ইসলামের নবি ও রাসুল (বিকল্প বানানে নবী ও রাসূল) (আরবি: الأنبياء والرسل في الإسلام, প্রতিবর্ণীকৃত: আল-আনবিয়া ওয়ার রুসুল ফিল ইসলাম) বা ইসলামের পয়গম্বর (ফার্সি: پیامبران در اسلام, প্রতিবর্ণীকৃত: পয়ম্বরান দার ইসলাম) হলেন সেই সকল ব্যক্তিত্ব যাদেরকে মুসলিমগণ আল্লাহ কর্তৃক মানুষের দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য মনোনীত হিসাবে বিবেচনা করে। ইসলামী পরিভাষায় তাদেরকে বলা হয় নবি (বহুবচনঃ أَنْبِيَاء, আনবিয়া, অর্থঃ প্রতিনিধি, সতর্ককারী) ও রাসুল (বহুবচনঃ رُسُل , রুসুল অর্থঃ বার্তাবাহক) বা মুরসাল (مُرْسَل, বহুবচনঃ مُرْسَلُون, মুরসালুন, অর্থঃ বার্তাবাহক)।
ইসলামি ঐতিহ্য মতে আল্লাহ প্রত্যেক জাতির নিকট নবিদেরকে প্রেরণ করেছেন। ইসলাম ধর্ম মতে একমাত্র মুহাম্মাদই সমগ্র মানবজাতির নিকট আল্লাহ্র বার্তা পৌছানোর জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন এবং অপর সকল নবিগণ নির্দিষ্ট এক বা একাধিক গোত্র বা জাতির জন্যে প্রেরিত হয়েছিলেন।
ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্মের বিপরীতে, ইসলামেনবি ও রাসুলের বর্ণনা দেওয়া হয় এভাবে যে, উভয়ই ঐশী প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত এবং রাসুলগণ (বার্তবাহক) গ্রন্থ আকারে একটি সম্প্রদায়ের জন্য ঐশী বার্তা প্রদান করেন, কিন্তু রাসুল নন এমন নবিগণ কোন গ্রন্থ বহন করেন না। ইসলামী বিশ্বাসমতে, নবিগণ আল্লাহ কর্তৃক পরকালে জান্নাত বা স্বর্গ লাভের নিশ্চয়তা প্রাপ্ত ব্যক্তি।
কয়েকজন নবি বা বার্তাবাহকের নাম কুরআনে উল্লেখিত আছে। মুসলিমগণ বিশ্বাস করে আদম হলেন প্রথম নবি, পক্ষান্তরে শেষ নবি হলেন মুহাম্মাদ, তাই তার উপাধি, নবিদের সিলমোহর। খ্রিষ্টধর্মের মতই ইসলামেও ইসার (যিশু) জন্ম কৌমারীয় জন্মের ফসল এবং তিনি নবি হিসাবে বিবেচিত হন কারণ আল্লাহর নিকট হতে তিনি ওহী (অদৃশ্য বা গোপন প্রত্যাদেশ) প্রাপ্ত। যিশু একজন বার্তাবাহক হিসেবেও বিবেচিত হন কারণ আল্লাহ তার নিকট ইঞ্জিল অবতীর্ণ করছিলেন।[১] অবশ্য, খ্রিষ্টধর্মের বিপরীতে, ইসলাম ধর্মে, তাকে আল্লাহর পুত্র দাবি করার বিরোধী করা হয় এবং যিশু একজন মানুষ হিসাবেই বিবেচিত হন।
তাৎপর্য
সকল রসূল (বার্তাবাহক) নবি কিন্তু সকল নবি রাসুল (বার্তাবাহক) নন। ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, রাসুল হলেন বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উভয় সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত, আর নবি হলেন বিশ্বাসীদের কাছে প্রেরিত, যাদের কাছে পূর্বে কোন রাসুল এসেছে।[২] এছাড়াও,আরেকটি ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে যে, নবীগণ প্রত্যাদেশ পান স্বপ্নের মাধ্যমে, এবং রাসূলগণ প্রত্যাদেশ পান ফেরেশতা বা স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের মাধ্যমে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সকল নবি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শব্দ ব্যবহার
কিছু মুসলিম আলেম মূল ইসলামী আরবী শব্দ "নবী" (نبي) ও "রাসূল" (رسول)-এর ব্যবহারকে অধিক উৎসাহিত করে থাকেন, যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, রাসূল শব্দটি কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই শব্দটি বলার সময় প্রতি হরফে দশ নেকি করে নবীর ক্ষেত্রপ ৩ হরফে মোট ৩০ নেকি ও রাসূলের ক্ষেত্রে ৪ হরফে মোট ৪০ নেকি সাওয়াব পাওয়া যাবে, যা পয়গম্বর বা অন্যান্য অ-কুরআনীয় প্রতিশব্দ উচ্চারণে পাওয়া যাবে না। কুরআনীয় শব্দ বলায় প্রতি হরফে দশ নেকির ক্ষেত্রে তারা ইসলামী নবী মুহাম্মদের উক্ত হাদীসটি পেশ করেন,
‘আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’
— [সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ২৯১০]
ধর্মীয় পাণ্ডুলিপিতে উল্লেখ
কুরআনে
যদিও অনেক নবির জীবনের ঘটনা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু পাঁচজন প্রধান নবির প্রথম চারজনের জীবনায়নের বিশেষ বর্ণনা ও অলঙ্কারপূর্ণ গুরুত্বের প্রতি তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মুহাম্মদের পূর্বের সকল ব্যক্তিত্বের মধ্যে, মুসা সবচেয়ে বেশি বার কোরআনে উল্লেখিত হয়েছেন। পঞ্চমজন অর্থাৎ মুহাম্মদের ক্ষেত্রে, কুরআন তাঁকে সরাসরি সম্বোধন করেছে, যদিও কুরআনে সরাসরি তাঁর নামের ব্যবহার খুব কম এবং এটি প্রায়ই তার অপ্রত্যাশিত সংকট উত্তরণের উপায় আলোচনা করেছে।
