মুসলিম আমিরদের যে ধরনের ও যে আকারের বৃহৎ ইময়ারতের প্রয়োজন ছিল, সেগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে পূর্বে নির্মিত ইমারতগুলো থেকে আলাদা। তারা যেসব ইমারত ভারতীয় উপমহাদেশে নির্মাণ করেছিলেন, তন্মধ্যে প্রধান ছিল মসজিদ ও সমাধিসৌধ। মুসলমান শাসকদের দ্বারা নির্মিত ইমারতের বহির্মুখের ওপরে প্রায়শই বড় গম্বুজের দেখা মেলে। এছাড়া, এসব ইমারতে তোরণের দেখা যায় খিলানের ব্যবহার। গম্বুজ ও খিলানের ব্যবহার ভারতীয় স্থাপত্যরীতি ও হিন্দু মন্দিরে কদাচিৎ দেখা যায়। মুসলমান শাসকদের নির্মিত মসজিদ ও সমাধিসৌধে একটি বিশাল ফাঁকা জায়গাত উপরে বৃহৎ গম্বুজের দেখা মেলে। এসব ইমারতে মানবমূর্তির চিত্রায়ন বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো হিন্দুমন্দিরের আবশ্যকীয় অঙ্গ।[২]
ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যরীতিকে শুরুর দিকে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যরীতিকে নিজেদের মত করে আপন করতে হয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের ইসলামি স্থাপত্যরীতিতে ইটের ব্যবহার দেখা গেলেও, ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যরীতিতে ইটের পরবর্তী পাথরকে ইমারতের মূল উপাধান হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায় কেননা, ভারতীয় কারিগররা পাথর দিয়ে উন্নত মানেত ইমারত নির্মাত করতে জানতেন।[৩]দিল্লি কে কেন্দ্র করে ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যরীতি গড়ে উঠলেও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের মুসলমান শাসকদের হাতে এর নানা ধরনের আঞ্চলিক স্থাপত্যরীতি গড়ে ওঠে। মোগল আমলে ইন্দো ইসলামি স্থাপত্যরীতির প্রভাব দেখা যায় হিন্দুদের মাঝেও। তারা মন্দির নির্মাণে গম্বুজ ও খিলানের ব্যবহার শুরু করে। বিশেষত, তারা তাদের বসবাসের জন্য ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে গম্বুজ ও খিলান রাখা শুরু করে।
এছাড়াও, আধুনিক ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশি স্থাপত্যশৈলীতে প্রভাব দেখা যায় ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যের। এছাড়াও, ব্রিটিশদের হাতে ভারতবর্ষে যাত্রা শুরু হওয়া ইন্দো-গোথিক স্থাপত্যরীতির এর প্রভাভ বিদ্যমান। ইন্দো-গোথিক স্থাপত্যরীতির ধর্মীয় ও সাধারণ, সব ধরনের ইমারতেই ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যে ভারতীয়, ইসলামি, ইরানি, মধ্য এশীয় ও অটোমান তুর্কি স্থাপত্যের প্রভাব বিদ্যমান।
দিল্লি সালতানাত যুগের স্থাপত্য
দক্ষিণ এশিয়ায়ইসলাম আগমনের শুরুর দিককার স্থাপনাগুলোর মাঝে যেসব স্থাপনা টিকে আছে তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হল সিন্ধুর বানভোরের এক ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ। ৭২৭ সালে নির্মিত এই মসজিদটির বর্তমান অবস্থা থেকে শুধুমাত্র নকসা আঁচ করা যায়।[৪]
মস্জিদের প্ল্যানিং একটি আয়তক্ষেত্র। চিরাচরিত পদ্ধতিতে তার পশ্চিমে মূল উপাসনাগৃহ; পূর্বে একটি গম্বুজের ভিতর দিয়ে রবেশদ্বার।[৫] তিন পাশে বারান্দা—সারি-সারি স্তম্ভের উপর সমতল ছাদ। ইস্লামী স্থাপত্যে যার নাম লিয়ান।[৫]
পরবর্তী সুলতান ইল্তুৎমিস্ এই মস্জিদটি সম্প্রসারিত করেন। তারও পরবর্তী যুগে, বস্তুত পরবর্তী খিল্জী বংশের আলাউদ্দীন খিল্জীর আমলে এই মস্জিদটি আরও বড় করে সম্প্রসারিত করা হয়।[৫]
এই কুওওতুল-ইস্লাম হিন্দু ও মুস্লীম একটি অদ্ভুত সংমিশ্রণ হয়েছে। আকবর পরিকল্পিত ফতেপুর-সিক্রিতে হিন্দু-মুস্লীম স্থাপত্যের সজ্ঞানকৃত সুষ্ঠু মিলন ঘটেছে, প্রীতির বন্ধনে, দেওয়া-নেওয়ার ছন্দে; এখানে তা নয়। এখানকার সংমিশ্রণ বিজিত ও বিজয়ীর বাধ্যতামূলক সহাবস্থান। কারণ কুৎবউদ্দীন কিল্লা রায় পিথোয়ায় সাতাশটি হিন্দু ও জৈন মন্দির ধ্বংস করেন।[৬] সেই মন্দিরের স্তম্ভগুলি সংগ্রহ করে এই মস্জিদের লিয়ানের অলিন্দ নির্মিত হয়।[৫] লিয়ানের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে দুটি স্তম্ভকে মাথায়-মাথায় বসানো হয়েছে। মস্জিদ চত্বরের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় আবার ঐ স্তম্ভগুলিকে একরদ্দায় সাজিয়ে দ্বিতল মোকাম বানিয়ে ছন্দবৈচিত্র ঘটানো হয়েছে।[৫] তাই এ মস্জিদের স্তম্ভে হিন্দু-ভাস্কর্যের ছাপ—ফুল-লতা-পাতা, পদ্ম-শঙ্খ-ঘণ্টা-চক্র সবই হিন্দু-শৈলীর কারুকার্য। এমনকি খুঁজে পাওয়া যায় চতুর্ভুজ দেবতার মূর্তি।[৫]
