বার্থোলুমিউ রবার্টস (১৭ মে ১৬৮২ - ১০ ফেব্রুয়ারি ১৭২২; জন্ম: জন রবার্টস), ছিলেন একজন ওয়েল্স্ জলদস্যু যিনি ১৭১৯ থেকে ১৭২২ সালের মধ্যে আমেরিকা অঞ্চল ও পশ্চিম আফ্রিকা উপকূলের জাহাজে আক্রমণ করতেন। তিনি জলদস্যুতার স্বর্ণযুগের সবচেয়ে সফল জলদস্যু যিনি সর্বাধিক জাহাজে আক্রমণ করেছিলেন[১] এবং তার কর্মজীবনে ৪৭০-এর বেশি উপঢৌকন গ্রহণ করেছিলেন।[২] তিনি ব্ল্যাক বার্ট নামেও পরিচিত কিন্তু তার জীবদ্দশায় এই নাম কখনো ব্যবহৃত হয়নি।[৩] এছাড়া এই নামের সঙ্গে পশ্চিমা আমেরিকান আউটল’ ব্ল্যাক বার্টের সাথে বিহ্বলতা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রারম্ভিক জীবন
বার্থোলুমিউ রবার্টস ক্যাসনইড বাচ[৪] বা লিটল নিউক্যাসল, পেমব্রুকসায়ার, ওয়েল্স্-এর ফিসগার্ড এবং হ্যাভারফোর্ডওয়েস্টের মাঝামাঝি জায়গায় ১৬৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম জন রবার্টস এবং তার পিতার নাম খুব সম্ভবত জর্জ রবার্টস।[৫] এটি পরিষ্কার নয় যে, কি কারণে রবার্টস তার নাম জন থেকে বার্থোলুমিউতে[৬] পরিবর্তন করেছিল কিন্তু অন্যান্য জলদস্যুদের মত তিনিও সম্ভবত জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর এই নাম পরিবর্তন করেছিলেন।[৭] ধারণা করা হয় ১৬৯৫ সালে যখন তার বয়স ১৩ বছর তখন তিনি সমুদ্রে গিয়েছিলেন কিন্তু ১৭১৮-এর পূর্ব পর্যন্ত তার আর কোন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। ১৭১৮ সালে তিনি বার্বাডোস স্লোপের জাহাজের ম্যাট (সহকর্মী) ছিলেন।[৮]
১৭১৯ সালে তিনি ক্যাপ্টেন আব্রাহাম পামের অধীনে দাসদের জাহাজ প্রিন্সেসের তৃতীয় ম্যাট ছিলেন। একই বছর জুনের প্রথম দিকে প্রিন্সেস পশ্চিম আফ্রিকার (বর্তমান: ঘানা) গোল্ড কোস্ট আনুমাবুতে (পরবর্তী উচ্চারন: আনামাবুয়া) জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ক্যাপ্টেন হুওয়েল ডেভিসের নেতৃত্তে জলদস্যুরা দুটি ভেসেল (ছোট জাহাজ) নিয়ে তাদের আক্রমণ করেছিল। জলদস্যুদের ক্যাপ্টেনও ওয়েল্স্-এর (বস্তুত; মিলফোর্ড হ্যাভেন, পেমব্রুকসায়ার) অধীবাসী ছিলেন এবং তিনি রবার্টসকে পছন্দ করেন। রবার্টসসহ প্রিন্সেসের কিছু ক্রুকে (জাহাজের কর্মী) জোড়পূর্বক জলদস্যুতে পরিনত করা হয়।
ডেভিস শীঘ্রই নেভিগেটর হিসেবে রবার্টসের দক্ষতা আবিষ্কার করেন ও তার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ শুরু করেন।[৯] তিনি ওয়েল্সে্র তথ্য সম্পর্কে রবার্টসের উপর নির্ভর করতেন যদিও অন্য ক্রুদের কাছ থেকে তথ্যটি গোপন রাখেন।[১০] বলা হয়ে থাকে রবার্টস প্রথম দিকে জলদস্যু হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করদেন কিন্তু তিনি এই নতুন জীবনধারা উপভোগও করতেন। ক্যাপ্টেন চার্লস জনসন বলেন,
সৎ সেবায় মানুষকে হতে হয় সাধারণ, মুজরি থাকে কম কিন্তু কাজ করতে হয় বেশি। এটাতে প্রাচুয্র্য ও পরিতৃপ্তি, আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাধীনতা ও শক্তিমত্তা; এবং যারা এই কৃতিত্তে সামঞ্জস্য রাখতে না পারে, যখন সমস্ত বিপত্তি এসে জমা হয়, সবচেয়ে খারাপ সময়ে বিষম চেহারার লোক হতে হয়? না, তখন সুখী জীবন ও সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথটিই আমার জীবনের নীতিবাক্য। -অ্য জেনারেল হিস্টোরি অফ দ্য পাইরেটস (১৭২৪), পৃ.২১৩–২১৪[১১]
যুদ্ধে মৃত্যু, ফেব্রুয়ারি ১৭২২
৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে ক্যাপ্টেন ক্যালোনার ওগলের নেতৃত্বে সৈন্যরা এইসএমএস স্যালো জাহাজ নিয়ে তিনটি জলদস্যু জাহাজের উপর হঠাৎ আক্রমণ পরিচালনা করেন। তিনটি জলদস্যু জাহাজ হল, দ্য রয়াল ফরচুন, দ্য রেঞ্জার ও দ্য লিটল রেঞ্জার যারা কেপ লোপেজ সাগরে আক্রমণের শিকার হন। স্যালো জলদস্যুদের বড় কোন দল এড়াতে দিক পরিবর্তন করে অন্য দিকে মোড় নেন, যাতে জলদস্যুরা মনে করে এটি একটি পলায়নরত বণিক জাহাজ। দ্য রেঞ্জারের দ্বায়িত্বে ছিল জেমস স্কাইরম। যখন জলদস্যুরা গুলি ছুড়ে পরস্পরকে সংকেত দিতে শুরু করে তখন স্যালোর কামান পট খোলা হয় ও গুলি শুরু করা হয়। দশজন জলদস্যু নিহত হয় এবং জেমস কামানের গোলার আঘাতে তার পা হারান কিন্তু জাহাজের ডেক ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে, দ্য রেঞ্জারকে তার রং পরিবর্তনে বাধ্য করা হয় এবং জীবিত ক্রুদের আটক করা হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি স্যালো কেপ লোপেজে ফিরে আসে এবং রয়াল ফরচুনকে সেখানে অবস্থান করতে দেখতে পায়। আগের দিন নেপচুন দখল করেছিল এবং ক্রুরা সকলেই মাতাল অবস্থায় ছিল কিন্তু এই সময়েই রবার্টসের ক্রুদের বেশি দরকার ছিল।[১২] প্রথমে জলদস্যুরা মনে করেছিল, আগত জাহাজটি দ্য রেঞ্জার কিন্তু স্যালো থেকে পালিয়ে আসা এক নাবিক জাহাজটি দেখে চিনতে পারে এবং রবার্টসকে সংবাদটি পরিবেশন করে। রবার্টস তখন নেপচুনের মাস্টার ক্যাপ্টেন হিলের সাথে সকালের নাস্তা করছিলেন। সচরাচর যেমন তিনি যুদ্ধের পূর্বে সুন্দর পোশাক পরিধান করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন, তেমনি এই দিনও সুন্দর পোশাকে সজ্জিত হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।
জলদস্যুদের পরিকল্পনা ছিল স্যালোর পাশ দিয়ে নীরবে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া এবং যখন তারা একবার পাশ কাটাতে পারবে তখন তারা পালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সারেংরা রয়াল ফরচুনকে ঠিক কোর্সে রাখতে ব্যার্থ হয়। ক্যাপ্টেন রবার্টস তখন জাহাজের ডেকে দাড়িয়ে ছিলেন এবং এমন সময় গ্রেপেপশটের একটি আঘাত তার গলায় বিদ্ধ হয় ও তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যখন ওগলি রবার্টসের মৃতদেহ খুঁজে পায় তখন, তিনি বলেছিলেন রবার্টস নাকি সাগরে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার ক্রুরা তাকে সাগরে সমাহিত করেছিল। এরপর এটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
↑Sanders, p. 18. "Black Bart" was coined as the title of a 20th-century poem by the Welsh poet Isaac Daniel Hooson, who apparently picked that name because Johnson described Roberts as having a "black" complexion.
Burl, Aubrey (2006) Black Barty: Bartholomew Roberts and his pirate crew 1718-1723. Sutton Publishing. আইএসবিএন০-৭৫০৯-৪৩১২-২
Cawthorne, Nigel (2005) Pirates: an Illustrated History. Capella. আইএসবিএন১-৮৪১৯৩-৫২০-৪
Dan Conlin, (2009). Pirates of the Atlantic: Robbery, murder and mayhem off the Canadian East Coast. Formac
Cordingly, David (1999) Life Among the Pirates: the Romance and the Reality. Abacus. আইএসবিএন০-৩৪৯-১১৩১৪-৯
Johnson, Charles (1724). A General History of the Robberies and Murders of the most notorious Pyrates (1998 ed.). Conway Maritime Press. আইএসবিএন০-৮৫১৭৭-৭৩২-৫.
Marcus Rediker, (2004) Villains of All Nations: Atlantic Pirates in the Golden Age. Beacon Press. আইএসবিএন০-৮০৭০-৫০২৫-৩
Richards, Stanley (1966) Black Bart. Christopher Davies.
Sanders, Richard (2007), If a Pirate I Must Be ... The True Story of "Black Bart," King of the Caribbean Pirates. Aurum Press, Ltd. আইএসবিএন১-৬০২৩৯-০১৯-৩