নিম্নপ্রদত্ত ছকে কুরআনে বর্ণিত নবিগণের তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রযোজ্য স্থানে নামের বাইবেলীয় পরিভাষাও দেওয়া হয়েছে। অধিকন্তু, কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়।
“
অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট রসুলগণকে প্রেরণ করেছি: তাদের মধ্যে অনেকের সম্বন্ধেই আমি তোমাদেরকে অবগত করেছি এবং আরও অনেকের সম্বন্ধে উল্লেখ করি নাই..” -কোরআন ৪০:৭৮
আদম ( আরবি: آدم) কুরআনে বর্ণিত ইসলাম ধর্মের প্রথম মানুষ, প্রথম নবি। ইসলামী বিশ্বাসমতে, আল্লাহ তার পাঁজর থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকেমানবজাতির মা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
কুরআনে আদম-এর নাম ১০টি সূরার ৫০ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল বাকারা,[৩], সুরাআলে ইমরান[৪], সূরা আল আরাফ, সূরা ইসরা, সূরা আল কাহফ এবং সূরা ত্বোয়া-হাতে তার নাম, গুনাবলী ও কার্যাবলী আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল হিজর ও সূরা ছোয়াদে শুধু গুণাবলী এবং সূরা আল ইমরান, সূরা আল মায়িদাহ এবং সূরা ইয়াসীনে আনুষঙ্গিক রুপে শুধু নামের উল্লেখ আছে।
ইদ্রিস ইসলামী ইতিহাস অনুসারে মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত দ্বিতীয় নবি। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুসারে তিনি ইসলামের প্রথম নবি আদম -এর পর স্রষ্টার নিকট হতে নবিত্ব লাভ করেন। তাঁর জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তিনি ইরাকেরবাবিলে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কারো মতে তিনি মিশরে জন্মগ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, বাইবেলপ উল্লেখিত 'হনোক' (Enoch) ব্যক্তিটি তিনিই।
ইসলামি ভাষ্যমতে ইসলামের নবি মুহাম্মাদমিরাজের রাতে চতুর্থ আসমানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ধারণা করা হয়, তিনিই সর্বপ্রথম কলম এবং কাপড় সেলাই করার বিদ্যা আবিষ্কার করেন। বলা হয়, জ্যোতির্বিজ্ঞান,অঙ্কশাস্ত্র এবং অস্ত্রের ব্যবহারও তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন।
নূহ (আরবি: نوح; হিব্রু ভাষায়: נוֹחַ or נֹחַ, আধুনিক হিব্রু: Nóaḥ, তিবেরিয়ান: Nōªḥ; Nūḥ; আর্মেনীয়: "Noe" অথবা նօի) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, একজন নবি ছিলেন। কুরআনে নূহ শিরোনামে একটি পূর্নাঙ্গ সূরা নাযিল হয়েছে যেখানে তার এবং সমকালীন বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলও তার সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
হুদ (আরবি: هود) একজন নবির নাম যার সম্পর্কে ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ কোরআন কিছু বর্ণনা রয়েছে। কোরআন-এর ১১তম সূরা হুদ তার নামে নির্দেশ করা হলেও এই সূরাটিতে তার সম্পর্কে সামান্য কিছু বর্ণনা রয়েছে।[৫] আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নূহের পরেই হূদ -এর জাতি আদ ছিল।
হূদ ছিলেন নূহেরই বংশধর। আদ জাতি ও ছামূদ জাতি ছিল নূহ-এর পরবর্তী বংশধর এবং নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধস্তন পুরুষ। ইরামপুত্র ‘আদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ঊলা’ বা প্রথম ‘আদ এবং অপর পুত্রের সন্তান ছামূদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ছানী বা দ্বিতীয় ‘আদ বলে খ্যাত।[৬] ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রই ইরাম-এর দু’টি শাখা। সেকারণ ‘ইরাম’ কথাটি ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এজন্য কুরআনে কোথাও ‘আদ ঊলা’ (নাজম ৫০) এবং কোথাও ‘ইরাম যাতিল ‘ইমাদ’ (ফজর ৭) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
আদ সম্প্রদায়ের ১৩টি পরিবার বা গোত্র ছিল। আম্মান থেকে শুরু করে হাযারামাউত ও ইয়েমেন পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল।[৭] উল্লেখ্য যে, নূহের প্লাবনের পরে এরাই সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা শুরু করে।