স্তম্ভ শোভিত লিয়ান নয়, এ মস্জিদের সবচেয়ে দর্শনীয় বস্তুটি উপসনা-কক্ষের সম্মুখস্থ খিলান-সমন্বিত প্রাচীর—ইস্লামী স্থাপত্যে যার অভিধা: মাখ্সুরাহ্।[৫] কুৎবউদ্দীন নির্মিত আদিম মস্জিদে আছে পাঁচটি খিলান, কেন্দ্রস্থটি উচ্চতর, দু’পাশে দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট। ইল্তুৎমিসের সম্প্রসারিত অংশে এক-একদিকে তিন-খিলান-ওয়ালা দুটি মাখ্সুরাহ্ এবং আলাউদ্দীন খিল্জী শুধুমাত্র উত্তরদিকে মস্জিদ সম্প্রসারণকালে নির্মাণ করেন পরপর নয়টি খিলান।[৫] এর ভিতর আলাউদ্দীন-নির্মিত খিলানের চিহ্নমাত্র নেই, ইল্তুৎমিস্-মাখ্সুরাহ্-র সামান্য ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়; অথচ সর্বপ্রথম-আদিম পাঁচটি তিনটি এখনও অটুট।[৫]
আদিম মাখ্সুরাহ্-র দৈর্ঘ্য ৩৩ মিটার, গভীরতা ২.৫৬ মিটার এবং ১৫.২৫ উচ্চতা মিটার। কেন্দ্রীয় খিলানের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার এবং তার স্প্যান ৬.৬ মিটার।[৫] “স্থানীয় স্থপতিরা পশ্চিম-এশীয় আর্কুয়েট (arcuate) প্রথার সঙ্গে পরিচিত না-থাকার ফলে এই খিলানগুলি নির্মাণে ভারত প্রচলিত ট্রাবিয়েট (trabeate) প্রথার প্রয়োগ করেন।”[৭]
ভারতীয় স্থপতি ‘আর্চ’ বা ‘প্রকৃত-খিলান’ বানাতে জানতো না। তারা কার্বেলিঙ করতে জানতো।[৫] কার্বেলিঙ করতে হলে প্রতিটি রদ্দায় পাথরখানাকে সামনের দিকে সামান্য একটু ঝুঁকিয়ে বসাতে হবে। যাতে প্রতিটি রদ্দায়—অর্থাৎ জমির সমান্তরাল ‘লেয়ার’-এ, ফাঁকটা অল্প একটু করে কমে আসে।[৫] এ পদ্ধতিতে ভারসাম্য তখনই রক্ষিত হবে যখন ফোকরের বিপরীত-প্রান্তে গাঁথনির ওজন চাপবে, ঝুঁকে থাকা অংশটাকে পিছন দিক থেকে চেপে ধরে রাখবে।[৫]
প্রকৃত-খিলান বা আর্চ কিন্তু এভাবে গাঁথা হয় না। সেখানে ইট বা প্রস্তরখণ্ডগুলিকে বিশেষভাবে ছেঁটে নিয়ে কেন্দ্রবিন্দুর দিকে মুখ করে বসানো হয়।[৫] এগুলিকে বলে ভসৌর।[৫] লক্ষণীয়, তার নীচের দিকটা সরু, উপর দিকটা মোটা—অনেকটা কাঠের গজাল বা চৌকো ফুলগাছের টবের মতো। আর প্রতিটি ভসৌরের পাশের রেখাগুলি কেন্দ্রবিন্দুর দিকে সম্প্রসারিত করলে তা ঐ কেন্দ্রবিন্দুতে গিয়ে মিশবে।[৫] খিলানের কেন্দ্রস্থলে সর্বোচ্চ ভসৌরটির নাম কি-স্টোন।[৫] ভসৌরগুলি এমন কায়দায় সাজানো হয় যাতে কেন্দ্রস্থ কি-স্টোন তার দু’পাশের ভসৌরের স্কন্ধে পার্শ্বচাপে দেহভার ন্যস্ত করে। ভসৌরগুলি পার্শ্ববর্তিনীদের চাপ দিতে দিতে ওজনটা দু’পাশের খাম্বিরায় (pier) পাচার করে।[৫]
মদিনায় স্বয়ং পয়গম্বর যে মস্জিদটি নির্মাণ করিয়েছিলেন তাতে খলিফা ওসমান তৈরি করিয়েছিলেন একটি মাখ্সুরাহ্; জেরুজালেমের ওমরের মসজিদেও (ডম-অফ-দ্য-রক) আছে মাখ্সুরাহ্।[৫] কুৎবউদ্দীন আইবক ঠিক তেমন জিনিস বানাতে চাইলেন; যার খিলানের বদনখানা হবে অর্ধচন্দ্রাকৃতি নয়, সূচিমুখ অশ্বক্ষুরাকৃতি।[৫]
১২০৬ সালে কুতুবুদ্দিন আইবক দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন ও তিনি ভারতীয় স্থাপত্যকে মধ্য এশীয় স্থাপত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।[৮] দিল্লির কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহের নির্মাণ কাজ ১১৯৯ সালে মুহাম্মদ ঘুরির শাসনামলে শুরু হয়েছিল। এরপর এটির নির্মাণকাজ চলে কুতুবুদ্দিন আইবকসহ অন্যান্য সুলতানদের আমলে। কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহের ধ্বংসপ্রাপ্ত কুয়্যাত-উল-ইসলাম মসজিদ হল এর প্রথম ইমারত। এটি নির্মাণে প্রথম দিককার ইসলামি ইমারতগুলোর মত ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু ও জৈন মন্দিরের স্তম্ভ ব্যবহার করা করেছিল। ঐ অঞ্চলে অবস্থিত একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দিরের কাঠামোর উপরে নির্মিত হয়েছিল। ইরানি স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত এই ইমারতটির খিলানগুলো ছিল ভারতীয় স্থাপত্যরীতির।
[৯]
এর পাশে কুতুব মিনার নামের এক মিনার অবস্থিত, যেটি চারটি স্তর বিশিষ্ট ও ৭৩ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট ইমারত (পঞ্চম স্তর পরে যোগ করা হয়েছে)। এর কাছাকাছি উচ্চতা বিশিষ্ট ইমারতটি হল আফগানিস্তানের ৬২ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ইটনির্মিত জাম মিনার, যেটি নির্মাণকাজ সম্ভবত কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ শুরুর এক যুগ পূর্বে শুরু হয়েছে।[টীকা ১] ইমারত দুইটির মেঝে সাজানো জ্যামিতিক আকার ও লিপি দিয়ে সাজানো। প্রতিটি স্তরে থাকা স্তম্ভগুলো বেলকনির নিকটে একটার সাথে একটা সংযুক্ত।[১০] ইলতুতমিশের সমাধিসৌধ ১২৩৬ সালে কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহের যুক্ত হয়। এতে গম্বুজ, স্কুইঞ্চ নির্মাণ করা হলেও স্কুইঞ্চ এখন আর নেই। সমাধিসৌধের জটিল বক্রতাকে ‘কৌণিক রূঢ়তা’ বলে অভিহিত করা হয়। এই ধরনের বক্রতা সচরাচর চোখে পড়ে না।[১১] পরের দুই শতাব্দীতে কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহ কিছু উপাদান যোগ করা হয়।
