১৯৯০-এর দশকে মুম্বই মহানগর অঞ্চলের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মুম্বই মহানগর অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (MMRDA) মুম্বইয়ের ক্রমবর্ধমান ট্র্যাফিক ও যানজট এবং এর ফলে সংঘটিত দুর্ঘটনা কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছিল। মুম্বই ট্রান্স হার্বার লিংক তৈরি হওয়ার আগে পর্যন্ত থানে খাঁড়ির উপর ৬টি সেতু ছিল, কিন্তু সেগুলো ভবিষ্যতের ট্র্যাফিক ধারণের পক্ষে উপযুক্ত নয়। এর ফলে সমস্ত সেতু অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং তারা ধারণক্ষমতার থেকে বেশি পরিমাণে ট্র্যাফিক বহন করত। এছাড়া মুম্বই ও তার উপশহর নবি মুম্বইয়ের মধ্যে নিত্যযাত্রার সময় বেড়ে যাচ্ছিল। সুতরাং, MMRDA দুই শহরের মধ্যে এক বিস্তীর্ণ সংযোগ স্থাপন করার প্রস্তাব করেছিল, যাতে করে সেটি আরও ট্র্যাফিক ধারণ করতে পারবে এবং ভ্রমণকে আরও সহজ, দ্রুত, নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত করবে। ২০১২ সালে বিবেচনার জন্য মহারাষ্ট্র সরকারকে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ২০১৫ সালে ভারত সরকার এবং সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবকে অনুমোদিত করেছিল। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি ২০২১ সালে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল।[১৬] এপ্রিল ২০১৮-এ মুম্বই ট্রান্স হার্বার লিংকের নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং এটি ৪.৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার পরিকল্পনা ছিল।[৬] কিন্তু কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর জন্য নির্মাণকাজ ৮ মাসের জন্য বিলম্বিত হয়েছিল এবং আগস্ট ২০২৩-এর মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে সেতুটির নির্মাণ ডিসেম্বর ২০২৩-এ সম্পূর্ণ হয়েছিল এবং ১২ জানুয়ারি ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর উদ্বোধন করেছিলেন।[১৭]
পরিকল্পনা
বৈশিষ্ট্য
মুম্বই ট্রান্স হার্বার লিংক বা অটল সেতু ভারতের দীর্ঘতম সমুদ্রসেতু এবং এর বেগ সীমা ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা, অর্থাৎ এতে ২০ মিনিটে ২১ কিমি পথ অতিক্রম করা সম্ভব।[১]মোটর সাইকেল ও অটোরিকশাদের এই সেতু ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় না।[১৮][১৯]
দৃশ্য ও শব্দ রোধক
MMRDA মুম্বই ট্রান্স হার্বার লিংকের ৬ কিমি অংশে দৃশ্য ও শব্দ রোধক যোগ করেছে। সেতু থেকে ভাভা পরমাণু অনুসন্ধান কেন্দ্রের দৃশ্যে বাধা সৃষ্টি করার জন্য দৃশ্য রোধক যোগ করা হয়েছে, এবং শিওড়ির কাদাভূমিতে ফ্লেমিঙ্গো ও অন্যান্য পরিযায়ী পাখিদের চলাচলকে সুরক্ষিত করার জন্য শব্দ রোধক যোগ করা হয়েছে। এছাড়া MMRDA বলেছে যে তারা সেতুটির শিওড়ি অংশের ২ কিমি অংশ এবং নবি মুম্বইয়ের বিদ্যালয় ও অন্যান্য সংবেদনশীল এলাকাদের "সাইলেন্ট জোন" হিসাবে ঘোষণা করবে।[২০] প্রকল্প চলাকালীন ফ্লেমিঙ্গোসহ পরিযায়ী পাখিদের উপর শব্দদূষণের সম্ভাব্য প্রভাব কমানোর জন্য ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রীতে শব্দরোধক বা সাইলেন্সার বসানো ছিল। এই প্রকল্পে রিভার্স সার্কুলেশন ড্রিলিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল যা শব্দের মাত্রা কমাতে ও সামুদ্রিক এলাকায় নির্মাণকাজের গতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছিল।[২১]
পাখি পরিদর্শনের প্ল্যাটফর্ম
এমটিএইচএল-এর নির্মাণের জন্য সামগ্রী ও শ্রমিকদের পরিবহন করার জন্য একটি ৫.৬ কিমি দীর্ঘ অস্থায়ী অ্যাক্সেস সেতু তৈরি করা হয়েছিল। নভেম্বর ২০২১-এ MMRDA ঘোষণা করেছিল যে তারা ঐ অস্থায়ী সেতু ধ্বংস করার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং তারা একে ফ্লেমিঙ্গো ও অন্যান্য পাখি পরিদর্শনের প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করবে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছিল যে এই সিদ্ধান্তের ফলে সেতু ধ্বংস করার খরচ বাঁচবে।[২২]
ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
প্রবেশাধিকার-নিয়ন্ত্রিত সড়ক হিসাবে এমটিএইচএল-এর উপর ট্র্যাফিক চলাচলকে দক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এতে অ্যাডভান্সড ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এটিএমএস) রয়েছে। এটি একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা পরিচালকদের বাস্তব সময়ে ট্র্যাফিক নজরদারি, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনা ও আপৎকালীন প্রতিক্রিয়ায় সাহায্য করে। এছাড়া, এটিএমএস-এর সাথে কাজ করার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইটিএমএস) বর্তমান। আধুনিক ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য সেতুটিকে এক আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।[২৩]
কারিগরি
এই সেতুর কাঠামোতে ব্যবহৃত ইস্পাতের ওজন প্রায় ১.২ লক্ষ টন (১২ কোটি কিলোগ্রাম), যা দিয়ে চারটি হাওড়া সেতু তৈরি করা যায়। এই সেতুটির কাঠামো ঢালাইয়ের জন্য ৮.৩ লক্ষ ঘনমিটার (২.৯ কোটি ঘনফুট)-এর বেশি কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্ট্যাচু অব ইউনিটি নির্মাণে ব্যবহৃত কংক্রিটের থেকে বেশি। ব্যবহৃত রিইনফোর্সড ইস্পাত আইফেল টাওয়ারে এ ব্যবহৃত পরিমাণের থেকে ১৭ গুণ বেশি।
খরচ
সংযোগ
শিওড়ি, শিবাজিনগর ও চিরলেতে এমটিএইচএল-এর তিনটি ইন্টারচেঞ্জ বর্তমান।[২৪]
চিরলে ইন্টারচেঞ্জ এমটিএইচএল-কে মুম্বই–পুণে এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত করে। এছাড়া এটি জওহরলাল নেহেরু বন্দর ও পানভেলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।[২৪] চিরলে ইন্টারচেঞ্জকে ৩৪৮ নং জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে এমটিএইচএল-কে এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযুক্ত করে। তবে ক্রমবর্ধমান ট্র্যাফিক চাহিদা এবং পুণে যাওয়া ও আসার পথে যানজটের জন্য এক্সপ্রেসওয়েটির সাথে সরাসরি সংযোগের প্রয়োজন। এর জন্য এমটিএইচএল-কে এই ইন্টারচেঞ্জ থেকে নবি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রসারিত করা হবে।[২৭]
↑ কখOzarkar, Vallabh (২০২১-১০-১১)। "Mumbai: Bridging the bay"। The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Nair, Aishwarya (১৬ মে ২০১৮)। "Longest steel span for MTHL"। The Asian Age। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৯।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)