আর্গ-ই বাম (ফার্সি: ارگ بم), দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের কের্মন প্রদেশের বাম শহরে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম অ্যাডোব ভবন। পুরো ভবনটি ছিল একটি বৃহৎ কেল্লা যার মধ্যে দুর্গ ছিল, কিন্তু দুর্গটির ধ্বংসাবশেষের প্রাধান্য থাকায় পুরো দুর্গটি বর্তমানে বাম দুর্গ নামে পরিচিত।
ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান "বাম এবং এর সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যের" অংশ হিসাবে তালিকাভুক্ত, স্থানটি অন্তত হাখমানেশি সাম্রাজ্যের (খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ থেকে চতুর্থ শতাব্দী) ইতিহাস ধারণ করে। রেশম পথ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের চৌরাস্তা হিসেবে এবং রেশম ও সুতি বস্ত্রের উৎপাদক হিসেবে এই দুর্গটি সপ্তম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছিল।[১]
২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর, একটি ভূমিকম্পে বাম এবং এর পরিবেশের বাকি অংশের সাথে দুর্গটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ভূমিকম্পের কয়েকদিন পর ইরানের রাষ্ট্রপতিমোহাম্মদ খাতামি দুর্গটি পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বাম দুর্গের ইমারতের কোন সুনির্দিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক তারিখ জানা যায় না। যদিও, ঐতিহাসিক সূত্র এবং প্রাচীন গ্রন্থের মাধ্যমে, এই অঞ্চলে প্রথম মানব বসতি হাখমানেশিদের দ্বারা নির্মিত দুর্গে, প্রায় ৫৭৯-৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্গের কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে, একটি প্রাকৃতিক পাহাড়ের চূড়া এবং একটি মনুষ্যসৃষ্ট সোপানকে একত্রিত করে একটি প্ল্যাটফর্মে এটির স্থাপন, প্রত্নতাত্ত্বিকরা পার্সেপোলিসের হাখমানেশি মডেলের সাথে যেটির তুলনা করেছেন।
পার্থিয়ান শাসনামলে, দুর্গটি সম্প্রসারিত করা হয়েছিল এবং আর্গ-ই-বাম দুর্গে পরিণত করা হয়। "বাম এবং ইরানে শহুরে বন্দোবস্ত এবং পরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস" শিরোনামের একটি তুলনামূলক অধ্যয়ন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বাম শহরের অপরিহার্য মূল অংশ এবং গভর্নর বিভাগের পার্থিয়ান যুগে নির্মিত হয়েছিল। সাসানিয়দের অধীনে, দুর্গটি আর্দেশির বাবাকান দখল করেছিলেন। ২২৪ এবং ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নতুন দুর্গ এবং প্রাচীর নির্মিত হয়েছিল।[২]
৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে, আরবদের দ্বারা কের্মন অঞ্চল জয় করা হয়েছিল এবং আর্গ-ই-বাম সম্ভবত যুদ্ধের সময় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। আরব কমান্ডারদের মধ্যে একজন আল-রসূল মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটি প্রাথমিক ইসলামি যুগে ইরানে নির্মিত প্রথম মসজিদগুলির মধ্যে একটি। ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলীর কাছে পরাজিত মুসলমানদের একটি খাওয়ারিজ দল কের্মন ও বামে পালিয়ে আসে এবং এখানে আর্গ-ই-বামে তাদের বসতি স্থাপন করেছিল। ৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে, ইয়াকুব ইবনুল লায়থ আল-সাফারআব্বাসীয়দের সাথে যুদ্ধ করছিলেন, এবং তিনি খাওয়ারিজদের পরাজিত করে আর্গ-ই-বাম দখল করে নেন। এটি তখন তার স্থায়ী বেস ক্যাম্পে পরিণত হয়। দশম শতাব্দীতে ইসলামি লেখকরা প্রথমবারের মতো বামের নাম উল্লেখ করেছিলেন। এই লেখকদের মতে, বাম তখন একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বাজারের স্থান ছিল যার চারপাশে বিস্তৃত কৃষি এলাকা ছিল। শহরটি তার মার্জিত ও রুচিশীল সুতি কাপড়, এটির অনুমিত দুর্ভেদ্য দুর্গ, ব্যস্ত বাজার এবং এর খেজুর গাছের জন্য বিখ্যাত ছিল।[২]