সালেহ (আরবি: صالح) কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবি। যাকে 'সামূদ জাতির' উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা নূহএর পুত্র সামের বংশধর এবং প্রাচীন আরব জাতিসমূহের একটি।
কুরআনে মোট আট জায়গায় সালেহ এর আলোচনা করা হয়েছে।আ'রাফঃ ৭৩, ৭৫, ৭৭; হূদঃঃ ৬১, ৬২, ৬৬, ৮৯; শুআ'রাঃ ১৪২। আর সালেহ এর সম্প্রদায় সামূদ জাতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে কুরআনের নয়টি সূরার মাঝে। যথাঃ আল আরাফ, হুদ, আল হিজর, আন নম্ল, আল মুরসালাত, আন-নাজম, আল কামার, আল হাক্কাহ, আশ-শাম্স।
ইব্রাহিম বা ইব্রাহীম (আরবি: ابراهيم, হিব্রু ভাষায়: אַבְרָהָם) তোরাহ অনুসারে ইব্রাহিম (ইংরেজি: Abraham) (আনুমানিক জন্ম: ১৯০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১৮৬১ খৃষ্ট পূর্বাব্দে ইবরাহীম পশ্চিম ইরাকের বছরার নিকটবর্তী ‘বাবেল’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ – মৃত্যু: ১৮১৪ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১৭১৬ খৃষ্ট পূর্বাব্দ), ইসলাম ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবি ও রাসুল।[৮][৯] পবিত্র কুরআনে তার নামে একটি সূরাও রয়েছে। পুরো কুরআনে অনেকবার তার নাম উল্লেখিত হয়েছে। ইসলাম ধর্মমতে, তিনি মুসলিম জাতির পিতা। ইসলাম ছাড়াও, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মেও ইব্রাহিম শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এজন্য ইবরাহিমকে সেমেটিক ধর্মগুলোর জনকও বলা হয়ে থাকে।[১০]। আল্লাহর প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাসের ছিলো [১১] ইসলামে তার কার্যক্রম কে স্মরণ করে ঈদুল আযহা পালিত হয়। ইব্রাহিম ও তার শিশুপুত্র ইসমাইল ইসলামে কুরবানি[১২] ও হজ্জের বিধান চালু করেন যা বর্তমানের মুসলিমদের দ্বারাও পালিত হয়।
তার পিতার নাম আযর। তার স্ত্রীর নাম সারাহ ও হাজেরা। তার চার পুত্র ছিলেন: ইসমাইল (ইংরেজি: Ishmael), ইসহাক (ইংরেজি: Isaac)। মতান্তরে, তার ৬-১২জন পুত্র ছিলেন। তবে, পুত্র হিসেবে কেবল ইসমাইল ও ইসহাকের বর্ণনাটিই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। অন্যদের ব্যাপারে ঐতিহাসিক উল্লেখের তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
লুত ইবনে হারুন ( আরবি: لوط, Lūṭ ) বাইবেল এবং কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহ প্রেরিত একজন নবি যাকে সদোম ও গোমোরাহ নামক শহরদ্বয়ের অধিবাসীদের নবি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।[১৩][১৪] তিনি ছিলেন নবি ইব্রাহীমের আপন ভাতিজা।[১৫] ইব্রাহীমের সঙ্গে তিনি কেনানে চলে আসেন। সেখানেই তার উপর নবুয়াতের দায়িত্ব অবতীর্ণ হয়। [১৬]পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবির মধ্যে ইসলামের একজন নবি যাকে সমকামিতায় লিপ্ত থাকা স্বীয় জাতির সতর্ককারী হিসেবে আল্লাহ তাআলা নিয়োজিত করেছিলেন। সমকামিতা ত্যাগ না করায় তারা আল্লাহর আযাবে সমূলে ধ্বংস হয়েছিলো।
ইসমাইল (আরবি: إسماعيل) কুরআন এবং বাইবেলে উল্লেখিত এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, তিনি একজন নবি, এবং তাঁর সম্মানার্থে তাঁর নামোচ্চারণের সাথে 'আলাইহিসসালাম' (সংক্ষেপে আ.) বা 'শান্তি বর্ষিত হোক' উচ্চারণ করা উচিত। তিনি ইব্রাহিম-এর সর্বপ্রথম সন্তান এবং ইব্রাহিমের স্ত্রী হাজেরার গর্ভে তার জন্ম। বাইবেলের বর্ণনামতে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[১৭] ইসলামী বর্ণনামতে, ইসমাঈলের পিতা ইব্রাহীমকে আল্লাহ বলেছিলেন, "তোমার সবচাইতে প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় কুরবাণী করো"; তখন তিনি একে একে দুম্বা, উট ইত্যাদি কুরবাণী করার পরও যখন দেখলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই একই বাণী আসছে, তখন তিনি তাঁর স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবাণী দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন, ঠিক তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে দেবদূতের (ফেরেশতার) মাধ্যমে ইব্রাহীমকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঘোষণা করলেন এবং পুত্র ইসমাইলের স্থলে দুম্বা শুইয়ে দিলেন, আর তখন থেকেই মুসলমানদের ওপর নির্দিষ্ট নিসাব অনুযায়ী বৎসরে একবার উট, দুম্বা, গরু ইত্যাদি কুরবাণী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