অন্যান্য
প্রথম দিককার আরেকটি মসজিদ হল আড়াই দিন কা ঝোঁপড়া। রাজস্থানেরআজমিরে অবস্থিত মসজিদটির নির্মাণকাজ ১১৯০ এর দশকে শুরু হয়েছিল। এই ইমারতে একই রকম খিলান ও গম্বুজের দেখা মেলে। ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দিরের স্তম্ভ ব্যবহার করার দরুন ইমারতটি অধিকতর উচ্চতা লাভ করেছিল। দুইটি মসজিদেই আলাদা বৃহৎ প্রবেশদ্বার বিদ্যমান। একটি প্রবেশদ্বারের সামনে খিলান ব্যবহৃত হয়েছে। খুব সম্ভবত নির্মাণের দুই যুগ পর ইলতুতমিশের শাসনামলে খিলান যোগ করা হয়েছে। ইমারতটিতে কেন্দ্রীয় খিলান বৃহত্তম, যা আইওয়ানের পরিবর্তিত রূপ। আজমির সামনের দিকের ছোট খিলানকে পরীক্ষামূলকভাবে উপরের দিকে নেওয়া হয়েছে, যা পূর্বে ভারতে দেখা যায় নি।[১২]
১৩০০ সালের দিকে আসল গম্বুজ ও খিলানের সাহায্যে ভুস্যার নির্মাণ করা হয়; ধ্বংসপ্রাপ্ত বালবানের সমাধিসৌধ সম্ভবত এর সবচেয়ে পুরাতন নজির।[১৩]কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহেরআলাই দরওয়াজা (১৩১১ এ নির্মিত) নির্মাণে সেই আমলের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। ঐ ইমারতে খুব সরু দেয়াল ও অগভীর গম্বুজ ব্যবহৃত হয়েছে, যা খুব নিকটবর্তী না হলে দেখা সায় না। নির্মাণে রঙের ব্যবহার, ইরান ও মধ্য এশিয়ায় ব্যবহৃত পলিক্রোম টাইলস লাল বেলেপাথর ও সাদা মর্মরের ব্যবহার ইন্দো ইসলামি স্থাপত্যের সাধারণ ঘটনা। খিলানিগুলো তাদের উৎপত্তিস্থলে প্রায় একসাথে মিশে যায়, যা দেখতে ঘোড়ার খুরের মত লাগে। এছাড়া, এর অন্তর্ভাগ খাঁজবিশিষ্ট নয়। এখানে প্রচলিত ‘ব্যুহমুখ’ অভিক্ষেপ ব্যবহৃত হয়েছে, যা সম্ভবত পদ্মকুঁড়ির প্রতিচ্ছবি ফোটাতে চেয়েছে। সম্মুখভাগে পাথরের সাহায্যে জালি নির্মাণ করা হয়েছে এখানে, যা ইসলামি স্থাপত্যে প্রথমবারের মত ব্যবহৃত হলেও মন্দিরে বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে।[১৪]
মেহেরৌলীর বাওলী
ইলতুৎমিসের জমানায় নির্মিত।[৫] ঠিক কুৎব-চত্বরে নয়, আধ কিলোমিটার দক্ষিণে, মেহেরৌলীতে।[৫] ‘বাওলী’ অর্থে জলাশয়, কূপ জাতীয়।[৫] পাঁচটি ধাপে নেমে গেছে সোপানশ্রেণী। কূপটি গোলাকার।[৫] এখানে জলে গন্ধকের গন্ধ পাওয়া যায় বলে এর নাম ‘গন্ধক-কি-বাওলী’।[৫] কূপটি যথেষ্ট গভীর।[৫]
সুলতান ঘারী
কুৎব মিনারের আট কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মেহেরৌলী-পালাম রোডের ধারে হতভাগ্য শাহ্জাদা নাসিরউদ্দীনের অনাড়ম্বর কবর।[৫] সম্রাট ইলতুৎমিস-নির্মিত।[৫] এর দক্ষিণে, একই চত্বরের সমাধিস্থ আছেন সুলতান ইলতুৎমিসের আরও দুটি অযোগ্যপুত্র—রুক্ন্উদ্দীন ফিরোজশাহ্ এবং মইজ্উদ্দীন বহ্রামশাহ্।[৫] সুলতান ঘারী মক্বারা নানান কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ—ইতিহাস ও স্থপতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রথম কথা, কচ্ছ-অঞ্চলের দু’-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে এইটিই ভারত-ভূখণ্ডে প্রাচীনতম মুস্লীম কবর, রাজবংশীয় কোন মরদেহের উপর। পাকিস্তান হিসাবে কচ্ছ, মুলতান ও লাহোরের কথা বাদ দিলে বর্তমান ভারতে এটিই প্রাচীনতম।[৫]
কুওওতুল-ইসলাম মস্জিদের মতো এর উপাদানও ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দির থেকে সংগৃহীত।[৫] স্থপতিকার এর প্ল্যানিং-এ দেখিয়েছেন অশেষ কৃতিত্ব। সংলগ্ন ভূখণ্ড থেকে তিন মিটার উঁচু ভিতের উপর একটি বর্গক্ষেত্র, তার চারপ্রান্তে চারটি অনাড়ম্বর গম্বুজ সমাধিসৌধকে দৃঢ়তা দান করেছে। পশ্চিমপ্রান্তে এক সারি স্তম্ভসমন্বিত লিয়ান; কেন্দ্রেস্থলে গম্বুজ, যার পশ্চিমে ইবান; পূর্বপ্রান্তেও একটি অলিন্দ। কেন্দ্রস্থলে অষ্টভুজবিশিষ্ট মূল সমাধিকক্ষ। সেখানে যাবার পথ সিঁড়ি বেয়ে, ভূগর্ভে।[৫] আট-কোণা কেন্দ্রীয় কক্ষটির উপরে প্রত্যাশিত গম্বুজটি কিন্তু অনুপস্থিত।[৫]
তুঘলক স্থাপত্য
