অবস্থান
মনসা মুড়াটি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার ৪নং পূর্ব সহদেবপুর ইউনিয়নের ভূইয়ারা গ্রামে অবস্থিত। ভুইয়ারা হাইস্কুল হতে প্রায় ৩০০ মিটার পূর্বে কচুয়া-সাচার সড়ক হতে অর্ধ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং সুন্দরী খালের উত্তর পাশে খোলা মাঠে অবস্থিত ২১টি বাঁশ ঝাড় নিয়ে গঠিত এই মনসা মুড়াটিকে পরিকল্পিত বাগান বলে মনে হয়। [১]
ইতিহাস
জনশ্রুতি রয়েছে, বাসর ঘরে সর্প দংশনের পর মৃত স্বামী লক্ষীন্দরকে সাগরে ভেলায় ভাসিয়ে চলার পথে এক পর্যায়ে ভেলাটি ভুইয়ারা গ্রামে ভিড়ে (ভুইয়ারা গ্রাম এককালে উপকূল এলাকা ছিল বলে কথিত রয়েছে)। সেই ভেলায় ব্যবহৃত কাঁচা বাঁশ থেকে শিস বেরিয়ে বর্তমানের এ মনসা মুড়ার সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, এলাকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন উদ্দেশ্য সফল করতে এ মনসা মুড়ায় দুধ ও কলা দিয়ে থাকে (মানত্ করে)। একসময় ভুইয়ারা গ্রামের লোদ বংশীয় লোকেরা মনসা মুড়ার রক্ষণাবেক্ষণসহ পূজা-অর্চনা করত। ১৯৬৮ সালে এই বংশের লোকজন ভারতে চলে যাওয়ার সময় পাশের মেঘদাইর গ্রামের গোবিন্দ কবিরাজের স্ত্রী যমুনা সুন্দরীকে মনসা মুড়া রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে যায়। এর পর যমুনা সুন্দরীর তিরোধানের পর তার পুত্রবধূ নীলা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে এ মনসা মুড়ায় পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।[১]
পালনীয় অনুষ্ঠান
মনসা মুড়ায় নিত্য, পূজা-অর্চনা ছাড়াও ১ বৈশাখে স্থানীয়দের আয়োজনে মেলা বসে।
ভূমির পরিমাণ
সরকারি ১৯ শতক খাস ভূমির উপর গড়ে উঠা এই মনসা মুড়া হেফাজতে সরকারিভাবে কোন উদ্যোগে নেয়া হয়নি। কিছু সংস্কার কাজ করে এই মনসা মুড়াটিকে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে। [১]
চিত্রশালা
অলৌকিক রহস্য
জানা গেছে একদা এক ব্যক্তি ঐ বাঁশ ঝাড় হতে বাঁশ কেটে নেওয়ার পর বাঁশ ফেরৎ দেওয়ার জন্য বার বার স্বপ্নে দেখে যে, বাঁশ ফেরত না দিলে তার বংশের কোন লোক বাচঁবেনা। তারপরও বাঁশ ফেরত না দেওয়ায় পরবর্তীতে তার নাকে মুখে রক্ত বের হয়ে মারা যান। তারপর তার বংশধরগণ উক্ত বাঁশ ফেরত দিয়ে আসে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা স্থানীয় কিছু লোক এক সাপুড়ে বহরের সাথে মনসা মুড়া থেকে সাপ ধরে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। যখন সাপুড়ে তার “বিন বাশিঁ” বাজানো আরম্ভ করে তখন বাঁশের পাতায় পাতায় ছোট ছোট সাপ গর্ত হতে উঠে আসে। সাপুড়ে একটি সাপ ধরে পাতিলে রাখার সময় কামড় দিলে তার মৃত্যু ঘটে এবং সম্পূর্ণ সাপ সাপুড়ের নৌকার দিকে যেতে আরম্ভ করলে সাপুড়ে দল সাপটি ছেড়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে কোন সাপুড়ে আর সেখান থেকে সাপ ধরতে আসেনা। এমন কি মাঠের মাঝে বাশেঁর ঝাড়ের একটি ঝিংলাও কাটতে কেহ সাহস পায়না।[২]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