ইসহাক (আরবি: إسحاق or إسحٰق[note A]ʾIsḥāq) ছিলেন ইসলামের একজন নবি, আদি-পিতা এবং আল্লাহ প্রেরিত নবি।[১৮]ইহুদী, খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্মমতে ইব্রাহিম তার স্ত্রী সারার নিকট থেকে এই পুত্র লাভ করেন। ইসলাম ধর্মানুসারে ইসহাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত; কারণ তিনি ও তার বড় সৎভাই ইসমাইল তাদের পিতা ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর আল্লাহর বার্তা প্রচার করেন এবং ইসলামের উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখেন।তিনি মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন-এ মোট পনেরো বার বর্ণিত হয়েছেন; কখনও তার পিতা ইব্রাহিম-এর সাথে, আবার কখনও তার পুত্র ইয়াকুব-এর সাথে।[১৯]
ইয়াকুবইংরেজি ভাষায়: Jacob; হিব্রু ভাষায়: יַעֲקֹב ; আধুনিক: Yaʿakov; সেপ্তুয়াগিন্তগ্রিক ভাষায়: Ἰακώβ Iakōb; আরবি ভাষায়: يَعْقُوب), ইসরাঈল নামেও পরিচিত (হিব্রু ভাষায়: יִשְׂרָאֵל; আধুনিক: Yiśrāʾēl; সেপ্তুয়াগিন্তগ্রিক ভাষায়: Ἰσραήλ Israēl; আরবি ভাষায়: إِسْرَائِيل), হিব্রু বাইবেল এবং কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবি।[২০] তার গোত্রের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল। এই নামে কোরআনে একটি সূরা নাযিল হয়েছে। তার বার জন পুত্র-সন্তানের কথা কোরাআনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং হিব্রু বাইবেলে বার জন পুত্র-সন্তান ও কয়েক জন কন্যা সন্তানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মেয়েদের মধ্যে শুধু একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই সন্তান-সম্ভতি হয় এবং বংশ বিস্তার লাভ করে। হিব্রু বাইবেল অনুসারে তাদের নাম হলঃ রেউবেন, সিমোন, লেভি, জুদাহ, দান, নাফতালি, গাদ, আশের, ইসসাচার, জেবুলুন, মেয়ে দিনাহ, জোসেফ বা ইউসুফ, এবং বেনজামিন বা বেনিয়ামিন। তার উপাধি ছিল ইসরাঈল । তাই বারটি পরিবার সবাই বনী-ইসরাঈল নামে খ্যাত হয়। বারপুত্রের মধ্যে দশ জন জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াকুবের প্রথমা স্ত্রী "লাইয়্যা বিন্তে লাইয়্যানের" গর্ভে জন্মলাভ করে। তার মৃত্যুর পর ইয়াকুব লাইয়্যার ভগিনী "রাহীলকে" বিবাহ করেন। রাহীলের গর্ভে দু'পুত্র ইউসুফ ও বেনিয়ামিন জন্মগ্রহণ করেন। তাই ইউসুফ এর একমাত্র সহোদর ভাই ছিলেন বেনিয়ামিন এবং অবশিষ্ট দশ জন বৈমাত্রেয় ভাই ও কয়েক জন বোন। ইউসুফ জননী রাহীলও বেনিয়ামিনের জন্মের পর মৃত্যুমুখে পতিত হন।[২১]
ইউসুফ (ইংরেজি: Joseph অথবা Yosef, হিব্রু: יוֹסֵף, আধুনিক Yosef তিবেরিয়ান Yôsēp̄; আরবি: يوسف, Yusuf) ইহুদি, খ্রিস্ট, এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত একজন নবি। কোরআন এবং হিব্রু বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ইয়াকুবের বারো ছেলের ১১তম ছেলে।[২২] তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে জানতেন। ইউসুফ নামটি মুসলিম জাতি এবং মধ্যপ্রাচ্যর মধ্যে সাধারণ নামগুলোর একটি।হিব্রু বাইবেল এবং কোরআনের বিভিন্ন স্থানে ইউসুফের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু শুধু কোরআনের সূরা ইউসুফে তার ঘটনা সম্পূর্ণ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইউসুফের ঈর্ষান্বিত ভাইরা তাকে একটি কাফেলার দলের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করে দেয়, পরবর্তীতে তিনি মিশরের বাদশাহর পরে দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হন। তার বারপুত্রের মধ্যে প্রথম দশ জন জ্যেষ্টপুত্র, তার প্রথমা স্ত্রী "লাইয়্যা বিনতে লাইয়্যানের" গর্ভে জন্মলাভ করে। তাঁর মৃত্যুর পর ইয়াকুব "লাইয়্যার" বোন "রাহেলকে" বিবাহ করেন। রাহীলের গর্ভে দু-পুত্র ইউসুফ এবং বিন্যামীন জন্মলাভ করে। তার ছোট ছেলের জন্মের পরে তিনিও মৃত্যুমুখে পতিত হন।[২৩]হিব্রু বাইবেল অনুসারে তার বার ছেলের নাম হলোঃ রূবেণ, শিমোন, লেবি, [[যিহূদা]], দান, নপ্তালি, গাদ, আশের, ইসশাচার, জেবুলুন, ইউসুফ এবং বিন্যামীন বা বেনইয়ামিন।[২৪]