শাহ রুকন-এ-আলমের সমাধিসৌধ (১৩২০-১৩২৪ সময়কালে নির্মিত) আটকোণা বিশিষ্ট ইটনির্মিত একটি সমাধিসৌধ। এটির বহুবর্ণী স্থাপত্যের সাথে ইরানি ও আফগান স্থাপত্যের মিল আছে। ইমারতটির অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয়েছে কাঠ। এটি তুঘলক শাসনামলের (১৩২০-১৪১৩) প্রথম দিককার প্রধান স্থাপনা। এটি নির্মিত হয়েছিল তুঘলক সাম্রাজ্যের প্রসারণকালীন সময়ে। তুঘলক সাম্রাজ্য পরবর্তীতে সংকুচিত হতে থাকে। এই ইমারতাটি নির্মিত হয়েছে এক সুফি সাধকের জন্য, সুলতানের জন্য নয়। অন্যান্য তুঘলক সমাধিসৌধের মত এটি কম জাঁকজমকপূর্ণ। তুঘলক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের (মৃত্যু ১৩২৫) সমাধিসৌধ একেবারে জাঁকজমকহীন। সমাধিসৌধটির উপরে হিন্দু মন্দিরগুলোর মত ছোট আমালাকা ছাড়াও একটি কলসাকৃতির জিনিস বিদ্যমান। পূর্বে বর্ণিত ইমারতগুলোর চেয়ে এই আমলের ইমারত ব্যতিক্রমধর্মী। এই ইমারতগুলোতে ধর্মীয় উক্তির অনুপস্থিতি বিদ্যমান। এই ইমারতগুলোতে উঁচু দেয়াল ও দুর্গের দেয়ালের মত প্রাচীর বিদ্যমান। দিল্লি সমাধিসৌধ, সমাধিসৌধের বিপরীতে অবস্থিত তুঘলকাবাদ দুর্গের (নতুন রাজধানী তুঘলকাবাদে অবস্থিত) মত পূর্বে বর্ণিত সমাধিসৌধদ্বয়ে ২৫° বাঁকানো দেয়াল বিদ্যমান।[১৫]
তুঘলক শাসকদের অধীনের স্থাপত্যবিভাগ ও নির্মাণ বিভাগ ছিল। তারা এই বিভাগদ্বয়ে বহু হিন্দুকে নিয়োগ প্রদান করেছিল। তারা বহু ইমারত ও আধুনিক তুঘলক স্থাপত্য গড়ে তুলেছিল।[১৪] বলা হয়ে থাকে ১৩৫১ থেকে ১৩৮৮ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করা তুঘলক সাম্রাজ্যের তৃতীয় সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক নিজে বহু ইমারত নির্মাণ করেছিলেন। তিনি তুঘলক সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন শাসক ও সেরা নির্মাতা ছিলেন। হরিয়ানার হিসারে অবস্থিত তার ফিরোজ শাজ প্যালেস কমপ্লেক্স (১৩৫৪ সালে নির্মাণ শুরু) ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও এর কিছু অংশ এখনো ভাল আছে।[১৬] তার সময়ে নির্মির ইমারতগুলোর স্থাপত্যকলার মাঝে থাকা বৈশিষ্ট্যগুলো ইসলামি স্থাপত্যকলায় কদাচিৎ দেখা যায় অথবা ইসলামি স্থাপত্যকলার বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা।[১৭] তিনি দিল্লির হাউজ খাস কমপ্লেক্সে সমাহিত হন। তার আমল ও তুঘলক সালতানাতের পরবর্তী শাসনামলে নির্মিত ইমারতগুলো (গম্বুজওয়ালা ইমারতগুলো সহ) শুধুমাত্র স্তম্ভ অবলম্বন করে নির্মিত হয়েছে।[১৮]
এই সময়ে ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যে প্রথম দিককার ভারতীয় স্থাপত্যের কিছু উপাদান যুক্ত হয়। যেমন, উঁচু স্তম্ভমূলের ব্যবহার, ইমারতের কোণা ছাড়াও স্তম্ভ ও স্তম্ভের উপরে এবং ছাদে ঢালাইয়ের ব্যবহার।[১৯][২০]
ফিরোজ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর পর তুঘলক সাম্রাজ্যের স্থাপত্যকলা শ্রীহীন হয়ে পড়ে। তার পরে নির্মিত অধিকাংশ ইমারতগুলো ছিল সমাধিসৌধ। তখন, আঞ্চলিক মুসলিম স্থাপত্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল।[২১]
আজমিরের আড়াই দিন কা ঝোনপ্রা মসজিদ (আনুমানিক ১২২৯ সালে নির্মিত); খিলান ও খাঁজবিশিষ্ট এই প্রবেশপথ
খুব সম্ভবত, ভারতবর্ষের প্রথম "আসল খিলান", দিল্লির বলবানের সমাধিসৌধ (মৃত্যু ১২৮৭)
হাউজ খাস কমপ্লেক্সের পটমণ্ডপ
মোগল শাসনের পূর্বে থাকা মুসলমান শাসকদের অধীনে থাকা স্থানীয় রাজ্য
মোগল শাসনামলে ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যরীতির কিছু আঞ্চলিক স্থাপত্যরীতিও গড়ে ওঠে। মোগল শাসনামলের পূর্বে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিকাশ ঘটা কিছু ইসলামি স্থাপত্যরীতি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হল।
বাহমানি ও দক্ষিণাত্য সালতানাত
১৩৪৭ সালে মুহাম্মাদ বিন তুঘলকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে করে গড়ে ওঠে বাহমানি সালতানাত। এটি কর্ণাটকের গুলবার্গ থেকে বিদার পর্যন্ত বিরাজমান ছিল বাহমানি সালতানাত। ১৫২৭ সালে বাহমানি সালতানাতের পতন ঘটে মোগল শক্তির হাতে। বড় গুলবার্গ দুর্গে অবস্থিত গুলবার্গ জামে মসজিদে কোন আঙিনা নেই, যা সচরাচর দেখা যায় না। মসজিদটিতে মোট ৭৫ টি গম্বুজ বিদ্যমান। মিহরাবের উপরে থাকা গম্বুজ ও চার কোণার চারটি মধ্যমাকৃতির গম্বুজ বাদে সব গম্বুজই ছোট ও অগভীর। মসজিদের অভ্যন্তরের কক্ষে স্তম্ভ বিদ্যমান। এছাড়া, মসজিদের করিডরে দেখা মেলে অনুপ্রস্থ খিলানের, যেগুলো নিচের দিকে ধাবমান। এরকম নজির সচরাচর দেখা যায় না। এই স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের দেখা মেলে অন্যান্য বাহমানীয় ইমারতে। বাহমানীয় ইরানি স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। মসজিদটিতে চারকোণা এক রকম টাইলসের ব্যবহার দেখা যায়, যেগুলো ইরান থেকে আমদানিকৃত। ধারণা করা হয়, মসজিদটির স্থপতি একজন ইরানি।[২২]
