আলিপুর পশুশালা (কথ্য নামে আলিপুর চিড়িয়াখানা) ভারতের প্রাচীনতম বিধিবদ্ধ চিড়িয়াখানা (দেশীয় করদ রাজ্যের চিড়িয়াখানাগুলি বাদে) এবং কলকাতার একটি প্রধান পর্যটনকেন্দ্র। ১৮৭৬ সালে এই চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আয়তন ৪৫ একর। এটি অধুনা-মৃত অদ্বৈত নামক একটি অ্যালডাব্রা দৈত্যাকার কচ্ছপের আবাসস্থল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। মৃত্যুকালে এই কচ্ছপটির বয়স ছিল ২৫০ বছরেরও বেশি। এখানে কয়েকটি বন্দী প্রজনন প্রকল্প চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল মণিপুরব্রো-অ্যান্টলার হরিণ প্রজনন প্রকল্প। বিগত কয়েক দশক ধরে আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ছোটো খাঁচায় পশুপাখি রাখা ও প্যান্থেরা হাইব্রিড প্রকল্পের জন্য চিড়িয়াখানা সম্প্রদায় ও সংরক্ষণবাদীদের দ্বারা সমালোচিত হচ্ছে।
ইতিহাস
To those who can remember the dirty and rather dismal looking approach to Belvedere, the improved and satisfactory condition of the neighbourhood, at present, must afford a very striking contrast. Both east and west of the roadway leading from the Zeerut bridge were untidy, crowded unsavoury bustees. Today we shall find on the site of the old bustees the Calcutta ‘Zoo.’ A very large share of the credit for the establishment of this pleasant resort is due to Sir Richard Temple, who was Lieutenant Governor of Bengal from 1874 to 1877, but long before the scheme assumed any proper shape, Dr. Fayrer, C.S.I., in 1867 and again in 1873 Mr. L. Schwendler (known as the ‘Father of the Zoo’) had brought forward and strongly urged the necessity of a Zoological Garden…The visit to Calcutta of His Majesty King Edward the Seventh, then Prince of Wales, was seized upon as an auspicious occasion. On the 1st January, 1876, the gardens were inaugurated by His Royal Highness, and in May of the same year they were opened to the public.[২]
Cotton, H.E.A (1909)
১৮০০ সালে বাংলার তদনীন্তন গভর্নর-জেনারেল আর্থার ওয়েলেসলি কলকাতার নিকটস্থ ব্যারাকপুরে তাঁর গ্রীষ্মাবাসে ভারতীয় প্রাকৃতিক ইতিহাস প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে একটি ছোটো পশু উদ্যান গড়ে তোলেন।[৩][৪] আর্থার ওয়েলেসলি তাঁর দাদা ভারতের তদনীন্তন গভর্নর-জেনারেল রিচার্ড ওয়েলেসলির সঙ্গে ইংল্যান্ডে ফিরে গেলে, বিশিষ্ট স্কটিশ চিকিৎসক প্রাণীতত্ত্ববিদ ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিলটন এই পশুগুলির রক্ষণাবেক্ষণের ভার নেন। চার্লস ডি'ওইলি এই পশু উদ্যানের জলরং ছবি এঁকেছিলেন এবং বিশিষ্ট ফরাসি উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ভিকতর জ্যাকমঁ এই উদ্যান পরিদর্শন করেছিলেন বলে জানা যায়।[৫] ১৮১০ সালে স্যার স্ট্যামফোর্ড র্যাফেল এই উদ্যানে এসে প্রথম টাপির শিকার করেন। মনে করা হয়, এই উদ্যানের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লন্ডন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকেও অণুপ্রাণিত করেছিল।[৩]
