আর্থার জন উইলিয়াম ম্যাকইনটায়ার (ইংরেজি: Arthur McIntyre; জন্ম: ১৪ মে, ১৯১৮ - মৃত্যু: ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৯) লন্ডনের কেনিংটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও কোচ ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাট করার পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে ডানহাতে লেগ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন আর্থার ম্যাকইনটায়ার।
প্রারম্ভিক জীবন
ওভাল থেকে কিঞ্চিৎ দূরত্বে লন্ডনের কেনিংটন এলাকায় আর্থার ম্যাকইনটায়ারের জন্ম। কেনিংটন রোড স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ডেনিস কম্পটনের সাথে লন্ডনের বিদ্যালয় দলে ক্রিকেট খেলেছেন। বিদ্যালয় থেকে চলে আসার পর কিছুটা সময় ক্রিকেটের বাইরে অবস্থান করেন। ১৯৩৬ সালে ওভালে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৩৮ সালে সারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। মূলতঃ তিনি অল-রাউন্ডার হিসেবে ব্যাটিং ও লেগ স্পিন বোলিং করতেন।[১] ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সারে দলের পক্ষে ১৯৫২ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত একাধারে খেলেন। ঐ সময়ে তার দল একাধারে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করেছিল।
যুদ্ধের পর সারে দলের বিকল্প উইকেট-রক্ষক হিসেবে শূন্যস্থান সফলতার সাথে পূরণ করেন। ১৯৪৬ সালে নিয়মিত উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনকারী জেরাল্ড মবি অবসর গ্রহণ করলে তিনি এ দায়িত্ব স্থায়ীভাবে পালন করেন। দক্ষ উইকেট-রক্ষকের পাশাপাশি তিনি শক্তিধর প্রথম-শ্রেণীর ব্যাটসম্যান ছিলেন। তিন মৌসুমে সহস্রাধিক রান তুলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটি টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার। ১৯৫০ সালে দুইটি ও ১৯৫৫ সালে একটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১২ আগস্ট, ১৯৫০ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে আর্থার ম্যাকইনটায়ারের।
গডফ্রে ইভান্সের কারণে তাকে ইংল্যান্ড দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়েছে। ডেভিড শেপার্ড ও ম্যালকম হিল্টনের সাথে ১৯৫০ সালে একযোগে টেস্ট অভিষেক ঘটে তার। ওভালে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের পূর্বে ইভান্সের বৃদ্ধাঙ্গলী ভেঙ্গে গেলে তিনি এ সুযোগ পান। তার পরিবর্তে আর্থার ম্যাকইনটায়ার মাঠে নামেন এবং ৪ ও ০ রান তুললে ইংল্যান্ড ইনিংসের ব্যবধানে পরাজিত হবার পাশাপাশি ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে পরাজিত হয়।[২]
ঐ মৌসুমের শীতকালে এমসিসি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৯৫০-৫১ মৌসুমে ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ সফরের জন্য রাখা হলেও ম্যাকইনটায়ারকে প্রথম একাদশে প্রথম টেস্টের জন্য ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় রাখা হয় ও গডফ্রে ইভান্স উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৫ সালে হেডিংলিতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজস্ব তৃতীয় ও সর্বশেষ টেস্ট খেলেন সিরিজের চতুর্থ টেস্টে।
সম্মাননা
নিজ আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলায় ইভান্স পুনরায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে এ সুযোগ পেয়েছিলেন। পঞ্চম টেস্টে ইভান্স অনুপস্থিত থাকলেও তাকে খেলার সুযোগ দেয়া হয়নি। ১৯৫৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা লাভ করেন তিনি।
ডেইলি টেলিগ্রাফে ম্যাকইনটায়ারের স্মরণে পিটার মে লেখেন যে, উইকেট-রক্ষণে গডফ্রে ইভান্স সেরা অবস্থানে থাকলেও ১৯৫০-এর দশকে আর্থার ম্যাকইনটায়ার সর্বাপেক্ষা বিশ্বস্ত উইকেট-রক্ষক হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে অনেকদিন খেলতে পারতেন।[৩]
পিটার মে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে ম্যাকইনটায়ার সম্পর্কে লিখেছেন যে, তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে অনেক খেলায় অংশ নিতে পারতেন। তবে, তিনি মাত্র তিনটি টেস্টে অংশ নিয়েছেন ও একটি টেস্টে উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলেননি। মে মন্তব্য করেন যে, ম্যাকইনটায়ার অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে খেলেছেন ও সারের প্রধান বোলার বেডসার, লোডার, লেকার ও লকের দ্রুতগতিসম্পন্ন বলগুলো সুচারুরূপে নিজ গ্লাভসে বন্দী করেছিলেন। পিটার মে’র মতে, ম্যাকইনটায়ার বলগুলোকে খুব সহজভাবে গ্লাভস বন্দী করেছেন যা গডফ্রে ইভান্সের ন্যায় ডিগবাজী খেয়ে নয়। জিম লেকারের ভয়ঙ্কর বলগুলো সুন্দরভাবে উইকেটের পিছনে অবস্থান করে মোকাবেলা করেছেন।[৩]
বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আর্থার ম্যাকইনটায়ার ব্রিটিশ সৈনিক হিসেবে উত্তর আফ্রিকায় কর্মরত ছিলেন। আঞ্জিও উপত্যকায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হলে এপিটিসি থেকে সার্জেন্ট হিসেবে কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের শেষদিকে ইতালিতে অবস্থানকালীন বেডসার যমজ ভ্রাতৃদ্বয়ের সাথে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
অবসর
১৯৫৮ মৌসুমের পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটকে বিদায় জানান। এরপর তিনি সারের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন ও ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। কোচ থাকালেই কয়েকটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিয়মিত উইকেট-রক্ষক আঘাতপ্রাপ্ত কিংবা অনুপস্থিত থাকলে ১৯৫৯ সালে ছয়টি, ১৯৬০ ও ১৯৬৩ সালে দুইটি করে খেলায় অংশ নেন। ৯ জানুয়ারি, ২০০৭ সালে কেন ক্রান্সটনের মৃত্যুর ফলে তিনি ইংল্যান্ডের বয়োজ্যেষ্ঠ জীবিত সাবেক টেস্ট ক্রিকেটারের মর্যাদা লাভ করেন।
২৬ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে বক্সিং ডেতে হ্যাম্পশায়ারের হর্ডল এলাকায় ৯১ বছর বয়সে আর্থার ম্যাকইনটায়ারের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
আরও পড়ুন