পরের দিককার কিছু বাহমানীয় রাজকীয় সমাধিসৌধের দুইটি ভাগ থাকার নজির দেখা যায়। সমাধিসৌধের এক ভাগে থাকে শাসকের কবর এবং অন্য ভাগে থাকে তার পরিবারের কবর।[২৩] গুলবার্গের বাইরে রাজকীয় সমাধিসৌধে সাত গম্বুজের গুচ্ছের দেখা মেলে। মাহমুদ গাওয়ান মাদ্রাসার নির্মাণ কাজ ১৪৬০ এর দশকে শুরু হয়েছিল। পুরোপুরিভাবে ইরানি স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত এই ইমারতটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। মাদ্রাসাটি স্থাপন করেছিলেন রাজ দরবারের এক মন্ত্রী। ইমারতটি নির্মাণের জন্য ইরান থেলে সমুদ্রপথে টাইলস আনা হয়েছিল।[২৩] নগরীর বাইরে আস্তুর গম্বুজে আট গম্বুজের গুচ্ছের দেখা মেলে, যেগুলোর আকৃতি মোগল স্থাপত্যরীতির পেয়াজাকৃতির গম্বুজের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।[২৩]
মাহমুদ গাওয়ান মাদ্রাসা (১৪৬০ এর দশকে নির্মিত
১৮৮০ সালে গুলবার্গ জামে মসজিদ (১৩৬৭)
গুলবারগের তাজ উদ-দিন ফিরুজ শাহের সমাধিসৌধ, যাতে দুইটি ভাগ বিদ্যমান
বিদারের আস্তুরে বাহমানীয় সমাধিসৌধের সারি
বিজাপুর সালতানাত কর্তৃক দাক্ষিণাত্য নির্মিত গোল গুম্বাজ, যা প্রাক-আধুনিক যুগের দ্বিতীয় বৃহত্তম [note ১]
শাহী বাংলা (১৩৫২–১৫৭৬) প্রাক ইসলামি যুগের মত ইমারত নির্মাণে ইট ব্যবহৃত হয়েছে। যেখানে ইট বানানোর জন্য মাটি অপর্যাপ্ত ছিল, সেখানে ইমারত নির্মাণের জন্য পাথর আমদানি করা হত। কিন্তু, স্তম্ভ ও কাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হত পাথর। এর প্রয়োগ হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণেও দেখা যেত।[২৪] বর্তমানে টিকে থাকা ইমারতগুলোর মাঝে পান্ডুয়ার একলাখি মাজারকে বাংলায় ইসলামি স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত সবচেয়ে প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। সম্ভবত, হুগলী জেলার মোল্লা সিমলার একটি ছোট মসজিদ এখলাখি মাজার থেকেও প্রাচীন, যেটির নির্মাণকাজ সম্ভবত ১৩৭৫ সালে শুরু হয়েছিল। একলাখি মাজারে এমন কিছু চোখে পড়ে, যার সাথে বাঙালি স্থাপত্যের মিল আছে। যেমন, ঈষৎ বক্র কার্নিসের ব্যবহার, বৃহৎ গোলাকার বাট্রেসের ব্যবহার এবং বাঁকা টেরাকোটা ইট দিয়ে ইমারত সাজানো।[২৫] এরকম স্থাপত্যশৈলী ছোট সোনা মসজিদেও (আনুমানিক ১৫০০) দেখা যায়, যেটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে পাথর, যেটি বাংলায় কদাচিৎ দেখা যায়। কিন্তু, মসজিদটির স্থাপত্যরীতি ও গম্বুজের মিশ্রণ গ্রাম বাংলার কুঁড়েঘরেত কথা মনে করিয়ে দেয়। পরবর্তীতে এই রীতির ব্যবহার দেখা যায় হিন্দুমন্দিরেও। দোচালা, জোড় বাংলা ও চারচালার ব্যবহার দেখা যায় পরবর্তীকালের হিন্দুমন্দিরগুলোতে।[২৬]
এরকম, স্থাপত্যকলায় নির্মিত অন্যান্য ইমারতগুলো হল নয়গম্বুজ মসজিদ, ষাটগম্বুজ মসজিদ (১৪৫৯ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন) এবং মসজিদের শহর বাগেরহাটের অন্যান্য ইমারতগুলো। মসজিদের শহর বাগেরহাট হল একটি পরিত্যক্ত শহর, যেটি ইউনেস্কোরবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্গত। এইসব ইমারতগুলো কিছু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যেমন, প্রচুর দরজা ও মিহরাবের ব্যবহার। ষাটগম্বুজ মসজিদে ২৬ টি দরজা বিদ্যমান (১১ টি সামনে, ৭ টি করর দুই পাশে এবং একটি পিছনে)। এটি মসজিদটিত্ব আলো ও বাতাস প্রবেশ বাড়িয়েছে।
মালদহের ধ্বংসপ্রাপ্ত আদিনা মসজিদে (১৩৭৪-৭৫) এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যেগুলো বাংলায় সচরাচর দেখা যায় না। ব্যারেল ভল্টবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কক্ষে স্তম্ভ বিদ্যমান। আর স্তম্ভের উপরে রয়েছে ছাদ। বলা হয়ে থাকে, এটি উপমহাদেশীয় মসজিদগুলোর মাঝে সর্ববৃহৎ। বর্ষার দেশ বাংলাদেশে এমন বৃহৎ ছাদওয়ালা ইমারত প্রয়োজনীয়, যার দরুন একটি বৃহৎ এলাকা বৃষ্টির পানির স্পর্শ থেকে নিরাপদ থাকে।নয়গম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলী অন্য এলাকার থেকে মসজিদের শহর বাগেরহাটে বেশি দেখা যায়। সেখানেও, বৃহৎ এলাকাকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার চিন্তা নিয়ে ইমারত নির্মিত হয়েছে।[২৭]শাহী বাংলার পর বাংলায় মুঘল শাসন শুরু হলে আরো স্থানীয় রীতি যোগ হতে থাকে স্থানীয় লোকদের দ্বারা নির্মিত ইমারতে। কিন্তু, মুঘলরা তাদের নিজস্ব রীতিতে ইমারত নির্মাণ করতে থাকে বাংলায়।