এরপর বিশ্বের বিভিন্ন শহরে চিড়িয়াখানা স্থাপিত হতে থাকলে, কলকাতার ব্রিটিশ সম্প্রদায়ও এই পশু উদ্যানটিকে একটি বিধিবদ্ধ চিড়িয়াখানার রূপ দেওয়ার কথা ভাবতে থাকেন। ১৮৪১ সালের জুলাই মাসে ক্যালকাটা জার্নাল অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি পত্রিকায় কলকাতায় চিড়িয়াখানা স্থাপনের পক্ষে সওয়াল করা হয়। ১৮৭৩ সালে লেফটানেন্ট-গভর্নর স্যার রিচার্ড টেম্পল কলকাতায় একটি চিড়িয়াখানা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। সরকার এশিয়াটিক সোসাইটি ও এগ্রি-হর্টিকালচার সোসাইটিকে যৌথভাবে চিড়িয়াখানা স্থাপনের জমি প্রদান করে।
১৮৭৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রিন্স অফ ওয়েলসসপ্তম এডওয়ার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে চিড়িয়াখানাটির উদ্বোধন করেন কলকাতার অভিজাত শহরতলি আলিপুর অঞ্চলে।[১] প্রথমদিকে চিড়িয়াখানা গঠিত হয়েছিল ভারতীয় রেলওয়ে স্টেশনে বৈদ্যুতিককরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত জার্মান ইলেকট্রিশিয়ান কার্ল লুইস সোয়েন্ডলারের ব্যক্তিগত পশু উদ্যানের পশুপাখি নিয়ে। সাধারণ জনসাধারণের থেকে প্রাপ্ত উপহারও গৃহীত হয়। চিড়িয়াখানায় প্রথম দিকে যে পশুপাখিগুলি ছিল সেগুলি হল: আফ্রিকান বাফেলো, জ্যাঞ্জিবার ভেড়া, গৃহপালিত ভেড়া, চার-শৃঙ্গবিশিষ্ট ভেড়া, সংকর কাশ্মীরি ছাগল, ইন্ডিয়ান আন্টেলোপ, ইন্ডিয়ান গেজেল, সম্বর হরিণ, চিত্রা হরিণ ও প্যারা হরিণ।
অদ্বৈত নামের অ্যালডাব্রা দৈত্যাকার কচ্ছপটি প্রথম থেকেই চিড়িয়াখানায় ছিল কিনা তা জানা যায় না। ১৮৮৬ সালের প্রথম দিকে ব্যারাকপুর পার্কের পশুগুলিকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে এলে চিড়িয়াখানার আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৭৬ সালের ৬ মে জনসাধারণের জন্য চিড়িয়াখানার দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।[১]
ভারতীয় ও ব্রিটিশ অভিজাত ব্যক্তিদের দানে এই চিড়িয়াখানা পুষ্ট হতে থাকে। ময়মনসিংহেররাজা সূর্যকান্ত আচার্যের সম্মানে এখানকার ওপেন এয়ার টাইগার এনক্লোজারটির নামকরণ হয় ময়মনসিংহ এনক্লোজার। এছাড়াও মহীশূরের রাজা চতুর্থ কৃষ্ণরাজ ওয়াদিয়ার তাঁর পশু উদ্যান থেকে অনেক পশু দান করেছিলেন এখানে।[৬]
প্রথমদিকে একটি সাম্মানিক ম্যানেজিং কমিটি এই চিড়িয়াখানা চালাতো। এই কমিটির সদস্য ছিলেন সোয়েন্ডলার ও বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ জর্জ কিং। চিড়িয়াখানার প্রথম ভারতীয় সুপারইনটেনডেন্ট ছিলেন রামব্রহ্ম সান্যাল। তিনি এই চিড়িয়াখানার অনেক উন্নতি করেছিলেন এবং সেই যুগে বন্দী প্রজননে সাফল্য অর্জন করেছিলেন।[৫] ১৮৮৯ সালে চিড়িয়াখানায় তিনি দুর্লভ সুমাত্রাণ গণ্ডারের প্রজনন ঘটান। প্রাণী রক্ষণে সেই যুগে আলিপুর চিড়িয়াখানা খুবই সুনাম অর্জন করে।[৭][৮]
প্যান্থেরা সংকর কর্মসূচি
সিংহ ও বাঘের ক্রস-ব্রিডিং ঘটিয়ে টাইগন ও লিটিগণ জাতীয় সংকর প্রাণীর প্রজনন করে আলিপুর পশুশালা বিজ্ঞানী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৯৭০-এর দশকে চিড়িয়াখানায় দু'টি টাইগনের জন্ম হয়: রুদ্রাণী (জন্ম ১৯৭১) ও রঞ্জিনী (জন্ম ১৯৭৩)। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও আফ্রিকান লায়নের সংকরায়নের ফলে এদের জন্ম হয়। আফ্রিকান সিংহের ঔরসে রুদ্রাণী সাতটি সন্তানের জন্ম দেয়। এর ফলে লিটিগণ প্রজাতি সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে কিউবানাকান নামে একটি লিটগন পূর্ণবয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিল। এটি ৫.৫ ফুট (১.৭ মিটার) লম্বা, ১১.৫ ফুট (৩.