কোলি স্মিথ
১৯৫৭ সালে কোলি স্মিথ |
|
পূর্ণ নাম | ও’নিল গর্ডন স্মিথ |
---|
জন্ম | (১৯৩৩-০৫-০৫)৫ মে ১৯৩৩ বয়েজ টাউন, কিংস্টন, জ্যামাইকা |
---|
মৃত্যু | ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯(1959-09-09) (বয়স ২৬) স্টোক-অন-ট্রেন্ট, স্টাফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড |
---|
ডাকনাম | জিম |
---|
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি |
---|
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি অফ-ব্রেক |
---|
ভূমিকা | অল-রাউন্ডার |
---|
|
জাতীয় দল | |
---|
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৮৬) | ২৬ মার্চ ১৯৫৫ বনাম অস্ট্রেলিয়া |
---|
শেষ টেস্ট | ৩১ মার্চ ১৯৫৯ বনাম পাকিস্তান |
---|
|
---|
|
বছর | দল |
১৯৫৪/৫৫–১৯৫৮/৫৯ | জ্যামাইকা |
---|
|
---|
|
প্রতিযোগিতা |
টেস্ট |
এফসি |
---|
ম্যাচ সংখ্যা |
২৬ |
৭০ |
রানের সংখ্যা |
১৩৩১ |
৪০৩১ |
ব্যাটিং গড় |
৩১.৬৯ |
৪০.৩১ |
১০০/৫০ |
৪/৬ |
১০/২০ |
সর্বোচ্চ রান |
১৬৮ |
১৬৯ |
বল করেছে |
৪৪৩১ |
৯৬৩৫ |
উইকেট |
৪৮ |
১২১ |
বোলিং গড় |
৩৩.৮৫ |
৩১.০২ |
ইনিংসে ৫ উইকেট |
১ |
২ |
ম্যাচে ১০ উইকেট |
– |
– |
সেরা বোলিং |
৫/৯০ |
৫/৬৩ |
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং |
৯/– |
৩৯/– | |
|
---|
|
ও’নিল গর্ডন কোলি স্মিথ (ইংরেজি: Collie Smith; জন্ম: ৫ মে, ১৯৩৩ - মৃত্যু: ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৯) কিংস্টনের বয়েজ টাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন ‘জিম’ ডাকনামে পরিচিত কোলি স্মিথ।
প্রারম্ভিক জীবন
অত্যন্ত মারকূটে ব্যাটসম্যান ছিলেন কোলি স্মিথ। এছাড়াও, অফ স্পিন বোলার হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদা উপভোগ করেছেন। বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার জিম লেকারকে আদর্শ হিসেবে মেনেছেন। ফলশ্রুতিতে এক পর্যায়ে জিম ডাকনামে পরিচিতি পান।[১]
১৯৫৪-৫৫ মৌসুম থেকে ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে নিজ জন্মভূমি জ্যামাইকার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিয়মিতভাবে খেলে গেছেন তিনি। নিজস্ব তৃতীয় প্রথম-শ্রেণীর খেলায় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে জ্যামাইকার পক্ষে ১৬৯ রান তুলেন। ফলশ্রুতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টিনিবদ্ধ হয় তার দিকে।
টেস্ট ক্রিকেট
২৬ মার্চ, ১৯৫৫ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে কোলি স্মিথের। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রানের অভিষেক সেঞ্চুরি করেন তিনি। কিন্তু পরের টেস্টে জোড়া শূন্য হাঁকানোর ফলে দলের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। এরপর চতুর্থ ও পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। সমগ্র সিরিজে ২৫.৭৫ গড়ে ২০৬ রান তুলেন। এছাড়াও বল হাতে ৬৮.০০ গড়ে ৫ উইকেট লাভ করেছিলেন তিনি।[২]
১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। প্রথম টেস্টে ৬৪ রান তুলেন। চতুর্থ উইকেটে এভারটন উইকসের সাথে ১৬২ রানের জুটি গড়েন মাত্র ১০০ মিনিটে। অবশ্য পরবর্তী তিন টেস্টে ব্যাট হাতে তেমন সফলতা লাভ করেননি কোলি স্মিথ। সমগ্র সিরিজে ১৫.৬০ গড়ে ৭৮ রান তুললেও ১৮.৫৩ গড়ে ১৩ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় টেস্টে ২/১ ও ৪/৭৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।[৩]
১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন কোলি স্মিথ। প্রথম টেস্টে ১৬১ ও তৃতীয় টেস্টে ১৬৮ রানের ইনিংস খেলে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন। এক পর্যায়ে ব্রায়ান স্ট্যাদামকে নিয়ে কার পার্কে গাড়ি চালনায় চলে যান বলে জানা যায়। ফলশ্রুতিতে, উইজডেন কর্তৃক ১৯৫৮ সালের সংস্করণে বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে নামাঙ্কিত হন মূলতঃ তার ব্যাটিং, বোলিং ও চমকপ্রদ ফিল্ডিংয়ের জন্য।[৪]