কাশ্মীর
চতুর্দশ শতাব্দীতে আংশিকভাবে কাঠ দ্বারা নির্মিত দুইটি মসজিদ গিলগিত বালতিস্তানে অবস্থিত, যা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অংশ। মসজিদ দুইটি হল খাপলুর চাকচান মসজিদ (১৩৭০) ও শিগারের আম্বুরিক মসজিদ। মসজিদ দুইটির অন্তর্ভাগ প্রস্তরনির্মিত হলেও বহির্ভাগে কাঠের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। আম্বুরিক মসজিদে স্থানীয় রীতির প্রভাব স্পষ্ট।
মুঘল সাম্রাজ্যভারতবর্ষে ১৫২৬ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছে। মুঘল স্থাপত্য প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যকে ইসলামি, ইরানি, তুর্কি, আরবি, মধ্য এশীয় স্থাপত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মুঘল স্থাপত্যে ইমারত ও আঙ্গিনার মাঝে ভারসাম্য রাখা হয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীর মুঘল সম্রাট আকবরমুঘল স্থাপত্যে নির্মিত দুর্গ ও শহরে মুঘল স্থাপত্যরীতির সাথে ভারতীয় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটান। সেই সময়ে নির্মিত একটি দুর্গের তোরণে অ্যাসিরীয় গ্রিফনের (এক প্রকার কাল্পনিক প্রাণী) পাশাপাশি ভারতীয় হাতি ও পাখির ছবি দেখা যায়।[২৮]
মুঘল যুগে ইসলামি-ইরানি স্থাপত্যের সাথে সংমিশ্রণ ঘটত ভারতীয় স্থাপত্যের। ফলশ্রুতিতে, তা ভারতীয় স্থাপত্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। লাহোর, মুঘল শাসকদের সাময়িক আবাসস্থল, হল এমন একটা শহর, যে শহরে এহেন স্থাপত্য দেখা যায়। সেখানকার বাদশাহী মসজিদ (১৬৭৩-৭৪ সময়কালে নির্মিত), লাহোর দুর্গ (ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত) ও এর আলমগিরি দরজা এবং ওয়াজির খান মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ ও সমাধিসৌধে এহেন স্থাপত্য দেখা যায়।[২৯]সিন্ধুর থাট্টার শাহজাহান মসজিদ মুঘল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হলেও, এর মাঝে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। আবার, ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী সময়কালে নির্মিত চৌখান্দি সমাধিসৌধগুলোতে প্রাচ্য স্থাপত্যের প্রভাব বিদ্যমান। মুঘল আমলে নির্মিত এসব সমাধিসৌধে মুঘল আমলের কোন বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে না। সম্ভবত, এই সমাধিসৌধগুলোর কারিগরেরা সিন্ধি স্থাপত্যের প্রয়োগ ঘটাতে চেয়েছেন। তারা সম্ভবত, প্রাক ইসলামি যুগের স্থাপত্য ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে মুঘল স্থাপত্য প্রভাব হারাতে থাকে। সেই সময়কালে এবং তার পরবর্তী সময়কালে খুব কম ইমারত নির্মিত হয়েছে মুঘল স্থাপত্যে।
সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশীয় রাজ্য ইমারত নির্মাণে মুঘল স্থাপত্য অনুসরণ করতে থাকে। সব ধর্মের মানুষ তাদের প্রাসাদ ও সমাধিসৌধে ব্যবহার করতে থাকে মুঘল স্থাপত্যের। হিন্দুমন্দিরে দেখা যায় হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের। এছাড়া, হিন্দুদের দ্বারা নির্মিত প্রাসাদে মুঘল ও ইউরোপীয় স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়।
আগ্রারআকবরের সমাধিসৌধ। এটি নির্মাণে অন্যান্য মুঘল স্থাপত্যের মত লাল বেলেপাথর ছাড়াও সাদা মর্মর ব্যবহৃত হয়েছে। তাজমহল একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী মুঘল ইমারত, যেটি নির্মাণে শুধু মর্মর ব্যবহৃত হয়েছে।
পাঞ্জাবের নাকোদার শহরে অবস্থিত দুইটি উস্তাদ-সাগরিদ সমাধিসৌধের একটি
তাজমহল
তাজমহল মোগল স্থাপত্যের নির্মিত ইমারতগুলোর মধ্যে অন্যতম। শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিকে উপজীব্য করে নির্মাণ করেছিলেন এই ইমারতটি। বাগানবেষ্টিত সমাধিসৌধ আগের মোগল সম্রাট নির্মাণ করেছিলেন। এই ইমারতেও বাগানবেষ্টিত সমাধিসৌধ বিদ্যমান। ১৭১ মিটারের সাদা সমাধিসৌধটি একটি পুকুরের পাড়ে অবস্থিত। পুকুরে ইমারতটির প্রতিবিম্ব ভেসে ওঠে।
↑“Gen. Cunningham found an inscription on the walls recording that twenty-seven temples of the Hindus have been pulled down to provide materials for the mosque.” Arch. Report, Cunningham, Vol. I, পৃঃ ১৭৬
Blair, Sheila, and Bloom, Jonathan M., The Art and Architecture of Islam, 1250-1800, 1995, Yale University Press Pelican History of Art, আইএসবিএন০৩০০০৬৪৬৫৯
