দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ
উসমানীয় খলিফা
আমিরুল মুমিনিন
খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের ১৮৯৯ সালের প্রতিকৃতি
উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান (বাদশাহ)
রাজত্ব৩১ আগস্ট ১৮৭৬ – ২৭ এপ্রিল ১৯০৯
তরবারি বন্ধনী৭ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬
পূর্বসূরিপঞ্চম মুরাদ
উত্তরসূরিপঞ্চম মেহমেদ
উজিরে আজম
জন্ম(১৮৪২-০৯-২১)২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২[][]
তোপকাপি প্রাসাদ, কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যু১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮(1918-02-10) (বয়স ৭৫)
বেইলারবেয়ি প্রাসাদ, কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য
সমাধি১৯১৮
সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের সমাধি, ফাতিহ, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক
সঙ্গিনী
বংশধর
অন্যদের মধ্যে
পূর্ণ নাম
আব্দুল হামিদ বিন আব্দুলমেজিদ
রাজবংশউসমানীয়
পিতাপ্রথম আব্দুলমেজিদ
মাতাজন্মদাত্রী মাতা:
তিরিমুজগান কাদন
দত্তক মাতা:
রাহিমে পেরেসতু সুলতান
ধর্মসুন্নি ইসলাম
তুগরাদ্বিতীয় আব্দুল হামিদ স্বাক্ষর

আব্দুল হামিদ অথবা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ (উসমানীয় তুর্কি: عبد الحميد ثانی; তুর্কি: II. Abdülhamid; ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ – ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮) ছিলেন ৩১ আগস্ট ১৮৭৬ থেকে ২৭ এপ্রিল ১৯০৯ সাল পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান এবং ভঙ্গুর রাজ্যের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগকারী শেষ সুলতান।[] উসমানীয় সাম্রাজ্যে তিনি যে সময়কাল জুড়ে রাজত্ব করেছেন তা হামিদীয় যুগ নামে পরিচিত। তিনি বিদ্রোহ (বিশেষ করে বলকানে) সহ পতনের একটি সময়কাল তত্ত্বাবধান করছিলেন এবং রুশ সাম্রাজ্যের (১৮৭৭-১৮৭৮) সাথে একটি ব্যর্থ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন ও তারপরে ১৮৯৭ সালে গ্রিস রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি সফল যুদ্ধ করেন, যদিও উসমানীয়দের এই প্রাপ্তি পরবর্তীকালীন পশ্চিম ইউরোপীয় হস্তক্ষেপ দ্বারা প্রভাবিত ছিলো।

প্রজাতন্ত্রী তরুণ উসমানীয়দের সাথে করা একটি চুক্তি অনুযায়ী তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম সংবিধান জারি করেন,[] এটি তার প্রাথমিক শাসনকে চিহ্নিতকারী প্রগতিশীল চিন্তাধারার একটি চিহ্ন ছিলো। যাইহোক, ১৮৭৮ সালে উসমানীয় সংসদের সাথে মতবিরোধ উল্লেখ করে[] তিনি স্বল্পস্থায়ী সংবিধান ও সংসদ উভয়ই স্থগিত করেন। আমলাতন্ত্রের সংস্কার, রুমেলিয়া রেলওয়েআনাতোলিয়া রেলওয়ের সম্প্রসারণ এবং বাগদাদ রেলওয়েহেজাজ রেলওয়ে নির্মাণ সহ তার শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের আধুনিকীকরণ অব্যাহত ছিলো। এছাড়াও ১৮৯৮ সালে প্রথম স্থানীয় আধুনিক আইন শিক্ষালয়ের সাথে জনসংখ্যা নিবন্ধন ও গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী সংস্কারগুলো ঘটে: আইন, কলা, বাণিজ্য, পুরকৌশল, পশুচিকিৎসা, রীতিনীতি, কৃষিকাজ ও ভাষাবিদ্যা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য অনেক পেশাদার স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ১৮৮১ সালে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলেও ১৯০০ সালে এটি পুনরায় চালু করা হয় এবং সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও সামরিক বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় সম্পর্ক বিস্তৃত করা হয়। জার্মান সংস্থাগুলো সাম্রাজ্যের রেলওয়ে ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার বিকাশে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলো।[] এই আধুনিকীকরণ সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, কারণ সাম্রাজ্যের অর্থ উসমানীয় সরকারি ঋণ প্রশাসনের মাধ্যমে মহা শক্তির নিয়ন্ত্রণে আসে।

আব্দুল হামিদের শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্য ১৮৯৪-১৮৯৬ সালে সংঘটিত আর্মেনীয় ও অ্যাসিরীয়দের গণহত্যার জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে। আব্দুল হামিদের শাসনামলে তাকে বহুবার হত্যাচেষ্টা করা হয়। তার বিরুদ্ধে বহু হত্যা প্রচেষ্টার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত হলো ১৯০৫ সালে আর্মেনীয় বিপ্লবী ফেডারেশন কর্তৃক ইলদিজ হত্যাচেষ্টা[] উসমানীয় বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশও ভিন্নমত ও তরুণ তুর্কি আন্দোলনকে দমন করার জন্য গোপন পুলিশ ব্যবহার করার কারণে তার তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছিলো।[] ১৯০৮ সালে ঐক্য ও প্রগতি সমিতি নামে পরিচিত একটি গোপন বিপ্লবী তরুণ তুর্কি সংগঠন তরুণ তুর্কি বিপ্লবের মাধ্যমে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদকে সংসদ প্রত্যাহার করতে ও সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করে। আব্দুল হামিদ এক বছর পরে তার নিরঙ্কুশতাকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন, যার ফলে ১৯০৯ সালে ৩১ মার্চের ঘটনা হিসেবে পরিচিত একটি ঘটনায় ঐক্যবাদী বাহিনী তাকে সিংহাসনচ্যুত করে। নিজের নৃশংসতার ফলে তিনি পশ্চিমে "লাল সুলতান" নামে পরিচিত ছিলেন।[]

প্রারম্ভিক জীবন

২১ জুন ১৮৬৭ – ৭ আগস্ট ১৮৬৭-এর মধ্যে পশ্চিম ইউরোপ সফরের সময় তার চাচা সুলতান আব্দুল আজিজের সাথে ভ্রমণে সঙ্গ দেওয়াকালে ১৮৬৭ সালে বালমোরাল দুর্গে রাজপুত্র আব্দুল হামিদ।

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ১৮৪২ সালের ২১শে সেপ্টেম্বরে ইস্তাম্বুলের চুরায়ান প্রাসাদ, ওর্তাকোয় বা তোপকাপি প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সুলতান প্রথম আব্দুলমেজিদ[] ও মূলত ভিরজিনিয়া নামধারী[] তিরিমুজগান কাদনের (সার্কাসিয়া, ২০ আগস্ট ১৮১৯ – কনস্টান্টিনোপল, ফেরিয়ে প্রাসাদ, ২ নভেম্বর ১৮৫৩)[][] পুত্র। তার মায়ের মৃত্যুর পর, তিনি পরে তার পিতার বৈধ স্ত্রী পেরেসতু কাদনের দত্তক পুত্র হয়েছিলেন। পেরেসতু আব্দুল হামিদের সৎ বোন জেমিলে সুলতানের দত্তক মা ছিলেন, তার মা দুজদিদিল কাদন ১৮৪৫ সালে দুই বছর বয়সে মাতৃহীন অবস্থায় মারা যান। তারা দুজন একই পরিবারে বড় হন, সেখানে তারা শৈশব একসাথে কাটান।[১০]

অন্যান্য অনেক উসমানীয় সুলতানের বিপরীতে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ দূরবর্তী দেশে সফর করেন। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার নয় বছর আগে তিনি তার চাচা সুলতান আব্দুল আজিজের সাথে প্যারিস (৩০ জুন–১০ জুলাই ১৮৬৭), লন্ডন (১২–২৩ জুলাই ১৮৬৭), ভিয়েনা (২৮–৩০ জুলাই ১৮৬৭) এবং ১৮৬৭ সালের গ্রীষ্মে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের রাজধানী বা শহরে যান (তারা ১৮৬৭ সালের ২১ জুন তারিখে কনস্টান্টিনোপল থেকে চলে যায় ও ১৮৬৭ সালের ৭ আগস্টে ফিরে আসে)।[১১]

উসমানীয় সিংহাসনে আরোহণ

১৮৭৬ সালের ৩১ আগস্টে তার ভাই মুরাদের পদত্যাগের পর আব্দুল হামিদ সিংহাসনে আরোহণ করেন।[][১২] তাঁর যোগদানের সময় কিছু ভাষ্যকার এই দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি কার্যত অপ্রস্তুত হয়ে এয়ুপ সুলতান মসজিদে গিয়েছিলেন যেখানে তাঁকে ওসমানের তলোয়ার দেওয়া হয়। অধিকাংশ মানুষ আশা করেছিলো দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ উদার আন্দোলনকে সমর্থন করবেন, তবে তিনি ১৮৭৬ সালে সাম্রাজ্যের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন ও সঙ্কটময় সময়ে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, বলকানে স্থানীয় যুদ্ধ ও রুশ–তুর্কি যুদ্ধ (১৮৭৭–১৮৭৮) উসমানীয় সাম্রাজ্যের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছিলো। আব্দুল হামিদ এই কঠিন যুদ্ধে ভরপুর সময়গুলোকে নিরঙ্কুশ শাসনের পুনর্গঠন ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন, তাকে উৎখাত করা পর্যন্ত তিনি সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেছিলেন।

প্রথম সাংবিধানিক যুগ, ১৮৭৬–১৮৭৮

আব্দুল হামিদ সাংবিধানিক ব্যবস্থার কিছু রূপ উপলব্ধি করতে তরুণ উসমানীয়দের সাথে কাজ করেন।[১৩] তাত্ত্বিক জায়গায় এই নতুন রূপটি ইসলামি যুক্তির সাথে একটি উদার পরিবর্তন উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে পেরেছিলো। তরুণ উসমানীয়রা বিশ্বাস করতেন যে আধুনিক সংসদীয় ব্যবস্থা হলো ইসলামের প্রথম দিকে বিদ্যমান পরামর্শের অনুশীলন বা শূরা।[১৪]

১৮৭৬ সালের ডিসেম্বরে ১৮৭৫ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় বিদ্রোহের কারণে সার্বিয়ামন্টিনিগ্রোর সাথে তৎকালীন চলমান যুদ্ধ এবং ১৮৭৬ সালের বুলগেরীয় বিদ্রোহ দমন করার জন্য ব্যবহৃত নিষ্ঠুরতার দ্বারা সমগ্র ইউরোপে উদ্ভূত অনুভূতির কারণে আব্দুল হামিদ সংবিধান ও এর সংসদ জারি করেন।[] একটি নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠার কমিশনের নেতৃত্বে মিদহাত পাশা ছিলেন এবং ৬ ডিসেম্বর ১৮৭৬-এ মন্ত্রিসভা দ্বারা নতুন সংবিধান উত্তীর্ণ করা হয়, আব্দুল হামিদকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি মনে করেন এমন কাউকে তিনি নির্বাসিত করার অধিকার দিয়েছিলেন এবং নিয়োগের সাথে একটি সুলতান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার অনুমতি দিয়েছিলেন।[১৫]