আইয়ুব (আরবি: أيّوب, Ayyūb) ইসলামে একজন নবি হিসেবে গণ্য এবং মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে তার উল্লেখ রয়েছে। ইবনে কাছীরের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নবি ইসহাক এর দুই জমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মধ্যে পুত্র ঈছ-এর প্রপৌত্র ছিলেন। আর তার স্ত্রী ছিলেন ইয়াকূব-পুত্র নবি ইউসুফ-এর পৌত্রী ‘লাইয়া’ বিনতে ইফরাঈম বিন ইউসুফ। বিপদে ধৈর্য ধারণ করায় এবং আল্লাহর পরীক্ষাকে হাসিমুখে বরণ করে নেওয়ায় আল্লাহ কোরআন শরীফে আইয়ূবকে ‘ধৈর্যশীল’ ও ‘সুন্দর বান্দা’ হিসাবে প্রশংসা করেছেন।
আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ বলেন, আইয়ূব একদিন নগ্নাবস্থায় গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর উপরে সোনার টিড্ডি পাখির দল এসে পড়ে। তখন আইয়ূব সেগুলিকে ধরে কাপড়ে ভরতে থাকেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে ডেকে বলেন, হে আইয়ূব! (أَلَمْ اَكُنْ أُغْنِيَنَّكَ عَمَّا تَرَى؟) আমি কি তোমাকে এসব থেকে মুখাপেক্ষীহীন করিনি? আইয়ূব বললেন, (بَلَى وَعِزَّتِكَ ولكن لاغِنَى بِى عَنْ بَرَكَتِكَ) তোমার ইজ্জতের কসম! অবশ্যই তুমি আমাকে তা দিয়েছ। কিন্তু তোমার বরকত থেকে আমি মুখাপেক্ষীহীন নই।
শুয়াইব (/ˈʃuːeɪb/), বা, শু'য়াইব, বা, শোয়াএব (আরবি: شعيب, শুআইব শব্দটি মূলত শা'ব শব্দের ক্ষুদ্রত্ববাচক শব্দ। এর মূল অর্থ মানব জাতির একটা প্রজন্ম যারা বিচ্ছিন্ন হবার পুনর্মিলিত হয়েছে, বড় একটি গোত্র) ছিলেন প্রাচীন মাদিয়ান অঞ্চলের নবি; যাকে বাইবেলে কখনও কখনও 'জ্যাঠোর' (Jethro) বলে চিহ্নিত করা হয় (যদিও ইসলামে তার কৃত অনেক কিছুই বাইবেলে উল্লেখিত কর্মানুরূপ নয়)। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনে তার নাম মোট ১১ বার উল্লেখ করা হয়েছে।[২৫] তিনি ইব্রাহিমের পরবর্তীকালে বলে ধারণা করা হয় এবং মুসলমানদের বিশ্বাস তাকে 'মাদিয়ান' নামক একটি সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল।[২৬] যারা একটি বড় গাছকে পূজা করত বলে 'বৃক্ষ-মানব' হিসাবে পরিচিত ছিল।[২৭]
মূসা' (ইংরেজি: Moses, হিব্রু: מֹשֶׁה, আধুনিকMošəতিবেরিয়ানMōšeh; আরবি: موسى, Mūsa; Ge'ez: ሙሴ Musse) ইহুদি, খ্রিস্ট, এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত রাসুল বা আল্লাহর বার্তাবাহক। তিনি মোজেস নামেও পরিচিত ছিলেন। কোরআনে মুসা নাম অন্য নবিদের তুলনায় বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় যে মুসা ১২০ বছর বেচে ছিলেন। মুসার সম্প্রদায়ের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল। বলা হয়, তার মুজিযাসমূহ বিগত অন্যান্য নবি-রসূলগণের তুলনায় সংখ্যায় বেশি, প্রকাশের বলিষ্ঠতার দিক দিয়েও অধিক।
হারুন ( আরবি: هارون, হারুন) যেখানে আল্লাহর নবি হিসাবে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে । কুরআনে বারবার হারুন এর প্রশংসায় আহ্বান করেছে একজন "মুমিন বান্দা" হিসাবে। হারুন ছিলেন মুসা ভাই আল্লাহই তাকে মুসার সাথে র্ধম প্রচারের জন্য মনোনিত করেছিলেন।
দাউদ বা ডেভিড (/ˈdeɪvɪd/; হিব্রু: דָּוִד, דָּוִיד, আধুনিক David টিবেরিয়ান Dāwîḏ; ISO 259-3 Dawid; আরবি: داوُود Dāwūd; Lang-syr Dawid; Strong's: Daveed) বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন ইসরাঈল রাজতন্ত্রের দ্বিতীয় রাজা এবং বাইবেলের নতুন নিয়ম অনুসারে গালাতীয়দের প্রতি পত্র ও লূকলিখিত সুসমাচার মতে যিশুর পুর্বপুরুষ ইয়াকুবের পুত্র, ইয়াহুদার অধস্তন বংশধর। তার পিতার নাম ঈসা। অনেক পুত্র সন্তানের মধ্যে দাউদ ছিলেন পিতার কনিষ্ঠ সন্তান।