ইরানে মঙ্গোল আক্রমণের পর, বাম এবং কের্মন অঞ্চল কারাখাতাইয়ান রাজবংশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, যারা ১২৪০ থেকে ১৩৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল শাসন করেছিল। বাম মশলা পথের একটি কৌশলগত অবস্থান থেকে উপকৃত হয়েছে, এই অঞ্চলটিকে রেশম পথের সাথে সংযুক্ত করেছে। শহরটি রেশম কীট প্রজনন এবং একটি সমৃদ্ধ রেশম শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।[২]
সফবীয় শাসনামলে, ১৫০২ থেকে ১৭২২ সাল পর্যন্ত, ইরান একটি আপেক্ষিক শান্ত ও স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে গেছে। আর্গ-ই-বাম দেশের বাকি অংশের পাশাপাশি যথেষ্ট উন্নত ছিল। ফোর সিজন প্রাসাদটি এই সময়ে নির্মিত হয়েছিল। সফবীয় শাসনামলের শেষের দিকে, কাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আগা মোহাম্মদ খান আর্গ-ই-বাম জয় করেছিলেন, যিনি আফগানী ও বেলুচি অনুপ্রবেশকে প্রতিহত করার জন্য দুর্গটিকে একটি কৌশলগত পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন এবং এইভাবে এটিকে সামরিক কমপ্লেক্সে পরিণত করেছিলেন। ১৮৩৯ সালে, নিজারিইসমাইলি সম্প্রদায়ের ইমামপ্রথম আগা খান, মোহাম্মদ শাহ কাজরের বিরুদ্ধে উঠে আসেন এবং আর্গ-ই-বামে আশ্রয় নেন, যতক্ষণ না যুবরাজ ফিরোজ মির্জা, যিনি পরে ফরমান ফরমা (শাসকদের শাসক) নামে পরিচিত হন, তাকে গ্রেফতার করে। আর্গ-ই-বামের দেয়ালের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি ধীরে ধীরে লোকেদের প্রাচীরের সীমানার বাইরে বসতি স্থাপন করতে পরিচালিত করে। ১৮৮০ সালে, ফিরোজ মির্জা লিখেছিলেন যে, দুর্গ এলাকায় শুধুমাত্র সামরিক কর্মীরা বসবাস করছিলেন এবং তিনি দুর্গের পাদদেশে থাকা পুরানো এবং পরিত্যক্ত শহরটি ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেন এবং এলাকাটিকে একটি বাগানে পরিণত করার প্রস্তাবনা দেন। ১৯০০ সালে, নতুন শহর বামের নির্মাণ শুরু হয় এবং লোকেরা ধীরে ধীরে পুরানো বাম ছেড়ে চলে যায়।[২]
১৯৩২ সাল পর্যন্ত দুর্গটি একটি গ্যারিসন (সৈন্য সরবরাহ স্থান) হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল; যদিও তারপর থেকে, গ্যারিসন এবং পুরানো শহর পরিত্যক্ত হয়েছে। ১৯৫৩ সালে, স্থানটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ধীরে ধীরে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যদিও, বেশিরভাগ কাজ ১৯৭৩ সাল থেকে সম্পাদিত হয়েছিল।[২]
১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর, আর্গ-ই-বামকে ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংস্থার (আইসিএইচও) দায়িত্বে রাখা হয়। ১৯৯৩ সালে, দুর্গটিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল।[১][২]
↑ কখগঘঙচ"Bam and Arg-e-Bam, Iran"। Auroville Earth Institute, UNESCO। ৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০২২।এই উৎস থেকে এই নিবন্ধে লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।
বহিঃসংযোগ
উইকিমিডিয়া কমন্সে আর্গ-ই বাম সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।