১৮৭৬ সালের শেষের দিকে একটি সংবিধান জারি করায় আন্তর্জাতিক কনস্টান্টিনোপল সম্মেলন[১৬][১৭] বিস্মিত হয়েছিলো, কিন্তু সম্মেলনে ইউরোপীয় শক্তিগুলো একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে সংবিধানটিকে প্রত্যাখ্যান করে; তারা ১৮৫৬ সালের সংবিধান (ইসলাহাত হাট্ট-ই হুমায়ুনু) বা ১৮৩৯ সালের গুলহানে আদেশ (হাট্ট-ই শেরিফ) পছন্দ করেছিলো, কিন্তু জনগণের সরকারি কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করার জন্য একটি সংসদের প্রয়োজন ছিলো কিনা তারা সেই প্রশ্ন তুলে।

যেকোনো ঘটনাতে, উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরিবর্তনের অন্যান্য সংস্কারের ন্যায় এটি প্রায় অসম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছিলো। যুদ্ধের জন্য রাশিয়া প্রস্তুত হতে থাকে। ১৮৭৭ সালের প্রথম দিকে রুশ সাম্রাজ্যের সাথে উসমানীয় সাম্রাজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ

রুশ–তুর্কি যুদ্ধে (১৮৭৭–১৮৭৮) প্লেভনা অবরোধে (১৮৭৭) রোমানীয় আক্রমণের অধীনে উসমানীয় সেনা

বিলুপ্তির কাছাকাছি সময়ে ২৪ এপ্রিল ১৮৭৭ সালে রুশদের যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে আব্দুল হামিদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা নিশ্চিত করা হয়। সেই সংঘর্ষে উসমানীয় সাম্রাজ্য ইউরোপীয় মিত্রদের সাহায্য ছাড়াই যুদ্ধ করে। রুশ চ্যান্সেলর রাজপুত্র গোরচাকোভ সেই সময়ের মধ্যে রাইখস্টাড চুক্তির মাধ্যমে কার্যকরভাবে অস্ট্রীয়দের নিরপেক্ষতা ক্রয় করেন। যদিও তখনো বুলগেরীয় বিদ্রোহকে দমন করার জন্য উসমানীয়দের বর্বরতার প্রতিবেদনের পর ভারতে ব্রিটিশ উপস্থিতির জন্য রুশ হুমকির ভয়ে থাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য উসমানীয়দের বিরুদ্ধে জনমতের কারণে সংঘাতে নিজেদের জড়িত করেনি। রুশ বিজয় দ্রুত ফলপ্রসূ করা হয়; ১৮৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লড়াই শেষ হয়। যুদ্ধের শেষে স্বাক্ষরিত সান স্টেফানোর চুক্তিতে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়: উসমানীয় সাম্রাজ্য রোমানিয়া, সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোকে স্বাধীনতা দেয়; এটি বুলগেরিয়াকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে; বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় সংস্কার প্রতিষ্ঠা করা; এবং ডব্রুজার কিছু অংশ রোমানিয়াকে ও আর্মেনিয়ার কিছু অংশ রাশিয়াকে দিয়ে দেওয়া হয়, তাদেরকে একটি বিশাল ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছিলো। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের পর আব্দুল হামিদ ১৮৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংবিধান স্থগিত করেন এবং ১৮৭৭ সালের মার্চ মাসে তার একক বৈঠকের পর সংসদ বরখাস্ত করেন। পরবর্তী তিন দশকের জন্য ইলদিজ প্রাসাদ থেকে আব্দুলহামিদ দ্বারা উসমানীয় সাম্রাজ্য শাসিত হয়।[]

যেহেতু রাশিয়া সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছিলো, তাই সান স্টেফানোর চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে দেশটির প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। মহান শক্তিগুলোর (বিশেষ করে যুক্তরাজ্য) পীড়াপীড়ির ফলে চুক্তিটি পরে বার্লিন কংগ্রেসে সংশোধন করা হয় যাতে রাশিয়ার অর্জিত বড় সুবিধাগুলো হ্রাস করা যায়। এই অনুগ্রহের বিনিময়ে সাইপ্রাস ১৮৭৮ সালে ব্রিটেনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তখন মিশরে সমস্যা হচ্ছিলো, যেখানে একজন কুখ্যাত খিদেবকে পদচ্যুত করতে হয়। উরাবি পাশার সাথে আব্দুল হামিদ তার সম্পর্ককে ভুলভাবে পরিচালনা করেন এবং ফলস্বরূপ ব্রিটেন দুটি প্রদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮৮২ সালে নিজেদের সৈন্য পাঠিয়ে মিশরসুদানের উপর কার্যত নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয়দের অংশগ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় শক্তির পক্ষ হয়ে ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করার সময় সাইপ্রাস, মিশর ও সুদান ১৯১৪ সাল পর্যন্ত স্পষ্টতই উসমানীয় প্রদেশ ছিলো।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

হামিদীয় যুগ

বিচ্ছিন্নতা

১৮৬৮ সালে রাজপুত্র আব্দুল হামিদ।

উসমানীয় নৌবাহিনীর সংস্কারবাদী অ্যাডমিরালদের প্রতি আব্দুল হামিদের অবিশ্বাস (যাদের তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার এবং ১৮৭৬ সালের সংবিধান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করার জন্য সন্দেহ করেছিলেন) ও উসমানীয় নৌবহরকে (যা তার পূর্বসূরি আব্দুল আজিজের শাসনামলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নৌবহর হিসেবে স্থান পায়) সুবর্ণ শৃঙ্গের অভ্যন্তরে বন্ধ করার তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত তার শাসনামল এবং পরে উত্তর আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগর ও এজীয় সাগরের উসমানীয় বিদেশী অঞ্চল ও দ্বীপগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছিলো।[১৮]

আর্থিক অসুবিধা তাকে উসমানীয় জাতীয় ঋণের উপর বিদেশী নিয়ন্ত্রণে সম্মতি দিতে বাধ্য করে। ১৮৮১ সালের ডিসেম্বরে জারি করা একটি ডিক্রিতে সাম্রাজ্যের রাজস্বের একটি বড় অংশ বন্ডহোল্ডারদের (বেশিরভাগ বিদেশী) সুবিধার জন্য সরকারি ঋণ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

১৮৮৫ সালে সাম্রাজ্যের জন্য পূর্ব রুমেলিয়ার সাথে বুলগেরিয়ার একতা আরেকটি আঘাত ছিলো। একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী বুলগেরিয়া সৃষ্টিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা হয়। আব্দুল হামিদকে বহু বছর ধরে বুলগেরিয়ার সঙ্গে এমনভাবে মোকাবিলা করতে হয়েছিলো যেন তা রুশ বা জার্মানির ইচ্ছার বিরুদ্ধে না যায়। এছাড়াও বার্লিন কংগ্রেসের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করা উচিত বলে যেখানে ইউরোপীয় শক্তিগুলো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিলো সেই গ্রিক ও মন্টিনিগ্রীয় সীমান্তের সাথে আলবেনীয় প্রিজরেনের চুক্তির ফলে আলবেনীয় প্রশ্ন সম্পর্কিত মূল সমস্যা বিদ্যমান ছিলো।

ক্রিটকে 'অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা' দেওয়া হয়, কিন্তু এগুলো গ্রিসের সাথে এক হতে চাওয়া সেখানকার জনসংখ্যাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ১৮৯৭ সালের প্রথম দিকে ক্রিটে একটি গ্রিক অভিযান উসমানীয় শাসনকে উৎখাত করার জন্য দ্বীপটিতে যাত্রা করে। এই কার্যক্রমের ফলে যুদ্ধ শুরু হয়, যেখানে উসমানীয় সাম্রাজ্য গ্রিসকে পরাজিত করে (গ্রিক-তুর্কি যুদ্ধ (১৮৯৭) দেখুন); তবে কনস্টান্টিনোপল চুক্তির ফলে ক্রিটকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও রাশিয়ার দ্বারা সামরিক ক্ষেত্র হিসেবে দখল করা হয়। গ্রিসের প্রিন্স জর্জকে শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ও কার্যকরভাবে ক্রিট উসমানীয় সাম্রাজ্যের কাছ থেকে হারিয়ে যায়।[] একইভাবে ১৮৮৯-৯০ সালে স্থানীয় শেখদের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে দ্রুজ ও অন্যান্য সিরীয়দের মধ্যে আম্মিয়া নামক একটি বিদ্রোহে তারা বিদ্রোহীদের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করে, সেইসাথে বেলজীয়ফরাসি কোম্পানিগুলোকে সেই জায়গার মধ্যে দিয়ে বৈরুত ও দামেস্ক মধ্যকার রেলপথ স্থাপন ও ব্যবহারের জন্য ছাড় দেয়।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সংস্কার

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ জনগণকে সালাম জানাচ্ছেন।

অধিকাংশ মানুষ আশা করেছিলো যে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ উদারপন্থী ধারণার অধিকারী হবেন ও কিছু রক্ষণশীল একজন বিপজ্জনক সংস্কারক হিসেবে তাকে সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন।[১৯] যাইহোক, যুবরাজ থাকাবস্থায় সংস্কারবাদী তরুণ উসমানীয়দের সাথে কাজ করা ও একজন উদারপন্থী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া সত্ত্বেও সিংহাসন গ্রহণের পরপরই তিনি ক্রমবর্ধমানভাবে রক্ষণশীল হয়ে ওঠেন। আব্দুল হামিদ ইস্তিবদাদ নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ায় তার মন্ত্রীদের সচিব পদে নামিয়ে আনতে সফল হন ও ইলদিজ প্রাসাদে সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ প্রশাসনকে নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করেন। সকল তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য জনসাধারণের তহবিলের খেলাপি, একটি খালি কোষাগার, ১৮৭৫ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় বিদ্রোহ, সার্বিয়ামন্টিনিগ্রোর সাথে যুদ্ধ, রুশ–তুর্কি যুদ্ধের ফলাফল এবং বুলগেরীয় বিদ্রোহ বন্ধ করার জন্য আব্দুল হামিদ সরকারের দ্বারা ইউরোপ জুড়ে জাগানো অনুভূতি তার শঙ্কায় অবদান রেখেছে।[১৯]

শিক্ষার জন্য তার প্রদত্ত চাপের ফলে ১৮টি পেশাদার স্কুল প্রতিষ্ঠা হয় ও বর্তমানে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত দারুলফুনুন ১৯০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[] তিনি সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও সামরিক বিদ্যালয়ের একটি বড় ব্যবস্থাও তৈরি করেন।[] ১২ বছর মেয়াদে (১৮৮২-১৮৯৪) ৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মিত হয়। হামিদীয় যুগে বিদেশী প্রভাব মোকাবেলা করা শিক্ষাগত সংস্কারের লক্ষ্য হওয়ায় এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো ইউরোপীয় শিক্ষার কৌশলগুলো ব্যবহার করতো, তবুও এগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে উসমানীয় পরিচয় ও ইসলামি নৈতিকতার একটি দৃঢ় বোধ জাগিয়েছিলো।[২০]