সুলায়মান (হিব্রু ভাষায়: שְׁלֹמֹה, আধুনিক হিব্রু: Šəlomo or Šlomo, আরবি ভাষায়: سليمان সুলায়মান) কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবি এবং প্রতাবশালী বাদশাহ্। হিব্রু বাইবেলের অনুসারে, তিনি ছিলেন ইসরায়েলের প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজ়া। তার জন্ম আনুমানিক ১০১১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এবং মৃত্যু আনুমানিক ৯৩১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ; এবং তার রাজত্ব কাল ছিল প্রায় ৯৭০ থেকে ৯৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী। তিনি ছিলেন দাউদের পুত্র। কথিত আছে, সুলায়মান জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহ তাআলার মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুনর্নির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদ।
ইলিয়াস- (হিব্রু: אֱלִיָּהוּ, Eliyahu, যার অর্থ "আমার আল্লাহ সদাপ্রভুর হয়") আরবি: إيلياس إليا, ইলিয়াস Ilya) একজন নবি এবং ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যে একটি আশ্চর্যের-কর্মী ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ইলিয়াস তার প্রচার একটি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বর্ণনা করতেন যেখানে কুরআন, উল্লেখ করা হয়. কুরআন ইলিয়াস আল্লাহর উপাসনা করতে আসা এবং বাল, এলাকার প্রাথমিক প্রতিমা পূজা ত্যাগ করতে তার লোকদের বলেন যে বর্ণনা করেন. কুরআন বলে:
""নিশ্চয়ই ইলিয়াস প্রেরিতদের এক. যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: "আপনি আল্লাহর ভয় করবে না?" তোমরা Ba'al উপর কল ও নির্মাতাগণ, আল্লাহর, আপনার পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনকর্তা এর শ্রেষ্ঠ ছেড়ে দিবেন ""?[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আল-ইয়াসা (/ ᵻlaɪʃə / [1] হিব্রু: אֱלִישָׁע, আধুনিক আল ইয়াসা Tiberian'Ĕlîšā'; "আমার আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা উদ্ধারকর্তা", গ্রিক: Ἐλισσαῖος, Elissaîos বা Ἐλισαιέ, Elisaié, আরবি: اليسع al-yasa') একজন নবি যার জীবন হিব্রু বাইবেলে নথিভুক্ত করা হয়, তিনি গ্রন্থ, নিউ টেস্টামেন্ট, কুরআন, Ginza RBA এবং বাহাই লেখায় উল্লেখ করা হয়.তার নামটি সাধারণত আল-ইয়াসা যেমন ইংরেজিতে হিব্রু, ইলীশায়ের মাধ্যমে গ্রিক ও ল্যাটিন, বা Alyasa মাধ্যমে আরবি, Elyesa মাধ্যমে তুর্কি মাধ্যমে বর্ণান্তরিত হয়. তিনি মাহেরকে শিষ্য ছিলেন এবং, পরে ইলিয়াস ঘূর্ণিবায়ু তুলে নেওয়া হল, আল-ইয়াসা ভাব্বাদীদের নেতা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল.[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পবিত্র কুরআনে এই নবি সম্পর্কে সূরা আন‘আম ৮৬ ও সূরা ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে অন্য নবিগণের নামের সাথে। সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াত পর্যন্ত ইলিয়াস ও আল-ইয়াসা‘ সহ ১৭ জন নবির নামের শেষদিকে বলা হয়েছে-
وَإِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوْطاً وَكُلاًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ- (الأنعام ৮৬)-
‘ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘, ইউনুস, লূত্ব তাদের প্রত্যেককেই আমরা বিশ্বের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (আন‘আম ৬/৮৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ- (ص ৪৮)- ‘আর তুমি বর্ণনা কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘ ও যুল-কিফলের কথা। তারা সকলেই ছিল শ্রেষ্ঠগণের অন্তর্ভুক্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৪৮)।
তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইলিয়াসের চাচাতো ভাই এবং তার নায়েব বা প্রতিনিধি ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ইলিয়াস সুলায়মান পরবর্তী পথভ্রষ্ট বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তার পরে আল-ইয়াসা‘ নবি হন এবং তিনি ইলিয়াসের শরী‘আত অনুযায়ী ফিলিস্তীন অঞ্চলে জনগণকে পরিচালিত করেন ও তাওহীদের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। বাইবেলে তাঁর বিস্তারিত অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। সেখানে তাঁর নাম ‘ইলিশা ইবনে সাকিত’ বলে উল্লেখিত হয়েছে।