"Yale":Richard Ettinghausen, Oleg Grabar and Marilyn Jenkins-Madina, 2001, Islamic Art and Architecture: 650-1250, Yale University Press, আইএসবিএন৯৭৮০৩০০০৮৮৬৯৪
هذه المقالة يتيمة إذ تصل إليها مقالات أخرى قليلة جدًا. فضلًا، ساعد بإضافة وصلة إليها في مقالات متعلقة بها. (سبتمبر 2016) خان الوكالة أو خان الفروخية شيد المبنى امير الحج الشامي في العهد العثماني وحاكم نابلس حينها فروخ باشا عام 1630م ليكون مقرا لتجمع الحجاج واستراحة للقوافل التجا
Christian Tews (2016) Christian Tews (* 27. Juli 1980[1] in Hannover) ist ein deutscher Bankkaufmann, Sportökonom, Unternehmer und Fernsehdarsteller. Er wurde 2014 durch die Fernsehshow Der Bachelor bekannt. Inhaltsverzeichnis 1 Leben 2 Privates 3 Fernsehauftritte 4 Weblinks 5 Einzelnachweise Leben Tews wurde in Hannover geboren. Seine Mutter ist Österreicherin und stammt aus Graz.[2] Er zog im Alter von drei Jahren mit seinen Eltern zunächst in die Nähe von Düsseldorf....
Escudo de Villena. El escudo de armas de Villena tiene el siguiente blasonamiento: Escudo dividido en aspa con un quinto cuartel circular sobre el todo. En el primer cuartel, de azur, hay un castillo de oro y donjonado de tres torres, aclarado de gules y mazonado de sable, mientras que en el segundo, de plata, se ve un león rampante de púrpura linguado y uñado de gules. En el tercer cuartel, de gules, se aprecia una mano de plata armada de una espada de plata sumada de medio vuelo de oro y...
Wilhelm Keitel Generaldfeldmarschall Wilhelm Keitel (1942) Jefe del OKW 4 de febrero de 1938-8 de mayo de 1945Predecesor Cargo creadoSucesor Cargo abolido Jefe de la Wehrmachtsamt 1 de octubre de 1935-3 de febrero de 1938Predecesor Cargo creadoSucesor Cargo abolido Información personalNombre de nacimiento Wilhelm Bodewin Johann Gustav Keitel Apodo LakeitelDer General JawohlNacimiento 22 de septiembre de 1882 Helmscherode, Ducado de Brunswick, Imperio alemánFallecimiento 16 de octubre de 194...
جنون العظمة معلومات عامة من أنواع اضطراب وهامي، وعقدة التفوق، ووهام، واضطراب نفسي تعديل مصدري - تعديل رسمة كرتونية تُوَضِح ظاهرة جنون العظمة جنون العظمة مصطلح تاريخي مشتق من الكلمة الإغريقية (ميغالومانيا) (بالإنجليزية: Megalomania) وتعني وسواس العظمة، لوصف حال
Petar Čule (* 18. Februar 1898 in Kruševo bei Mostar, heute Bosnien-Herzegowina; † 29. Juli 1985 in Mostar) war ein römisch-katholischer Geistlicher und Bischof von Mostar-Duvno sowie damit zugleich Apostolischer Administrator des Bistums Trebinje-Mrkan. Leben Petar Čule besuchte ab 1909 acht Jahre lang das Gymnasium in Travnik. Die Matur erlangte Petar Čule im Jahre 1917. Das Theologiestudium absolvierte Čule von 1917 bis 1921 in Sarajevo. Am 20. Juni 1920 empfing er die Prieste...
This article relies excessively on references to primary sources. Please improve this article by adding secondary or tertiary sources. Find sources: Dick Traum – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (September 2021) (Learn how and when to remove this template message) American disability runner Dr. Dick Traum is the founder of the Achilles Track Club for disabled athletes. In 1976, he completed the New York City Marathon, becoming the first runn...
Holmes ProductsIndustryConsumer productsFounded1982[1]FounderJordan KahnProductsHome appliancesParentNewell BrandsWebsitewww.holmesproducts.com A Holmes rotating fan Holmes Products Corp. or Holmes Group is a company based in Milford, Massachusetts, that produces mechanical fans, space heaters, and humidifiers. History Holmes Products was founded by Jordan Kahn in 1982.[1][2] In 2005, Berkshire Partners, Holmes' parent company, sold Holmes Products to Jarden Corporatio...