আব্দুল হামিদ বিচার মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করেন এবং রেল ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।[] সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়েছিলো। ১৮৮৩ সালের মধ্যে একটি রেলপথ কনস্টান্টিনোপল ও ভিয়েনাকে সংযুক্ত করে এবং এর কিছুদিন পরেই ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস প্যারিসকে কনস্টান্টিনোপলের সাথে সংযুক্ত করে। তার শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে রেলপথ প্রসারিত হয় যাতে উসমানীয় নিয়ন্ত্রিত ইউরোপ ও আনাতোলিয়াকে কনস্টান্টিনোপলের সাথে সংযুক্ত করা যায়। উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে ভ্রমণ ও যোগাযোগের বর্ধিত ক্ষমতা সাম্রাজ্যের বাকি অংশের উপর কনস্টান্টিনোপলের প্রভাবকে শক্তিশালী করে।[২০]

আব্দুল হামিদ তার নিরাপত্তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেন। আব্দুল আজিজের সিংহাসনচ্যুত হওয়ার স্মৃতি তার মনে ছিলো এবং এটা তাকে এই ব্যাপারে নিশ্চিত করে যে সাংবিধানিক সরকার কোন ভালো ধারণা নয়। এই কারণে সাম্রাজ্যে তথ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও গণমাধ্যমকে কঠোরভাবে বিবাচিত করা হয়েছিলো। সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে গোপন পুলিশ (উমুরু হাফিয়ে) ও তথ্যদাতাদের একটি সংযোগ উপস্থিত ছিলো এবং দ্বিতীয় সাংবিধানিক যুগ ও ভবিষ্যতের তুর্কি প্রজাতন্ত্রের অনেক রাজনীতিবিদ গ্রেপ্তার ও নির্বাসনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম মতবিরোধ রোধ করার জন্য নিবিড় পরিদর্শনের বিষয় ছিলো। এটা হাস্যকর ছিলো যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একইভাবে বিবাচনের আনাড়ি বিধিনিষেধের কাছে বিরক্ত হওয়ার ফলে আব্দুল হামিদ যে বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন সেগুলো "অসন্তোষের প্রজনন ক্ষেত্র" হয়ে ওঠে।[২১]

আর্মেনীয় সমস্যা

১৮৭৮ সালে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের শাসনামলের ২০ কুরুশ
দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সিলমোহর

১৮৯০ সালের দিকে আর্মেনীয়রা বার্লিন সম্মেলনে তাদের প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি করতে শুরু করে।[২২] এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য ১৮৯০-৯১ সালে সুলতান আব্দুল হামিদ কুর্দি দস্যুদের আধা-সরকারি মর্যাদা দেন যারা ইতিমধ্যেই সক্রিয়ভাবে প্রদেশগুলোতে আর্মেনীয়দের সাথে দুর্ব্যবহার করছিলো। কুর্দিদের (পাশাপাশি অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠী যেমন তুর্কোমান) দ্বারা গঠিত ও রাষ্ট্র দ্বারা সশস্ত্র বাহিনী হামিদিয়ে আলায়লারু ("হামিদীয় রেজিমেন্ট") নামে পরিচিত ছিলো।[২৩] হামিদিয়ে ও কুর্দি ব্রিগ্যান্ডদের আর্মেনীয়দের উপর আক্রমণ করার জন্য শস্য, খাদ্যসামগ্রীর ভাণ্ডার বাজেয়াপ্ত করা ও গবাদি পশু তাড়ানোর জন্য নির্বিচারে নিদান দেওয়া হয় এবং এসব অপরাধের শাস্তি থেকে পালানোর বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী ছিলো কারণ তারা শুধুমাত্র সামরিক আদালতের অধীন ছিলো।[২৪] এই ধরনের সহিংসতার মুখে আর্মেনীয়রা সামাজিক গণতান্ত্রিক হুনচাকীয় পার্টি (হুনচাক; ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত) ও আর্মেনীয় বিপ্লবী ফেডারেশন (এআরএফ বা দাশনাকসতিউন, ১৮৯০ সালে তিফলিসে প্রতিষ্ঠিত) নামক বিপ্লবী সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করে।[২৫] ১৮৯২ সালে মেরজিফোন ও ১৮৯৩ সালে তোকাতে সংঘর্ষ ও অশান্তি আরম্ভ হয়। আর্মেনীয়দের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুসলমানদের (অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুর্দিদের) ব্যবহার করার সময় দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ কঠোর পদ্ধতিতে এই বিদ্রোহগুলোকে দমন করতে দ্বিধা করেননি।[২৬] হামিদীয় গণহত্যা হিসেবে পরিচিত এই ধরনের সহিংসতাগুলোর ফলস্বরূপ ৩,০০,০০০ আর্মেনীয় নিহত হয়েছিলো। আর্মেনীয় গণহত্যার খবর ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয় এবং বিদেশী সরকার ও মানবিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে একইভাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিলো।[২৭] তাই পশ্চিমে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদকে "রক্তাক্ত সুলতান" বা "লাল সুলতান" হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯০৫ সালের ২১ জুলাইয়ে জনসাধারণের উপস্থিতিতে আর্মেনীয় বিপ্লবী ফেডারেশন একটি গাড়ি বোমা হামলার মাধ্যমে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে, কিন্তু সুলতানের আগমন এক মিনিটের জন্য বিলম্বিত হয় ও বোমাটি খুব দ্রুত বিস্ফোরিত হয়ে যায়, এর ফলে ২৬ জন নিহত ও ৫৮ জন আহত হয় (যার মধ্যে চারজন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়) এবং ১৭ গাড়ি ধ্বংস হয়। সংস্কারের জন্য আর্মেনীয় আকাঙ্ক্ষা পরিচালনার সাথে সাথে এই ক্রমাগত আগ্রাসনের ফলস্বরূপ পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তিগুলো তুর্কিদের সাথে আরও প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।[]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইন

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের মানচিত্র

তুরস্কের মার্কিন মন্ত্রী অস্কার স্ট্রস সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের পর তিনি সুলু সালতানাতের মোরোদের কাছে একটি চিঠি পাঠান যাতে তারা যেন মার্কিন দখলকে প্রতিহত না করে ও মোরো বিদ্রোহের শুরুতে মার্কিনদের সাথে সহযোগিতা করতে বলে। সুলু মোরোরা আদেশটি মেনে চলে।

স্ট্রসকে ১৮৯৮ সালে মার্কিন রাষ্ট্র সচিব জন হে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের কাছে যেতে বলেছিলেন যাতে সুলতান (যিনি খলিফাও ছিলেন) ফিলিপাইনের সুলু সালতানাতের মোরো সুলু মুসলমানদের কাছে মার্কিন আধিপত্য ও মার্কিন সামরিক শাসনের প্রতি আত্মসমর্পণ করার কথা বলে একটি চিঠি লিখে তাদের কাছে জমা দিতে বলে। সুলতান তাদের কথা মেনে নেন ও চিঠিটি লিখেন, সেটি মক্কার মাধ্যমে সুলুতে পাঠানো হয় যেখানে দুই সুলু প্রধান এটিকে সুলুতে নিয়ে এসেছিলো এবং যেহেতু "সুলু মোহামেডানরা ... বিদ্রোহকারীদের সাথে যোগ দিতে অস্বীকার করে ও নিজেদেরকে তাদের অধীনে রাখে। আমাদের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, যার ফলে মার্কিন সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।" তাই কাজটি সফল হয়।[২৮] উসমানীয় সুলতান খলিফা হিসেবে তার অবস্থান ব্যবহার করে সুলু সুলতানকে আদেশ দেন যাতে তারা মার্কিন নিয়ন্ত্রণের অধীন হয়ে গেলে প্রতিরোধ না করে ও যুদ্ধ না করার নির্দেশ দেন।[২৯] যেহেতু সুলুর সুলতানের সাথে চুক্তিটি ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিনেটে জমা দেওয়া হয়নি তাই রাষ্ট্রপতি ম্যাককিনলি ১৮৯৯ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চাশতম কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে তার ভাষণে সুলু মোরোসে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তুরস্কের ভূমিকা উল্লেখ করেননি।[৩০] সুলতান আব্দুল হামিদের "সর্ব-ইসলামি" মতাদর্শ থাকা সত্ত্বেও তিনি পশ্চিমা বিশ্ব ও মুসলমানদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করার প্রয়োজন অনুভব না করার কারণে সুলু মুসলমানদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিরোধ না করার জন্য সাহায্যের জন্য স্ট্রসের একটি অনুরোধে অনায়াসে সম্মত হন।[৩১] সুলু সুলতানকে উসমানীয় সুলতানের দ্বারা রাজি করানোর কারণে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও সুলু সালতানাতের মধ্যে সদ্ভাব ছিলো।[৩২] জন পি ফিনলে লিখেছিলেন যে:

এসব তথ্য যথাযথভাবে বিবেচনা করার পর খলিফা হিসেবে সুলতান ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জের মোহামেডানদের কাছে একটি বার্তা প্রেরণ করেন যাতে তারা মার্কিনদের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেন, কারণ মার্কিন শাসনে তাদের ধর্মে কোনো হস্তক্ষেপ অনুমোদিত হবে না। যেহেতু মোরোরা এর চেয়ে বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করেনি তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তারা ফিলিপিনো বিদ্রোহের সময় আগুইনালদোর প্রতিনিধিদের দ্বারা করা সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলো। চমৎকার কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি ম্যাককিনলি জনাব স্ট্রসকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছিলেন ও বলেছিলেন, এই কৃতিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত বিশ হাজার সৈন্যকে মাঠে রক্ষা করেছে।[৩৩][৩৪]

ফিলিপাইনে যুদ্ধের সময় মুসলমানদের সাথে মোকাবিলা করার জন্য খলিফা হিসেবে আব্দুল হামিদ নিজের অবস্থানে থাকায় মার্কিনরা তার সাথে যোগাযোগ করে[৩৫] এবং এলাকার মুসলিম জনগণ মার্কিনদের সাহায্য করার জন্য আব্দুল হামিদের প্রেরিত আদেশ মেনে চলছিলো।[৩৬][৩৭][৩৮]

পরবর্তীতে মোরো সুলু সালতানাতের সাথে মার্কিনদের স্বাক্ষরিত সুলতানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ও শাসনব্যবস্থায় সালতানাতের স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা প্রদানকারী বেটস চুক্তি মার্কিনরা লঙ্ঘন করে মোরোভূমি আক্রমণ করে,[৩৯] এর ফলে মোরো বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৯০৪ মার্কিন ও মোরো মুসলমানদের মধ্যে সংঘটিত এই যুদ্ধের ফলে মোরো ক্রেটার গণহত্যার ন্যায় মোরো মুসলিম নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়।