যুল-কিফ'ল- যুল-Kifl, বা Zul-Kifl ( আরবি: ذو الكفل; একটি ভাঁজ অধিকারী) (. গ 600 খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) একটি ইসলামী নবি বিভিন্ন হিব্রু বাইবেলের ভাববাদীরা, সবচেয়ে বেশি যিহিষ্কেল সঙ্গে পরিচয় হয়েছে. এটা বিশ্বাস করা হয় যে, তিনি প্রায় 75 বছর ধরে বসবাস করতেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এবং তিনি অধুনা ইরাক কি প্রচার. যুল-Kifl, উচ্চ মর্যাদা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয় এবং গুড এর "কোম্পানির একজন মানুষ হিসেবে কুরআনে লিপিবদ্ধ করা হয়. যদিও অনেক না অন্য ঐতিহাসিক সূত্র থেকে যুল Kifl পরিচিত হয় যেমন ইবনে ইসহাক ও ইবনে কাসীর হিসেবে শাস্ত্রীয় মন্তব্যকারীদের, থেকে সব লেখা, একটি ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ, সাত্ত্বিক মানুষ যারা প্রতিদিন প্রার্থনা ও উপাসনার মধ্যে বিশ্বস্ত হিসেবে যুল Kifl তো দূরের কথা.[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পবিত্র কুরআনে কেবল সূরা আম্বিয়া ৮৫-৮৬ ও ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে যুল-কিফলের নাম এসেছে। তিনি আল-ইয়াসা‘-এর পরে নবি হন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত দেন।
আল্লাহ বলেন,
وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ- وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِيْ رَحْمَتِنَا إِنَّهُمْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ- (الأنبياء ৮৫-৮৬)-
‘আর তুমি স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল-কিফলের কথা। তারা প্রত্যেকেই ছিল ছবরকারী’। ‘আমরা তাদেরকে আমাদের রহমতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তারা ছিল সৎকর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৫-৮৬)।
ইউনুস- (হিব্রু ভাষায়: יוֹנָה, আধুনিক হিব্রু: Yona, তিবেরিয়ান: jon'ɔh, "dove"; আরবি:يونس, ইউনুস আথবা يونان, ইউনান; লাতিন: Ionas) কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবি। যাকে 'নীনাওয়া' বাসীদেরকে হিদায়াতের জন্য আল্লাহ প্রেরণ করেন। ইউনূস (আ:)এর বংশ সম্পর্কে শুধু এটুকুই জানা যায় যে, তার পিতার নাম ছিল 'মাত্তা'। বুখারী শরীফের একটি হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে এ কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। বাইবেলে ইউনূস (আ:)এর নাম 'ইউনাহ' এবং তার পিতার নাম 'আমতা' বলা হয়েছে। তবে ইউনূস ইবনে মাত্তাহ এবং ইউনাহ ইবনে আমতার মাঝে ব্যক্তি হিসেবে কোন পার্থক্য নেই। এটা আরবি ও হিব্রু ভাষার উচ্চারণের পার্থক্য।
কুরআনে বলা হয়েছে,
وَإِنَّ يُونُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ- إِذْ أَبَقَ إِلَى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ- فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِيْنَ- فَالْتَقَمَهُ الْحُوْتُ وَهُوَ مُلِيْمٌ- (الصافات ১৩৯-১৪২)-
‘আর ইউনুস ছিল নবিগণের একজন’। ‘যখন সে পালিয়ে যাত্রী বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছল’। ‘অতঃপর লটারীতে সে অকৃতকার্য হ’ল’। ‘অতঃপর একটি মাছ তাকে গিলে ফেলল। এমতাবস্থায় সে ছিল নিজেকে ধিক্কার দানকারী’ (ছাফফাত ৩৭/১৩৯-১৪২)।
যাকারিয়া- (আরবি: زكريا, যাকারিয়া; অর্থ: আল্লাহর স্মরণ করেছেন ইসলামেও একজন নবি, এবং কোরানে উল্লেখ করা হয়. মুসলিমরা এও বিশ্বাস করে তিনি মরিয়মের অভিভাবক এবং ইয়াহিয়ার বাবা ছিলেন। কিছু মুসলমানদের বিশ্বাস জাকারিয়া শহীদ হয়েছিলেন। একটি পুরানো ঐতিহ্য বর্ণনা করেন যে, সখরিয়কে অর্ধেক করাত দিয়ে কাটা হয়েছিল,একটি মৃত্যুর যা বর্ণনার অনুরূপ যে নবিদের জীবনে যিশাইয় আরোপিত মধ্যে. জাকারিয়া একজন ধার্মিক যাজক এবং আল্লাহ যার প্রধান কেন্দ্র জেরুশালেমে প্রার্থনা ঘরে ছিলেন নবি.[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যাকারিয়া সম্পর্কে কুরআনে কেবল এতটুকু বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মারিয়ামের লালন-পালনকারী ছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানে যা বলেন, তার সার-সংক্ষেপ এই যে, ইমরানের স্ত্রী মানত করেছিলেন যে, আমার গর্ভের সন্তানকে আমি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দিলাম। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, তার একটি পুত্র সন্তান হবে এবং তাকে তিনি আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে নিয়োগ করবেন। কিন্তু পুত্রের স্থলে কন্যা সন্তান অর্থাৎ মারিয়াম জন্মগ্রহণ করলে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, لَيْسَ الذَّكَرُ كَالأُنْثَى ‘এই কন্যার মত কোন পুত্রই নেই’ (আলে-ইমরান ৩/৩৬)।
