তাঁরা বলবে যে, তিনি শুধুমাত্র অযোধ্যার মানুষকে তাঁর সতীত্বের প্রমাণ দেওয়ার জন্য তিনি লঙ্কার স্বর্ণমহল পরিত্যাগ করেছেন।
আনন্দ রামায়ণের ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ অধ্যায়ে ভগবানরামের পুত্রদের জীবনকাহিনী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। একদা কুশের সামনে একজন দেবী আবির্ভূত হন ও তাকে বলেন যে, তিনি অযোধ্যাসাম্রাজ্যের প্রাচীন রাজধানীর রক্ষাকারী। তিনি সেই জনহীন নগরের অবস্থা সম্পর্কে কুশকে বলেন যে, সেটি ভগবানরাম চলে যাওয়ার পর থেকে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই সংবাদ শোনামূহূর্ত কুশ, সেই নগরীর পূর্বের প্রভা ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে তার সমস্ত সেনাবাহিনী নিয়ে নগরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
ষোড়শ অধ্যায়ে, কুশ ও নাগরাজকন্যা কুমুদবতীর বিবাহের বর্ণনা রয়েছে। গ্রীষ্মকালেঅযোধ্যায় বসবাস করার সময় কুশ রাজদরবারের নারীদের সাথে সরযূ নদীতে স্নান করতে যান। নদীতে জলকেলি করার সময় তিনি পিতৃদত্ত একটি মহামূল্যবান রত্ন হারিয়ে ফেলেন। ক্রোধে কুশ নদীর মধ্যে সবেগে একটি তীর ছোঁড়ার উদ্যোগ করে এবং নদীটি বিভক্ত হয়ে যায় ও রূপসী কুমুদবতীর আবির্ভাব হয়।
সপ্তদশ অধ্যায় কুশের জীবনের শেষ দিনগুলির বর্ণনা রয়েছে। কুশ ও কুমুদবতীর অতিথি নামক এক পুত্র ছিল এবং সে রাজ্যের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হয়েছিল। কুশ এক রাক্ষসের সাথে যুদ্ধে অগ্রসর হন এবং পরাজিত হয়ে প্রাণ দেন। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ অধ্যায়ে অতিথির পরবর্তী ২১ জন রাজাদের জীবনকাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।