জার্মানির সমর্থন

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ সেনাপতি ডং ফুশিয়াংয়ের অধীনে কর্মরত কিং সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর সেবায় চৈনিক মুসলিম সেনাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন; তারা সাহসী কানসু নামেও পরিচিত ছিলো।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও রাশিয়া নিয়ে গঠিত ত্রৈধ আঁতাত উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতো। আব্দুল হামিদ ও তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাগণ বিশ্বাস করতেন যে সাম্রাজ্যকে এই মহা শক্তির সমান খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সুলতানের দৃষ্টিতে উসমানীয় সাম্রাজ্য ছিলো খ্রিস্টানদের চেয়ে অধিক মুসলমান থাকার জন্য পৃথক একটি ইউরোপীয় সাম্রাজ্য।

সময়ের সাথে সাথে ফ্রান্স (১৮৮১ সালে তিউনিসিয়া দখল) ও গ্রেট ব্রিটেন (১৮৮২ সালে মিশরে কার্যত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা) থেকে প্রদর্শিত বৈরী কূটনৈতিক মনোভাব আব্দুল হামিদকে জার্মানির দিকে আকৃষ্ট করতে বাধ্য করে।[] ইস্তাম্বুলে কাইজার দ্বিতীয় উইলহেম আব্দুল হামিদের দ্বারা দুই বার আমন্ত্রিত হন; প্রথমবার ২১ অক্টোবর ১৮৮৯ সালে ও নয় বছর পর ১৮৯৮ সালের ৫ অক্টোবর। (দ্বিতীয় উইলহেম পরবর্তীতে পঞ্চম মেহমেদের অতিথি হিসেবে ১৫ অক্টোবর ১৯১৭ সালে তৃতীয়বারের জন্য কনস্টান্টিনোপল পরিদর্শন করেন)। জার্মান কর্মকর্তাগণ (যেমন ব্যারন ভন ডের গোলটজ ও বোডো-বোরিস ভন ডিটফুর্থ) উসমানীয় সেনাবাহিনীর সংগঠনের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

উসমানীয় সরকারের অর্থ ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য জার্মান সরকারি কর্মকর্তাদের আনা হয়। উপরন্তু, জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের তৃতীয় পুত্রকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে নিয়োগ করার বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সুলতানের পরামর্শ নেওয়ার গুজব ছড়িয়েছিলো।[৪০] জার্মানির বন্ধুত্ব পরার্থপর ছিল না; এটি রেলওয়ে ও ঋণ ছাড় দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয়েছিলো। ১৮৯৯ সালে একটি উল্লেখযোগ্য জার্মান স্বপ্ন বার্লিন–বাগদাদ রেলপথ নির্মাণ মঞ্জুর করা হয়েছিলো।[]

জার্মানির কাইজার দ্বিতীয় উইলহেমও চৈনিক মুসলিম সৈন্যদের সাথে সমস্যায় পড়লে সুলতানের সাহায্যের জন্য অনুরোধ করতেন। বক্সার বিদ্রোহের সময় চৈনিক মুসলিম সাহসী কানসুরা জার্মান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্যান্য আট জাতিদের নিয়ে গঠিত জোট বাহিনীর সাথে যুদ্ধে তাদের প্রতিহত করছিলো। মুসলিম সাহসী কানসু ও বক্সাররা ১৯০০ সালে সেমুর অভিযানে ল্যাংফাংয়ের লড়াইয়ে জার্মান ক্যাপ্টেন গুইডো ভন ইউডোমের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীকে পরাজিত করে ও আন্তর্জাতিক লেগেশন অবরোধের সময় আটকে পড়া জোট বাহিনীকে অবরোধ করে। গ্যাসালি অভিযানের দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় জোট বাহিনী পিকিংয়ের লড়াইয়ে চৈনিক মুসলিম সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়। কাইজার উইলহেম চৈনিক মুসলিম সৈন্যদের দ্বারা এতটাই শঙ্কিত হয়ে পড়েন যে তিনি আব্দুল হামিদকে মুসলিম সৈন্যদের যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার একটি উপায় খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন। আব্দুল হামিদ কায়সারের দাবি মেনে নিয়ে চীনে ১৯০১ সালে এনভার পাশাকে পাঠান, কিন্তু ততক্ষণে বিদ্রোহ শেষ হয়ে যায়[৪১] যেহেতু উসমানীয়রা ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে সংঘাত চায়নি ও উসমানীয় সাম্রাজ্য জার্মান সহায়তা পাওয়ার জন্য নিজেদেরকে জোর করছিলো। তাই উসমানীয় খলিফা বক্সারদের সাহায্য না করার জন্য চৈনিক মুসলমানদের অনুরোধ করে একটি আদেশ জারি করেন, সেটি মিশরীয় ও মুসলিম ভারতীয় সংবাদপত্রে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিলো।[৪২]

তরুণ তুর্কি বিপ্লব

প্রথম উসমানীয় সংসদ (মেজলিশে উমুমি) উদ্বোধন, ১৮৭৭।
উসমানীয় সাম্রাজ্যে ১৯০৮ সালে তরুণ তুর্কি বিপ্লব১৮৭৬ সালের সংবিধানের পুনরুদ্ধার উদযাপন করার দৃশ্য সম্বলিত একটি গ্রিক লিথোগ্রাফ

সেনাবাহিনীতে প্রাসাদের গুপ্তচর ও তথ্যদাতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সাথে মেসিডোনীয় সংঘাতের জাতীয় অপমান শেষ পর্যন্ত বিষয়টিকে একটি সংকটে নিয়ে আসে।[৪৩] রুমেলীয় সেনা ইউনিটগুলোতে বিশেষভাবে প্রভাবশালী একটি তরুণ তুর্কি সংগঠন ঐক্য ও প্রগতি সমিতি (সিইউপি) ১৯০৮ সালের গ্রীষ্মে তরুণ তুর্কি বিপ্লব পরিচালনা করে। সেলানিকের সৈন্যরা ইস্তাম্বুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে (২৩ জুলাই) জানতে পেরে আব্দুল হামিদ সাথে সাথে আত্মসমর্পণ করেন। ২৪ জুলাইয়ের একটি ইরাদ স্থগিত থাকা ১৮৭৬ সালের সংবিধান পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেয়; পরের দিন, আরও একটি ইরাদ গুপ্তচরবৃত্তি ও বিবাচন বাতিল করে এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আদেশ দেয়।[৪৩]

১৭ ডিসেম্বরে আব্দুল হামিদ সিংহাসন থেকে একটি বক্তৃতা দিয়ে উসমানীয় সংসদের সূচনা করেন যেখানে তিনি বলেছিলেন যে প্রথম সংসদ "জনগণের শিক্ষাকে পর্যাপ্ত উচ্চ স্তরে নিয়ে আসা ও সাম্রাজ্য জুড়ে শিক্ষার সম্প্রসারণ করার আগ পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিলো।"[৪৩]

সিংহাসনচ্যুতি

সুলতানের নতুন মনোভাব রাজ্যের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়াশীল উপাদানগুলোর পাশাপাশি কূটকৌশলের সন্দেহ থেকে নিজেকে রক্ষা করেনি, একটি সন্দেহ ৩১ মার্চের ঘটনা হিসেবে পরিচিত ১৩ এপ্রিল ১৯০৯-এর প্রতিবিপ্লবের প্রতি তার মনোভাবের দ্বারা নিশ্চিত হয়। তখন রাজধানীতে সামরিক বাহিনীর কিছু অংশে রক্ষণশীল বিদ্রোহের দ্বারা সমর্থিত সেনারা হুসেইন হিলমি পাশার সরকারকে উৎখাত করে তরুণ তুর্কিদের রাজধানী থেকে বিতাড়িত করেছিলো, আব্দুল হামিদ তার স্থলে আহমেত তেভফিক পাশাকে নিযুক্ত করেন এবং আবারও সংবিধান স্থগিত ও সংসদ বন্ধ করে দেন। যাইহোক, সুলতান শুধুমাত্র কনস্টান্টিনোপলের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন, অন্যদিকে তরুণ তুর্কিরা তখনো সেনাবাহিনীর বাকি অংশ ও প্রদেশগুলোয় প্রভাবশালী ছিলো। স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করার জন্য সিইউপি মাহমুদ শেভকেত পাশার কাছে আবেদন করে, তিনি আন্দোলন বাহিনী নামে পরিচিত একটি অপরিকল্পিত বাহিনী গঠনের আয়োজন করেন ও এটি কনস্টান্টিনোপলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শেভকেত পাশার প্রধান স্টাফ ছিলেন অধিনায়ক মোস্তফা কামাল। আন্দোলন বাহিনী প্রথমে আয়া স্টেফানোসে থামে ও মেহমেদ তালাতের নেতৃত্বে রাজধানী থেকে পালিয়ে আসা প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের সাথে আলোচনা করে। সেখানে গোপনে সিদ্ধান্ত হয় আব্দুল হামিদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। যখন আন্দোলন বাহিনী ইস্তাম্বুলে প্রবেশ করে তখন আব্দুল হামিদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে একটি ফতোয়া জারি করা হয় ও সংসদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দেয়। ২৭ এপ্রিল আবদুল হামিদের সৎ ভাই রেশাদ এফেন্দিকে সুলতান পঞ্চম মেহমেদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[১৯]

সুলতানের পাল্টা অভ্যুত্থান তরুণ তুর্কিদের উদারনৈতিক সংস্কারের বিরুদ্ধে থাকা রক্ষণশীল ইসলামপন্থীদের কাছে পছন্দসই ছিলো, সিংহাসনচ্যুতির ফলে আদানা গণহত্যা নামে পরিচিত এক গণহত্যায় আদানা প্রদেশে হাজার হাজার খ্রিস্টান আর্মেনীয়দের উপর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।[৪৪]

সিংহাসনচ্যুতির পরে

ইস্তাম্বুলের দিভানিওলু সড়কে অবস্থিত সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ, আব্দুল আজিজ ও দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সমাধি (তুর্বে)

প্রাক্তন সুলতানকে সেলানিকে (বর্তমানে থেসালোনিকি) বন্দী করা হয়,[৪৩] অধিকাংশ সময় তিনি শহরটির দক্ষিণ উপকণ্ঠে ভিলা আলাতিনিতে ছিলেন। ১৯১২ সালে যখন সেলানিক গ্রিসের অংশ হয় তখন তাকে কনস্টান্টিনোপলে বন্দী অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তার শেষ দিনগুলো বসফরাসের বেইলারবেয়ি প্রাসাদে নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে একত্রে অধ্যয়ন, কাঠমিস্ত্রি অনুশীলন ও নিজ স্মৃতিকথা লিখে কাটিয়েছিলেন, পরে তিনি তার ভাই শাসক সুলতান পঞ্চম মেহমেদের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮ সালে মারা যান। তাকে ইস্তাম্বুলে দাফন করা হয়।

১৯৩০ সালে, পাঁচ বছর স্থায়ী মামলার পর তার নয় জন বিধবা ও তেরো সন্তানকে তার জমিদারি থেকে ৫ কোটি মার্কিন ডলার মঞ্জুর করা হয়েছিলো। তার সম্পত্তির মূল্য ছিলো ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার।[৪৫]

