আলাউদ্দিন মুহাম্মদ খোয়ারিজমশাহ (ফার্সি: علاءالدین محمد خوارزمشاه) ছিলেন খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্যের শাহ ১২০০ থেকে ১২২০ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। খোয়ারিজমে মঙ্গোলদের হামলার সময় তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। মঙ্গোলদের হামলায় তার সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়।
আলাউদ্দিন তেকিশের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ শাহ হন। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মদ ও মুইজউদ্দিন তার সাম্রাজ্যে হামলা করেন। এর কয়েক সপ্তাহ পরে ঘুরি ভ্রাতৃদ্বয় পশ্চিমে খোরাসানের দিকে তাদের বাহিনী নিয়ে যাত্রা করেন। নিশাপুর জয় করার পর মুইজউদ্দিনকে রাই জয়ের জন্য প্রেরণ করা হয়। কিন্তু মুইজউদ্দিন গুরগানের পর বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি। এ কারণে গিয়াসউদ্দিন তার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে এটি একমাত্র মনোমালিন্যের ঘটনা ছিল বলে জানা যায়।[১][২]
১২০২ সালে হেরাতে গিয়াসউদ্দিন অসুস্থতার কারণে মারা যান। দ্বিতীয় মুহাম্মদ এসময় সুযোগ কাজে লাগিয়ে হেরাত অবরোধ করেন। কিন্তু মুইজউদ্দিন তাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হন। তিনি খোয়ারিজম পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে রাজধানী গুরগঞ্জ অবরোধ করেন। দ্বিতীয় মুহাম্মদ কারা খিতান খানাতের কাছে সহায়তা চাইলে তারা সাহায্য হিসেবে একটি সেনাদল পাঠায়। এই অবস্থায় মুইজউদ্দিন পিছু হটতে বাধ্য হন। ফেরার সময় ১২০৪ সালে আন্দখুদে তিনি একটি লড়াইয়ে পরাজিত হন।[৩][৪] ১২০৬ সালে মুইজউদ্দিন নিহত হন। এরপর তার সাম্রাজ্য সেনাপতিদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। তন্মধ্যে অন্যতম ছিলেন গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ। দ্বিতীয় মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের কাছ থেকে বলখ ও তিরমিজ দখল করে নিয়েছিলেন।[৫] তবে অভিযানের সময় তিনি কারা-খিতান খানাতের হাতে বন্দী হন। তের মাস পর তিনি মুক্তি পান এবং পুনরায় গিয়াসউদ্দিনের রাজ্যে হামলা করে হেরাত দখল করেন। এরপর তিনি ঘুর হামলা করে গিয়াসউদ্দিনকে বন্দী করেন। এরপর গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মদের কর্তৃত্ব মেনে নেন। দ্বিতীয় মুহাম্মদ ১২০৭ সালে সমরকন্দ দখল করেন। ১২১০ সালে তিনি তাবারিস্তান দখল করেন। এছাড়াও তাশখন্দ ও ফারগানা দখল করেছিলেন। ১২১২ সালে কারাখানিরা তার কাছে পরাজিত হয়।
১২১৭ সালে তিনি সির দরিয়া থেকে পারস্য উপসাগরের সমস্ত অঞ্চল জয় করেন। এরপর তিনি নিজেকে শাহ ঘোষণা করে খলিফার কাছ থেকে অনুমোদন প্রার্থনা করেন। খলিফা আন-নাসির তার দাবি অগ্রাহ্য করায় তিনি তার বাহিনী নিয়ে বাগদাদের দিকে অগ্রসর হন। তবে জগ্রোস পর্বতমালা অতিক্রমের সময় তার দল ভীষণ তুষারঝড়ের কবলে পড়ে।[৬] এসময় অসংখ্য সৈনিক নিহত হয়। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তিনি ফিরে আসেন।
১২১৮ সালে চেঙ্গিস খান শাহর সাথে বাণিজ্য বিষয়ে যোগাযোগ করেন। ইতোমধ্যে চেঙ্গিস খান চীনের দুই তৃতীয়াংশ অঞ্চল জয় করেছিলেন। তিনি একটি বণিকদল খোয়ারিজমে প্রেরণ করেন। শাহ তাদেরকে গুপ্তচর চিহ্নিত করে তাদের বন্দী ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। পরে তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
চেঙ্গিস খান এরপর মধ্য এশিয়ায় অভিযান চালান। তিনি সমরকন্দ, বুখারা, ওতরার ও অন্যান্য শহরে হামলা চালান। মুহাম্মদ শাহর রাজধানী উরগঞ্জও শীঘ্রই মঙ্গোলদের হস্তগত হয়। চেঙ্গিস খানের অভিযানের ফলে খোয়ারিজমের শহরগুলি ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ ছিল অগণিত। অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন এসময় ধ্বংস হয়।
আলাউদ্দিন মুহাম্মদ পালিয়ে যান। পরে কাস্পিয়ান সাগরের একটি দ্বীপে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
টেমপ্লেট:Anushtiginid Dynasty