Upcoming animated series IwájúGenre Science fiction Drama Created byZiki NelsonHamid IbrahimToluwalakin OlowofoyekoWritten byZiki NelsonDirected byZiki NelsonCountry of origin United Kingdom United States Original languageEnglishProductionExecutive producer Jennifer Lee Producer Toluwalakin Olowofoyeko[a] Production companies Walt Disney Animation Studios Kugali Media Cinesite Original releaseNetworkDisney+ Iwájú (pronounced [ī.wá.d͡ʒú][1]) is an upcoming comp...
Untuk kota, lihat Miyakojima, Okinawa. Untuk pulau di Tokyo, lihat Miyake-jima. Untuk distrik kota di Osaka, lihat Miyakojima-ku, Osaka. Pulau MiyakoNama lokal: Miyakojima (宮古島code: ja is deprecated )Foto udara Pulau Miyako dari arah barat laut.Pulau MiyakoLokasi Pulau Miyako di peta JepangGeografiLokasiPrefektur OkinawaKoordinat24°46′N 125°19′E / 24.767°N 125.317°E / 24.767; 125.317KepulauanKepulauan MiyakoLuas158,70 km2Titik tertinggiNakao...
Largest city in Nevada, United States This article is about the city proper in Nevada. For the metropolitan area, see Las Vegas Valley. For other uses, see Las Vegas (disambiguation). Vegas redirects here. For other uses, see Vegas (disambiguation). City in Nevada, United StatesLas VegasCityDowntown Las VegasWorld Market CenterThe StratLas Vegas StripLou Ruvo Center for Brain HealthClark County Government Center FlagSealEtymology: from Spanish las vegas 'the meadows'Nicknames:...
Artikel ini perlu dikembangkan agar dapat memenuhi kriteria sebagai entri Wikipedia.Bantulah untuk mengembangkan artikel ini. Jika tidak dikembangkan, artikel ini akan dihapus. Artikel ini tidak memiliki referensi atau sumber tepercaya sehingga isinya tidak bisa dipastikan. Tolong bantu perbaiki artikel ini dengan menambahkan referensi yang layak. Tulisan tanpa sumber dapat dipertanyakan dan dihapus sewaktu-waktu.Cari sumber: Zine – berita · surat kabar · buku...
1989 Japanese science fiction action film by Masato Harada This article has multiple issues. Please help improve it or discuss these issues on the talk page. (Learn how and when to remove these template messages) This article consists almost entirely of a plot summary. Please help improve the article by adding more real-world context. (February 2017) (Learn how and when to remove this template message) This article's lead section may be too short to adequately summarize the key points. Please...
15th episode of the 5th season of Once Upon a Time The Brothers JonesOnce Upon a Time episodeEpisode no.Season 5Episode 15Directed byEagle EgilssonWritten byJerome SchwartzDavid H. GoodmanProduction code515Original air dateMarch 27, 2016 (2016-03-27)Guest appearances Bernard Curry as Liam Jones Greg Germann as Hades Costas Mandylor as Captain Silver Victoria Smurfit as Cruella De Vil/Cruella Feinberg Timothy Webber as The Apprentice Episode chronology ← PreviousDevi...
1987 video gameRealSports BoxingBox artDeveloper(s)AtariPublisher(s)AtariSeriesRealSportsPlatform(s)Atari 2600Release1987Genre(s)Fighting, Sports gameMode(s)Single-player, Multiplayer (2 simultaneous) RealSports Boxing gameplay screenshot RealSports Boxing is a boxing based video game developed by Atari and released in 1987 for the Atari 2600. It is part of the RealSports series of games from Atari.[1] The game has a side view of the ring, allowing the player to move up and down, as w...
Accessories to enhance motorcycle safety, performance or comfort This article needs additional citations for verification. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.Find sources: Motorcycle accessories – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (May 2009) (Learn how and when to remove this template message) Motorcycle accessories are features and accessories selected by...
Рождение Венеры (Боттичелли) — классическое представление женственности[1][2] Же́нственность (также феми́нность или фемини́нность) — традиционная модель поведения и совокупность психических качеств женского пола, к которым обычно приписывают чувствитель...
Japan Open Tennis Championships 2018Singolare Sport Tennis Vincitore Daniil Medvedev Finalista Kei Nishikori Punteggio 6-2, 6-4 Tornei Singolare Singolare (q) Doppio Doppio 2019 Voce principale: Japan Open Tennis Championships 2018. David Goffin era il detentore del titolo, ma si è ritirato prima dell'inizio del torneo. In finale Daniil Medvedev ha sconfitto Kei Nishikori con il punteggio di 6-2, 6-4. Indice 1 Teste di serie 2 Qualificati 3 Wildcard 4 Tabellone 4.1 Legenda 4.2 Fase fi...
2006 Indian filmDrishtantham(The Vision)Directed byM. P. Sukumaran NairWritten byM. P. Sukumaran NairStarringMuraliIndransMargi SathiRathyaJijoy RajagopalCinematographyK. G. JayanEdited byB. AjithkumarMusic byChandran VeyattummalRelease date 2006 (2006) CountryIndiaLanguageMalayalam Drishtantham (English: The Vision) is a 2006 Malayalam film directed by M. P. Sukumaran Nair. The film is about an ailing theeyattu artist, who is trapped between tradition and the diktats of the new world. M...
Hawaiian politician (1810–1857) Keoni AnaKuhina Nui of the Hawaiian Islands and Minister of InteriorKuhina Nui of the Hawaiian IslandsReignJune 10, 1845 – January 16, 1855PredecessorKaʻahumanu IIISuccessorKaʻahumanu IVBorn(1810-03-12)March 12, 1810Kawaihae, island of HawaiiDiedJuly 18, 1857(1857-07-18) (aged 47)Honolulu, OahuBurialMauna ʻAla Royal Mausoleum[1]SpouseJulia AlapaiUlumaheiheiIssuePeter Kaʻeo (hānai)NamesJohn Kalaipaihala Young II, Keoni Ana ʻOpioHouseHouse ...