আব্দুল হামিদ উসমানীয় সাম্রাজ্যের নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শেষ সুলতান ছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যের ৩৩ বছরের পতনের সভাপতিত্ব করেন যে সময়ে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো তার সাম্রাজ্যকে "ইউরোপের অসুস্থ ব্যক্তি" হিসেবে গণ্য করতো।[৪৬]

সর্ব-ইসলামবাদ

১৮৯৭ সাল থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত তখন কাবার তওবার দরজায় কী ঝুলানো হয়েছিলো তার একটি উদাহরণ। এটি মিশরে উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের শাসনের অধীনে তৈরি হয়। তার নামটি কুরআনের একটি আয়াত অনুসরণ করে পঞ্চম লাইনে সেলাই করা হয়েছে।[৪৭]

আব্দুল হামিদ বিশ্বাস করতেন যে তানযিমাযতের ধারণা সাম্রাজ্যের বিভিন্ন জনসাধারণকে উসমানীয়বাদের ন্যায় একটি সাধারণ পরিচয়ে আনতে পারেনি। তিনি সর্ব-ইসলামবাদ নামক একটি নতুন আদর্শিক নীতি গ্রহণ করেন; যেহেতু ১৫১৭ সাল থেকে শাসন করা উসমানীয় সুলতানরাও নামমাত্র খলিফা ছিলেন, তাই তিনি সেই সত্যকে প্রচার করতে চেয়েছিলেন ও উসমানীয় খিলাফতের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যে জাতিসত্তার বিশাল বৈচিত্র্য দেখেন ও বিশ্বাস করতেন যে ইসলামই হলো তার মুসলিম জনসাধারণকে একত্রিত করার একমাত্র উপায়।

তিনি ইউরোপীয় শক্তির অধীনে বসবাসকারী মুসলমানদের এক রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হতে বলার মাধ্যমে সর্ব-ইসলামবাদকে উৎসাহিত করেন। এটি বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের জন্য হুমকির কারণ হয়, যেমন বসনীয় মুসলমানদের মাধ্যমে অস্ট্রিয়া, তাতারকুর্দিদের মাধ্যমে রাশিয়া, মরক্কোর মুসলমানদের মাধ্যমে ফ্রান্সস্পেন এবং ভারতীয় মুসলমানদের মাধ্যমে ব্রিটেনে[৪৮] কার্যকর সরকারের প্রতিবন্ধক হওয়ায় উসমানীয় সাম্রাজ্যে বিদেশীদের সুযোগ-সুবিধা খর্ব করা হয়েছিলো। নিজ রাজত্বের একেবারে শেষের দিকে তিনি শেষ পর্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কনস্টান্টিনোপল–বাগদাদ রেলওয়েকনস্টান্টিনোপল–মদিনা রেলওয়ে নির্মাণ আরম্ভ করার জন্য তহবিল সরবরাহ করেন, এই সিদ্ধান্ত হজের জন্য মক্কা ভ্রমণকে আরো সুলভ করে তোলে। তিনি সিংহাসনচ্যুত হওয়ার পর উভয় রেলপথের নির্মাণ ত্বরান্বিত হয় ও তরুণ তুর্কিদের দ্বারা সম্পন্ন হয়। ইসলাম ও খলিফার আধিপত্য প্রচারের জন্য ধর্মপ্রচারকদের দূরবর্তী দেশে পাঠানো হয়েছিলো।[৪৩] নিজ শাসনামলে আব্দুল হামিদ থিওডোর হের্জল প্রদত্ত উসমানীয়দের ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (স্বর্ণে ১৫ কোটি পাউন্ড স্টার্লিং) পরিশোধ করার বিনিময়ে ফিলিস্তিনে জায়নবাদীদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার একটি সনদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি হের্জলের দূতকে এটা বলার জন্য বিখ্যাত যে "যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমাদের শরীরকে আমি বিভক্ত করবো না, কেবল আমাদের মৃতদেহকেই তারা বিভক্ত করতে পারবে।"[৪৯]

সর্ব-ইসলামবাদ একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিলো। গ্রিক–উসমানীয় যুদ্ধের পর অনেক মুসলমান এর বিজয় উদযাপন করে ও উসমানীয়দের এই বিজয়কে মুসলমানদের বিজয় হিসেবে দেখে। যুদ্ধের পর মুসলিম অঞ্চলে বিদ্রোহ, বাধাপ্রদান ও সংবাদপত্রে ইউরোপীয় উপনিবেশের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয়।[৪৮][৫০] যাইহোক, সাম্রাজ্যের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের কারণে মুসলমানদের অনুভূতির প্রতি আব্দুল হামিদের আবেদন সবসময় অতো কার্যকর ছিলো না। মেসোপটেমিয়াইয়েমেনে অশান্তি সেখানকার স্থানীয় সমস্যা ছিলো; বাড়ির কাছাকাছি স্থানে শুধুমাত্র স্ফীতিহ্রাস ও গুপ্তচরবৃত্তি ব্যবস্থা দ্বারা সেনাবাহিনীতে ও মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে আনুগত্যের একটি চিহ্ন বজায় রাখা হতো।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ব্যক্তিগত জীবন

ইস্তাম্বুলে লিবীয় সুফি শেখ মুহাম্মদ জাফির আল মাদানির সমাধি, যিনি সুলতানকে শাদিলি সুফি তরিকায় প্রবেশ করিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রী ছিলেন ও ব্যক্তিগতভাবে তিনি কিছু উচ্চমানের আসবাব তৈরি করেন, সেগুলো আজ ইস্তাম্বুলের ইলদিজ প্রাসাদ, শালে কোশকুবেইলারবেয়ি প্রাসাদে দেখা যায়। মঞ্চনাট্যের প্রতিও তিনি আগ্রহী ছিলেন ও তিনি ব্যক্তিগতভাবে উসমানীয় তুর্কিতে অনেক শাস্ত্রীয় মঞ্চনাট্যের প্রথম অনুবাদ করেন। এছাড়াও তিনি মুজুকা-ই হুমায়ুন (উসমানীয় সাম্রাজ্যিক ব্যান্ড/বাদকদল, যেটি তার পিতামহ দ্বিতীয় মাহমুদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়, তিনি ১৮২৮ সালে দোনিজেত্তি পাশাকে এর প্রশিক্ষক জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন)-এর জন্য বেশ কয়েকটি নাটক রচনা করেছিলেন ও ইলদিজ প্রাসাদের নাট্যমঞ্চে ইউরোপের বিখ্যাত অভিনয়শিল্পীদের নিয়োগ করেছিলেন। এটি ১৯৯০-এর দশকে পুনরুদ্ধার করা হয় ও সেখানে ১৯৯৯ সালের চলচ্চিত্র হারেম সুয়ারে প্রদর্শিত হয়েছিলো (চলচ্চিত্রটি শুরু হয় দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের একটি অভিনয় দেখার দৃশ্য দিয়ে)। তার অতিথিদের মধ্যে একজন ছিলেন বিশ্বখ্যাত ফরাসি মঞ্চ অভিনেত্রী সারা বেরনার্ত যিনি দর্শকদের জন্য অভিনয় করেছিলেন।[৫১]

এছাড়াও তিনি ইয়ালি গুরেশের একজন ভালো কুস্তিগির ও কুস্তিগিরদের একজন 'পৃষ্ঠপোষক' ছিলেন। সাম্রাজ্যে তিনি কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন ও নির্বাচিত কুস্তিগিরদের প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হতো। আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগতভাবে খেলোয়াড়দের ধরে আনতেন ও তাদের মধ্যে ভালোরা প্রাসাদেই থেকে যেতেন। তিনি একজন দক্ষ চিত্রশিল্পীও ছিলেন, তিনি নিজের চতুর্থ সঙ্গিনী বিদার কাদনের একমাত্র পরিচিত প্রতিকৃতি আঁকেন। তিনি শার্লক হোমস উপন্যাসের প্রতি এতো অনুরক্ত ছিলেন[৫২] যে ১৯০৭ সালে এর লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলকে ২য় শ্রেণীতে নিশানে মাজেদি পদকে ভূষিত করেছিলেন।[৫৩]

ধর্ম

সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ঐতিহ্যবাহী ইসলামি সুফিবাদের অনুশীলনকারী ছিলেন। তিনি সুলতান হওয়ার আগে থেকে মুহাম্মাদ জাফির আল মাদানি নামক লিবীয় শাদিলি মাদানি শেখের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন যার পাঠদানের সময় উনকাপানিতে ছদ্মবেশে অংশগ্রহণ করতেন। সিংহাসনে আরোহণের পর দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ শেখ আল মাদানিকে ইস্তাম্বুলে ফিরে আসতে বলেন। শেখ নবনিযুক্ত ইলদিজ হামিদিয়ে মসজিদে শাদিলি স্মরণের (জিকির) সমাবেশের সূচনা করেন; প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি সুফি ওস্তাদদের সাথে জিকির পাঠ করতেন।[৫১] তিনি সুলতানের ঘনিষ্ঠ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ১৮৭৯ সালে, সুলতান খিলাফতের সমস্ত মাদানি সুফি লজগুলোর (যাওইয়াস ও তেক্কেস নামেও পরিচিত) কর মাফ করে দেন। ১৮৮৮ সালে, তিনি এমনকি ইস্তাম্বুলে শাদিলি সুফিবাদের মাদানি তরিকার জন্য একটি সুফি লজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এটিকে তিনি আরতুরুল টেককে মসজিদের অংশ হিসেবে অনুমোদন করেন। ১৯১৮ সালে সুলতানের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্রিশ বছর ধরে সুলতান ও শেখের এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকে।[৫৪]

কাব্য

ফার্সি ভাষা ও লিপিতে তার হাতে লেখা কবিতার একটি নমুনা, এটা তার মেয়ে আয়শে সুলতানের লেখা আমার পিতা আব্দুল হামিদ বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

আরও অনেক উসমানীয় সুলতানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আব্দুল হামিদ কবিতা লিখে গেছে। তার একটি কবিতা অনুবাদ করে এরকম পাওয়া যায়:

প্রভু আমার জানি আমি সবচেয়ে প্রিয়জন আপনি (আল আজিজ)

... এবং আপনি ছাড়া কেউ নয় প্রিয়জন
সে আপনিই, আর কিছু নয়
খোদা আমার এই কঠিন সময়ে ধরুন আমার হাত

খোদা আমার এই সঙ্কটময় সময়ে সহায় হোন আমার

দৃষ্টিভঙ্গি

এফএকে ইয়াসামির মতে:[৫৫]

তিনি ছিলেন দৃঢ়সংকল্প এবং ভীরুতার, অন্তর্দৃষ্টি ও কল্পনার এক আকর্ষণীয় সংমিশ্রণ, অপরিসীম ব্যবহারিক সতর্কতা ও ক্ষমতার মৌলিক বিষয়গুলোর জন্য একটি সহজাত প্রবৃত্তি। তাকে প্রায়ই অবমূল্যায়ন করা হতো। নিজের কর্মকাণ্ডের বিচারে, তিনি একজন শক্তিশালী দেশীয় রাজনীতিবিদ ও একজন কার্যকর কূটনীতিক ছিলেন।[৫৬]