১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন তিনি। ঐ সিরিজে ৪৭.১৬ গড়ে ২৮৩ রানসহ ৩৮.০০ গড়ে ১৩ উইকেট লাভ করেন কোলি স্মিথ। ভারত সফরে যান ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ৩৫.৮৭ গড়ে ২৮৭ রান তুলেন তিনি। এছাড়াও, ২৯.৬৬ গড়ে ৯ উইকেট পান। তন্মধ্যে, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে ১০০ রান তুলেন। এরপর বল হাতে নিয়ে ৩/৯৪ ও ৫/৯০ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। কিন্তু পাকিস্তান সফরে তিন টেস্টে অংশ নিয়ে কম সাফল্য পান। ১৬.২০ গড়ে ৮১ রান ও ২০.০০ গড়ে ৩ উইকেট পান তিনি।
দেহাবসান
১৯৫৮ ও ১৯৫৯ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে বার্নলির পক্ষে খেলেন। তন্মধ্যে, ১৯৫৯ সালে অপরাজিত ৩০৬ রান তুলে লীগের রেকর্ড গড়েন।[৫]
মাত্র ২৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের স্টাফোর্ডশায়ার এলাকার স্টোক-অন-ট্রেন্টে ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৯ তারিখে কোলি স্মিথের দেহাবসান ঘটে। ১৯৫৯ সালে গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি।[৬]
৭ সেপ্টেম্বর ভোর ৪:৪৫ ঘটিকায় দূর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় সঙ্গী গ্যারি সোবার্স ও টম ডিউডনি সাথে ছিলেন। দাতব্য খেলায় অংশ নিতে তারা ভ্রমণ করছিলেন। ঐ সময় সোবার্স চালকের আসনে ছিলেন। তবে, যানজটের কারণে খেলাটি বেশ দেরীতে শুরু হয়। অ্যান্ড্রু সন্ডার্স নামীয় এক গাড়ী চালক ১০ টনের গাড়ীতে গবাদীপশু নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্টাফোর্ডশায়ারের স্টোনের কাছাকাছি এ৩৪ এলাকায় এ দূর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়।[৭][৮]
এ সময় স্মিথ পিছনে ঘুমোচ্ছিলেন ও সামনে ছিটকে পড়েন। শুরুতে তার আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না যা সোবার্সকে তিনি বলেছিলেন। ডিউডনি মন্তব্য করেন যে, আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। কিন্তু তার মেরুদণ্ডে গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় ও এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তিনদিন পর তার মৃত্যু ঘটে। তার দেহ জ্যামাইকায় নিয়ে যাওয়া হলে ৬০০০০ লোকের সমাগমে শবযাত্রা হয়। জ্যামাইকার মে পেন সমাধিক্ষেত্রের ফলকে খোদাই করা আছে: দক্ষ ক্রিকেটার, নিঃস্বার্থ বন্ধু, সমৃদ্ধময় বীর, বিশ্বস্ত সেবক, সাহসী যোদ্ধারূপে।[৯]
তবে, সোবার্স ও ডিউডনি তেমন মারাত্মকভাবে আহত হননি। ঘটনার পর সোবার্সকে পুলিশী জেরার মুখোমুখি হতে হয়।[১০] ১১ নভেম্বর তারিখে স্টোনের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোবার্সকে দায়িত্বজ্ঞানহীন অবস্থায় গাড়ী চালনার অভিযোগ আনা হয়। সোবার্স বন্ধনী ব্যবহার করেননি ও বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক চালকের গাড়ীর মুখোমুখি হন। সোবার্সকে ১০ পাউন্ড জরিমানা প্রদান করা হয় ও ১৬.১৭ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ গুণতে হয়। এছাড়াও, এক মাসের জন্য তার লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। তবে, সোবার্স নিজেকে দোষী হিসেবে মনে করেননি। তিনি দাবী করেন যে, গাড়ীর বাতিতে বিভ্রান্তির কবলে পড়েছিলেন।[১১]
মূল্যায়ন
স্মিথের মৃত্যুর এক বছর পর কেন চ্যাপলিন ‘দ্য হ্যাপি ওয়ারিয়র’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। মাইটি মাউস ও ওয়েসাইড প্রিচার ডাকনামে পরিচিত পেয়েছেন কেননা, তিনি চার্চে পড়াশোনা করতে পছন্দ করতেন। স্মিথের জন্মস্থান ট্রেঞ্চ টাউনে বয়েজ টাউন ক্লাবের রাস্তাটি পরবর্তীকালে তার স্মরণে কোলি স্মিথ ড্রাইভ নামে পুণঃনামাঙ্কিত হয়।
১৯৫৮ সালে স্বদেশী ক্লাইড ওয়ালকটের সাথে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় অভিষিক্ত হন কোলি স্মিথ।[১২]
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