৫ মিটার) চওড়া ও ৮০০ পাউন্ডের বেশি ওজনযুক্ত হয়। ১৯৯১ সালে ১৫ বছর বয়সে এটি মারা যায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম বিগ ক্যাট হিসেবে দাবি করেছিল। এই সংকর প্রজাতির পুরুষেরা ছিল প্রজননে অক্ষম। এদের অনেকেই জিনগত অস্বাভাবিকতার শিকার হয় এবং অল্প বয়সেই মারা যায়। চিড়িয়াখানার শেষ টাইগন রঞ্জিনী ১৯৯৯ সালে মারা যায়। এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি বয়সের টাইগন।[৯]ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (তদনীন্তন ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড) এই সংকরায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে ১৯৮৫ সালে ভারত সরকার আইন করে চিড়িয়াখানায় সংকর প্রজনন বন্ধ করে দেয়।
দ্রষ্টব্য
আলিপুর পশুশালার আয়তন ৪৫ একর। গত পঞ্চাশ বছর এই চিড়িয়াখানার বিস্তার সম্ভব হয়নি। এখানে একটি সরীসৃপ ভবন, একটি বনমানুষ ভবন, একটি হস্তীভবন ও একটি প্যান্থার ভবন রয়েছে। প্যান্থার ভবনের পিছনে বাঘ ও সিংহের জন্য ওপেন এয়ার এনক্লোজার রয়েছে। একটি আলাদা শিশুদের চিড়িয়াখানাও রয়েছে। চিড়িয়াখানার মাঝের জলাশয়ে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে।চিড়িয়াখানার সম্মুখস্থ রাস্তার উল্টোদিকে চিড়িয়াখানা অনুমোদিত কলকাতা অ্যাকোরিয়াম অবস্থিত।
আলিপুর পশুশালা কলকাতার একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু প্রবেশমূল্য কম হওয়ায় চিড়িয়াখানা থেকে রাজস্ব আদায় কম হয়। ২০০৩ সালে চিড়িয়াখানার প্রবেশমূল্য ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়। ২০০৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, চিড়িয়াখানায় বার্ষিক জনসমাগম হয় ২০ লক্ষ। এর মধ্যে বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষে চিড়িয়াখানায় আসেন ২৫,০০০-এরও বেশি দর্শনার্থী।[১০][১১]
আলিপুর পশুশালার সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণীটি হল অ্যালডাব্রা দৈত্যাকার কচ্ছপ প্রজাতির "অদ্বৈত" যা কিনা লর্ড ক্লাইভের পোষ্য ছিল।[১২] সেসেলসের ব্রিটিশ নাবিকেরা এটি রবার্ট ক্লাইভকে উপহার দেয়। প্রাণীটি ১৮৭৫ সালে আলিপুর চিড়িয়াখানায় আসে। ২০০৬ সালে মৃত্যুকালে কচ্ছপটির বয়স ছিল আড়াইশো বছরেরও বেশি। এটিই ছিল সেই সময়কার প্রবীণতম প্রাণী।[১৩]
↑City Lights, The Telegraph, Kolkata, February 1, আলিপুর পশুশালা কলকাতার একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু প্রবেশমূল্য কম হওয়ায় চিড়িয়াখানা থেকে রাজস্ব আদায় কম হয়। ২০০৩ সালে চিড়িয়াখানার প্রবেশমূল্য ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়। ২০০৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, চিড়িয়াখানায় বার্ষিক জনসমাগম হয় ২০ লক্ষ। এর মধ্যে বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষে চিড়িয়াখানায় আসেন ২৫,০০০-এরও বেশি দর্শনার্থী।
The official list of animals at the zoo, maintained by the Central Zoo Authority of India. The zoo does not have a website of its own. This serves as reference for all statements concerning single / unpaired animals, or animal deaths.
Misc, 125 years of Calcutta Zoo, The Managing Committee, Zoological Gardens, Alipore, Calcutta, 2000
Mittra, D.K.; The history of Zoological Gardens, Calcutta; Zoos' Print Vol. 15, No. 5 (1999), Back when . . . & then? section, p. 3
বহিঃসংযোগ
উইকিমিডিয়া কমন্সে আলিপুর পশুশালা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।