পরিবার

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের অনেক সঙ্গিনী ছিলো কিন্তু তাদের কাউকেই তিনি নিজ সুস্পষ্ট ইচ্ছায় রাজনৈতিক প্রভাব রাখতে দেননি; একইভাবে তিনি যার জন্য তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার অধিকারী ছিলেন তথা তার দত্তক মা, রাহিমে পেরেসতু সুলতানকে বা তার পরিবারের অন্যান্য মহিলা সদস্যদেরও এই ধরনের প্রভাব রাখতে দেননি, যদিও তাদের মধ্যে কারো কারো তখনো ব্যক্তিগতভাবে অথবা হারেমের দৈনন্দিন জীবনে কিছু মাত্রার ক্ষমতা ছিলো। এর কারণ হলো আব্দুল হামিদ নিশ্চিত ছিলেন যে তার পূর্বসূরিদের শাসনামল, বিশেষত তার চাচা আব্দুল আজিজ ও তার পিতা প্রথম আব্দুলমেজিদের শাসনামলে রাষ্ট্রের বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদী পরিবারের মহিলাদের অত্যধিক হস্তক্ষেপের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। একমাত্র আংশিক ব্যতিক্রম ছিলেন তার সৎ ও দত্তক বোন জেমিলে সুলতান

সঙ্গিনী

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের কমপক্ষে ষোল জন সঙ্গিনী ছিলেন:[৫৭][৫৮][৫৯][৬০][৬১][৬২]

  • নাজিকেদা কাদন (১৮৪৮ – ১১ এপ্রিল ১৮৯৫)। তিনি ছিলেন সুলতানের বাশকাদন (প্রথম সঙ্গিনী)। তিনি ছিলেন একজন আবখাজীয় রাজকন্যা, জন্মনাম মেদিহা হানম, তিনি ছিলেন জেমিলে সুলতানের অধীনস্থ নববধূ। তার একমাত্র মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণে তিনি বছরের পর বছর গভীর বিষণ্নতার ফলে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। তার একটি মেয়ে ছিলো।
  • সাফিনাজ নুরেফসুন কাদন (১৮৫০ – ১৯১৫)। তার আসল নাম ছিলো আয়শে ও তিনি ছিলেন প্রথম আব্দুলমেজিদের শেষ সঙ্গিনী ইলদিজ হানমের ছোট বোন। ইলদিজ হানম যখন আবদুলমেজিদকে বিয়ে করেন, তখন আয়শেকে শাহজাদা আবদুল আজিজের সেবায় পাঠানো হয়, যেখানে তার নামকরণ করা হয় সাফিনাজ। হারুন আচবার মতে, আবদুল আজিজ তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি শাহজাদা আব্দুল হামিদের (ভবিষ্যত দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ) প্রেমে পড়েছিলেন। অনুভূতিটি পারস্পরিক ছিলো এবং যুবরাজ তার সৎ মা রাহিমে পেরেসতু কাদনের সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি আবদুল আজিজকে বলেছিলেন যে সাফিনাজ অসুস্থ ও তার বায়ু পরিবর্তন প্রয়োজন; পরে আব্দুল আজিজকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তারপরে আব্দুল হামিদ ১৮৬৮ সালের অক্টোবরে গোপনে সাফিনাজকে বিয়ে করেন, তার নাম নুরেফসুন রাখা হয়। যাইহোক, তিনি হারেমে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারেননি ও আব্দুল হামিদের একমাত্র স্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তারপরে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়ার পর ১৮৭৯ সালে তাকে দেওয়া হয়। তার কোন সন্তান ছিল না।
  • বেদরিফেলেক কাদন (১৮৫১ – ১৯৩০)। যখন রাশিয়া ককেশাস আক্রমণ করে তখন এই সার্কাসীয় রাজকুমারী ইস্তাম্বুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাহিমে পেরেসতু সুলতান মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের হারেম শাসন করেন। আবদুল হামিদ সিংহাসনচ্যুত হওয়ার পর তিনি তাকে ত্যাগ করেন, সম্ভবত তাদের ছেলেকে উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়নি বলে তিনি হতাশ হয়েছিলেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিলো।
  • বিদার কাদন (৫ মে ১৮৫৫ – ১৩ জানুয়ারি ১৯১৮)। কাবার্দীয় রাজকন্যা, তাকে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সঙ্গিনীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও কমনীয় বলে মনে করা হতো। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ছিলো।
  • দিলপেসেন্দ কাদন (১৬ জানুয়ারি ১৮৬৫ – ১৭ জুন ১৯০১)। তিনি জাতিতে জর্জীয়। তিনি দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের দাদা দ্বিতীয় মাহমুদের শেষ সহধর্মিণী তিরিয়াল হানমের কাছে শিক্ষিত হয়েছিলেন। তার দুই মেয়ে ছিলো।
  • মেজিদেমেস্তান কাদন (৩ মার্চ ১৮৬৯ – ২১ জানুয়ারি ১৯০৯)। তার জন্মনাম কাদরিয়ে কামিলে মেরভে হানম, তিনি ছিলেন ষষ্ঠ মেহমেদের ভবিষ্যত সঙ্গিনী এমিনে নাজিকেদা কাদনের খালা। তিনি তার অন্যান্য সহধর্মিণী ও তার সৎ সন্তান সহ সকলের মাঝে প্রিয় ছিলেন। তিনি তার সঙ্গিনীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন, কিন্তু তিনি কখনই তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তার একটি ছেলে ছিলো, যে ছিলো আব্দুল হামিদের প্রিয়।
  • এমসালিনুর কাদন (১৮৬৬ – ১৯৫২)। তিনি তার বোন তেসরিদ হানমের সাথে প্রাসাদে প্রবেশ করেন যিনি শাহজাদা ইবরাহিম তেভফিকের সঙ্গিনী হয়েছিলেন। তিনি খুব সুন্দরী ছিলেন। তিনি নির্বাসনে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সাথে যাননি ও দারিদ্র্যের মধ্যে মারা যান। তার একটি মেয়ে ছিলো।
  • দেস্তিজার মুশফিকা কাদন (১৮৭২ – ১৮ জুলাই ১৯৬১)। তিনি জাতিতে আবখাজীয় ছিলেন, জন্মনাম আয়শে হানম। তিনি দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের চাচা সুলতান আবদুল আজিজের মা পারতেভনিয়াল সুলতানের অধীনে তার বোনের কাছে বেড়ে ওঠেন। তিনি নির্বাসনে আব্দুল হামিদের সাথে গিয়েছিলেন এবং তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সাথে ছিলেন, এটাও বলা হয় যে সুলতান তার কোলে মারা গিয়েছিলেন। তার একটি মেয়ে ছিলো।
  • সাজকার হানম (৮ মে ১৮৭৩ – ১৯৪৫)। তিনি একজন সম্ভ্রান্ত আবখাজীয় ছিলেন, জন্মনাম ফাতমা জেকিয়ে হানম। তিনি সুলতানের সেসব সঙ্গিনীদের মধ্যে ছিলেন যারা নির্বাসনে দ্বিতীয় আব্দুলহামিদের সাথে গিয়েছিলেন ও তিনি পরে তার মেয়ের সাথে তুরস্ক ত্যাগ করেন। তার একটি মেয়ে ছিলো।
  • পেইভেস্তে হানম (১৮৭৩ – ১৯৪৩)। আবখাজীয় রাজকুমারী, জন্মনাম হাতিজে রাবিয়া হানম ও তিনি লেয়লা আচবার খালা। তিনি আগে তার বোনদের সাথে নাজিকেদা কাদনের সেবা করতেন ও তারপর হারেমের কোষাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। তিনি তার স্বামীর সাথে নির্বাসনে ও তারপর নিজের ছেলের সাথে চলে গিয়েছিলেন। তার একটি ছেলে ছিলো।
  • পেসেন্দ হানম (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৬ – ৫ নভেম্বর ১৯২৪)। জন্মনাম রাজকুমারী ফাতমা কাদরিয়ে আচবা, তিনি ছিলেন তার প্রিয় সঙ্গিনীদের একজন যিনি নিজের দয়া, দাতব্য ও সহনশীলতার জন্য পরিচিত। তিনি সেই সঙ্গিনী ছিলেন যিনি আমৃত্যু দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সাথে ছিলেন ও তার মৃত্যুর পর শোকের নমুনা হিসেবে তিনি নিজের চুল কেটে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলেন। তার একটি মেয়ে ছিলো।
  • বেহিজে হানম (১০ অক্টোবর ১৮৮২ – ২২ অক্টোবর ১৯৬৯)। তিনি ছিলেন সাজকার হানমের চাচাতো বোন ও তার আসল নাম ছিল বেহিয়ে হানম। তিনি অহংকারী ও গর্বিত ছিলেন, প্রথমে তাকে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের ছেলে শাহজাদা মেহমেদ বুরহানেদ্দিনকে বিয়ে করতে হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেহিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সুলতান নিজেই তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তার দুটি যমজ ছেলে ছিলো।
  • সালিহা নাজিয়ে কাদন (১৮৮৭ – ১৯২৩)। তার জন্মনাম জেলিহা হানম ও তাকে আতিকে নাজিয়ে কাদন নামেও ডাকা হতো। তিনি নিজের উদারতা এবং বিনয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সুলতানের প্রিয় ও তার স্ত্রীদের মধ্যে যারা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সাথে ছিলেন তাদের অন্যতম। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ছিলো।
  • দুরদানে হানম (১৮৬৭ – জানুয়ারি ১৯৫৭)।
  • জালিবোস হানম (১৮৮০ – ?)।
  • নাজলায়ার হানম।

পুত্র

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের অন্তত আট জন পুত্র ছিলেন:[৫৯][৬৩]