ইয়াহিয়া- (হিব্রু: יוחנן המטביל, Yo-hanan ha-matbil; আরবি: يحيى Yahyá এবং يوحنا Yūhannā; আর্মেনীয়: ܝܘܚܢܢ Yokhanan)[১] কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবি। সূরা মারইয়ামে ইয়াহিয়ার কথা বলা হয়েছে। যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া সুলায়মান পরবর্তী দুই নবি, যারা পরস্পরের পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবি ঈসার আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসার ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া সম্পর্কে ৪টি সূরার ২২টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সূরা আন‘আমে কেবল ১৮জন নবির নামের তালিকায় তাদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। বাকী অন্য সূরাগুলিতে খুবই সংক্ষেপে কেবল ইয়াহ্ইয়ার জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।
ঈসা ইবনে মারিয়াম ( আরবি: عيسى, ʿĪsā ), যিনি নিউ টেস্টামেন্টে যিশু নামে পরিচিত, ইসলাম ধর্মে একজন নবি ও রাসুল এবং মসীহ হিসেবে স্বীকৃত।
খ্রিস্টধর্মের মত ইসলাম ধর্মেও তিনি সম্মানিত একজন নবি; তবে ইসলাম ধর্মে তার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে স্বীকার করা হয় না। বলা হয় যে, ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য যখন বাহক তাকে নিতে ঘরে প্রবেশ করে তখনই আল্লাহ তাকে উপরে তুলে নেন এবং বাহকের চেহারাকে ঈসা-এর চেহারার অনুরুপ করে দেন; ফলে ঈসা মনে করে ঐ বাহককে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। ইসলাম বলে যে, ঈসা বর্তমানে জীবিত অবস্থায় আসমানে অবস্থান করছেন। কেয়ামতের পূর্বে মসীহ দাজ্জালের আবির্ভাবের পর ঈসা নবি মুহাম্মদ-এর একজন উম্মত বা অনুসারী হিসেবে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এরপর সমস্ত পৃথিবীর শাসনভার গ্রহণ করবেন এবং পৃথিবীতে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। সবশেষে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ করবেন এবং মুহাম্মদ-এর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে; যে কারণে মদীনায় নবি মুহাম্মদ-এর কবরের পাশে তাকে কবর দেয়ার জায়গা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল যা এখনও বহাল আছে।
মুহাম্মাদ- (২৯ আগস্ট ৫৭০ খ্রি: - ৮ জুন ৬৩২ খ্রি: ;আরবি: محمد, মুহাম্মাদ এবং মুসলিমদের কাছে মুহাম্মদ (সাঃ) নামেও পরিচিত; তুর্কি : মুহাম্মেদ) (সাঃ), পূর্ণ নাম : আবু আল-কাশিম মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম আরবি: ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم হলেন ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ বা ইসলামে ঈশ্বর কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবি। (আরবি: النبي আন-নাবিয়্যু) তথা "বার্তাবাহক" (আরবি : الرسول আর-রাসুল) যার উপর ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা। তিনি চেয়েছিলেন সব মানুষ পৃথিবীতে শুধুমাত্র এক আল্লাহর উপাসনা করবে। তিনি এই বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন।
↑Noegel, Scott B.; Wheeler, Brannon M. (২০১০)। Lot। দ্য এ টু জেড অব প্রেফেট'স ইন ইসলাম অ্যান্ড জুদাইজম। Rowman & Littlefield Publishers, Incorporated। পৃষ্ঠা 118–126। আইএসবিএন0810876035। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৩।
নোট: মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে মানবজাতিকে দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য আল্লাহ নবীদেরকে পাঠিয়েছেন। কুরআনে বেশি উল্লিখিত ইসলামের পয়গম্বরদের নাম উপরে দেওয়া হল।