  • শাহজাদা মেহমেদ সেলিম (১১ জানুয়ারি ১৮৭০ – ৫ মে ১৯১৭) – বেদরিফেলেক কাদনের সন্তান। তার বাবার সাথে নিজের বনিবনা হয়নি। তার আটজন সঙ্গিনী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিলো।
  • শাহজাদা মেহমেদ আব্দুলকাদির (১৬ জানুয়ারি ১৮৭৮ – ১৬ মার্চ ১৯৪৪) – বিদার কাদনের সন্তান। তার সাতজন সঙ্গিনী, পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে ছিলো।
  • শাহজাদা আহমেদ নুরি (১২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৮ – ৭ আগস্ট ১৯৪৪) – বেদরিফেলেক কাদনের সন্তান। তার সঙ্গিনী ছিলো কিন্তু কোন সন্তান ছিলো না।
  • শাহজাদা মেহমেদ বুরহানেদ্দিন (১৯ ডিসেম্বর ১৮৮৫ – ১৫ জুন ১৯৪৯) – মেজিদেমেস্তান কাদনের সন্তান। তার চার সঙ্গিনী ও দুই পুত্র ছিল।
  • শাহজাদা আব্দুররাহিম হায়রি (১৫ আগস্ট ১৮৯৪ – ১ জানুয়ারি ১৯৫২) – পেইভেস্তে হানমের সন্তান। তার দুই সঙ্গিনী ছিল, এক ছেলে ও এক মেয়ে।
  • শাহজাদা আহমেদ নুরেদ্দিন (২২ জুন, ১৯০১ – ডিসেম্বর ১৯৪৪) – বেহিজে হানমের সন্তান। তিনি ছিলেন শাহজাদা মেহমেদ বেদরেদিনের যমজ। তার একটি সঙ্গিনী ও একটি পুত্র ছিল।
  • শাহজাদা মেহমেদ বেদরেদ্দিন (২২ জুন ১৯০১ – ১৩ অক্টোবর ১৯০৩) – বেহিজে হানমের সন্তান। শাহজাদা আহমেদ নুরেদ্দিনের যমজ। তিনি ইলদিজ প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মেনিনজাইটিসে মারা যান ও ইয়াহিয়া এফেন্দি কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
  • শাহজাদা মেহমেদ আবিদ (১৭ মে, ১৯০৫ – ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) - সালিহা নাজিয়ে কাদনের সন্তান। তার দুই সঙ্গিনী ছিলো কিন্তু কোনো সন্তান ছিলো না।

কন্যা

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের অন্তত তেরো জন মেয়ে ছিলেন:[৫৯][৬৩]

  • উলভিয়ে সুলতান (১৮৬৮ – ৫ অক্টোবর ১৮৭৫) – নাজিকেদা কাদনের সন্তান। দোলমাবাহজে প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি সাত বছর বয়সে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে মারা যান: যখন তার মা পিয়ানো বাজাচ্ছিলেন ও তাদের চাকরদের খাবারের জন্য বরখাস্ত করা হলো, তখন উলভিয়ে সুলতান ম্যাচ বা মোমবাতি নিয়ে খেলতে শুরু করেন। তার পোষাকে আগুন ধরে যায় ও তার সোনার কোমরবন্ধনী তার পোশাকের ভিতরে আটকে যায়, যদিও তার মা সেটা খুলতে গিয়ে নিজের হাত পুড়িয়ে ফেলেন। আতঙ্কে নাজিকেদা তার মেয়েকে তুলে নেন ও সাহায্যের জন্য চিৎকার করে সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নামতে থাকেন, কিন্তু নড়ানড়ি আগুন বাড়িয়ে দেয় ও উলভিয়ে সুলতান জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান, ঘটনাটি তার মাকে সম্পূর্ণ হতাশায় ফেলে দেয়, যেখান থেকে তিনি কখনও সুস্থ হননি। তাকে ইয়েনি জামিতে সমাহিত করা হয়।
  • জেকিয়ে সুলতান (১২ জানুয়ারি ১৮৭২ – ১৩ জুলাই ১৯৫০) – বেদরিফেলেক কাদনের সন্তান। তিনি একবার বিয়ে করেছিলেন ও তার দুটি কন্যা ছিলো। তিনি ছিলেন আব্দুল হামিদের প্রিয় কন্যাদের অন্যতম।
  • ফাতমা নাইমে সুলতান (৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ – ১৯৪৫) – বিদার কাদনের সন্তান। তিনি দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের প্রিয় কন্যা, যিনি তাকে "আমার সিংহাসনের কন্যা" বলে ডাকতেন, কারণ তিনি তার সিংহাসনে আরোহণের তারিখের কাছাকাছি সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি দুবার বিয়ে করেছিলেন ও তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ছিলো। ১৯০৪ সালে তিনি একটি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন যখন তিনি আবিষ্কার করেন যে তার চাচাতো ভাই পঞ্চম মুরাদের মেয়ে হাতিজে সুলতানের সাথে তার প্রথম স্বামী পরকীয়া করছে।
  • নাইলে সুলতান (৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৪ – ২৫ অক্টোবর ১৯৫৭) – দিলপেসেন্দ কাদনের সন্তান। তিনি একবার বিয়ে করেছিলেন, কোন সন্তান নেই।
  • সেনিয়ে সুলতান (১৮৮৪ – ১৮৮৪) – মায়ের নাম অজানা।
  • সেনিহা সুলতান (১৮৮৫ – ১৮৮৫) – দিলপেসেন্দ কাদনের সন্তান। পাঁচ মাস বয়সে তিনি মারা যান।
  • শাদিয়ে সুলতান (৩০ নভেম্বর ১৮৮৬ – ২০ নভেম্বর ১৯৭৭) – এমসালিনুর কাদনের সন্তান। তিনি দুবার বিয়ে করেছিলেন ও তার একটি মেয়ে ছিলো।
  • হামিদে আয়শে সুলতান (১৫ নভেম্বর ১৮৮৭ – ১০ আগস্ট ১৯৬০) – মুশফিকা কাদনের সন্তান। তিনি দুইবার বিবাহিত এবং তিন পুত্র ও একটি কন্যা ছিলো।
  • রেফিয়া সুলতান (১৫ জুন ১৮৯১ – ১৯৩৮) – সাজকার হানমের সন্তান। তিনি একবার বিয়ে করেছিলেন ও তার দুটি কন্যা ছিলো।
  • হাতিজে সুলতান (১০ জুলাই ১৮৯৭ – ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮) - পেসেন্দ হানমের সন্তান। তিনি গুটিবসন্তে মারা যান, ইয়াহিয়া এফেন্দি কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
  • আলিয়ে সুলতান (১৯০০ – ১৯০০) – মায়ের নাম অজানা। জন্মের কয়েকদিন পর সে মারা যায়।
  • জেমিলে সুলতান (১৯০০ – ১৯০০) – মায়ের নাম অজানা। জন্মের কয়েকদিন পর সে মারা যায়।
  • সামিয়ে সুলতান (১৬ জানুয়ারি ১৯০৮ – ২৪ জানুয়ারি ১৯০৯) – সালিহা নাজিয়ে কাদনের সন্তান। তিনি নিউমোনিয়ায় মারা যান, ইয়াহিয়া এফেন্দি কবরস্থানের শাহজাদা আহমেদ কামালেদ্দিনের সমাধিতে তাকে সমাহিত করা হয়।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

  • আব্দুল দ্য ড্যামড (১৯৩৫) সুলতানের শেষ জীবনের শেষের কাছাকাছি একটি সময় চিত্রিত করেছে।
  • পায়িতাহত: আব্দুলহামিদ, ইংরেজিতে 'দ্য লাস্ট এম্পেরোর' নামে পরিচিত, একটি তুর্কি জনপ্রিয় ঐতিহাসিক টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক যা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের রাজত্বের শেষ ১৩ বছর চিত্রিত করেছে।[৬৪]
  • ডন রোজার কমিক বইয়ের গল্প "দ্য ট্রেজারি অফ ক্রোয়েসাস"-এ স্ক্রুজ ম্যাকডাক একটি অনুমতিপত্র বের করেন যা ১৯০৫ সালে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ স্বাক্ষর করেছিলেন, এটি ম্যাকডাক কার্টে ব্লাঞ্চকে এফেসোসের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খনন করার অনুমতি দেয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা

উসমানীয় সম্মাননা
বিদেশী সম্মাননা ও সজ্জা

চিত্রশালা

বেশ কয়েকটি হত্যাচেষ্টার হুমকির মুখে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ প্রায়শই ভ্রমণ করতেন না (যদিও এখনও অনেক পূর্ববর্তী শাসকের চেয়ে বেশি)। আলোকচিত্রগুলো তার রাজ্যে কী ঘটছিলো তার চাক্ষুষ প্রমাণ সরবরাহ করতো। তিনি তার সাম্রাজ্যের হাজার হাজার আলোকচিত্রের অনুমোদন দিয়েছিলেন যার মধ্যে জ্যঁ প্যাসকেল সিবার কনস্টান্টিনোপল স্টুডিওর ছবি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[৭৯] ও গ্রেট ব্রিটেন[৮০] সহ বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আলোকচিত্রের বড় উপহার অ্যালবাম সুলতান উপহার দেন। মার্কিন সংগ্রহটি লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে রাখা হয়েছে ও ডিজিটালকরণ করা হয়েছে।[৮১]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

উদ্ধৃতি

  1. Hoiberg, Dale H., সম্পাদক (২০১০)। "Abdulhamid II"বিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনEncyclopedia Britannica। I: A-ak Bayes (15th সংস্করণ)। Chicago, IL: Encyclopedia Britannica Inc.। পৃষ্ঠা 22আইএসবিএন 978-1-59339-837-8 
  2. Some sources state that his birth date was on 22 September.
  3. Overy, Richard pp. 252, 253 (2010)
  4. "Abdulhamid II | biography – Ottoman sultan"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  5. Razmik Panossian (১৩ আগস্ট ২০১৩)। The Armenians: From Kings and Priests to Merchants and CommissarsColumbia University Press। পৃষ্ঠা 165। আইএসবিএন 978-0-231-13926-7 
  6. Freely, John – Inside the Seraglio, published 1999, Chapter 15: On the Shores of the Bosphorus
  7. "Turkish Royalty"। Ancestry। ৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১২ 
  8. "Osmanlı İmparatorluğu Türk Sultanları"। Osmanlı Araştırmaları Vakfı। ১১ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১২ 
  9. Brookes, Douglas Scott (২০১০)। The Concubine, the Princess, and the Teacher: Voices from the Ottoman Harem। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 978-0-292-78335-5 
  10. "Sultan Abdülaziz – Avrupa Seyahati"blog.milliyet.com.tr 
  11. Chambers Biographical Dictionary, আইএসবিএন ০-৫৫০-১৮০২২-২, p. 3
  12. Davison, Roderique H. Reform in the Ottoman Empire. Princeton University Press, 1963
  13. Hourani, Albert. Arabic Thought in the Liberal Age, 1798–1939. Cambridge University Press, 1962, p. 68
  14. Freely, John (১৯৯৮)। Istanbul: The Imperial City (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Books। পৃষ্ঠা 282। আইএসবিএন 978-0-14-024461-8 
  15. The Encyclopædia Britannica, Vol.7, Edited by Hugh Chisholm, (1911), 3; Constantinople, the capital of the Turkish Empire
  16. Britannica, Istanbul ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে:When the Republic of Turkey was founded in 1923, the capital was moved to Ankara, and Constantinople was officially renamed Istanbul in 1930.
  17. "Turkish Naval History: The Period of the Navy Ministry"। Dzkk.tsk.mil.tr। ৭ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  18. Chisholm 1911
  19. Cleveland, William L. (2008)"History of the Modern Middle East" (4th ed.) pg.121.
  20. Cleveland, William; Burton, Martin (২০১৩)। A History of the Modern Middle East। Boulder, CO: Westview Press। পৃষ্ঠা 123–124। আইএসবিএন 978-0-8133-4833-9 
  21. "Curios Information about Armenia"। Armenica.org। 
  22. Klein, Janet (2011). The Margins of Empire: Kurdish Militias in the Ottoman Tribal Zone. Stanford: Stanford University Press, pp. 21–34.
  23. McDowall, David (2004). A Modern History of the Kurds (3rd rev. and updated ed.) London: I.B. Tauris, pp. 60–62.
  24. Nalbandian, Louise (1963). The Armenian Revolutionary Movement: The Development of Armenian Political Parties through the Nineteenth Century. Berkeley: University of California Press.
  25. "Constitutional Rights Foundation"। Cfr-usa.org। ৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২৩ 
  26. Rodogno, Davide. Against Massacre: Humanitarian Interventions in the Ottoman Empire, 1815–1914. Princeton University Press, 2012, pp. 185–211; Gary J. Bass, Freedom's Battle: The Origins of Humanitarian Intervention. New York: Alfred A. Knopf, 2008; Balakian, The Burning Tigris
  27. Kemal H. Karpat (২০০১)। The Politicization of Islam: Reconstructing Identity, State, Faith, and Community in the Late Ottoman State। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 235–। আইএসবিএন 978-0-19-513618-0 
  28. Moshe Yegar (১ জানুয়ারি ২০০২)। Between Integration and Secession: The Muslim Communities of the Southern Philippines, Southern Thailand, and Western Burma/Myanmar। Lexington Books। পৃষ্ঠা 397–। আইএসবিএন 978-0-7391-0356-2 
  29. Political Science Quarterly। Academy of Political Science। ১৯০৪। পৃষ্ঠা 22–। Straus Sulu Ottoman. 
  30. Mustafa Akyol (১৮ জুলাই ২০১১)। Islam without Extremes: A Muslim Case for Liberty। W. W. Norton। পৃষ্ঠা 159–। আইএসবিএন 978-0-393-07086-6 
  31. J. Robert Moskin (১৯ নভেম্বর ২০১৩)। American Statecraft: The Story of the U.S. Foreign Service। St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 204–। আইএসবিএন 978-1-250-03745-9 
  32. George Hubbard Blakeslee; Granville Stanley Hall; Harry Elmer Barnes (১৯১৫)। The Journal of International Relations। Clark University.। পৃষ্ঠা 358–। 
  33. The Journal of Race Development। Clark University। ১৯১৫। পৃষ্ঠা 358–। 
  34. Idris Bal (২০০৪)। Turkish Foreign Policy in Post Cold War Era। Universal-Publishers। পৃষ্ঠা 405–। আইএসবিএন 978-1-58112-423-1 
  35. Idris Bal (২০০৪)। Turkish Foreign Policy in Post Cold War Era। Universal-Publishers। পৃষ্ঠা 406–। আইএসবিএন 978-1-58112-423-1 
  36. Akyol, Mustafa (২৬ ডিসেম্বর ২০০৬)। "Mustafa Akyol: Remembering Abdul Hamid II, a pro-American caliph"Weekly Standard। History News Network। 
  37. ERASMUS (২৬ জুলাই ২০১৬)। "Why European Islam's current problems might reflect a 100-year-old mistake"The Economist 
  38. Kho, Madge। "The Bates Treaty"Philippine Update। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫ 
  39. R. Snelling (৫ অক্টোবর ১৯০৬)। "The Sultan's Successor"The Egyptian Gazette। ১৭ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২৩ 
  40. Kemal H. Karpat (২০০১)। The politicisation of Islam: reconstructing identity, state, faith, and community in the late Ottoman state। Oxford University Press US। পৃষ্ঠা 237। আইএসবিএন 0195136187। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১০ The Spectator, Volume 87। F.C. Westley। ১৯০২। পৃষ্ঠা 243। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৩ Harris, Lillian Craig (১৯৯৩)। China Considers the Middle East (illustrated সংস্করণ)। I. B. Tauris। পৃষ্ঠা 56। আইএসবিএন 1850435987। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৩ "The official Russian announcement that..."The Straits Times। ১০ জুলাই ১৯০১। পৃষ্ঠা 2। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৩ The Moslem World, Volumes 1–3। Contributor Hartford Seminary Foundation। Hartford Seminary Foundation। ১৯৬৬। পৃষ্ঠা 190। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৩ 
  41. Robert A. Bickers (২০০৭)। The Boxers, China, and the World। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 150–। আইএসবিএন 978-0-7425-5395-8 
  42.  One or more of the preceding sentences একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনেচিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Abd-ul-Hamid II"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ1 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 36। 
  43. Creelman, James (২২ আগস্ট ১৯০৯)। "The Slaughter of Christians in Asia Minor"The New York Times 
  44. "World's Largest Fortune to be Split Among Harem Inmates of the Last and Ill-Fated Turkish Sultan"The Cincinnati Enquirer। ২০ এপ্রিল ১৯৩০। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  45. Renée Worringer (২০০৪)। "Sickman of Europe or Japan of the Near East?: Constructing Ottoman Modernity in the Hamidian and Young Turk Eras": 209। ডিওআই:10.1017/S0020743804362033 
  46. "Sitara, Interior Door Curtain of the Ka'ba, Sultan Abdülhamid II (r. 1876–1909)"www.metmuseum.org 
  47. Takkush, Mohammed Suhail, "The Ottoman's History" pp.489,490
  48. "עניין היהודים", (יומני הרצל)। הוצאת מוסד ביאליק। পৃষ্ঠা 332। את הדברים אמר הסולטאן לשליחו של הרצל (נוולינסקי) ב-19 ביוני 1896. מקור - "עניין היהודים", (יומני הרצל) - הוצאת מוסד ביאליק, כרך א' עמוד 332. הרצל עצמו נפגש עם הסולטאן רק ב-17 במאי 1901, ללא הישגים נוספים. 
  49. Lewis.B, "The Emergence of Modern Turkey" Oxford, 1962, p.337
  50. "The Ottoman caliphate: Worldly, pluralist, hedonistic—and Muslim, too"The Economist। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  51. Turner, Barry. Suez.1956 p.32–33
  52. Küskü, Fırat (১ জানুয়ারি ২০২১)। "II. Abdülhamid'in Madalya Siyaseti: Liyakat Madalyası Örneği / Abdul Hamid II's Medal Policy: The Medal of Merit Example": 109। 
  53. "Sheikh Mohammed Zafir"। Madani86। ১৯ জুলাই ২০০৮। 
  54. Ottoman Diplomacy: Abdülhamid II and the Great Powers 1878–1888
  55. F. A. K. Yasamee. Ottoman Diplomacy: Abdülhamid II and the Great Powers 1878–1888 p.20
  56. Farah, C.E. (২০০৮)। Abdülhamid II and the Muslim world। Foundation for Research on Islamic history, Art and History। পৃষ্ঠা 58। আইএসবিএন 9789757874317 
  57. Mushirul Hasan (২০১০)। Between Modernity and Nationalism: Halide Edip's Encounter with Gandhi's India। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 32। আইএসবিএন 9780198063322 
  58. Brookes, D.S., 2010. The concubine, the princess, and the teacher: Voices from the Ottoman Harem. University of Texas Press.
  59. Harun Açba (২০০৭)। Kadın efendiler: 1839–1924। Profil। আইএসবিএন 978-9-759-96109-1 
  60. Gündoğdu, Raşit (২০২০-১১-১৯)। The Portrait of A Political Genius Sultan Abdulhamid II (ইংরেজি ভাষায়)। Rumuz Publishing। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১৮ 
  61. Adra, Jamil (2005). Genealogy of the Imperial Ottoman Family 2005, pg. 23
  62. Harun Açba (2007). Kadın efendiler: 1839–1924. Profil. ISBN 978-9-759-96109-1.
  63. Asghar, Ain Hafizah (১৫ জুলাই ২০১০)। "Payitaht Abdulhamid Turkish Historical Drama Series"3ISK Space (arabic ভাষায়)। Jannah Aamal Shammas। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  64. "Ritter-Orden", Hof- und Staatshandbuch der Österreichisch-Ungarischen Monarchie, ১৯০০, পৃষ্ঠা 58, সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২০ 
  65. Pedersen, Jørgen (২০০৯)। Riddere af Elefantordenen, 1559–2009 (ডেনীয় ভাষায়)। Syddansk Universitetsforlag। পৃষ্ঠা 300। আইএসবিএন 978-87-7674-434-2 
  66. Sveriges Statskalender (সুইডিশ ভাষায়), ১৯০৫, পৃষ্ঠা 440, সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮ – runeberg.org-এর মাধ্যমে 
  67. Kalakaua to his sister, 12 July 1881, quoted in Greer, Richard A. (editor, 1967) "The Royal Tourist—Kalakaua's Letters Home from Tokio to London ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে", Hawaiian Journal of History, vol. 5, p. 96
  68. Norges Statskalender (নরওয়েজীয় ভাষায়), ১৮৯০, পৃষ্ঠা 595–596, সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮ – runeberg.org-এর মাধ্যমে 
  69. "Guía Oficial de España"Guía Oficial de España: 147। ১৮৮৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৯ 
  70. Staatshandbuch für das Großherzogtum Sachsen / Sachsen-Weimar-Eisenach ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে (1900), "Großherzogliche Hausorden" p. 16
  71. The Grand Master of the Bulgarian Orders - official website of H.M. Simeon II
  72. "Ordinul Carol I" [Order of Carol I]। Familia Regală a României (রোমানীয় ভাষায়)। Bucharest। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৯ 
  73. Italia : Ministero dell'interno (১৮৯৮)। Calendario generale del Regno d'Italia। Unione tipografico-editrice। পৃষ্ঠা 54 
  74. "Schwarzer Adler-orden", Königlich Preussische Ordensliste (German ভাষায়), 1, Berlin, ১৮৮৬, পৃষ্ঠা 9 
  75. Royal Thai Government Gazette (১৮ ডিসেম্বর ১৮৯২)। "พระราชทานเครื่องราชอิสริยาภรณ์" (পিডিএফ) (থাই ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৯ 
  76. 刑部芳則 (২০১৭)। 明治時代の勲章外交儀礼 (পিডিএফ) (জাপানি ভাষায়)। 明治聖徳記念学会紀要। পৃষ্ঠা 144। 
  77. Hof- und - Staatshandbuch des Königreichs Bayern (1910), "Königliche Orden". p. 8
  78. William Allen, "The Abdul Hamid II Collection," History of Photography eight (1984): 119–45.
  79. M. I. Waley and British Library, "Sultan Abdulhamid II Early Turkish Photographs in 51 Albums from the British Library on Microfiche"; Zug, Switzerland: IDC, 1987
  80. "Ottoman Empire photographs"। Library of Congress। 

উৎস

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ
জন্ম: ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ মৃত্যু: ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮
শাসনতান্ত্রিক খেতাব
পূর্বসূরী
পঞ্চম মুরাদ
উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান
৩১ আগস্ট ১৮৭৬ – ২৭ এপ্রিল ১৯০৯
উত্তরসূরী
পঞ্চম মেহমেদ
সুন্নি ইসলাম পদবীসমূহ
পূর্বসূরী
পঞ্চম মেহমেদ
উসমানীয় খেলাফতের খলিফা
৩১ আগস্ট ১৮৭৬ – ২৭ এপ্রিল ১৯০৯
উত্তরসূরী
পঞ্চম মেহমেদ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!